
আহ, কী চমৎকার সময়! জুলাই মাসের সেই ঐতিহাসিক ঘটনার পর বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে যেন নতুন হাওয়া বইছে। আর সেই হাওয়ায় উড়ে আসছেন একের পর এক পাকিস্তানি তারকারা। মনে হচ্ছে, আমরা যেন অবশেষে আবিষ্কার করেছি যে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার আসল মানে কী! গত ১৬-১৭ বছর ধরে আমাদের সাংস্কৃতিক জগৎ ছিল একরকম 'বন্ধ দরজার' নীতির আওতায়। ভারতীয় শিল্পীদের জন্য লাল গালিচা থাকলেও পাকিস্তানি শিল্পীদের জন্য ছিল অদৃশ্য বেড়াজাল। কারণ ? ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাংস্কৃতিক কূটনীতি। মজার ব্যাপার হলো, একজন মানুষের রাজনৈতিক দর্শন কীভাবে পুরো দেশের সাংস্কৃতিক রুচিবোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেটাই আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। যেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল শিল্পীদের ভিসা ইশ্যুতে!
এখন আর সেই বাঁধা নেই। শেখ হাসিনা আর নেই (তালি বাজান সবাই !), তাই একে একে ভিড় জমাচ্ছেন পাকিস্তানের গায়ক, মডেল ও অভিনেত্রীরা। আতিফ আসলাম থেকে শুরু করে রাহাত ফতে আলি খান, ব্যান্ড 'জাল' — সবাই যেন বাংলাদেশকে তাদের নতুন 'ক্যাশ কাউ' হিসেবে আবিষ্কার করেছেন।এবার আসছেন সুন্দরী মডেল ও অভিনেত্রী হানিয়া আমির। বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া !
সানসিল্কের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের লাক্স শুভেচ্ছাদূত হিসেবে হানিয়া আমিরকে আনা হচ্ছে। আহা, কী চমৎকার কর্পোরেট কৌশল! তরুণদের চাহিদাকে সামনে রেখে এই উদ্যোগ। মানে তরুণরা এতদিন কী চাইছিল, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল না ; এখন বুঝি বুঝতে পারা গেল ! বর্তমানে পাকিস্তানি শিল্পীরা উপমহাদেশে বা প্রবাসে তেমন সাড়া পাচ্ছেন না। ভারতে বলিউডের নিজস্ব তারকারাই যথেষ্ট, আরব বিশ্বে আরবি শিল্পীদেরই প্রাধান্য। কিন্তু বাংলাদেশ ? এখানে তারা নতুন বিজনেস হাব আবিষ্কার করেছেন ! মনে হচ্ছে, আমরা যেন এক ধরনের 'সাংস্কৃতিক দাতব্য সংস্থা' হয়ে উঠেছি পাকিস্তানি শিল্পীদের জন্য। যেখানে অন্যরা দরজা বন্ধ রেখেছে, আমরা খুলে দিয়েছি জানালা-দরজা সব !
এদিকে আমাদের নিজেদের শিল্পীদের অবস্থা? জেমস গুরুর মতো কিংবদন্তি শিল্পী সৌদি আরবে পারফর্ম করেছেন, কিন্তু নিজের দেশেই তার যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। পড়শির এর মতো প্রতিভাবান শিল্পী আছেন, কিন্তু তাদের জন্য কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। অথচ আমরা মেতে উঠেছি পাকিস্তানি তারকাদের আগমনে ! মানুষের হাতে টাকা কম, দেশের অবস্থা জটিল, বাদ্যযন্ত্র বিক্রি কমেছে ৫০%। এই অবস্থায় আমাদের শিল্পীরা পাকিস্তানে গিয়ে পারফর্ম করার সুযোগ পাবেন কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। অবশ্য একটা ব্যাপারে পাকিস্তান সবসময়ই এগিয়ে ছিল : আমাদের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা কে যথাযথ সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে। এবার হয়তো তাকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পুরস্কারেও ভূষিত করা হতে পারে। অন্তত কেউ তো আমাদের প্রতিভার স্বীকৃতি দিচ্ছেন!
তাহলে এই হলো আমাদের সাংস্কৃতিক মুক্তির গল্প। একটি অভ্যুত্থান আমাদের দিয়েছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা, আর সেই সূত্রে পেয়েছি পাকিস্তানি তারকাদের দর্শনলাভের সৌভাগ্য ! প্রশ্ন থাকে: আমরা কি সত্যিই সাংস্কৃতিকভাবে স্বাধীন হয়েছি, নাকি শুধু এক ধরনের নিয়ন্ত্রণের বদলে আরেক ধরনের নির্ভরশীলতা গ্রহণ করেছি ? যাই হোক, অন্তত আমাদের তরুণরা খুশি। তারা পাচ্ছেন নতুন বিনোদন, নতুন মুখ, নতুন গান। আর আমরা পাচ্ছি নতুন সাংস্কৃতিক পরিচয় : দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উদার বিনোদন বাজার !
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



