somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের কি করণীয় ?

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত মে মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফটোকার্ডে দেখানো হয়েছিল ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকা। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখন পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর দেশ রূপান্তরসহ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় চাঞ্চল্যকর একটি শিরোনাম ছাপা হয়, যেখানে বলা হয় ভারত আওয়ামী লীগ নেতাদের কলকাতা ছাড়তে বাধা দিচ্ছে। ঠিক সে সময়েই বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাজা ঘোষণা করা হয় এবং এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, আরেকজন পলাতক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভারত ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাইলে বিমানবন্দর থেকেই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনাগুলো স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দেয় যে প্রায় পঁচিশ হাজার আওয়ামী নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিয়ে ভারত আসলে কী পরিকল্পনা করছে।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ওসমান গনি হত্যাকাণ্ডে ভারতের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিয়ে নানা জল্পনা শোনা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে আওয়ামী লীগের একজন পেশাদার ক্যাডার ফয়সালকে প্রশিক্ষণ দিয়ে হত্যার জন্য বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক সাংবাদিক এবং বাংগু বিশ্লেষক জুলকার নায়ের সায়ের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন, তার দাবি ভারত প্রায় আশিজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে লক্ষ্যবস্তু হত্যার জন্য বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে আধা-জামাতি ইনকিলাব পত্রিকা খবর ছেপেছে যে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নাকি আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। অবশ্য এসব দাবির সত্যতা যাচাই করা কঠিন, কিন্তু এই ধরনের অভিযোগ যখন বারবার উঠছে তখন প্রশ্ন করা স্বাভাবিক।

এখন প্রশ্ন হলো, ভারত এত এত আওয়ামী নেতাকর্মীকে আশ্রয় দিয়ে ঠিক কী অর্জন করতে চায়? যারা ভারতে পালিয়ে গেছে তারা তো কোনো সাধু সন্ন্যাসী নন, বরং অনেকেই গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত। তারা অন্য কোনো দেশে যেতে পারছে না, তাহলে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিলেই তো সমস্যার সমাধান। আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা এখন বাংলাদেশের জেলে বন্দি, তাদের বিচার চলছে এবং সাজাও হবে। ভারত যদি এই পলাতকদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়, তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নতির সুযোগ তৈরি হতে পারে। এই পলাতকরা যেমন ভারতের জন্য বোঝা, তেমনি আওয়ামী লীগের জন্যও একধরনের দায়। শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না, কিন্তু বাকিদের ব্যাপারে ভারত নতুন করে ভাবতেই পারে।

আসলে এই পলাতকদের পক্ষে আওয়ামী লীগকে সাহায্য করার মতো কিছু নেই। তারা এখন আরামের জীবন কাটাচ্ছে, যা কামিয়েছে তা দিয়ে ভালোই চলছে। দল সংগঠিত করার কোনো প্রয়োজন তারা অনুভব করছে না। বরং আমলা-আমলাতন্ত্রের সাথে জড়িত যারা ছিল তাদের আরও আগে ফেরত পাঠানো দরকার, কারণ এরাই প্রকৃতপক্ষে দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে। সাধারণ নেতাকর্মীদের চেয়ে এই আমলারাই দেশ ধ্বংসের প্রধান কারিগর ছিল। তারাই সিস্টেম চালাতো, তারাই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতো এবং তাদের হাতেই দুর্নীতি ও অত্যাচারের প্রকৃত ক্ষমতা ছিল ।

আওয়ামী লীগের মধ্যেও কিন্তু বেশ পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। যারা ধরা পড়েছেন, যেমন গোলাম দস্তগীর গাজী, ইনু, মেনন, দিপু মনি, শাহজাহান খান, জুনায়েদ পলক, এরা পালালেন না কেন? এরা কি গত ষোল বছরে কম অর্থ উপার্জন করেছেন? যেখানে ঢাকার ১৬ নম্বর আসনের সাধারণ এমপি ইলিয়াস মোল্লা, ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম হাজারী বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন, সেখানে এই বড় নেতারা পালাতে ব্যর্থ হলেন কীভাবে? গত বছর আগস্টের চার তারিখে যখন সবাই পালাচ্ছিল, তখন এই নেতারা কেন পালাননি? এমনকি আওয়ামী লীগের বিনোদন জগতের সমর্থকরা, যেমন নবনীতা চৌধুরী, রিয়াজ, ফিরদৌস, তারিন, এরা পর্যন্ত পালিয়ে গেছেন। অথচ আসাদুজ্জামান নূরের মতো বড় মাপের ব্যক্তি পালাতে পারেননি। সাবের হোসেন চৌধুরী এখনও দেশে থেকে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। সাবেক স্পিকার আব্দুল হামিদ স্বাভাবিকভাবেই দেশে আছেন। এই পার্থক্যটা কেন? হয়তো সবার অপরাধের মাত্রা এক নয়, অথবা সবাই একইভাবে পরিস্থিতি বুঝতে পারেননি। কিংবা কেউ কেউ মনে করেছেন তাদের পালানোর দরকার নেই। হয়তো কারো কারো নৈতিক অবস্থান ছিল যে বিপদের সময় দেশ ছেড়ে পালানো উচিত নয়।

বাস্তবতা হলো, ভারত যদি শেখ হাসিনা ছাড়া বাকি সবাইকে ফেরত পাঠায়, তাহলে সবার জন্যই মঙ্গল। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নত হবে, ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ভালো হবে এবং আওয়ামী লীগও এই দায় থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু ভারত এই পথে যাচ্ছে না কেন, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। হয়তো তারা মনে করছে এদের দিয়ে ভবিষ্যতে লাভ হবে, কিন্তু বাস্তবে এরা কারো কাজের নয়। না আওয়ামী লীগের, না ভারতের, না বাংলাদেশের জনগণের। এরা শুধু নিজেদের স্বার্থে ব্যস্ত, দল বা দেশ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

পুরো পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আগামী দিনগুলোতে আরও অনেক কিছু ঘটতে পারে। ভারত তার নীতি পরিবর্তন করবে কিনা, পলাতকদের ভবিষ্যৎ কী হবে, এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোন দিকে যাবে, সেটা দেখার বিষয়। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার যে বর্তমান পরিস্থিতি কারও জন্যই টেকসই নয়। প্রশ্নগুলো সামনে রাখা দরকার কারণ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক চাওয়া এক জিনিস, কিন্তু অন্ধভাবে সব মেনে নেওয়া আরেক জিনিস। যুক্তি বলে যে অপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত, দল-মত নির্বিশেষে। এবং যে দেশ গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের কথা বলে, সেই দেশের উচিত অভিযুক্ত অপরাধীদের আশ্রয় না দিয়ে বরং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৫১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইনকিলাবের বীজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪


সদ্য শিশু জন্ম নিয়ে সদ্য খুলেছে আঁখি,
মা বলে, কথা দাও বাছা—হাদি হবে নাকি?
শিশুর মুখে কান্নার রোল, হাদি হবার দায়,
বাবা বলে, এই তো হাদি—বুকে আয়, বুকে আয়।

ঘরে ঘরে আজ হাদির... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৭


গত মে মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফটোকার্ডে দেখানো হয়েছিল ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকা। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখন পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। গত ১১... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দ কুতুবের পোষ্ট: ভারতের করণীয় কি কি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৩



বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য ভারতের করণীয় কি কি?

০) শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো।
১) বর্ডার থেকে কাঁটাতারের ফেন্চ তুলে নেয়া।
২) রাতে যারা বর্ডার ক্রস করে, তাদেরকে গুলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×