
ফ্রান্সিস বেকন একবার বলেছিলেন, "একটি চোরকে পরিপূর্ণ করে তোলে শুধু একটি ভালো সুযোগ।" কী চমৎকার কথা! আমাদের দেশের চোর মহাশয়রা এই উক্তিটিকে শুধু হৃদয়ঙ্গম করেননি, বরং একে জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আর সুযোগ? হা হা হা! সুযোগের তো অভাব নেই। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আমাদের চোর ভাইয়েরা যেন স্বর্গে পৌঁছে গেছেন। তাঁরা এখন আর ছোটখাটো চুরিতে সন্তুষ্ট নন : গরু-ছাগল থেকে শুরু করে মাছ, ধান, এমনকি পোষা প্রাণী পর্যন্ত তাঁদের "কালেকশনে" যোগ হচ্ছে। আহ, কী দক্ষতা ! কী নিষ্ঠা! আমাদের চোর-ডাকাতরা এখন প্রাইভেট কার ব্যবহার করেন। ট্রাক তো পুরনো আমল! এখন যুগ হচ্ছে স্টাইলিশ চুরির। তাঁরা রাতের অন্ধকারে ঘরের তালা-চাবি পর্যন্ত ভেঙে ফেলেন। এমনকি খামারে রাখালদের বেঁধে রেখে পুরো খামারই সাফ করে নিয়ে যান। এটাকে আর শুধু চুরি বলা যায় না এখন এটা একটা আর্ট ফর্ম ! আর একজন শিল্পী তার শিল্পের পূর্ণতা দিতে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, সরকার পরিবর্তনের মাসটিতে চুরির মামলা ছিল মাত্র ৩৮১টি, আর তারপরই তা লাফিয়ে লাফিয়ে ৭০০-৮০০-এর কোঠা পার করেছে। এটা কীসের লক্ষণ? নিশ্চয়ই প্রগতি। পুলিশ তাদের 'সাধ্যমতো' কাজ করছে। তবে তাদেরই কিছু 'বক্তব্য' আছে। তারা আগের মতো 'মাঠে' কাজ করতে পারছে না। কেন? কারণ, তারা এখন 'দর্শক'। দর্শক হয়ে দেশের মানুষের সামনে ঘটে যাওয়া ছিনতাই, ডাকাতি দেখছেন আর মাঝে মাঝে হয়তো বিরক্তি নিয়ে বলছেন, "হায় রে, আমরাও একসময় মাঠে খেলতাম !" কী চমৎকার প্রফেশনাল এথিক্স! তাঁরা বুঝেছেন যে শিল্পীর কাজে বাধা দেওয়া উচিত নয়।
মনে আছে সেই দিনের কথা? যখন ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হলেও একটা ভয় কাজ করত। আইন-আদালত, বিচার-আচার—সবকিছুর একটা কড়াকড়ি ছিল। চোর ভাইরাও কাজ করার আগে অন্তত একবার ভাবতেন, 'ধরা পড়লে তো জেল!' সেই ভয়েই হোক বা অন্য কোনো কারণে, চুরি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু এখন ? কোনো ভয় নেই, কোনো ডর নেই, কোনো হিসেব-কিতাব নেই। চোরেরা এখন পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে পারেন। তাঁদের জন্য এখন এক স্বর্ণযুগ চলছে। এটাকে আমরা বলতে পারি প্রকৃত গণতন্ত্র যেখানে চোর-ডাকাতরাও তাদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
তবে এই সবকিছুতে ভয়ের কিছু নেই। বরং এটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিতে অস্থিরতা থাকবে, বিশৃঙ্খলা হবে—এসব তো জীবনেরই অংশ। আর এই অস্থিরতার সুযোগে কিছু মানুষ তাদের 'ট্যালেন্ট' দেখাবে, এতে অবাক হওয়ার কী আছে? আসলে, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় করলেই হবে না। আমাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানুষ এখন প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। এই ভয় দূর করতে হবে। কারণ, ভয় দূর না হলে প্রতিবাদ হবে না, আর প্রতিবাদ না হলে চোরেরা নির্বিঘ্নে তাদের 'শিল্পকর্ম' চালিয়ে যাবে।
ভয়কে বিদায় জানিয়ে আসুন সবাই মিলে প্রতিবাদ করি। আর যদি ভয়কে বিদায় দিতে না পারি, তাহলে আর কী, একটা নতুন চুরির শিল্পকর্ম দেখার জন্য প্রস্তুত হই। কারণ, সুযোগ যখন আছে, তখন শিল্পও থেমে থাকবে না। তবে একটি ছোট্ট অনুরোধ আছে। প্রিয় চোর ভাইয়েরা, আপনারা যখন আমার বাড়িতে আসবেন, দয়া করে একটু আস্তে আস্তে আসবেন। রাতের ঘুমটুকু যেন ভাঙে না। আর যদি সম্ভব হয়, চুরি করার আগে একটু রিসিট দিয়ে যাবেন। হিসেবপত্র রাখার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



