
২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এক কথায়, সে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এ এমন এক নির্বাচন, যা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শোনা যায়, জাপানি রাষ্ট্রদূতও নাকি অবাক হয়ে বলেছিলেন, "রাতের ভোটের এমপি হওয়ার নজির বিশ্বে বিরল।" ভাবুন তো, আমাদের দেশ কত আধুনিক! আমরা এখন দিন-রাতের ২৪ ঘণ্টাই কাজ করি, এমনকি নির্বাচনও!
যারা সে রাতে নির্বাচিত হলেন, তারা দিনের আলোতে জমি দখল, আর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মতো মহান কাজে নিজেদের নিয়োজিত করলেন। শোনা যায়, শেখ হাসিনার 'পোষা' ডিজিএফআই নাকি জরিপ করে দেখেছিলো আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলো, রাতের বেলা সিল মেরে ক্ষমতা ধরে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আহা, এমন সৎ পরামর্শদাতারা থাকলে কার না ভালো লাগে!
আমার নিজেরও সেই ঐতিহাসিক রাতের কারচুপি স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমাদের বাসার পাশে একটা ভাঙাচোরা স্কুল, যেখানে ১০ জনও শিক্ষার্থী নেই, সেখানে কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। আমাদের দারোয়ান সাইফুল তো আনন্দে আত্মহারা। যাকে দেখছে তাকেই বলছে, "কঠিন খেলা চলছে! পুলিশ-ছাত্রলীগ-আনসার সব এক পক্ষ হয়ে খেলছে।" সাইফুল বারবার স্কুলে উঁকিঝুঁকি মারছে, আর পুলিশ তাকে মারতে যায়। পরে অবশ্য আরেকজন পুলিশ এসে তাকে বাঁচিয়ে দেয়। সে রাতে স্কুলের আলোয় সারা রাত মহান কর্ম সম্পাদন করা হয়, আর সাইফুলের নির্ঘুম রাত কাটে।
সকালে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত হলেও মানুষের দেখা নেই। দুপুর ১২টার দিকে ৫০ জনের মতো একটা লাইন হলো, কিন্তু তারা কে, কোথা থেকে এসেছেন, তা কেউ বলতে পারে না। অনেক কেন্দ্রে ভোটাররা গিয়ে শোনে তাদের ভোট হয়ে গেছে। প্রাক্তন এমপি ইলিয়াস মোল্লা তার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে সব কেন্দ্র দখল করে রেখেছিলেন। তাই মানুষের মাঝে কোনো উদ্বেগ ছিল না, কারণ তারা ফলাফল আগে থেকেই জানতো।
আজ এক ভারতীয় সাংবাদিকের কাছে শুনলাম, শেখ হাসিনা নাকি চাননি রাতের ভোট হোক। কিন্তু উনার নাকি কোনো উপায় ছিল না। উনার 'দুষ্টু' এমপিরা জোর করে উনাকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন। শুনে খুব আফসোস হচ্ছে। বেচারি শেখ হাসিনা, এমন দুষ্টু এমপিদের পাল্লায় পড়ে কী না কী করতে বাধ্য হলেন! তাই এখন তাকে 'গণতন্ত্রের মানসকন্যা' না বলে 'বেচারি গণতন্ত্রের মানসকন্যা' বলা উচিত।
আহা, শেখ হাসিনার জন্য মনটা কেমন জানি হু হু করে উঠল। এতদিন জেনে আসছিলাম, তিনি দেশের সবকিছু একাই সামলান। কিন্তু ছবিটা দেখে সব ধারণা পাল্টে গেল। গৌতম লাহিড়ী, প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি, যা বলেছেন তাতে তো আমার চোখ কপালে। তিনি বলছেন, শেখ হাসিনা নাকি নিজে তাকে বলেছেন, "আমি এমনটা চাইনি, দলের কিছু লোক জোর করে এটা করেছে। আমি জানি এর দায় আমাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।"
ভাবুন তো, কী করুণ এক পরিস্থিতি! একদিকে সারা দেশের মানুষ বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিলো রাতের ভোট। অন্যদিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি নাকি নির্দোষ, তার দুষ্টু এমপিরা জোর করে এমন কাজ করিয়েছেন। শেখ হাসিনার মতো একজন শক্তিশালী নেত্রীকেও তার দলের কিছু লোক দিয়ে এমন কাজ করানো হয়েছে ! এই এমপিরা কি তাহলে প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাশালী? নাকি তিনি তাদের ভয়ে কিছু বলতে পারছিলেন না ?শেখ হাসিনার কথা শুনে চোখে জল চলে এলো ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



