somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু আমার

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাঞ্চ আওয়ারের একটা কাজে অফিসের বাইরে গিয়েছিল অমিত। কাজ শেষ করে এইমাত্র অফিসে ফিরলো ও। নিজের রুমে এসে ঢুকতেই চোখ পড়লো টেবিলের ওপর। বিরাট বড় সেক্রেটরিয়েট টেবিলের ওপর পড়ে আছে একটি নীল খাম। নিজের অজান্তে দাঁড়িয়ে পড়লো ও। হাত বাড়িয়ে খামটি তুলে নিয়ে টেবিল ঘুরে ওর রিভলভিং চেয়ারে গিয়ে বসলো।
খামটির ওপর স্পষ্ট যুক্তাক্ষরে ওরই নাম, ঠিকানা লেখা। খুব পরিচিত লেখা। বুঝতে পারলো এটা উর্মিলার চিঠি।
বেশ অবাক হলো অমিত, কারণ প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেছে উর্মিলার সঙ্গে ওর কোন যোগযোগ নেই। উর্মিলা নিজে ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে আর অমিতও সে চেষ্টা করেনি। যত্ন করে খামটি খোলে অমিত। বেরিয়ে পড়ে দু’টো হালকা নীল কাগজ। একটিতে লেখা-
অমিত,
কেমন আছ?
অনেকদিন হলো তোমার কোন খবর জানিনা। হয়তো তোমার ব্যস্ততা নিয়ে তুমি ভালই আছ। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো তোমার কাছে যেতে কিন্তু তবুও আমি যাইনি। কেন, জানো? কারণ আমি নিজ মুখে বলেছিলাম তুমি যখন চাওনা তখন তোমার সঙ্গে আর কোন সম্পর্ক আমি রাখবোনা। তবে কোনদিন যদি চাও, কোনদিন যদি তোমার মন থেকে দ্বিধ, সংশয় দূর হয় তবে তুমি আবার আমার কাছে এসো আমি তোমাকেস্বাগতম জানাবো। আজ তোমার কথা খুব মনে পড়ছে, কেন বলতো? আজকের এই দিনে তুমি আমাকে খুব সুন্দর একটি বিকেল উপহার দিয়েছিলে। সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তাই সেই বিকেলটির কথা ভেবে আমর একটি ছোট্র লেখা তোমাকে উৎসর্গ করলাম। আশা করি আমার লেখটি নতুন করে আবার সেই বিকেলটির কথা মনে করিয়ে দেবে। ভালো থেক।- উর্মিলা।

চিঠিটি ভাঁজ করে টেবিলের ওপর রেখে অন্য কাগজটি খোলে অমিত। সেটাতে একটি কবিতা লেখা। পড়তে শুরু করে ও । রক্ষণশীল, সংযত আচরণ দুটো কিভাবে ওর চরিত্রে এমনভাবে মিশেছিল অনেক ভেবেও বুঝতে পারেনি অমিত। উর্মিলার সাথে পরিচয় ওর এক বই মেলায়। একটি বইয়ের ষ্টলে। উর্মিলা একজন উঠতি লেখিকা। খুব জনপ্রিয় না হলেও বেশ ভাল লেখে। ওর লেখার স্টাইল, ভাব, ভাষা আর উপস্থাপনা ভারী সুন্দর। অমিত বরাবরই পড়তে ভালবাসে। আর সে কারণেই ও উর্মিলা চৌধুরীর লেখার একনজ ভক্ত।
একটি বইয়ের স্টলে দাঁড়িয়ে উর্মিলা চৌধুরীর বই খুঁজছিলো অমিত। কিন্তু নতুন কোন বই না পেয়ে হতাশ হয়ে দোকানের ছেলেটিকে বলছিল, এইবার কি উনার বই বের হয়নি?
ছেলেটি জবাব দিয়েছিল, না স্যার এবার নতুন কোন বই উনার বের হয়নি।
কেন! উনি কি লেখা ছেড়ে দিয়েছেন নাকি?
