
সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। এমন যে কজন সমমনা ব্লগার আছেন, তারা একে অপরের পরিপূরক সম্পূরক হয়ে হাতে হাত ধরে সামুতে রাজত্ব শুরু করেছেন। একবার ব্যান হয়ে গেলেও ভিন্ন ভিন্ন নামে ফিরে ফিরে আসছেন। নিজেদের মধ্যে মান মগজ কিছু থাকুক না থাকুক, অন্যদের মান মগজ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
জানি না সামুর এই দুর্দিনে প্রিয় ব্লগাররা সবাই কোথায় হারিয়ে গেলেন?! আপনারা ফিরে আসুন। আবার সবাই মিলে সুস্থ ব্লগিং করি।
যাহোক যা লিখতে এলাম সেটা নিয়ে বলি। লিখতে এলাম সময় নিয়ে। হাবিজাবি লেখা। কাউকে আহত করার জন্য লিখিনি।
............
গ্ল্যাডিয়েটর-২ দেখা হলো। ভালো লাগেনি বলার উপায় নাই। উন্নত দেশের উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর মুভি ভালো না লেগে কি উপায় আছে?
কিন্তু মুভি দেখতে গিয়ে বারবার আবেগাক্রান্ত হচ্ছিলাম। খুঁজছিলাম রাসেল ক্রোকে। যেহেতু এটা সিকুয়েল, আর আগের মুভিতেই ম্যাক্সিমাস মারা গিয়েছে, কাজেই এই মুভিতে তাকে সশরীরে দেখতে পাব... এই আশা বাতুলতা। মাঝে মাঝে নতুন নায়ক পল মেসকলের স্মৃতিতে সে ভেসে উঠছিল...এটুকুই।
কিন্তু একসময়ের ম্যাচো হার্টথ্রব হিরো যদি সশরীরে উপস্থিত হতো, তাহলে কোটি কোটি মধ্যবয়সী নারী পুরুষের মন বেদনায় ডুবে যেত। কেন বলছি? কারণটা রাসেল ক্রো লিখে গুগলে সার্চ দিলেই জানতে পারবেন। ষাট বছর বয়সী ম্যাক্সিমাস ওরফে রাসেল ক্রো এখন একজন মোটাসোটা দাদুমশাই। দেখে দুঃখের পাশাপাশি রাগও লাগে। আরে! পল নিউম্যান, শ কনারি, ড্যানিয়েল ক্রেগ, পিয়ার্স ব্রসনান... এদেরও তো বয়স হয়েছিল। এরা কি দেখতে এমন দাদুমশাই হয়ে গেছে? আপনি কেন এরকম সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিলেন? একটু জিমে টিমে গেলে কী ক্ষতি হতো? এত এত একদার তরুণ হৃদয়ে ঝড় তোলা আপনি কেন এভাবে বুড়িয়ে গেলেন?
কী অদ্ভুত কথা! তাই না? বয়সের ছোবল থেকে কে কবে বাঁচতে পেরেছে? তারা সেলিব্রিটি বলে কি তাদের ফ্যামিলি লাইফ নেই? ফ্যামিলি লাইফ বাদ দিলাম... নিজের কি একটা জীবন নেই? সেই জীবন যদি বলে, অনেক হয়েছে, আর না! এবারে একটা ফুলস্টপ! জীবন থেকে মজার মজার অনেক জিনিস হারিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো এখন উপভোগ করতে চাই আমি। আর পারব না কারো হার্টথ্রব হতে!
তাদেরও তো এমন ইচ্ছে হতে পারে! পারেই তো! সবাই লাইমলাইট আগলে ধরে বসে থাকে না। কেউ কেউ সরে যায় নিজস্ব দুনিয়ায়।
মুভি দেখে এসেই গ্ল্যাডিয়েটর-১ এর কিছু ক্লিপ্স দেখলাম। প্রাক্তন নায়ক এখন কী করে বেড়াচ্ছেন সেসবের স্টিল ছবি দেখলাম। তিনি তার দুইপুত্রকে দুই বগলদাবা করে রোমের কলোসিয়াম দেখতে গিয়েছিলেন। ছেলেদের মুখে ওয়াও চিহ্ন, বাপের মুখে ছেলেদের অবাক করে দিতে পারার জন্য গর্বিত হাসি। দাদুমশাই রাসেল ক্রো বেশ আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ক্যামেরার ওপাশে হয়ত তার স্ত্রী হাসিমুখে বাপ ব্যাটাদের আনন্দ উপভোগ করছেন।
চমৎকার পারিবারিক ছবি। এখানে সেলিব্রিটি, হার্টথ্রব এসব শব্দ কোত্থেকে আসে কে জানে!
