somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব দোষ শেখ হাসিনার !

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেকদিন পর zahid takes এর ডা. জাহেদুর রহমানের এনালাইসিস ভিডিও দেখলাম। জুলাই আন্দোলনের পূর্বে বিশেষত যখন র‍্যাব স্যাংশন খায় তখন থেকেই উনার ভিডিও দেখা আরম্ভ করি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের মিথ্যাচার নিয়ে উনার ভিডিও বেশ আলোচিত হয়। জুলাই আন্দোলনের পরে তেমন কোন ইউটিউবারের ভিডিও আর দেখা হয় না রেগুলার। আজকে হটাৎ দেখি ইউটিউব জাহেদ ভাইয়ের ভিডিও সাজেস্ট করছে। ভিডিও চালু করে জানতে পারলাম বাংলাদেশ নাকি ইউরো ফাইটার টাইফুন যুদ্ধ বিমান কিনছে। বেশ অবাক হলাম। মাত্রই কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ চায়না যুদ্ধ বিমান J10-C কিনবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এখন আবার টাইফুন ৪.৫ জেনারেশন কেনার প্রয়োজন পড়লো কেন?

জাহেদ ভাইয়ের ভিডিও দেখে পুরোই হতাশা অনুভব করছি। তিনি অনেকটা আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নিতে গিয়ে ভুল এনালাইসিস করে বসে আছেন। উনার দাবি হলো বাংলাদেশ নাকি বৈচিত্র্য আনতে ভিন্ন দেশের যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করছে। আমরা সামরিক প্রযুক্তি ও যুদ্ধ বিমানে চায়নার উপর বেশি নির্ভরশীল তাই এখন আমাদের ইউরো ফাইটার টাইফুন কেনা খুবই দরকার। সরকারের এই কাজকে তিনি সাপোর্ট করছেন। উনার মতে, ভারতের মতো শত্রুভাবাপন্ন দেশ যেহেতু প্রতিবেশী তাই এমন সব কালেকশন নাকি ভারতকে ভয় পাঠিয়ে দিবে। বাঙ্গু এনালিস্ট বুঝি এমনই হয়!

এই টাইফুন কেনার প্রথম বুদ্ধি শেখ হাসিনার উপদেষ্টাদের মাথা হতে এসেছিলো। ২০৩০ সালের মধ্যে বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়ন করতে ইউরো ফাইটার টাইফুন কেনার কথা ছিলো। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার সিদ্ধান্ত নেন যে রাশিয়ান এবং চীনা যুদ্ধবিমান আর যথেষ্ট নয় প্রতিবেশী দেশগুলোকে ডিটার করতে। তিনি ২০১৬ সালে ফার্নবরো এয়ারশোতে নিজে ইউরোফাইটার টাইফুন পরিদর্শন করেন এবং এই বিমানের জোরালো সমর্থক হয়ে ওঠেন। ২০১৭ সালে ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর অধীনে মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট (MRCA) প্রোগ্রাম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে ইউরোপ থেকে আধুনিক যুদ্ধবিমান কিনতে সাহায্য করার "প্রস্তুতি" জানায়। ২০২০ সালে শেখ হাসিনা ইতালি সফরে গেলে ইতালীয় মিডিয়া রিপোর্ট করে যে বাংলাদেশ ইউরোফাইটার টাইফুনে আগ্রহী। ২০২১ সালে বিমানবাহিনী সরকারের কাছে ১৬টি পশ্চিমা যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ২৫,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুরোধ করে। পরে অবশ্য এই ভাবনা বাদ পড়ে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ হইচই পড়ে গেছে। শিবির নিয়ন্ত্রিত পেইজ গুলোতে ঈদের খুশি দেখা যাচ্ছে। এবার ভারতকে নাকি দেখিয়ে দেয়া যাবে। একই রকম ভাবনা দেখেছিলাম পলাতক ছাত্রলীগের মধ্যে। টাইফুন চুক্তি নিয়ে শেখ হাসিনার আমলে তারা ফ্লেক্স খেতো যে মিয়ানমার কে বিমান হামলা করতে এই সিদ্ধান্ত নাকি মাস্টারক্লাস। যাক তাদের আশাও পূরণ করছে ইন্টেরিম সরকার। বাদ যাবে কোনো শিশু এমন নীতি গ্রহণ করছে ইন্টেরিম। তাদের সাধুবাদ জানাই।

