
বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো ভালো ও গঠনমুলক ঘটনা না ঘটলেও ভুগিচুগি ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এসব ভুগিচুগি ঘটনার একটা বড়ো অংশ জুড়ে থাকেন মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল রহমান। তিনি বিভিন্ন টকশোতে যান জামাত-শিবির ও এনসিপি নেতাদের বিরুদ্ধে সারাক্ষণ অকথ্য ভাষায় মন্তব্য করেন। এতে বারবার জামাত-শিবির এবং এনসিপি লাইমলাইটে চলে আসে। একই কাজ অবশ্য জামাত-শিবির করছে মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিবুর রহমান কে মিথ্যাচার করে। দুই পক্ষের এসব মন্তব্যে লাভবান হচ্ছে কেবল আওয়ামী লীগ। আর কারো লাভ হচ্ছে না
মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান কোনো এক টকশোতে অত্যন্ত বাজে মন্তব্য করেছেন জুলাই আন্দোলন নিয়ে। উনার দাবী ৫ই আগস্ট নাকি কালো শক্তি জামায়াত-শিবির ঘটায়েছে। সারজিস- হাসনাত রা সে ঘটনায় অভিনয় করেছে ; তারা হচ্ছে অভিনেতা। ফজলুর রহমান যখন এমন বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি কেবল আওয়ামী লীগের বয়ানকেই শক্তিশালী করছে। তিনি বোঝাতে চান মেটিকুলাস ডিজাইন করে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি তথা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ কে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। ফজলুর রহমান শেখ হাসিনার আমলের মানুষের সমস্যা নিয়ে তেমন ওয়াকিবহাল নন। তিনি ছাত্রদের কোটা আন্দোলনকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না। এই যে জুলাই আন্দোলনের ফলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল তা নিয়ে উনার শুকরিয়া নাই।
বিগত ১৫/১৭ বছরে ফজলুর রহমান কে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ভুমিকা রাখতে দেখেনি। ৫ই আগস্টের পর ফজলুর রহমান কোথা থেকে উদয় হয় একই প্যাচাল শুরু করেছেন। ফজলুর রহমান কে দিয়ে বিএনপি যদি লীগের কিছু ভোট পাওয়ার চেষ্টাও করে তার জন্য এমন এগ্রেসিভ বক্তব্যের দরকার নাই। মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান প্রায়শই দ্বিচারিতা করেন। উনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ধানমন্ডি ৩২ ভাঙায় বুলডোজার দিয়ে সহায়তা করেছে বিএনপি তখন তিনি সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান৷ অনেক সময় তিনি জামায়াত শিবির কে রাজাকারের বাচ্চা বলে প্রেশার দেন যা দেখে মনে হয় যাতে জাশি সুরসুর করে ঐক্যমত্য কমিশনে বিএনপির সাথে একমত হয়।বাংলাদেশে জামায়াত শিবির কে অফিসিয়াল ভাবে পুনর্বাসন করেছে বিএনপি। তাদের বিরুদ্ধে কেন এত জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয়া হচ্ছে? সারাদিন "এই রাজকারের বাচ্চারা, মুক্তিযোদ্ধারা এখনো জীবিত " এসব মন্তব্য আসলে রাজনীতির একটা কৌশল। তিনি জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে রাজাকার শব্দটি যতটা ঐতিহাসিক কারণে ব্যবহার করেন তার চেয়ে বেশি ব্যবহার করেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে।
বাংলাদেশে জামায়াত শিবির অন্যান্য দলের মতোই রাজনীতি করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রায় সময় জামায়াত- শিবির কে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে গিয়ে তাদেরকে রাজাকার ট্যাগিং করে। আর পর্দার আড়ালে জামায়াত শিবির থেকে উপহার গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ -বিএনপির কারণে রাজাকার শব্দটি এখন খুবই হালকা হয়ে গেছে। জামায়াত কে কোথাও জিততে দেয়া হবে না, শিবির ঠেকাও ডাকসুতে এসব আলাপ পুরোপুরি রাজনৈতিক। এখানে কোনো ঐতিহাসিক ব্যাপার স্যাপার নেই। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ -ছাত্রদলের অতীত ইতিহাস আছে রক্ত ঝরানোর। শিবির কেবল তাদেরই অনুসরণ করেছে। জামায়াত-শিবির এমন কোনো কাজ আগে শুরু করেনি যা আওয়ামী লীগ -বিএনপি দেখায় নি। তাদের নিজেদের অধঃপতন ঢাকতে জামায়াত-শিবির কে ব্যবহার করে কিন্তু জামায়াত-শিবির কে তারা নিষিদ্ধ করে না।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অভ্যন্তরে বহুবছর আগেই জামায়াত শিবির ঢুকে গেছে । গত পনেরো বছর জাশি আওয়ামী লীগের ভিতরেও ঢুকে গেছে। এদের দায় কার? অবশ্যই আওয়ামী লীগ-বিএনপির। যখন জাশির সাথে এক সাথে উঠে বসে, আত্নীয়তা সম্পর্ক করে তখন জাশি যে রাজাকার তা মনে থাকে না। জামায়াত-শিবিরের হাদিয়ার টাকার ভাগ আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই পেয়েছে। আওয়ামী লীগের দমন পীড়নের কারণে শিবির গুপ্ত রাজনীতি করেছে। যখন শিবির প্রকাশ্যে এলো তখন অনেকে বলছে জাশির এই রাজনীতি নাকি মুনাফেকির রাজনীতি। জাশির এই রাজনীতি মুসলিম ব্রাদারহুডের অনুরুপ। যখন মুসলিম ব্রাদারহুড প্রচন্ড চাপে ছিলো তারা গুপ্ত রাজনীতি করেছে। জামায়াত-শিবির কেবল তাদের মিশরের শাখা কে অনুসরণ করেছে। ইহা কোন নতুন রাজনৈতিক কৌশল না। জামায়াত-শিবির কিন্তু পাকিস্তানেও আছে। সেখানে তারা প্রকাশ্য রাজনীতি করে তেমন কোনো সফলতা পায় নাই। সে তুলনায় রাজাকার ট্যাগ নিয়েও বাংলাদেশে বেশ অগ্রসর হয়েছে। তাহলে কি দাঁড়ায়? প্রতিটি রাজনৈতিক দল যারা নিষিদ্ধ নয় তাদের কে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে দিতে হবে। না হলে অন্যান্য দলের ভিতর ঢুকে তারা রাজনীতি করবে ইহা মেনে নিতে হবে।
জামায়াত-শিবির কে অবশ্যই রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে হবে। কেবল রাজাকার ক্ষমতায় এলেই বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান হয়ে যাবে তাই জাশি ঠেকাও আন্দোলন চালু করলে লাভ হবে না। যদি জামায়াত শিবির ক্ষমতায় আসে কখনো সেটার দায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুইদলের। তাদের অধঃপতনের কারণেই তা সম্ভব হবে। তাই ফজলুর রহমানের বক্তব্য আর বিএনপির জাশি নিয়ে ভাবনা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
পুনশ্চ: ফজলুর রহমান কে শোকজ দেখিয়েছে বিএনপি। এই শোকজ আবার এনসিপি নেতা তুষারের শোকজের মতো লোক দেখানো হয় কিনা তাই দেখার বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