ছেলেটি হেসে জবাব দিয়েছিল, তাতো বলতে পারবোনা স্যার। সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন। উনি তো এখানেই বসে আছেন। আপনি উনাকেই জিজ্ঞেস করুন। তাই নাকি? উনি এখানে! উর্মিলা চৌধুরীকে দেখার তীব্র কৌতুহল অমিত কে পেয়ে বসে।
ছেলেটির সঙ্গে অমিত দোকানের কাউন্টারে আসে। দেখে মালিকের সামনের চেয়ারে বসে একজন শাড়ি পড়া তরুণী কথা বলছে। বছর সাতাশ-আঠাশ হবে হয়তো। পরনে লাল পাড় আর লাল আঁচলের সাদা জামাদানী শাড়ি। লাল ব্লাউজ, চুলগুলো ঘড়ের কাছে একটি এলো খোঁপা করা। প্রসাধনহীন মুখ। তবু যেন কোমল, মসৃণ ত্বকের সৌন্দর্য ওর প্রধাধনহীনার সমস্ত দৈন্য মুছে দিয়েছে। প্রথম দর্শনে মুগ্ধ হলো অমিত। উগ্র সাজে সজ্জিতাও নয় আবার অপরিপাটিও নয়।
ছেলেটি উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, বললো - এই যে ম্যাডাম, আপনার একজন ভক্তকী বলছে; শুনুন। মুখ ফিরিয়ে অমিতের দিকে তাকায় উর্মিলা। হাসি, হাসি মুখ। হাসি মুখেই বলে, আপনি.............
আমি অমিত রায়হান, একজন ব্যবসায়ী এবং অপনার একজন একনিষ্ট ভক্ত। ভক্ত..? সেতারের রিমঝিম সুরের মূচ্ছনা তুলে হেসে ওঠে উর্মিলা। কি এমন লিখি, তার আবার ভক্ত।
উর্মিলার অর্পূব হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে বিমুদ্ধ দৃষ্টিতে অমিত। হাসি থামিয়ে জানতে চায়, জানতে চায় উর্মিলা, কি যেন বলছিলেন?
আমি আপনার নতুন বই খুঁজছিলাম কিন্তু পেলাম না, তাই বলছিলাম, আপনি কি লেখা ছেড়ে দিয়েছেন নাকি?
আবারো ঠিক তেমন করে হেসে ওঠে উর্মিলা। তারপর বলে, দাঁড়িয়ে রইলেন কেন ? বসুন না ।
অমিত একটা চেয়ার টেনে উর্মিলার মুখোমুখি বসে। আসলে কি জানেন, যখনই লিখতে চাই, মনে মনে ভাবি এটা সেটা নিয়ে লিখবো। তখনই মনে হয় আমার আগেই যেন এসব বিষয় নিয়ে লেখা হয়ে গেছে। অবাক হয়ে ভাবি তখন । লেখার মত কোন সাবজেষ্টই যেন আমার জন্য অবশিষ্ট নেই, আমি বোধহয় অনেক পরে জন্মগ্রহণ করে ফেলেছি। এখন যাই লিখিনা কেন সকলে বলবে আমি নকল করেছি। এই ভয়ে আপাততঃ লেখা বন্ধ করেছি।
উর্মিলার কথায় এবার অমিতও হেসে ফেলেছিল। সেদিন ওর সহজ সরল, আর সাবলীল কথা বার্তায়মুগ্ধ হয়েছিল অমিত। আর উর্মিলার সব লেখাই প্রায় অমিত পড়েছে জেনে উর্মিলাও খুব খুশি হয়েছিল।
এরপর আর একদিন উর্মিলার দেখা হয়েছিল অমিতের এক পত্রিকা অফিসে। অমিত ওর এক সম্পাদক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। ঘরে ঢুকতেই দেখতে পায় উর্মিলা বসে আছে। খুব সাধারণ একটি তাঁতের শাড়ি পরা। ঘাড়ের কাছে তেমনি এলো খোঁপা। কাঁধে একটি শান্তিপূরী ব্যাগ। ওকে দেখেই উৎফুল্ল গলায় বলেছিল, আরে আপনি? কতদিন ভেবেছি আপনার অফিসে একদিন যাবো কিন্তু মতিঝিল কমার্শিয়াল এ এরিয়াটি এতবড় আর বিল্ডিংগুলো সব যেন একই রকম খুঁজে পাব কিনা এই ভয়ে আর যাইনি।
অমিত হেসে বলেছিল আপনিও তাহলে ভয় পান?