আচ্ছা ইন্টেরিম কেন শেখ হাসিনার বাতিল ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে তৎপর হলো? শেখ হাসিনার প্রতিটি চুক্তি দেশ বিরোধী হলেও ইন্টেরিম কেন সেটা বাস্তবায়ন করতে চায়। দুই মাস পর নতুন সরকারের জন্য কেন তারা অপেক্ষা করলো না? প্রশ্নটা এখানেই। ইন্টেরিম সরকার জানে তারা অস্থায়ী, তাদের কাজ নির্বাচন পর্যন্ত দেশ চালানো। কিন্তু তারা এমন সব দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করে যাচ্ছে যা নতুন নির্বাচিত সরকারকে বাধ্য করবে হাসিনার রেখে যাওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে। এটা কি সুবিবেচনাপ্রসূত?

ব্লগে সর্বপ্রথম শেখ হাসিনার এয়ারবাস চুক্তি এবং সেটার পিছনে ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতি নিয়ে আমিই লিখেছিলাম। শেখ হাসিনা ২০২৩ সালে যখন আমেরিকার কঠিন চাপের মুখে ছিলেন তখন জয়ের বন্ধু আরাফাতের লবিং এ ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো বাংলাদেশ সফরে আসেন। সেখানে শেখ হাসিনা এবং ম্যাক্রোর মধ্যে (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। এই এমওইউ ছিল একটা মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং, কোনো চূড়ান্ত চুক্তি নয়। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এমওইউ হলো একটা ইন্টেন্ট অব ইন্টারেস্ট প্রকাশের মাধ্যম মাত্র। এটা আইনত বাধ্যবাধকতা তৈরি করে না।

কিন্তু শেখ হাসিনা ইউরোপ কে ঘুষ দিতে চেয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। আমেরিকা যখন নাখোশ তখন রপ্তানি সুবিধা বজায় থাকার জন্য ইউরোপের সাথে চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন এয়ারবাস কিনলে ইউরোপ খুশি হবে, আর ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় থাকবে। নিজের গদি তিনি টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবেন কিন্তু জুলাই আন্দোলনের পর সব হিসাব নিকেশ পালটে যায়। প্রফেসর ইউনুস প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ক্ষমতায় এসেই লন্ডন সফর যান। তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সাথেও দেখা করতে চেয়েছিলেন। লন্ডন সফরে তিনি এয়ারবাস কেনার অবস্থায় বাংলাদেশ নেই বলে প্রতিনিধি দলকে জানান।

এর মাঝেই ঘটে আরেক বিপত্তি। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সারাবিশ্বের উপর শুল্ক বাড়িয়ে দেন। বাংলাদেশ উচ্চ শুল্কের হাত থেকে বাচতে আমেরিকার সাথে ২৫ টি বোয়িং কেনার চুক্তি করে। অবশ্য বলে রাখা ভালো বাংলাদেশ বিমান আগে থেকেই বোয়িং বিমান রয়েছে। যেটুকু ক্যাপাসিটি আছে সেটা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না নতুন বোয়িং কেনার কোনো দরকার ছিলো না। বাংলাদেশ বিমান নিজেই জানে না সরকার কি ধরণের চুক্তি করেছে। শেখ হাসিনার এয়ারবাস কেনার চুক্তি ছিলো আরো বাজে ডিসিশন। বাংলাদেশ বিমান এয়ারবাসের জন্য প্রস্তুত নয় একেবারেই। এদিকে বোয়িং এর যে মডেলটি সাম্প্রতিক সময়ে প্রচুর দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ সেটাই কিনছে। এরকম হযবরল সিচুয়েশনে লন্ডন সফরে গিয়ে এয়ারবাস কিনতে পারবেন না বলে ইউনুস সাহেব জানিয়ে দেন। এটার রিয়াকশন ভালো আসেনি!

