
ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক মানস ঘোষ, যিনি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ কভার করেছিলেন এবং যুদ্ধোত্তর তিন বছর ঢাকায় অবস্থান করেছিলেন, সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন একটি আলোচিত গ্রন্থ : “Mujib’s Blunders – The Powers and the Plot Behind His Killing”। দিল্লির নামী প্রকাশনা সংস্থা নিয়োগী বুকস থেকে প্রকাশিত এই বইটি ইতিমধ্যেই ভারতের বুদ্ধিজীবী মহলে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মানস ঘোষ তার বইতে উল্লেখ করেছেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে তখনও সক্রিয় ছিল পাকিস্তানপন্থী so-called 'ডিপ স্টেট'। কিন্তু শেখ মুজিব তার আশেপাশের মানুষজন বাছাই করার ক্ষেত্রে একেবারেই 'নির্বোধ' (blunder) ছিলেন বলে মন্তব্য করেন ঘোষ। তিনি পাকিস্তানপন্থী 'কুইসলিং'দেরই সরকার ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন, যারা পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়। উদাহরণ হিসেবে এক পাকিস্তানি চরকে ভিজিল্যান্স কমিশনার করার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন: “আমি নিজেও জানতাম তার অতীত, কিন্তু কীভাবে এমন পদে বসানো হলো তা আজও রহস্য।” ঘোষ যুক্তি দেন, পাকিস্তান এই চরদের মাধ্যমেই হত্যার ষড়যন্ত্র বুনেছিল এবং ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল।
লেখক বিশেষভাবে উল্লেখ করেন ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তা পিএন ব্যানার্জির রহস্যজনক মৃত্যুর প্রসঙ্গ। মুজিবের ঘনিষ্ঠ এই কর্মকর্তাকে হত্যা না হলে শেখ মুজিবের প্রাণহানি ঘটানো সম্ভব হতো না বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস। এই ঘটনাকে তিনি বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা ভেদ করার একটি বড় বাঁক হিসেবে দেখেছেন।
বইটিতে মুজিবের সবচেয়ে বড় ভুল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সীমিত করার পাশাপাশি তাজউদ্দীন আহমদকে কোণঠাসা করাটাকেও তিনি ভয়াবহ কৌশলগত ভুল বলেছেন। ঘোষ দাবি করেন, তাজউদ্দীন সতর্ক করেছিলেন এতে ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি মাথা তুলবে এবং সেটাই শেষ পর্যন্ত ঘটেছিল।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা এসেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে। অসাম্প্রদায়িক আদর্শে বিশ্বাসী হয়েও মুজিব এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা পরবর্তীতে মৌলবাদী শক্তির দখলে চলে যায়। মানস ঘোষ মনে করেন, এই প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি হয়েছিল।
মানস ঘোষের মতে , যে পাকিস্তানকে ভেঙে বাংলাদেশের জন্ম, তার কাছ থেকেই স্বীকৃতি পেতে শেখ মুজিব অতি আগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের পেছনে এই কারণই ছিল প্রধান বলে দাবি করেছেন মানস ঘোষ। এর বিনিময়ে পাকিস্তানের শর্ত ছিল, বাংলাদেশ যেন ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়। শেখ মুজিব তার দেশবাসীকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ভুট্টোর চাপে তিনি সেই প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করেন।
শেখ মুজিবের ‘বড় বড় ভুল’ নিয়ে দিল্লিতে সাম্প্রতিক যে আলোচনা - Bangla Tribune
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



