কথায় বলে,যে দেশে গুণের সমাদর নেই সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না। যদি কোন লেখকের সাফল্যের সুপ্ত প্রতিভার মাপকাঠি করা হয় তবে ফেসবুকের এই সময়ে তার লেখার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না বরং যোগাযোগ দক্ষতা ও প্রচার প্রসারের উপর জোড় দেয়ার উপর বহুলাংশে নির্ভর করে।সেই দিক দিয়ে ব্যতিক্রম কাওসার চৌধুরী,তিনি প্রচারবিমুখ ও নির্ভেজাল জীবন ভালেবাসেন কিন্তু রুচিশীল পাঠক ঠিকই চিনে নেয় হীরকখণ্ড ও জাত লেখককে তাই তার প্রথম বই বায়স্কোপ ইতিমধ্যে স্টক শেষ হয়ে নতুনকরে আবারো ছাপা হচ্ছে।এতে খুব সহজেই বুঝা যায় ডিজিটাল যুগে আমরা সময়ের সাথে সাথে ঠিকই সম্মান দিতে জানি,চিনে নিতে পারি মূল্যবান হীরকখণ্ড,কদর করতে জানি,আপন করে নেই এক নিমিষেই আমাদের রত্নদের আর তেমনি একজন খাঁটি সোনা কাওসার চৌধুরী কে আপন করে নিয়েছে তার পাঠক ও ভক্তকুল।
আমি তার যতগুলো লেখা পড়ছি তাতে আমার মনে হয় সমসাময়িক লেখকের মধ্যে থেকে তিনি আলাদা। কাওসার চৌধুরী জীবন কে দেখেছেন পজেটিভ ও নেগেটিভ দুটি ধারায়,মিশেছেন দেশ বিদেশের অনেক ধর্ম, বর্ণ, ও বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের সাথে, লেখাপড়া করেছেন দেশ ও বিদেশে তাই তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে আছে হরেক রকমের চিন্তা ও চেতনা তাই তার লেখায় কল্পনাশক্তির ব্যবহার পাঠক কে নিয়ে যায় যোজন যোজন আলোকোজ্জ্বল দ্বীপে যেখানে কল্পনার ফানুস ওড়ে। তার লেখায় আছে গতানুগতিক ধারার বাইরে আলোকিত ও শিকড়ের গভীরের কথা - যেমন -তার গল্প- "নিহঙ্গ এ্যাই রক্কু"তে তিনি এক শক্তিমান লেখকের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন যাতে পাঠকের ভাবনার চোখে খুলে দেয়।
'একটা সময় প্রিয় যে মানুষটিকে কতবার যে ভালবাসি বলেছিলেন সেই মানুষটিকে আজ সামনাসামনি পেয়েও কেমন নিশ্চল। নেই আবেগের বাড়াবাড়ি। ভাবখানা এমন যেন কোনদিন পরিচয়ই ছিলো না। অথচ বাড়িতে আসতে দেরী হলে কত আবেগপূর্ণ চিটি লেখতো লীজা। মাত্র কয়েক বছরে সবকিছু ভুলে গেল? ভালবাসার যে মানুষটিকে নিয়ে দিনের পর দিন স্বপ্ন দেখতো সে মানুষটিকে আজ কেমন আছো বলতেও সংকোচ হয়। তোমাকে আমি চিনতে পেরেছি এটাও বুঝাতে অস্বস্তি লাগে।
মনে পড়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় পরিচয় হওয়া শ্রাবন্তীর কথা। তিনি তাকে মনে প্রাণে ভালবাসতেন; হয়তো শ্রীবন্তীও। কিন্তু শ্রাবন্তী খুব উচ্চবিলাসী হওয়ায় সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। সিটিজেন পাত্রকে বিয়ে করে ছয় মাসের মাথায় আমেরিকা চলে গিয়েছিল শ্রাবন্তী। আমেরিকার নিউজার্সি থেকে একটি চিটিও জামাল সাহেবের কাছে পাঠিয়েছিল। প্রেরকের ঠিকানায় শুধু নাম আর নিউজার্সি লেখা-
"জামাল,
হোপ এভরিথিং গোয়িং ওয়েল। আই এম গুড এজ ওয়েল উইথ মাই হাভি। ইট ওয়াজ মাই ড্রিম টু সেটেল্ড ইন ইউএস। আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট লাভ। আই অলয়েজ কেয়ার লাভ উইথ মানি, অলসো কম্পানি উইথ চারমিং ইয়াং এন্ড সাকসেসফুল গাই। সরি টু সে ইউ আর নট লাইক দ্যাট এট অল। সো টেক ইট ইজি। লুক ফরওয়ার্ড। হোপ ইউ কেন গেট এ লাভলি বিউটিফুল ওয়াইফ। বেস্ট উইসেস।
বাই-
মিসেস শ্রাবন্তী ফয়েজ।"
তখন অনেক অপমানিত হয়েছিলেন জামাল সাহেব। ভাবতেন একবার আমেরিকায় যেতে পারলে সামনে গিয়ে বলবো, দেখো আমিও আমেরিকায় আসতে পারি। আমারও সে যোগ্যতা আছে। অথচ গত তিন বছর থেকে আমেরিকার বোস্টনে থাকলেও একটিবারও শ্রাবন্তীর সাথে দেখা করার কথা মাথায় আসেনি তার। যদিও বোস্টন আর নিউজার্সির দূরত্ব খুব বেশি নয়। শুনেছেন এখন শ্রাবন্তীর ডিভোর্স হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে যার যার মতো থাকে।
সে এখন নিঃসঙ্গ। একা একটি ফ্ল্যাটে থাকে। সাথে একটা সাদা বিড়াল।
স্বভাবসুলভ অমায়িক বন্ধুবাৎসল ও বিনয়ী এই সব্যসাচী লেখকের প্রথম বই "বায়স্কোপ" যাতে আছে এগার টি গল্পের সমন্বয় আছে ডিফরেন্ট স্বাদ তাই বইটি কিনলে পাঠক তৃপ্ত হবে এটা সহজেই অনুমান করতে পারি।
বইটি অনলাইনে সহ একুশে বইমেলার নামকরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উৎস প্রকাশন, প্রভিলিয়ন ২২, ঢাকা তে পাওয়া যাচ্ছে।
আমি বইটির ব্যাপক সাফল্য কামনা করছি।
শুভ কামনায় -
এম রহমান লতিফ
যুক্তরাজ্য প্রবাসী
(লেখক -জীবনের ব্যাকরণ ও সোনালি স্বপ্নের অপমৃত্যু)
তাং- ০৭.০২.২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:৫৭