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত জার্মান, ইতালি, ফ্রান্স ও ইউকের রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশকে পুনরায় চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখতে চাপ দিচ্ছে। তারা এমনটাও বলেছে যে এয়ারবাস না কিনলে ইউরোপের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। ভবিষ্যতে পোষাক রপ্তানি সুবিধা সংকুচিত হতে পারে। নভেম্বরের শুরুতে ফ্রান্স দূতাবাসে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা একযোগে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, উড়োজাহাজ কেনার আলোচনায় যেন এয়ারবাসকে 'যৌক্তিকভাবে' বিবেচনা করা হয়। তারা ইউরোপে কয়েক বিলিয়ন ইউরোর বাংলাদেশি পণ্যের বাজার, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ, যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং দীর্ঘ অংশীদারত্বের কথা মনে করিয়ে দেন বারবার।

ইন্টেরিম সরকার নিশ্চিতভাবে বেকায়দায় পড়ে যায়। তারা একপ্রকার উভয় সংকটে রয়েছে । ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলো এমন সতর্ক-বাণীর দুই সপ্তাহের মধ্যে এমন ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। অর্থাৎ টাইফুনের মতো এত ব্যয়বহুল বিমান যার মেইনটেনেন্স খরচ অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেটার পিছনে রয়েছে মূলত কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা। এটা একটা কমপেনসেশন, একটা রাজনৈতিক সমঝোতা। ইউরোপকে বলা হচ্ছে: দেখুন, আমরা এয়ারবাস না কিনলেও ইউরোপীয় কোম্পানি থেকে তো কিনছি। আপনাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো।

কিন্তু এখানে একটা বড় সমস্যা আছে। চীন থেকে মাত্র কিছুদিন আগে J10-C কেনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অক্টোবর মাসে চিফ এডভাইজারের অফিস জানায় যে ২০ টি J-10CE বিমান কিনতে শুধু বিমানের দাম লাগবে ১.২ বিলিয়ন ডলার, আর ট্রেনিং এবং স্পেয়ার পার্টস সহ মোট খরচ হবে ২.২ বিলিয়ন ডলার। এই খরচ ২০৩৫-৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত দশ বছরে ছড়ানো হবে। এখন আবার ইউরোফাইটার টাইফুন কেনার কথা বলা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো: বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কি এত টাকা আছে? এত বিমান রক্ষণাবেক্ষণের সক্ষমতা আছে? প্রশিক্ষিত পাইলট আছে? গ্রাউন্ড ক্রু আছে?

বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এখনও মূলত চীনা F-7 (যা মিগ-২১ এর চাইনিজ কপি) এবং আটটি রাশিয়ান মিগ-২৯ দিয়ে চলছে। F-7 বিমান এতটাই পুরনো এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ যে জুলাই মাসে একটা F-7 ঢাকার একটা কলেজ ক্যাম্পাসে ক্র্যাশ করে ৩৬ জন নিহত হয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী কখনো আগে কোনো আধুনিক, জটিল পশ্চিমা যুদ্ধবিমান চালায়নি। তাদের কি টাইফুনের মতো অত্যাধুনিক বিমান পরিচালনার সক্ষমতা আছে? ইউরোফাইটার টাইফুন একটা ট্উইন-ইঞ্জিন সুপারসনিক বিমান যা সর্বোচ্চ ৫৫,০০০ ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে এবং Mach 2.35 গতিতে যেতে পারে। এটা অত্যাধুনিক AESA রাডার দিয়ে সজ্জিত। এটার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বছরে কোটি কোটি ডলার। বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?

উত্তর হলো: না। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রস্তুত না। ঠিক যেমন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রস্তুত না ২৫টা নতুন বোয়িং নিতে, কিংবা ১০টা এয়ারবাস নিতে। এদের কাছে পর্যাপ্ত পাইলট নেই, প্রশিক্ষিত ক্রু নেই, রক্ষণাবেক্ষণের অবকাঠামো নেই। কিন্তু সরকার চুক্তি করে যাচ্ছে। কেন? কারণ রাজনৈতিক।

এখন প্রশ্ন আসে: কেন ইউরোফাইটার? কেন সুইডেন থেকে Gripen কিনছে না? কেন ফ্রান্স থেকে Rafale কিনছে না? এই দুটোই চমৎকার বিমান এবং টাইফুনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় । উত্তর হলো: ইউরোফাইটার কনসোর্টিয়ামে চারটা দেশ জড়িত – ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং স্পেন। চারটা দেশকে একসাথে খুশি করা যায়। আর এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেসও এই কনসোর্টিয়ামের অংশ। সুতরাং এয়ারবাস নাম শুনেই ইউরোপীয় দূতরা কিছুটা সন্তুষ্ট হবেন।

কিন্তু এখানে একটা বড় সমস্যা আছে। Rafale কিনলে শুধু ফ্রান্স খুশি হতো। Gripen কিনলে শুধু সুইডেন খুশি হতো। কিন্তু ইউরোফাইটার কিনলে চারটা দেশ খুশি হয়। এটা একটা কূটনৈতিক ক্যালকুলেশন। কিন্তু এটা কি সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত? একেবারেই না।

এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আসে: কে এই পরামর্শ দিয়েছে? কে বলেছে যে টাইফুন কেনাই এখন সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত? শেখ হাসিনার আমলে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং তার উপদেষ্টারা টাইফুনের প্রবল সমর্থক ছিলেন। তারা ২০১৫ সাল থেকেই এটা চাইছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল যে চীন এবং রাশিয়ার উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে, পশ্চিমা প্রযুক্তি আনতে হবে। কিন্তু তারা কখনো খরচের হিসাব দেননি। তারা কখনো বলেননি যে বিমানবাহিনী প্রস্তুত কিনা।

অন্তর্বর্তী সরকারের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার (NSA) খলিলুর রহমান এই সিদ্ধান্তে জড়িত। তিনি একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিক, কিন্তু সামরিক বিশেষজ্ঞ নন। তিনি কি জানেন যে টাইফুন কেনা বাংলাদেশের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত? নাকি তিনিও ইউরোপীয় দূতদের চাপে পড়ে এই সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছেন? বিমানবাহিনীর বর্তমান প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান কি আসলেই এটা চান? নাকি তিনিও রাজনৈতিক নির্দেশ মানছেন?

এখন আসি মূল প্রশ্নে: কেন এয়ারবাস কিংবা টাইফুন কেনা বাংলাদেশের জন্য অপ্রয়োজনীয়? প্রথমত, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ইতিমধ্যে বোয়িং চালায়। তাদের পাইলট বোয়িং প্রশিক্ষিত। তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ক্রু বোয়িং প্রশিক্ষিত। এখন এয়ারবাস আনলে নতুন প্রশিক্ষণ লাগবে, নতুন অবকাঠামো লাগবে, নতুন স্পেয়ার পার্টস ইনভেন্টরি লাগবে। এটা অনেক ব্যয়বহুল। আর বিমান বাংলাদেশের এখন রুট নেই, যাত্রী নেই, টাকা নেই। নতুন বিমান কিনে কী হবে? তারা উড়াবে কীভাবে? জুলাই মাসে এক রিপোর্টে বেরিয়েছে যে বিমান বাংলাদেশের ১৯টা বিমানের মধ্যে ৯টাই গ্রাউন্ডেড, উড়ছে না। তাদের সক্ষমতা নেই বর্তমান বিমানগুলো ঠিকভাবে চালাতে, আর তাদের জন্য ২৫টা নতুন বোয়িং কেনা হচ্ছে?

দ্বিতীয়ত, বিমানবাহিনী। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোট ফাইটার জেট সংখ্যা প্রায় ৪০-৫০টা। এর মধ্যে অধিকাংশই F-7, যা মূলত অকেজো। মিগ-২৯ আছে ৮টা। এখন চীন থেকে J-10C আসছে ২০টা। এর সাথে যদি টাইফুন আরো ১৬টা আসে (যা শোনা যাচ্ছে), তাহলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কাছে তিন রকমের সম্পূর্ণ ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থাকবে: চীনা J-10C, রাশিয়ান মিগ-২৯ (যদিও পুরনো), এবং ইউরোপীয় টাইফুন। তিনটা আলাদা রক্ষণাবেক্ষণ সিস্টেম, তিনটা আলাদা স্পেয়ার পার্টস চেইন, তিনটা আলাদা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম। এটা লজিস্টিক নাইটমেয়ার। কোনো সামরিক বাহিনী এভাবে কাজ করে না।

শেখ হাসিনার চুক্তি খারাপ কিন্তু বুদ্ধি একেবারে হাটুতে ছিলো না। উনার মাথায় এসেছিলো যে বেসামরিক বিমান ঋণ নিয়ে কিনলেও যদি বাংলাদেশ বিমান লাভ করতে পারে তবে ঋণ পরিশোধ করা যাবে কিন্তু সামরিক বিমান কিনলে আপনাকে প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে প্রতিবছর। এতে রিজার্ভের উপর চাপ পড়বে। বাংলাদেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ার দুইটি প্রধান মাধ্যম রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি খাত সংকুচিত হলে এই সামরিক বিমানগুলোর ব্যয় মেটাতে রিজার্ভের উপর ভালো পরিমাণ চাপ পড়তে পারে। এসব সামরিক বিমান থেকে আপনি কোনভাবেই আয় করতে পারবেন না।