বাবা, পাবনা......!আমি তো একটি মেয়ে, নাকি?
বন্ধুর সঙ্গে কথা শেষ করে অমিত বলেছিল উর্মিলাকে, ফ্রি আছেন? কপাল কুঁচকে একটু চিন্তা করে বলেছিল, হুঁ আপাতত আছি। কেন বলুন তো?
তাহলে আমি সঙ্গে করে আমার অফিসে নিয়ে যেতাম। আপনার ও চেনা হয়ে যেত ।
সেদিনের পর থেকে উর্মিলা প্রায়ই ওর অফিসে আসতো। ওর কথা বার্তায়, চলা ফেরায় কোন জড়তা, কিংবা দ্বিধা-সংকোচ ছিলনা। হঠাৎ করেই চলে আসতো। গল্প, গুজব করে চা খেয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে যেত। কিন্তু উর্মিলা মেয়ে হয়েও একটা ভয়-ভীতি, অপরাধবোধ কাজ করতো। ওর কেবলই মনে হতো অফিসের স্টাফরা কেউ কিছু মনে করেছে কিনা। ওর স্ত্রীর কানে গেলে ওদের সম্পর্কটি সে কিভাবে নেবে সারক্ষণ এই বোধ ওর মনে কাজ করতো কিন্তু উর্মিলার আচরণ এতটাই স্বাভাবিক এবং দ্বিধাহীন ছিল যে ওকে অমিতের দ্বিধা-দ্বন্দের কথা বলতে সংকোচ হতো।
ঠিক এক বছর আগে এমনি একদিনে অফিসে বসে কাজ করছিল অমিত। দুপুর তিনটা থেকে সাড়ে তিনটা হবে। উর্মিলা ওর অফিস রুমে এলো। একটা ফাইল দেখছিল অমিত। পদশব্দে মুখ তুলে তাকাতেই দুচোখ থেমে থাকলো অমিতের । ওর সামনে দাঁড়িয়ে অপরুপ সাজে সজ্জিতা উর্মিলা। অনেক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো অমিত। সবসময় সাধারণ ভাবেই ওকে দেখেছে কিন্তু যেন ও অন্য উর্মিলা। বসন্তী রংয়ের জামদানী শাড়ি পরেছে গাঢ় লাল পাড়, আর লাল ঁআচলের সাতে লাল ব্লাউজ, লাল টিপ। একরাশ কালো চুলের এলো খোঁপায় জড়িয়েছে রজনীগন্ধার মালা । সেতারের সেই রিমঝিম সুরের মূর্চ্ছনার মত হাসে, শুনে তন্ময়তা ভাঙ্গে অমিতের। আর সেই সাথে যেন ওর বুকটাও দুলে ওঠে। কি ব্যাপার? শুধু তাকিয়েই থাকবে বসতে বলবেনা? ও হ্যাঁ বসো বসোনা। অপ্রস্তুত হয়ে জবাব দেয় অমিত।
নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলে কি ব্যাপার এত সেজে, গুজে তুমি এ সময়ে.......।
- তুমিই বলতো কেন?
মাথার চুলে হাত বুলায় অমিত। আমিও তো তাই ভাবছি। তুমি তো কখনো এত সাজগোজ করোনা।
- বাহ আজ যে পহেলা বৈশাখ। আজকের দিনটি যে সাজেরই দিন। বাংলা একাডেমীর একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তাই বলো আরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আজ পহেলা বৈশাখ। তা তো ভুলবেই। সারাক্ষণ মুখ বুজে কাজ করলে কারো জগত সম্পর্কে খেয়াল থাকে। কি করছো, খুব ব্যস্ত ?
ব্যস্ততা তো আছেই........ কিন্তু ............. কেন বলতো?
