somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই ছেলেটি

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার যে একটি জন্মদিন ছিল সে কথা বোধ হয় ভুলেই গিয়েছিলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম আর দশটা শিশুর মতই একদিন এই জগতে আমি এসেছিলাম দু’টি মানব, মানবীর সংসারে, আমার আগমনে, আনন্দে আর সুখে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তারা হয়তো কখনো স্মরণ করেছিল আমার আগমনের সেই দিনটির কথা। কিন্তু কালের স্রোতে সেই দিনটিকে একদিন আমি ভূলে গিয়েছি। আর আমার চারপাশে যারা আছে তারাও কখনো মনে করিয়ে দেবার প্রয়াস করেনি। কিন্তু একদিন..................

সবেমাত্র আমি সকালে ঘুম থেকে উঠেছি। বেড সাইড টেবিরের ওপর রাখা টেলিফোনটি স্বশব্দে বেজে উঠলো । বাড়ির কেউ এখনো বিছানো ছাড়েনি। তাই আমি ফোন ধরলাম । ওপাশ থেকে ভেসে এলো নরম, কোমল একটা পুরুষ কন্ঠ, শুভ জন্মদিন।
বললাম কে আপনি? কাকেই বা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
কেন? আপনাকে ................... ওপাশের কন্ঠটি বললো।
-- আমাকে ।
আপনাকে কে বললো আজ আমার জন্মদিন?
যেই বলুক....... কথাটা তো মিথ্যা নয়।
একটু ভালাম। হ্যাঁ সত্যি আজ আমার জন্মদিন। তাই অবাক হলাম বললাম হ্যাঁ কথাটা সত্য। কিন্তু আপনি জানলেন কি করে?
বাহ আপনার ভক্তরা জানবে না আপনার এই বিশেষ দিনটির কথা ।
ভক্তরা.....!
হ্যাঁ, আামি আপনার একজন ভীষণ ভক্ত।
হেসে বলি- আমার ভক্ত? কি বলছেন?
বিশ্বাস হচ্ছে না.......? বেশ তো আমি বিশ্বাষ করিয়ে দিচ্ছি। শুনুন আমি আপনার সাথে আজ দেখা করতে চাই। বলুন কখন যাবো?
আজেই।
হ্যাঁ.......।
বেশ তো বিকালে আসুন। বাসা চেনেন তো?
ও পাশের কন্ঠ হেসে ওঠে................ নিশ্চিয়ই, নইলে যেতে চাইছি কেন?
সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝেও সকালে পাওয়া সেই ফোনের কন্ঠটি আমাকে বিচলিত করছিল এবং সেই সাথে অজ্ঞাত সেই পুরুষ কন্ঠে জন্মদিনের ভঙ্গিটা আমার হৃদয়কে অজানা আনন্দে আপ্লুত করছিল।
আমার অবচেতন মন হয়তো অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে সে এল। কলিং বেলের শব্দে নিজেই দরজা খুললাম, আগে কখনও দেখিনি তাই চেনার প্রশ্ন আসেনা । শুধু হাতে ধরে রাখা একরাশ লাল গোলাপ দেখে তার মুখের দিকে তাকালাম বুঝলাম এই আমার সেই ভক্ত...... কন্ঠ শুনে ভেবেছিলাম বোধহয় সে পরিপূর্ণ একজন পুরুষ কিন্তু এখন দেখলাম ভারী ছেলেমানুষ। বছর ২৩/২৪ বয়স হবে। বেশ লম্বা,একহারা গড়ন । শ্যামলা রংয়ের মুখখানা ভারী মায়াময়। মুখে লেগে রয়েছে লাজুক একটুকরো হাসি।
হাসি মুখে বললো, চিনতে পেরেছেন?
