
এই বিজয় মুসলিমের, এই বিজয় অমুসলিমের।
এই বিজয় হিজাবীর, এই বিজয় নন হিজাবীর।
এই বিজয় নারীদের, এই বিজয় ঢাবির, এই বিজয় আমাদের সবার।
যে পরীক্ষায় অবতীর্ণ করেছো তার যথাযোগ্য মান রাখার তৌফিক দিও খোদা আমাদের-তাসনিম জুমা।
জুমা আপা জিতে গেলেন! একেবারেই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্যানেলের প্রার্থীদের অন্তত এতটুকু আস্থা ছিল যে শিবির ঘরানার তাসনিম জুমা হেরে যাবেন। কিন্তু বাস্তবতা দাঁড়াল উল্টো - জুমা আপা প্রায় সাড়ে দশ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এই ফলাফল দেখে মনে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বয়ানে আর সন্তুষ্ট নন। জুমা আপার মুজিববাদ ও ৭২ সংবিধান বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি এবং জিয়াউর রহমানের প্রতি পক্ষপাত ছাত্রদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আসলে জুমা আপার একটা বিশেষ গুণ আছে - উনি দারুণ adaptive। প্রয়োজনমতো কখনও শাহবাগী স্টাইল, আবার কখনও জামায়াতি ঢং। এই flexibility টা আজকাল অনেকেই পছন্দ করে।
সবচেয়ে interesting ব্যাপার হলো নারী শিক্ষার্থীরা দিল খুলে জুমা আপাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। সবার ধারণা ছিল মেয়েরা উমামা ফাতেমাকে বেছে নেবে, কিন্তু উমামার "বাম" পরিচয়টাই তার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াল। ঢাবির মেয়েরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে তাদের পছন্দ জুমা আপার মতো প্রার্থী। এটা তাদের একটা conscious choice বলেই মনে হচ্ছে। বাম নেতা মেঘ মল্লার বসু মাত্র পাঁচ হাজার ভোট পেয়েছেন। দেবু লাল ফরিদী ওরফে নিপুণ কথন দাদা এই হার দেখে কী ভাবছেন জানার ইচ্ছা হচ্ছে। ছেলেটা কিন্তু বেশ কাজের মানুষ - একমাত্র সে-ই ডাকসু নির্বাচনের আগে জাতীয় ইস্যুতে কাজ করেছে। গত ঈদে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ডাকসুতে এসব humanitarian কাজের তেমন দাম নেই মনে হচ্ছে। তবে মেঘ বাবু কোনো বড় দলে গেলে দ্রুত স্টার হয়ে যেতে পারেন।
ডাকসু নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ইউনুস স্যার আর তার টিম নিশ্চয়ই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। উপদেষ্টাদের পায়ের তলায় মাটি ফিরে পেয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মুখে এখন চওড়া হাসি! আশা করি ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনও এভাবেই সুন্দর করে সারতে পারবেন। স্যারের বাকি জীবনটাও এরকম হাসিখুশিতেই কাটুক। পতিত স্বৈরাচার ভেবেছিল বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ডাকসু নিয়ে বড় ফ্যাসাদ হবে আর তারা দূর থেকে তামাশা দেখবে। কিন্তু সে আশা পূর্ণ হল না। এখন উল্টো তারাই ছাত্রদলের পরাজয় নিয়ে হাসাহাসিতে ব্যস্ত। অথচ নিজেদের অবস্থা আরও খারাপ - নেতা দেশে নেই, কর্মীরা সব শশুরবাড়ির পথে!
ডাকসুতে পিআর ছাড়াই জামায়াত ভালো ফল করায় জাতীয় নির্বাচনেও তারা optimistic থাকতে পারে। এই momentum টা কাজে লাগিয়ে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানানো উচিত। তাদের এই নতুন প্রজন্মটা বেশ smart। পুরনো ব্যাগেজ ঝেড়ে ফেলে নতুন করে রাজনীতি করছে। আওয়ামী-বিএনপির পুরাতন রাজাকার ট্যাগিং আর কাজ করছে না। জামায়াতের প্যানেল জিতে যাওয়ার পর ছেলেরা "হিজাব হিজাব" স্লোগান দিচ্ছে দেখে বেশ মজা লাগল। গতবছরই তো কোন সংগঠন হিজাবকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতীক ঘোষণা করেছিল! তবে interesting ব্যাপার হল নারীদের হিজাব নিয়ে পুরুষরা স্লোগান দিচ্ছে। মেয়েরা দিলে বিষয়টা আরও authentic মনে হতো।
অনেক সাবেক ঢাবি শিক্ষার্থী মেয়েদের জাশিতে ভোটের জন্য হতাশা প্রকাশ করছেন। কিন্তু তারা হয়তো ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনের সম্পূর্ণ ইতিহাস জানেন না। সেখানেও শিরিন এবাদির মতো নারীরা শাহ সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা আশা করেছিলেন খোমেনি আধুনিক ইসলামিক গণতন্ত্র চালু করবেন। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্তের সঠিক মূল্যায়ন করা দরকার। তারা যদি জামাত-শিবিরের রাজনৈতিক দর্শনকে পছন্দ করে এবং সেই মতো জীবনযাপন করতে চায়, সেটা সম্পূর্ণ তাদের অধিকার ।
It's her choice - এ নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর কিছু নেই।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