তোমাকে নিয়ে একটু বাইরে বেরুতাম।
একটু চিন্তা করে অমিত, তারপর বলে, ঠিক আছে তুমি গিয়ে গাড়িতে বসো, আমি আসছি।
উর্মিলা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলে টেবিলের কাগজপত্র গুছিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে অমিত। সিঁড়ির কাছে এসে থামতে দাঁড়ায় । শুনতে পায় অফিসের একজন স্টাফ বলছে, এই যে হাসান সাহেব একটা বিষয় খেয়াল করেছেন। আমাদের বড় সাহেব আজকাল খুব ভালো মুডে থাকেন। আর একজন বলে, আরে ভাই ভালো মুডে থাকবেনা। ঐ রকম সুন্দরী মহিলা আশে পাশে ঘুরে বেড়ালে সবারই মুড ভালো থাকে। সকলে একসঙ্গে হেসে ওঠে।
অমিত আর দাঁড়ায় না। সিঁড়ি ভেঙ্গে দ্রুত নেমে যায় নীচে। ওদের ঐ উচ্চ চকিত হাসি যেন তাড়া করে ওকে। রাগে ক্ষোভে চোখ মুখ লাল হয়ে যায় ওর। কি হয়েছে অমিত শরীর খারাপ লাগছে?
না- এমনি। গম্ভীর গাড়ি স্টার্ট দেয় অমিত। তারপর বলে কোথায় যাবে বল?
চল বাংলা একাডেমীতে যাই।
লোকজনের এত ভীড় ভাল লাগেনা, চল নির্জনে অন্য কোথাও যাই।
বেশ তো কোথায় যাবে চল। অমিতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে উর্মিলা। সে হাসি চোখ এড়ায় না অমিতের। বলে হাসছো যে......? তুমি বোধহয় আমাকে কিছু বলতে চাও, তাই না?
কই নাতো!
কেন মিথ্যে বলছো। ভালো করেই জানি তুমি আমাকে কিছু বলতে চাও, আর কি বলবে সেটাও বোধ হয় আমি জানি। হাসে উর্মিলা.....
উহুঁ মাথা নাড়ে অমিত অসম্ভব তুমি তা জানো না।
ওর সেই স্বভাবসুলভ হাসি হেসে ওঠে উর্মিলা । হাসি থামলে বলে, তার মানে সত্যি কিছু বলতে চাও এইতো? শোন অমিত, আমার কাজই হলো মানুষের কথা লেখা। তাই মানুষের চোখ, মুখ প্রতিটি ভঙ্গী আমাকে বলে দেয় তাদের মনের কথা। আর সে জন্যই তো আমরা যারা লিখি তারা কথার মালায় সাজিয়ে লিখতে পারি তাদের অনুভুতিগুলো। আচ্ছা বেশ, তোমার সঙ্গে আমার চ্যালেঞ্জ থাকলো সত্যি কথাটা আমি বলতে পারি কি না।
ছুটে চলেছে গাড়ি, ওরা দুজনে নীরব। অনেকক্ষন পর নীরবতা ভঙ্গে অমিত। অচ্ছা উর্মিলা তুমি বিয়ের কথা কিছু ভাবছো না?
তেমন করে ভাবছিনা তবে মনের মত যদি পেয়ে যাই কাউকে তাহলে বিয়ে করবো নতুবা এই তো বেশ..।
মনে মত, মুখ ফিরিয়ে তাকায় অমিত উর্মিলার মুখে দিকে। সে আবার কেমন? কিছুক্ষণ চিন্তা করে জবাব দেয় উর্মিলা এই ধর যে আমার বন্ধু হবে, সুখ-দু:খের সঙ্গী হবে। আমাকে ভালবাসবে আবার সেই সাথে আমার কাজ কর্ম, আমার আদর্শ নীতি আচার-আচরণকে শ্রদ্ধা করবে। স্বামীসুলভ বা কর্তা সুলভ আচরণ করবেনা। আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতাদেবে।
আর সে রকম কাউকে যদি না পাও............?
না পেলে...... যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে’। হেসে ওঠে উর্মিলা।
সারাটা জীবন তুমি একলা চলতে পারবে?
