
প্রিয় রাহবার ফরহাদ মজহার, আপনার ৭৯তম জন্মদিনে আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম! আপনি সেই বিরল বুদ্ধিজীবী, যিনি টকশোতে কেবল ফটর ফটর করেই ক্ষান্ত হননি, বরং বাম আর ডানের খিচুড়ি পাকিয়ে এক নতুন 'খিচুড়ি পন্থী' দর্শনের জন্ম দিয়েছেন। আপনিই সেই মহাপুরুষ, যিনি আমাদের মামাদের "ফ্রড মজহার" বলে ডাকার সুযোগ করে দিয়েও নিজের মহিমা ক্ষুণ্ণ হতে দেননি। আপনার প্রজ্ঞা এমনই বহুমুখী যে, যেকোনো মামুলি ঘটনাও আপনার স্পর্শে মহাকাব্যে রূপ নেয়।
আপনার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় যেন এক একটি দার্শনিক পাঠ। আপনার রহস্যময় 'গুম' হওয়া থেকে শুরু করে র্যাবের উদ্ধার পর্যন্ত, প্রতিটি অধ্যায় ছিল রোমাঞ্চকর। সে সময় আমরা ভেবেছিলাম, আপনি হয়তো শেখ হাসিনার বানানো জিলাপি না খেয়ে ভিন্ন কিছু খেতে চেয়েছিলেন বলেই এমনটা ঘটেছে। পরে যখন জানতে পারলাম, আপনার সেই 'গুম' আসলে ছিল এক ‘সাংসারিক ক্যাচাল’ থেকে মুক্তি নিয়ে তরুণী প্রেমিকা অর্চনার সঙ্গে সাগরপাড়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবনা-চিন্তার এক মহৎ প্রচেষ্টা, তখন আপনার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। শেখ হাসিনার র্যাব কেন যে সে শান্তিটুকুও দিল না, সেটা ভেবে আজও আফসোস হয়।
আপনার দার্শনিক প্রজ্ঞা এমনই গভীর যে আপনি একাধারে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ নিয়ে শঙ্কিত থাকেন, আবার জামায়াতে ইসলামীর মতো দলকে খুবই পছন্দ করেন। তাদের প্রতি আপনার মমত্ববোধ অতুলনীয়। আপনি যখন জামায়াতকে পরামর্শ দেন যে " আপনারা যে নামে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করতেন, সেটা কেন চেঞ্জ করলেন? ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ নামে রাজনীতি করলে খুব ভালো হতো। আপনাদের ৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে মানুষ ইসলামকে খারাপ বলছে", তখন আমরা বুঝতে পারি, আপনার ভাবনা কতটা সূক্ষ্ম ও দূরদর্শী! তরুণ প্রজন্ম ইসলামকে গ্রহণ করতে আগ্রহী হলেও কেবল জামায়াতের অতীত ভূমিকার কারণে পারছে না—আপনার এই অসাধারণ উপলব্ধি আমাদেরকে অভিভূত করে। আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন যে, ক্ষমতায় গেলে তারা নির্বাচন ব্যবস্থা রাখবে কিনা, এই প্রশ্নটি করতে। কিন্তু সেদিকে আপনার নজর কেনই বা থাকবে? আপনার মতো একজন রাহবার কি আর রাতের ঘুম হারাবেন এমন মামুলি বিষয় নিয়ে?
আপনি যে 'ইনসাফ পার্টি'র আড়ালে সিআইএ-র টাকায় দেশের ভাগ্য বদলানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন, তাতে আমরা ধন্য। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ক্ষমতা ভাগাভাগিতে ব্যস্ত, তখন কেবল আপনিই প্রশ্ন করলেন, "শেখ হাসিনা কি লিখিত পদত্যাগপত্র দিয়েছেন?" এই ধরনের গভীর দার্শনিক প্রশ্ন কেবল একজন রাহবারের পক্ষেই করা সম্ভব। আপনি কোটা আন্দোলনকে বিপ্লব বলে চালিয়ে দিয়েছেন, যখন সবাই বুঝতে পারছিল যে আসলে কী ঘটেছিল। এখন আপনি হতাশ হয়ে বলছেন, এটা নাকি রেজিম চেঞ্জ ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনার মতে, নির্বাচন আসলে লুটেরাদের ক্ষমতায় আসার একটা উপায়। তাই দুর্বল অনির্বাচিত সরকারই সেরা, কারণ ঘন ঘন অভ্যুত্থান ঘটানো সহজ হয়। আর প্রতিটি অভ্যুত্থানের পর আপনার সঙ্গী ফরিদা আখতারকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বানানোর যে বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনা, তা সত্যি অতুলনীয়।
আজ আপনি কার্ল শ্মিটের গণসার্বভৌমত্ব শেখাচ্ছেন, যাতে প্রতিটি আনাচে-কানাচে আপনার শিষ্যরা বিপ্লব ঘটাতে পারে। ভবিষ্যতে যদি মোরগ ডিম না দেওয়ার জন্য বিপ্লব করে, আমরা জানব, এর পেছনেও আপনারই দূরদর্শিতা রয়েছে। আপনার মতো একজন মহান পুরুষের জন্মদিনে আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি, আপনার কীর্তিমান জীবন আমাদের সর্বদা অনুপ্রাণিত করে! শুভ জন্মদিন, হে রাহবার!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



