নিঃসন্দেহে 'মা' পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ও জনপ্রিয় নাম।এই জগৎ সংসারের শত দুঃখ,সুখের খেলায় সন্তানের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ জননী স্বাগীয় সুধা।৷মা কথাটি খুবই ছোট্ট কিন্তু এর গুরুত্ব ও ব্যাপ্তি অপরিসীম।এই দুনিয়ার আলো, বাতাস,দেখতে পাই যার জন্যে তিনিই মা।একজন মমতাময়ী কত যে কষ্ট করে তার সন্তানকে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখান তা অবশ্যই জন্মদাত্রী মা ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না। শুধু নামেই বড় নয়,মমতা আর ক্ষমতায় তাবৎ পৃথিবীর সবকিছু থেকে প্রবল ক্ষমতার অধিকারী হলেন মা। যুগে যুগে পৃথিবীর সব ধর্মে,সব সাধক,সব যাজক,সব রাজা বাদশা,রথী,মহারথী,মাকে দিয়েছেন অমরত্বেরও মর্যদা।বর্তমান কর্পোরেট যুগে সবকিছুই বাণিজ্যিক আর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মা শব্দটা ও তার ভয়াবহ হিংস্র-শিকার।
ইদানীং মা শব্দের অপ-প্রয়োগ,বাহারি স্লোগান শোনতে শোনতে বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। মনে হয় নকলের যুগে এই প্রিয় নামটি-ই বুঝি তার সরলতা,সৌরভ ও মাধুর্যতা হারিয়ে ফেললো।
-যেমন শুনি কেউ গেয়ে উঠে,
আমার মা, তোমার মা!
মানবতার মা! মহান মা!
কেউ বলে আবার বলে
আমার মা! আমাদের মা!
গনতন্ত্রের মা। উন্নয়নের মা! কল্যাণের মা!
দেশের মা! দশের মা! নদের মা! সমুদ্রের মা! ভাতের মা!ভাষার মা! ভোটের মা!
আশার মা!নেশার মা!
আসল মা! নকল মা!
এক গুষ্টি আবার গেয়ে উঠে,
---মায়ের হাতে দেশ,পথে আছে দেশ।
----মা তুমিই বাংলাদেশ।
অপর পক্ষ যুক্তি তুলে,
আমার নেত্রী,আমার মা,
মাকে আমার রাখবে জেলে সাধ্য কোন হালার না?
---আপোষহীন মা, তুমি মানেই গনতন্ত্র।
কত রঙ আর কত ঢংগে মাকে উপস্থাপন করে তা ভাষাহীন।
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এক হাদীসে বলেছেন,
“ যে ব্যক্তি মা অথবা বাবার চেহারার দিকে একবার মায়ার নজরে, মহব্বতের নজরে তাকায় । তার আমল নামায় একটি কবুল হজ্বের সওয়াব দেওয়া হবে।”
এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন হে আল্লাহর রাসুল, কেউ যদি এক হাজার বার এই ভাবে তাকায়? রাসুল (সঃ) উত্তর দিলেন, তার আমল নামায় এক হাজার কবুল হজ্বের সওয়াব দেওয়া হবে । (সুবাহানাল্লাহ )
ধনী হোক আর হত দরিদ্র হোক মা একজন মহীয়সী নারী।মায়ের জন্য ছেলের ভালবাসা আছে আর থাকবে এটাই নিয়ম, যতদিন চন্দ্র, সূর্য নিজ কক্ষপথে চলবে।যতদিন রইবে পৃথিবীর মানচিত্র। মা ছেলে এমন নজীর বিহীন ভালবাসা সব সমাজে, সব সময় পরিলক্ষিত হয়।
বায়েজিদ বোস্তামির কাহিনী আমরা কমবেশি সবাই জানি।
একদিন বায়েজিদ বোস্তামীর মা গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে পানি খেতে চাইলেন। বালক বায়েজিদ পানি আনতে গিয়ে দেখলেন কলসিতে পানি নেই। বায়েজিদ গভীর রাতে বহু দুরের ঝর্ণা হতে পানি নিয়ে এসে দেখলেন মা আবারো ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু তিনি মায়ের ঘুম না ভাঙ্গিয়ে সারারাত পানির গ্লাস হাতে মায়ের শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে প্রতিক্ষায় রইলেন কখন প্রিয় মায়ের ঘুম ভাঙে আর কখন পানি চেয়ে বসে এভাবেই এক সময় রাত কেটে ভোরের আলো এলো। মা ঘুম থেকে জেগে দেখলেন তার প্রাণপ্রিয় ছেলে বায়েজিদ তখনো শিয়রের পাশে দাঁড়িয়ে আছে গ্লাসে হাতে পানি নিয়ে।মায়ের প্রতি এই ভক্তি আর ভালোবাসা দেখে মা মনে আবেগ তাড়িত হয়ে কেঁদে বুক ভিজিয়ে দেন।এমন শ্রদ্ধা মায়ের জন্যে দেখে মা অশ্রুসজল চোখে সেদিন বায়েজিদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন যার ফলশ্রুতিতে হযরত বায়েজিদ বড় হয়ে বিশ্ব বিখ্যাত আউলিয়াদের একজন হয়ে গেলেন।
এখনো কত শত বায়েজিদ বোস্তামীর মতো মায়ের সাথে আচরণ করে যাচ্ছে সে রকম কাহিনী আমাদের দৃষ্টির সীমানায় আসে না।
এইতো কিছুদিন আগে রোহিঙ্গা ছেলে মা'কে মাথায় নিয়ে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে বাংলাদেশ প্রবেশ করে।
মা ছেলের ভালোবাসা কোন প্রতিদান চায় না। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। সফেদ ভালোবাসা।
দু'চারটা বিচ্ছিন্ন কাহিনী অবশ্য আছে যা আমাদেরকে পীড়া দেয়।যেমন ধরুন মা কে কোন মানব শিশু বৃদ্ধশ্রমে রেখে আসে বাবা মা কে বিভিন্নভাবে অপবাদ,অপমান করে যা মোটেই কাম্য নয়।
পবিত্র কোরআন আল্লাহ বলেছেন,
তোমরা কোন অবস্থাতেই পিতামাতার সাথে "উফ" শব্দটা ব্যবহার করো না। তাই আমরা যেন মায়ের সাথে কোনক্রমেই খারাপ আচরণ না করি। মায়ের সাথে কোন কিছুর তুলনা না করি।মাকে ভালোবাসি।মায়ের ভালবাসা সবসময়ই হয় অকৃত্রিম,নির্মল প্রকৃতির মতো।মায়ের হৃদয়ের সব ভালবাসা থাকে তার সন্তানের জন্যে। সেই প্রমাণ মা যে কোন অবস্থা দিতে পারে।সন্তানের জন্যে মায়ের ত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে অজস্র,আর মায়ের জন্যে সন্তানের ত্যাগ হাতেগোনা নগণ্য।
তাই বলি,
যতই তোমায় ভাসুক ভালো
পৃথিবীর কোন জন,
মায়ের চেয়ে আপন বলো
কে সেই জন?
ভালোবাসার অপর নাম হোক মা। ভালোবাসি মা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:২০