বাহ্ একলা কোথায়! জন্ম আর মৃত্যুর সময় ছাড়া মানুষ কখনোই একা হয়না। দেখছো না কত মানুষ পৃথিবীতে। সকলে নিজেদের সুখ নিয়েই ব্যস্ত । কত মেয়েই তো রান্না, বান্না, সন্তান পালন, স্বামী সেবা নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে আমাদের দুই, চারজন মেয়ে না হয় থাকনা অন্য কিছু করার জন্য।
উর্মিলার কথা শুনে ভারী ভালো লাগে অমিতের ,ওর মনের মেঘ এতক্ষণে কেটে যায়, বুঝতে পারে ওর সন্দেহ অমূলক। উর্মিলাকে নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। কিন্তু সামাজের আর দশজন আর ওর স্ত্রী.....সে কি স্বাভাবিকভাবে নেবে ওদের সম্পর্কটি আর সব থেকে বড় ভয় যে ওর নিজেকে নিয়ে। ওতো একজন পুরুষ, উর্মিলার বুদ্ধিদীপ্ত কথা, পরিচ্ছন্ন আর শালীন আচরণে ও এমনিতই ভারী মুগ্ধ। তারপরেও আজকাল ওর ঐ সুগঠিত দেহ আর সেতারের রিমঝিম শব্দের মত উচ্ছল হাসি যে ওর হৃদয়ে হঠাৎ করে কখনো কখনো ঝড় তুলছে। সেই অনুভুতিটুকু নিয়ে কি ও ভীত নয়। ওতো মানুষ আর ভুলতো মানুষই করে। বোটানিক্যাল গার্ডেনের বাইরে গাড়ি রেখে গার্ডেনের ভেতরে প্রবেশ করে ওরা। বাদানো পথ ধরে নীরবে হাঁটে কতক্ষণ । ঝাউ বাগানের ভেতরে সবুজ ঘাসে ছেয়ে থাকা একটি জায়গায় এসে দাঁড়ায় দু’জন বিকেলের সোনালী আলোয় তখন ঝলমল করছে চারিদিক।
বসো......বলে সবুজ ঘাসের ওপর নিজেও বসে অমিত। জুতো জোড়া খুলে নগ্ন পায়ে একটু দূরত্ব রেখে উর্মিলাও বসে। চারদিকে তাকিয়ে মুগ্ধ গলায় বলে উর্মিলা- কি ভালো যে লাগছে। তুমি কি এর আগে এখানে এসছো অমিত?
অনেকদিন আগে একবার পিকনিকে এসছিলাম।
বৌ সহ..............?
না......
কেন বৌকে নিয়ে তো মাঝে মধ্যে আসতে পারো।
কি যে বলনা,.......এত সময় কোথায়! নিরাসক্ত অমিতের কন্ঠ।
কেন, সময় করে নেবে। আজ যে ভাবে নিলে । বৌয়ের কি ইচ্ছে হয়না স্বামীরসঙ্গে বেড়ানোর । তারপর হেসে বলে আসলে অমিত স্ত্রী মানেই তোমাদের কাছে বহুবার পড়ে ফেলা উপন্যাসের মত তাইনা? নতুন কারে পড়া তো দুরের কথা হাতে নেয়ার আগ্রহ টকুও থাকেনা।
এত সুন্দর একটা বিকেল শুধু ঝগড়াই করবে? হাসে অমিত
তবে কি করবো?
কেন প্রেম করবো। আচ্ছা উর্মিলা তোমার সঙ্গে যদি আমার আমার আরও আগে দেখা হতো তবে বেশ হতো তাই না?
কি হতো? উর্মিলার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি।
বোঝ না কি হতো!
আবারো রিমঝিম করে হেসে ওঠে উর্মিলা। তাহলে আমারও অস্তিত্ব হতো বহুবার পড়ে ফেলা উপন্যাসিটর মত। এমন একটি সুন্দর বিকেল তুমি আমাকে কখনোই উপহার দিতে না। ঠিক কি না বলো?
সে কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে অমিত, ডাকে উর্মিলা।
বলো..............;
তুমি যেন কি বলতে চেয়েছিলে?
তুমি তো বলেছিলে সে কথা জান।
হ্যাঁ জানি, তোমার আর আমার সম্পর্কটি নিয়ে তোমার মনে বিবেকের দংশন দেখা দিচ্ছে এই তো?
চমকে উর্মিলার মুখের দিকে তাকায় অমিত।
কি সত্যি বলেছি তাই না? হেসে ফেলে উর্মিলা
কিন্তু কেন বলতো? একজন নারী আর পুরুষের মধ্যে কি বিবাহের ছাড়া আর কোন সম্পর্ক হতে পারেনা। এতসব সম্পর্কের মাঝে আর একটি নতুন সম্পর্কের কি জন্ম হতে পারে না। লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা বিবর্জিত একটি সম্পর্ক তো হতে পারে। আর যার নাম হবে বন্ধুত্ব। আমরা কি দুজন-দুজনার ভালো বন্ধু হতে পারি না? বলো!