ওকে কি বলে সম্বোধনকরব ভেবে পেলাম না, তাই মাথা নেড়ে সায় জানালাম। ছেলেটি লাজুক হেসে ফুলগুলো আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।
তারপর বললো, আবারও বলি শুভ জন্মদিন।
ওর কথায় আমিও হেসে উঠলাম। ফুলগুলো হাত বাড়িয়ে নিই তারপর দ্ধিধা, দ্বন্দ্ব কাটিয়ে বলি এসো ভেতরে এসো।
ড্রইংরুমে দুজনে মুখোমুখি দু’টো সোফায় বসি। নিরবে মাথা নিচু করে বসেছিল ও। ওর দিকে তাকিয়ে বুঝলাম সহজ হতে পারছে না ও তাই নিজেই কথা বলি, তোমার নাম কি?
মুখ তুলে জবাব দেয় ও- মিঠু।
কী পড়?
এবার মাষ্টার্সে ভর্তি হয়েছি।
একটু নিরব থেকে আবার বলি, সকালে বলছিলে তুমি আমার ভক্ত সে কথাকি সত্যি?
আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমি হাসি
কেন! আমার চোখের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় মিঠু।
না, মানে তোমাদের মত ছেলেরা এমনিতেই তো গল্প উপন্যাস পড়ে না। কেউ কেউ আবার বলে বাংলাদেশের রাইটারের বই পড়ি না। সে জন্যেই বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি কিন্তু আপনার সবগুলো উপন্যাস পড়েছি এবং বার, বার।
মৃদু হেসে বলি, কোনটি বেশী ভালো লেগেছে।
যখন যেটা পড়ি তখন সেটাই বেশী ভালো লাগে। মিঠুর চোখ হেসে ওঠে। জানেন সেদিন আপনার লেখা প্রথম উপন্যাসটি পড়ি, সেদিনই ইচ্ছে হয়েছিল আপনার সঙ্গে দেখা করি। তারপর থেকে দিনে দিনে সে ইচ্ছে আমার বেড়েই চলেছে। আচ্ছা কী করে আপনি এমন লিখেন বলুন তো?
কেমন?
এই যে হৃদয় ছোঁয়া। যখন পড়ি মনে হয় আমারই যেন মনের কথা। বুকের মধ্যে এক ধরনের কষ্ট কেবলই জমাট বাঁধতে থাকে। অন্যের মনের একান্ত অনুভবগুলো কি করে এত নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেন। মনে হয় যেন আপনারই কথা, জানেন আপনার একটি উপন্যাস পড়ে আমি কেঁদেই ফেলছিলাম।
কোনটি বলতো? জিজ্ঞাস করি আমি।
সেই যে নাযিকা হাসপাতাল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে বাইরে। সেখানে হাসপাতালের একজন ডাক্তারের সঙ্গে তার দেখা। ডাক্তার জিজ্ঞাস করেছে, আপনি এ সময়ে বাইরে? ভিজিটর কেউ আপনি?
মেয়েটি বললো না, আমিই নিষেধ করেছি। আমি চাইনা লোকজন সবসময় আমাকে ঘিরে থাকুক। কিন্তু জানেন ডক্টর আজ মনে হচ্ছে বড় একা আমি। কাল থেকে আমার চোখে পৃথিবীটাই যেন বদলে গেছে। এত সুন্দর এই পৃথিবী অথচ মানুষের বেঁচে থাকার সময় এত কম। এত অল্প সময়ে পৃথিবীর কিছুই যে দেখা হয় না। ইচ্ছে মত পাওয়াও হয় না সবকিছু। আজ যখন জীবন মৃত্যুর কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছি তখন পৃথিবীটাকে খুব ভালবাসতে ইচ্ছে করছে। অথচ কে জানে আজকের দিনটিই আমার জীবনের শেষ দিন কিনা। জানেন নায়িকার বলা কথাগুলো আমার চোখে জল এনে দিয়েছিল। এমন অনুভুতি শুধু তারই হতে পারে যার জীবনে এমন মুহুর্ত আসে।
মিঠুর গলা ভারী হয়ে আসে কিন্তু আমি হেসে ফেলি। বলি, বাব্বা সব মনে রেখেছো। আমার নিজেরও তো এত কিছু মনে নেই।
এই জন্যই তো বললাম অন্যের মনের একান্ত অনুভবগুলো কিভাবে নিজের ভাষায় প্রকাশ করেন। তাছাড়া আপনার লেখায় দুঃখ কষ্টগুলো এমন ফোটে। মাথা নীচু করে অনেকক্ষণ নিরব থাকে মিঠু।
ওর দিকে তাকিয়ে আমার কেন যেন মনে হয় ও কিছু বলতে চায় আমাকে।
তাই কোমল গলায় ডাকি, মিঠু
চোখ তুলে তাকায় মিঠু সে ডাকে।
তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?
