
বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন কাউকে বসবে যিনি থানা থেকে লুট হওয়া হাজার হাজার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করবেন, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন, দেশে নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করবেন—ঠিক তখনই আমরা পেলাম এক অভূতপূর্ব প্রতিভা। যিনি প্রমাণ করলেন: আসল সমস্যা আগ্নেয়াস্ত্র নয়, পেঁয়াজের দাম ।
গত দেড় বছর ধরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়, ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনা যে ঐশ্বরিক হাতের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন, তার সবটুকুই উনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে গেছেন। ফুটবলে গোল দেওয়ার বদলে তিনি ব্যর্থতার মাঠে গোল করে চলেছেন—আর রেফারি? তারা যেন সবাই কাঠের চশমা পরে বসে আছেন। থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ? উদ্ধার হয়নি। জেল ভেঙে পালানো জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী? ধরা পড়েনি। বিচারালয়ের সামনে গুলি করে হত্যা, গলা কেটে হত্যা ? বন্ধ হয়নি । কিন্তু পেঁয়াজের দাম কেন ৩৫ টাকা বাড়লো? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা অবশ্যক !
একদিন সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলেন: "নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তো ভালো নয়। আপনার মন্তব্য কী?" স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উত্তর দিলেন: "এসব বাদ দেন! আপনারা আমাকে বলেন তো, পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৩৫ টাকা বাড়বে কেন?"এই উত্তর শুনে পুরো জাতি একটা গভীর দার্শনিক প্রশ্নের মুখোমুখি হলো: মানুষ যদি বেঁচেই না থাকে, তাহলে পেঁয়াজ খাবে কে ? কিন্তু এই প্রশ্ন আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে মৌলিক বলে মনে হয়নি। তিনি এরপর ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে আরেক অভূতপূর্ব গবেষণায় মনোনিবেশ করলেন: বন্দীদের খাবারে মাংসের টুকরার চেয়ে আলুর সংখ্যা কেন বেশি?
জেলখানার রান্নাঘরে বসে আলু গোনার দৃশ্যটি জাতির চোখে চিরকালের জন্য গেঁথে গেছে। মনে হচ্ছিল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, তিনি যেন জাতীয় সবজি সেন্সাস ব্যুরোর প্রধান। এতসব কাণ্ড দেখে জনমনে একটা যুক্তিসংগত প্রশ্ন জাগছে: যদি উনার আলু, পটল, পেঁয়াজ নিয়ে এত গবেষণার আগ্রহ, তাহলে তাকে শুধু কৃষি উপদেষ্টা বানানো হলো না কেন? নাকি উপদেষ্টা পরিষদ মনে করেছিল: আইনশৃঙ্খলাও তো এক ধরনের চাষাবাদ—সন্ত্রাসীদের ফসল কাটতে হয়, অস্ত্রের বীজ উপড়ে ফেলতে হয় ! কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই মাঠে ফসল ফলার বদলে আগাছা বাড়ছে।
সামাজিক নিরাপত্তা ভেঙে পড়ছে। পুলিশ মবের ভয়ে, অসম্মানের ভয়ে ডিউটি করছে না। সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে নামলেও তাদের উপস্থিতির কোনো চিহ্ন নেই—কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে এমন দায়িত্বে অভ্যস্ত নয়। টার্গেট কিলিং, ধর্ষণ, খুন—সব বেড়েছে বহুগুণ। আর এই বিশৃঙ্খলার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কাঠের চশমা পরে ঘোষণা করছেন: "দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বাচন করার জন্য অনুকূল!" কোন দেশের কথা বলছেন উনি ?
সামনে নির্বাচন আসছে। আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারছে না। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল চাঙা করার বদলে যদি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সবজির হিসাব মিলাতে থাকেন, তাহলে পুরো বাংলাদেশ দাউ দাউ করে জ্বলবে। আর সেই আগুনে বসে আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আলু পুড়িয়ে খেতে থাকবেন—হয়তো পাশে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