এখন বাংলাদেশের সামনে তিনটা পথ আছে। এক, ইউরোপের চাপে নতুন করে এয়ারবাস কেনা, যা অপ্রয়োজনীয় এবং ব্যয়বহুল। দুই, টাইফুন কিনে ইউরোপকে সন্তুষ্ট করা, এটাও ব্যয়বহুল এবং অপ্রয়োজনীয়। তিন, সাহস করে বলা যে বাংলাদেশ এখন এসব চুক্তি করার অবস্থায় নেই, এবং নির্বাচিত সরকার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তৃতীয় পথটা নিচ্ছে না। তারা দ্বিতীয় পথ নিয়েছে। কেন? কারণ তারা দুর্বল, তারা চাপে আছে, এবং তাদের কাছে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি নেই। তারা শুধু ইউরোপকে খুশি করতে চায়, আমেরিকাকে খুশি করতে চায়, এবং কোনোভাবে তাদের কয়েক মাসের মেয়াদ পূর্ণ করতে চায়। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা ভাবছে না।

শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন তিনি চালাক। তিনি ভেবেছিলেন আমেরিকাকে এড়াতে ইউরোপকে ব্যবহার করবেন। তিনি ভেবেছিলেন বড় বড় চুক্তি করলে বিদেশি শক্তিরা তাঁকে ক্ষমতায় রাখবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ তাঁকে বাঁচাতে পারেনি। তিনি পালিয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া কূটনৈতিক ফাঁদগুলো এখনও বাংলাদেশকে জর্জরিত করছে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই ফাঁদে পা দিচ্ছে, একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু মূল দোষ কার? শেখ হাসিনার। তিনিই এই খেলা শুরু করেছিলেন। তিনিই দেশকে এই জগাখিচুড়িতে ফেলে গেছেন। তিনি যদি দায়িত্বশীল নেতা হতেন, তাহলে এমন প্রতিশ্রুতি দিতেন না যা পূরণ করা সম্ভব নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৪–৫ আগস্ট : রাষ্ট্রক্ষমতার মুখোশ খুলে দেওয়া রাত ও দিন

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০১

৪–৫ আগস্ট : রাষ্ট্রক্ষমতার মুখোশ খুলে দেওয়া রাত ও দিন

৪ আগস্ট রাত — আশ্বাসের আড়ালে ছদ্ম-অভ্যুত্থানের নীরব নকশা
৪ আগস্ট সন্ধ্যায় কোটা-আন্দোলনের বিশৃঙ্খলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যখন রাষ্ট্রজুড়ে উত্তেজনা,... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে এমপি হওয়ার মতো ১ জন মানুষও নেই

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪



দলগুলোতে মানুষই নেই, আছে হনুমান।

আমেরিকায় যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় না'আসতো, বাংলাদেশে হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে ইউনুসকে দেশের প্রেসিডেন্ট করে, দেশ চালাতো প্রাক্তন মিলিটারী অফিসারেরা ও বর্তমান জামাতী অফিসারা মিলে। দুতাবাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

=চলো দেখি সূর্য উদয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫০


শীত কুয়াশা ফুটো করে,
সূর্য যখন উঠে নীলে
দেয় ছড়িয়ে সোনা আলো,
দেখলে মনে শান্তি মিলে।

একটি সকাল ফের পেয়ে যাই
নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচি সুখে,
পাই প্রেরণা সূর্যের কাছে
আলোর শক্তি তুলি বুকে।

দেখবে নাকি আমার সাথে
রোজ বিহানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মজনু নামাজ পড়ার পর মোনাজাত ধরল তো ধরলই, আর ছাড়তে চাইল না | পাক আর্মির বর্বরতা!!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭



১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মি পুরো বাঙালী জাতির উপর যে নৃশংস হত্যাংজ্ঞ, বর্বরতা চালিয়েছে যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। সত্যি বলতে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতির উপর পাকিস্তানী আর্মি কর্তৃক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সব দোষ শেখ হাসিনার !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬


অনেকদিন পর zahid takes এর ডা. জাহেদুর রহমানের এনালাইসিস ভিডিও দেখলাম। জুলাই আন্দোলনের পূর্বে বিশেষত যখন র‍্যাব স্যাংশন খায় তখন থেকেই উনার ভিডিও দেখা আরম্ভ করি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×