আপনার কাছে আমার একটি আবদার আছে।
কি বলতো?
ইতঃস্তত করে মিঠু তারপর বলে, আপনি আমার বন্ধু হবেন।
ভেবেছিলাম ভুল শুনেছি তাই অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করি, কি বললে?
মুখ নীচু করে আবার বলেও আপনি আমার বন্ধু হবে?
হেসে উঠি আমি, তোমার কি মাথা খারাপ.........
কেন? চোখে জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকায় মিঠু।
বাহ তুমি আমার কত ছোট না।
তাতে কি হয়েছে?
মিঠুর কন্ঠে দৃঢ়তা লক্ষ্য করে জবাব দিই আমি, কি হয় সেটা আমি ব্যখ্যা করলেও তুমি বুঝবেনা । কিন্তু এইটুকু শুধু বলি, তোমার বন্ধুত্বকেস্বীকারকরার মত মন মানসিকতা অনেকদিন আগে আমি হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু..........
মিঠুকে বাধা দিয়ে বলি, উহু, কোন কিন্তু নায়।
তুমি তো আমার একজন ভক্ত এটাই কি আমাদের একটি ভালো সর্ম্পক নয়?
অনেকক্ষণ মাথা নীচু করে নিরব থাকে মিঠু। তারপর উঠে দাঁড়ায়। কিছু বলার জন্য আমাকে মুখের দিকে তাকায় । ওর মলিন মুখটি দেখে ভারী মায়া হয় আমার। যাওয়ার জন্য পা বড়িয়ে আবার থেমে যায় বলে, আমি যদি মাঝে মাঝে আপনার কাছে আসি বা ফোন করি আপনি কি রাগ করবেন?
বাহ রাগ করবো কেন?
আচ্ছা তাহলে আসি বলেই চলে যায় মিঠু।

তারপর থেকে মাঝে মাঝে সে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসতো। যখনই আমার নতুন কোন উপন্যাস বেরিয়েছে তখনই আসতো আর অকপটে ওর ভাললাগার কথা জানিয়ে যেত। কখনো বা ফোন করতো। যখনই কোন অনুষ্ঠানে গিয়েছি সকলের মাঝে ও কেও বসে থাকতে দেখেছি। বইমেলায় হয়তো কোন স্টলে বসেছি। বইয়ের সাথে অটোগ্রাফ দিয়েছি আমার ভক্তদের। ভীড়ের মাঝে সেও একটি বই নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে অটোগ্রাফের জন্য।
মুখে লাজুক হাসি নিয়ে বলেছে অট্রোগ্রাফটি হাতে দেয়া যায় না?
কখনো বিরক্ত হয়েছি, বিচলিত বোধ করেছি, কখনো ওর পাগলামো দেখে খুশিও হয়েছি।
এমনি করে এক বছরেরও বেশী সময় গাড়িয়ে গেছে। হঠাৎ একদিন মনে হলো মিঠু অনেক দিন আমার কাছে আসেনি। ফোনও করেনি। শুরুত্ব দিতে না চাইলেও মনে মনে ঠিকই বিচলিত বোধ করলাম কিন্তু ওর খোঁজ নেবার কোন উপায় খুঁজে পেলাম না কারণ ওর ঠিকানা আমার জানা নেই।
একদিন মিঠুর এক বন্ধু বাসায় এলো ওর মুখে জানতে পারলাম ও ভীষণ অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বেশ কয়েক দিন হলো।
জিজ্ঞেস করলাম কোন হাসপাতালে?
