
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে জয়েন উদ্দিন সরকার তন্ময়কে বাদ দেয়ার ঘটনাটি আসলে একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জয়েন উদ্দিনের সেই কুখ্যাত ফেসবুক স্ট্যাটাসটি আবার দেখি। তিনি লিখেছিলেন: "রশিদ মিনহাজ। মাত্র ২১ বছর বয়সে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার জন্য শহীদ হন... একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পাকিস্তান থেকে বিমান ছিনতাই করে ভারতে নিয়ে যেতে চাচ্ছিল..." । এখানে "একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট" বলতে তিনি বুঝিয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে। যিনি আসলে স্বাধীনতার পক্ষে একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান নিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তাঁকে "বিমান ছিনতাইকারী" বলা কেবল ইতিহাস বিকৃতি নয়, এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরদের অপমান।
জামায়াত-শিবির বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে আজও হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করতে পারেনি। ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাদের অবস্থান একই রয়ে গেছে। তাদের প্রকাশনা, বই-পুস্তক, ম্যাগাজিন ঘাঁটলে এর প্রমাণ মিলবে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিপরীতে অবস্থান করে। আওয়ামী লীগের তথাকথিত "হেলমেট বাহিনী"র সাথে শিবির কর্মীদের সংযোগের বিষয়টিও লক্ষণীয়। যারা একসময় শিবিরের সাথে যুক্ত ছিল, তারাই পরে ক্ষমতাসীনদের দমনপীড়নের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এটি তাদের সুবিধাবাদী চরিত্রেরই প্রমাণ।
জয়েন উদ্দিনকে নিয়ে আসল প্রশ্নটি এখানেই। তিনি কি শিবিরের ব্যতিক্রমী একজন সদস্য ছিলেন, নাকি তিনি আসলে তাদের সাধারণ মানসিকতারই প্রতিনিধি? সত্য হলো, জয়েন উদ্দিন যা লিখেছেন, সেটাই তাদের শেখানো হয়। তাদের মতাদর্শিক শিক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের বীরদের এভাবেই উপস্থাপন করা হয়। জয়েন উদ্দিনের "অপরাধ" হয়তো এটাই যে, তিনি সেই মনের কথাটা প্রকাশ্যে বলে ফেলেছেন।
অদ্ভুত শোনালেও, জয়েন উদ্দিনের এই কাজকে একরকম সাহসী বলতেই হয়। তিনি কপটতার আশ্রয় নেননি, ঘোমটা রাখেননি। অন্য শিবির নেতাদের মতো দ্বিচারিতা করেননি। তিনি তাদের প্রকৃত মনোভাব প্রকাশ করে জনগণের সামনে একটি পরীক্ষা রেখেছেন। যদি জনপ্রতিক্রি্য়া ইতিবাচক হতো, তাহলে হয়তো এই মতাদর্শই তারা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে শুরু করত। কিন্তু বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে তারা তাড়াতাড়ি জয়েন উদ্দিনকে বলির পাঁঠা বানিয়ে দিয়েছে।
জামায়াত-শিবির মূলত গুপ্ত সংগঠনের মতো কাজ করে। তাদের প্রকৃত বিশ্বাস ও মতামত তারা সাধারণভাবে প্রকাশ করে না। জয়েন উদ্দিনের ঘটনা প্রমাণ করে যে, তাদের সবার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে একই রকম নেতিবাচক ধারণা রয়েছে।একজনের মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে মাত্র। বাকিরা এখনও তাদের প্রকৃত মনোভাব লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু অনুকূল পরিবেশ পেলেই তারা সবাই তাদের আসল চেহারা প্রকাশ করবে।
জয়েন উদ্দিনকে সরিয়ে দিয়ে শিবির ভাবছে তারা সমস্যার সমাধান করেছে। কিন্তু প্রকৃত সমস্যা জয়েন উদ্দিন নন। সমস্যা হলো তাদের মতাদর্শ, তাদের শিক্ষা, তাদের বিশ্বাস। শিবির কতজন জয়েন উদ্দিনকে সরাবে ? তাদের সবাই এক একজন জয়েন উদ্দিন। একজনকে সরিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ তাদের মূল সমস্যাটা রয়ে গেছে অপরিবর্তিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



