
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আজ যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তা নিছক আবেগপ্রসূত কোনো সংঘর্ষ নয়, বরং এর পেছনে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ছায়া রয়েছে। একজন যুবকের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ছবি পোস্টকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকার মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়া এবং মুহূর্তেই তা ব্যাপক সংঘর্ষে রূপ নেওয়া আসলে বাংলাদেশে অস্থিরতা ছড়ানোর এক ধরনের পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টা।
ঘটনার সূচনা হয় আরিয়ান ইব্রাহিম নামের এক যুবককে দিয়ে, যে মাদ্রাসার সামনে দাঁড়িয়ে অশোভন ভঙ্গিমায় ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে। ঘটনাটি ঘটে এমন সময়ে যখন জশনে জুলুসের শোভাযাত্রা চলছিল। এ সময় ধর্মীয় আবেগ সবচেয়ে প্রবল থাকে, ফলে প্রতিক্রিয়াও দ্রুত ও তীব্র হয়। এটা নিছক কাকতালীয় বলে ধরে নেওয়া কঠিন। বরং মনে হয় সময় ও স্থান দুই-ই অত্যন্ত কৌশলগতভাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
এরপর যে সংঘর্ষ শুরু হয়, তা কেবল মাদ্রাসার ছাত্র আর স্থানীয় মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। মুহূর্তেই পুরো এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়, সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সুন্নি ও কওমী ধারার মধ্যে বড় কোনো সংঘর্ষের নজির নেই। তাই এই আকস্মিক দ্বন্দ্বকে অনেকেই পরিকল্পিত ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ হিসেবে দেখছেন যেখানে আসল চক্রান্তকারীরা আড়ালে থেকে অন্য দুই গোষ্ঠীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।
আরিয়ান ইব্রাহিমের চরিত্রও রহস্যময়। সে নিজেকে ছাত্রদল নেতা পরিচয় দিলেও ফটিকছড়ি ছাত্রদলের সভাপতি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, এমন কোনো নেতা তাদের সংগঠনে নেই। তাহলে প্রশ্ন ওঠে এই সাহস সে কোথা থেকে পেল? কে তাকে আশ্বাস দিয়েছিল যে, এমন কাজ করার পরও সে রক্ষা পাবে? এই প্রশ্নের উত্তরই আমাদের প্রকৃত চক্রান্তকারীর খোঁজ দিতে পারে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা। ছবিটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত কোনো পোস্ট ভাইরাল হতে সময় লাগে, কিন্তু এখানে সেটি হয়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। এ থেকে বোঝা যায়, আগে থেকেই একটি নেটওয়ার্ক প্রস্তুত ছিল ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, যাতে আবেগী প্রতিক্রিয়া দ্রুত সৃষ্টি হয়।
এই ঘটনার পেছনে কারা থাকতে পারে তা নিয়েও নানা বিশ্লেষণ চলছে। আওয়ামী লীগের পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত গোষ্ঠী বর্তমান সরকারকে অস্থির করার জন্য ধর্মীয় বিভাজনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। আবার আঞ্চলিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার স্বার্থে এই ধরনের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে, যাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীও নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করার কৌশল হিসেবে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে।
সরকার দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে এবং উস্কানিমূলক আইডি বন্ধ করেছে, কিন্তু এখানেই তদন্ত থেমে গেলে হবে না। মূল পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করতে না পারলে এ ধরনের ষড়যন্ত্র বারবার ফিরে আসবে। একই সঙ্গে নাগরিকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগী প্রতিক্রিয়ার বদলে তথ্য যাচাই করে সচেতনভাবে আচরণ করা এখন জরুরি।
হাটহাজারীর ঘটনাটি নিছক কোনো ভুল বোঝাবুঝি নয়, বরং বাংলাদেশের সামাজিক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে এক পরীক্ষামূলক আঘাত। একবার সফল হলে একই কৌশল আবারও ব্যবহার করা হবে। তাই এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা আমাদের সবার দায়িত্ব। বিভক্ত জাতি সবসময়ই পরাজিত হয় এ শিক্ষা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