জীবন থেকে যা হারিয়ে যায়, আমরা কেন জানি সেগুলোকে আগলে ধরে বসে থাকতে বড্ড ভালোবাসি। কেন বাসি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলে মজার সব উত্তর আসে।
একটা কোনো গান, যেটা হয়ত ছোটবেলায় অথবা কিশোর বয়সে অথবা তরুণ বয়সে শুনতাম... সেই গানটা আবার শুনলে বুকের মধ্যে কেমন ঝড় ওঠে বলুন তো? ভীষণ ঝড় না?
আমি অনেক ভেবেছি এটা নিয়ে। আচ্ছা এই ঝড় কেন ওঠে? সেই গানের সুর কি আলাদা ছিল? এখনকার কত সুর তো এর চাইতেও সুন্দর! তাহলে এই সুরে বুকের মধ্যে শিরশির করে ওঠে কেন?
আমার মন উত্তর দিয়েছে, কারণ এই সুর আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই সময়টার কথা... যে সময়ে আমরা গানটা শুনতাম। যে বন্ধুর সঙ্গে গানটা শুনেছি সেই বন্ধুর কথা মনে পড়ে যায়। যে ঘরের কোণে বসে গানটা শুনেছি, ঘরের সেই কোণ কত দূরে ফেলে এসেছি! সেই সময় যারা প্রিয়জন হয়ে জীবনে ছিল... তাদের অনেকেই চলে গেছে ওপাড়ে। আমরা তাদের কথা ভেবে আকুল হই... সেই সময়টাকে আর ছুঁতে না পারার বেদনায় আচ্ছন্ন হই। তাই সেই সুরটা আমাদের প্রচণ্ড ছিঁড়েফুঁড়ে ফেলা বেদনায় আচ্ছন্ন করে দেয়। কারণ বুঝতে পারি যা গেছে... তা চিরতরেই গেছে। আর ফিরে আসবে না।
শেষ করি এই গান দিয়েই। তরুণ বয়সে শুনতাম, ‘কখনো জানতে চেয়ো না... কী আমার সুখ... কী আমার বেদনা...’
প্রিয় এই গানের শিল্পীর নাম সাইফ। আমার মনে ছিল সাইফ বুয়েটে আর্কিটেকচারে পড়ত। একসময় ভালো বিতার্কিকও ছিল। বিটিভিতে বুয়েটের বিতর্ক দলের সঙ্গে থাকত। সাধারণত ডিএমসির সঙ্গে বুয়েটের বিতর্কের দিনে খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতো। দুঃখের বিষয় ডিএমসিই জিতত বেশিরভাগ সময়। আমি সেই স্কুল জীবন থেকেই বুয়েটের পক্ষে থাকতাম। ডিএমসি দলে দলনেতা থাকত আব্দুন নুর তুষার। তাকে কথায় হারানো তো সহজ না!
যাহোক মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
সাইফ এই 'কখনো জানতে চেয়ো না' গানটি গেয়ে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল সেই সময়। পরপর সম্ভবত দুটো ক্যাসেট এসেছিল তার। তারপর হারিয়ে গেছে হঠাৎ করেই।
একদিন ফেসবুকেই একজনের স্মৃতিচারণায় খুঁজে পাই তাকে। তিনি তাকে পরিচয় করিয়ে দেন এভাবে, ‘একসময়ের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সাইফ এখন আমেরিকা প্রবাসী আর্কিটেক্ট। একটি বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রোগ্রামে তাকে পেলাম।’
দেখলাম একটা ফ্যামিলি গেট টুগেদারে মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক গান গাইছেন। এই বিখ্যাত গানই। সেই গানের সঙ্গে কিছু মধ্যবয়সী নারী বেতাল পদক্ষেপে সম্ভবত নাচই বলে ওটাকে, সেটা করছেন।
খুব কাছ থেকে ক্যামেরা না নিলে হয়ত চিনতেই পারতাম না একসময়ের প্রিয় শিল্পীকে।
মনে মনে ভাবলাম... হ্যাঁ এরই নাম সময়। এর ছোবল থেকে কেউই রেহাই পাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