কিন্তু উর্মিলা আমি পুরুষ , মহা পুরুষ নই। ভূল ত্রুটি তো আমিও করতে পারি। মুগ্ধ হওয়ার মত কোন কিছু দেখালে আমিও তো বিভ্রান্ত হতে পারি; পারি না বলো?
পারো বৈকি......কিন্তু তাতে অন্যায় কোথায়? এই জগতের কত অপরুপ সৌন্দর্য দেখে তো আমরা মুগ্ধ হই। ভালো একটা গান শুনে, বই পড়ে, ফুলের সৌন্দর্য, চাঁদের আলো, সমুদ্রের বিশালতা, স্রষ্টার কত অপরুপ সৃষ্টি দেখেই তো মুগ্ধ যেন কোন কিছু ধ্বংস করে না দেয়, কোন কিছু নষ্ট করে না দেয়, সেটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আর সেই ষড় রিপুকে দম ন করার ক্ষমাতা আমাদের আছে বলেই না আমরা সৃষ্টির সেরা মানুষ। তাই না?
অমিত খুব মনোযোগ দিয়ে উর্মিলার কথাগুলো শুনছিলো আর ওর মনের অন্ধকার দূর হয়ে যাচ্ছিল। মুগ্ধ বিস্মিত গলায় বলে ওঠে ও সত্যি উর্মিলা তোমার মত করে সকলে যদি ভাবতো।
ভাববে বৈকি নিশ্চই ভাবে। তবে সে বাবার পথ তৈরী করে দেখাতে হবে আমাদেরই । কলুষমুক্ত সম্পর্ক সৃষ্টি করে তবেই না সকলে এমন করে ভাবে। চল সন্ধ্যা হয়ে আসছে। দু’জনে উঠে দাঁড়ায়।
অমিত আর উর্মিলা পাশাপাশি হাঁটে। উর্মিলা বলে আমি জানি এখনো তোমার মনে দ্বিধা রয়েছে। বেশ তো, তুমি না হয় ভাব। নিজেকে ভালো করে চেনো। আমি আজকের পর থেকে তোমার সঙ্গে আর নিজে থেকে কোন যোগাযোগ রাখবো না। যেদিন তুমি দ্বিধা-দ্বন্দ কাটিয়ে নিঃসংকোচিত্তে আমার কাছে আসবে, সেদিন তোমাকে আমি বন্ধু বলে সাদরে গ্রহন করবো।
সেদিনের পর থেকে পুরো একটি বছর নীরব থেকেছে উর্মিলা। আর অমিত, সেও নিজেকে বুঝতে চেষ্টা করেছে। আর বুঝতেও পেরেছে ভাললাগা আর ভালবাসা এক নয়। শুধু মাত্র ভাললাগা দিয়ে যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয় সেটা হলো বন্ধুত্ব। মনস্থির করে চোখ খোলে অমিত। টেলিফোন সেটটি টেনে নিয়ে কাংখিত নাম্বারেডায়ল করে।
হ্যালো...ওপশের কন্ঠ উর্মিলার। কে বলছেন?
তোমার বন্ধু......
কে অমিত....... বাব্বা, এতদিনে বুঝি মনে পড়লো?
মিলা, এইমাত্র তোমার চিঠি পেলাম।
তুই বুঝি আমার কথা মনে পড়লো?
জানো, তোমার কবিতার দুটো লাইন আমার খুব ভালো লেগেছে।
কোনটাবলতো?
“তেমনি রাঙানো এক অনুভুতি থাক
তোমার সারা অন্তর জুড়ে
কাজে-কর্মে অবসরে”।

ওপাশে থেকে ভেসে এলো সেতারে রিমঝিম শব্দে হাসির সুর আর সে হাসির সুরে অপূর্ব ভালো লাগায় ভরে গেল অমিতের মন। খেয়াল করলো এই প্রথম সে হাসির সুরে ওর হৃদয় দুলে উঠলো না। বুঝতে পারলো অমিত এতদিনের দ্বিধা, সংকোচ কাটিয়ে আর বিবেকের দংশন থেকে পুরো পুরি মুক্ত হতে পেরেছে ও।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×