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে, বললো ছেলিটি।
সে কি চমকে উঠি আমি। ওর কি হার্টের সমস্যা না কী?
হ্যাঁ কাল ওর অপারেশন হবে। তাই আপনাকে দেখতে চেয়েছে।
অপারেশন হবে.................! ও কি আগে থেকে জানতো ও অসুস্থ?
হ্যাঁ, অনেক দিন আগেই জেনেছে। তবে ডক্টররা বলেছিল অপরাশেন করার মত কণ্ডিশান এখনো আসেনি তাই ওয়েট করছিল।
আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম আমি মনে মনে ভাবছিলাম মিঠু একদিন বলেছিল আপরেশনের আগের দিন রিনিলার বলা কথাগুলো পড়ে ওর চোখে জল এসে পড়েছিল আর বলেছিল কথাগুলো যেন ওর মুখের দিকে তাকাই। আপনি যাবেন তো আপা ওকে দেখতে, ও কিন্তু খুব আশা করে আছে। হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই যাবো। আমার আশ্বাস পেয়ে চলে যায় ছেলেটি।
সন্ধ্যার একটু পরেই মিঠুকে দেখার জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের উদ্যেশে রওয়ানা হই। পথে ওর জন্য রক্তলাল গোলাপ কিনি। মিঠুর বন্ধুর কাছ থেকে ওয়ার্ড নাম্বারজেনে নিয়েছিলাম, এই হাসপাতাল আমার খুব পরিচিত তাই সহজে ওকে খুঁজে পেলাম।
বুকের ওপর একটি হাত রেখে অপর হাত দিয়ে চোখ ঢেকে শুয়েছিল মিঠু। ওর বেডের পাশে দাঁড়িয়ে একপলক ওকে দেখলাম।
স্বাস্থ্য ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। মুখখানা ভারী শুকনো আর বিবর্ণ দেখাচ্ছিল।
কোমল গলায় ওকে ডাকি, মিঠু-
চোখ মেলে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ও তারপর খুশির গলায় বলে ওঠে আরে আপনি সত্যি সত্যি তাহলে এসেছেন!
বেডের পাশে রাখা টুলটিতে বসতে বসতে বলি-তুমি কি ভেবেছিলে আমি আসবোনা?
কি ভেবেছিলাম আমি জানিনা, কিন্তু এই মুর্হুতে আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগছে। এত আনন্দ লাগছে যে প্রকাশ করতে পারছি না। ওর রোগা পান্তুর চোখ চিকচিক করে খুশিতে।
মিঠুর মাথায় চুলগুলো আমার হাত দিয়ে নাড়া দিয়ে বলি, থাক আর তোমাকে প্রকাশ করতে হবে না। নাও ধরো ফুলগুলো।
ওর দিকে বাড়িয়ে দিই আমি। আমার ফুল আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন! মিঠুর মুখে হাসি-
উহু ফিরিয়ে দিচ্ছি না। তোমার বন্ধুত্বকে স্বীকারকরছি।
কেন! করুণা করছেন? ভাবছেন যদি মরে যাই তার আগে শুধু আর ছেলেটাকে কষ্ট দিই কেন? ছল ছল মিঠুর চোখ। আমার চোখও ভিজে ওন্ঠে। ভেজা গলায় বলি, ছিঃ মিঠু-ও কী কথা। দেখ তোমার কিছুই হবে না। সুস্থ শরীরে ফিরে যাবে তুমি তোমার কর্মজীবনে। কয়েকটি দিন শূধু একটু কষ্ট।
জানেন বিকেল থেকে কত জন এসছে, আমার বাব-মা, আত্মীয়-স্বজনকিন্তু আপনার দেয়া এই সান্ত্বনা আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগাচ্ছে। আচ্ছা আপনি তো কেউ নন তবুও এই মূর্হুতে আপনাকে আমার এত আপন মনে হচ্ছে কেন বলুন তো? কেন আপনার দেয়া সান্ত্বনাটুকু আমার মন ভরিয়ে দিচ্ছে।
