
সিলেটের সেই অপূর্ব সাদাপাথর। প্রকৃতি যেন সেখানে তার সব সাদা রং ঢেলে দিয়ে এক ক্যানভাস এঁকেছিল। কিন্তু এখন? মনে হবে কেউ এক বাক্স এক্সপ্লোসিভ মেরে পুরো এলাকাটিকে চুরমার করে দিয়েছে। আর এই ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে কারা? খবর নিয়ে জানা গেল, এটা কোনো একদলের কাজ নয়, এটা একটা সর্বদলীয় ঐকমত্য এর ফসল ! হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন। দুদক তার অনুসন্ধানে পেয়েছে, সাদাপাথর লুটে জড়িত রয়েছেন ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। তালিকায় কে নেই? বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি এবং (নিষিদ্ধ) আওয়ামী লীগ সবাই মিলে একাকার ! এ যেন বলিউডের সেই বিখ্যাত গান, “ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে...” লুটপাটের বন্ধুত্বটা যেন রক্তের চেয়েও গাঢ়।
বিএনপি বলে, “আমরা তো সরকারেই নেই, দায়ী কীভাবে?” জামায়াত বলে, “আমরা তো ইসলামী শাসন চাই, পাথর লুট ইসলামে হালাল না।” (যদিও তাদের কিছু নেতার নাম তালিকায় উজ্জ্বলভাবে জ্বলজ্বল করছে)। এনসিপি : ওহ ! এই দলটার কথাই আলাদা। তারা তো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এর কথা বলে। তাদের নেতারা বলেন, “আমরা পুরনো খাওয়া-দাওয়ার রাজনীতি করি না।” কিন্তু দুদকের রিপোর্ট বলছে, তারাও এই লুটের ভাগ থেকে বাদ যাননি। বোধহয় ‘নতুন বন্দোবস্ত’ এ পাথর লুটও অন্তর্ভুক্ত ! আর আওয়ামী লীগ ? তারা তো ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ। কিন্তু তাদের কিছু কর্মীও এই লুটের মহাযজ্ঞে শামিল। মনে হচ্ছে, দল নিষিদ্ধ হলেও লুটপাটের প্রবৃত্তি নিষিদ্ধ হয়নি।
প্রশাসন ও পুলিশ ? তারা তো চাঁদা আদায়ে ব্যস্ত। প্রতি ট্রাক থেকে ৫০০০ টাকা, প্রতি নৌকা থেকে ৫০০ টাকা। এটা যেন টোল ট্যাক্সের মতো হয়ে গেছে! ডিসি, ইউএনও, এসপি, ওসি সবাই এই কমিশন বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। তারা সম্ভবত ভাবছেন: পাথর যাক না লুট হয়ে, আমাদের কমিশন তো আসছে ! বিজিবি ? তাদের ক্যাম্প পাথর এলাকা থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে। কিন্তু তারা সম্ভবত নিজেদের কাজেই ব্যস্ত ছিলেন। কিংবা তারাও হয়তো চাঁদার ভাগ পাচ্ছেন। এটা যেন চোর ও গাজনের মোলাকাত।
দুদক যখন তদন্ত করতে এলো, তখন সবাই এক হয়ে বলল, “আমরা নিরপরাধ !” বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি মিলে সংবাদ সম্মেলন করে বলল, “এটা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র !” কিন্তু তারা সম্ভবত ভুলে গেছেন যে, ষড়যন্ত্র তো একজনের বিরুদ্ধে হয়, সবার বিরুদ্ধে একসাথে ষড়যন্ত্র হয় না ! সিলেটের সাধারণ মানুষ কি পেল ? তারা পেল ধ্বংস হওয়া পর্যটন স্পট, প্রাকৃতিক সম্পদ হারানো, আর ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ পরিবেশগত ঝুঁকি।
সিলেটের সাদাপাথরের লুটকাহিনী আমাদের বলে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও, লুটপাটের সময় তারা সবাই এক হয়। এটা যেন লুটে ভাইচারা, বাকি সব কথা ছাড়া । প্রকৃতি তার সৌন্দর্য দিয়ে আমাদের আনন্দ দেয়, কিন্তু আমরা তার সম্পদ লুট করে নিজেদের পকেট ভারী করি। এরপরও আমরা বলি, “আমরা দেশপ্রেমিক”!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



