
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্প্রতি এক অদ্ভুত ও জটিল সংকেত পাঠানো হয়েছে। ইনটেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের ঘটনাটি কোনো সাধারণ কূটনৈতিক সফর নয়, বরং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতি। এই ঘটনাটি হঠাৎ করেই দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং অনেককে ১৯৭৯ সালের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক জাতিসংঘ সফরের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। এটি কি কেবলই একটি কূটনৈতিক সৌজন্যতা, নাকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ?
ড. ইউনূস একজন নোবেল বিজয়ী, যিনি হঠাৎ করেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দেশের রাজনৈতিক সংকটের কেন্দ্রে এসেছেন। তার সঙ্গে যে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা (বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি) যুক্ত হয়েছেন, তা কেবল সৌজন্যতার জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা হচ্ছে। এই সফরটি একই সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরার একটি প্রয়াস এবং দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐক্যের বার্তা দেওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।
এই সফরকে ঘিরে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত কৌশল। একদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা রয়েছে; অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির একসঙ্গে উপস্থিতি ভবিষ্যৎ জোটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একই সঙ্গে ধারণা করা হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ, মিয়ানমার করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে কোনো অপ্রকাশিত আন্তর্জাতিক এজেন্ডাও এই সফরের নেপথ্যে কাজ করছে।
ড. ইউনূসের এই সফরে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মতো তিনটি দলকে বেছে নেওয়ার পেছনে কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ থাকতে পারে। বিএনপি দেশের প্রধান বিরোধী দল এবং একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি। জামায়াত একটি সুসংগঠিত দল, যাদের একটি নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক রয়েছে। অন্যদিকে, এনসিপি একটি ছোট দল হলেও এর সঙ্গে যুক্ত নেতাদের একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে। এই তিন দলের প্রতিনিধিদের একসঙ্গে নেওয়ার মাধ্যমে ড. ইউনূস সম্ভবত একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তবে এখানে আওয়ামী লীগের ভয় বা উদ্বেগ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
এই সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া মিশ্র। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল এটিকে ইউনূসের নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের সাইফুল হক মনে করছেন এর পেছনে বড় ধরনের ভূরাজনৈতিক বোঝাপড়া রয়েছে। নাগরিক ঐক্যের মান্না প্রশ্ন তুলেছেন কেন এনসিপিকে বেছে নেওয়া হলো, আর কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন জ্যেষ্ঠ নেতা ফখরুলের সফরসঙ্গী হওয়া মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সাধারণ মানুষের মাঝেও কৌতূহল ও সংশয় রয়েছে—এটি কি সত্যিই জাতীয় স্বার্থে নেওয়া উদ্যোগ, নাকি বিদেশি প্রভাবের কৌশল ?
এই সফরের ফলাফল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। রাজনৈতিক নেতাদের যুক্তরাষ্ট্র সফর, জাতিসংঘে তাদের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নতুনভাবে গঠন করবে। ড. ইউনূসের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি নতুন ধরনের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সংমিশ্রণ তৈরি হতে পারে, যা দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য পরিবর্তন করবে।
তিন দল নিয়ে ড. ইউনূসের জাতিসংঘ সফর: রাজনীতিতে ধাঁধা-মানবজমিন
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