হেসে বলি, কে বললো আমি তোমার কেউ নই। শোন প্রত্যেকটি মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মার সর্ম্পক। শুধু রক্তের সম্পর্ক কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্কই বড় নয়। মানুষ হিসেবে একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কটাই হলো আত্মার সম্পর্ক। তাই তো দুঃখের দিনে কষ্টের মুহুর্তগুলোতে যে পাশে এসে দাঁড়ায় তাকেই তখন ভীষণ আপন মনে হয়। আর এই কথাটা আমি আমার জীবন দিয়ে উপলদ্ধি করেছি। তুমি একদিন বলেছিলে না কারো জীবনে ’’কারো জীবনে সেই মুহুর্ত না এলে এমন অনুভুতি কেউ প্রকাশ করতে পারে না।
আমার জীবনে সত্যি এমনি মুহুর্তগুলো এক সময় এসেছিল। এই হাসপতালে তোমার মতই আমাকে কিছুদিন কাটাতে হয়েছে। আমার অপারেশনের আগের দিন রাতে হৃদয় দিয়ে আমিও অনুভব করেছি এমন কিছু অনুভুতি। সেদিন ঠিক এমন আপন মনে হয়েছিল। জান মিঠু সেইসব যন্ত্রনাময় দিনগুলো আমি ভূলেই গিয়েছি কিন্তু যারা আমার যন্ত্রণা ভূলিয়ে দিতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু ঠিকই মনে রেখেছে আমার অবচেতন মন। জান আমার অপারেশনের আগের রাতে ঠিক আজ যেমন এসেছি তোমার কাছে সেরাতে আমার কাছেও একজন এমনি করে ফুল নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল। আশ্বাস দিয়ে বলেছিল, ভয় নেই.........সব ঠিক হয়ে যাবে। সুস্থ শরীরে ফিরে যাবে আবার তোমার জীবনে। সে আমার কেউ ছিল না তবুও সেই মুহুর্তে তার আশ্বাস বাণীটুকু বিধাতার আশির্বাদ মনে হয়েছিল। কতদিন পেরিয়ে গেছে, ভুলে গেছি সব কিন্তু সেদিনের সেই ছেলেটির কথা আজও বুলিনি। তারপরও হেসে বলি সে জন্যেই তো উপলদ্ধি করতে পেরেছি আজ ঠিক এই মুহুর্তে এমন একজন কারো তোমার পাশে এসে দাঁড়ানোর খুব প্রয়োজন।
মিঠুর দু’চোখের কোন বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। ওর রোগা শীর্ণ হাত দু’টো দিয়ে আমার ডান হাতটি জড়িয়ে ধরে বলে, আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই তবে যদি বেঁচে থাকি তবে সারাজীবন আপনার কথা মনে থাকবে। আর যদি মরে যাই জানবেন কৃতজ্ঞ চিত্তে চলে গেলাম।
রাত হয়ে গিয়েছিল। মিঠুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতালে থেকে বেরিয়ে এলাম। মনটা ভারক্রান্ত হয়ে আছে হাসপাতাল চত্বর পেরিয়ে হাঁটছি। এই হাসপাতালের সব কিছুই আমার খুব পরিচিত অনেকগুলো যন্ত্রণাময় দিন রাত্রি কাটিয়েছিলাম আমি এখানে। কালের স্রোতে একদিন ভূলে গিয়েছিলাম সব। আজ আবার মনে পড়ছে। দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের জলে বার-বার কিন্তু সেটা নিজের অতীতের যন্ত্রণাময় স্মৃতিগুলোর কথা ভেবে, নাকি হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা অসহায়, অসুস্থ ছেলেটির কথা ভেবে নাকি হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা অসহায়, অসুস্থ ছেলেটির কথা ভেবে বুঝতে পারলাম না। কিন্তু অনুভব করলাম জীবনে একেকটি সময় আসে যখন অপরের দুঃখ কষ্টের সাথে নিজের দুঃখ কষ্টও মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।
সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:২১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×