somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধারা

২০ শে মে, ২০১৯ সকাল ৭:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে একটি প্রত্রিকায় ইউরোপ পাড়ি দিতে যাওয়া সাতাশ জন বাংলাদেশীদের মৃত্যুর খবর পড়ছিলাম। এমন সময় এক বন্ধুর দেখা সে তার নতুন গাড়িটি দেখার জন্য অনুরোধ করলো। অনেক মিনতি করার পর তার একলক্ষ বিশ হাজার পাউন্ডের TESLA গাড়ির বিলাসিতা আর সাথের খবরের কাগজের রিপোর্টে খেয়ে বাঁচার জন্য কিছু মানুষের সলিল সমাধি মনটাকে নাড়া দিলো । সম্পদের এই অসম প্রতিযোগিতা ও ভোগ-বন্টনের বৈষম্য থেকে এ লেখার ক্ষুদ্র প্রয়াস।

ভূমিকা -
কৃষি প্রধান বাংলাদেশে চিত্র অনুযায়ী কৃষিজ পণ্য কিংবা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পণ্য নকশিকাঁথার বা শীতলপাটি, এগুলো হয়তো আমদানি ও রফতানিতে ভুমিকা রাখার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে তার বিপরীতমুখী অবস্থা লক্ষনীয়। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক বৈরিতা দূরীকরণে গার্মেন্টস ও জনশক্তি রপ্তানি এই দুই সেক্টর মূল চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করছে।

জনশক্তি রফতানি খাত-

জনশক্তি সংশ্লিষ্ট বাজার অনুযায়ী বর্তমানে জনশক্তি রফতানি খাতকে দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা নিরসনের নিউক্লিয়াস বলা হয়। কথায় বলে বিশ্বর এমন কোন দেশ নেই যেখানে বাঙালী নেই। সরকারী তথ্য অনুসারে পৃথিবীর ১৬২ দেশে আামদের প্রবাসী বাংলাদেশীরা কর্মরত রয়েছে। সরকারি হিসাবে যার সংখ্যা ৮৯ লাখেরও কিছু বেশি। তবে চিত্রটা বেসরকারী হিসাবে ভিন্ন। বেসরকারি মতে এই সংখ্যা এক কোটি বিশ লাখের কিছু বেশি। এরা যদি বিদেশে কর্মসংস্থান না করে দেশে অবস্থান করতো তাহলে দেশের বেকার সমস্যা, সামাজিক ও জীবনযাত্রার মান কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতো তা সহজেই অনুমান করা যায়। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বৈদেশিক রেমিট্যান্স ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে।

রেমিটেন্স কি -
নিজেদের সার্বিক ভাগ্যোন্নয়নের প্রতি বছর হাজারো তরুণ পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। বিদেশের শত প্রতিকূলতা ও বৈরী পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে। এই শ্রমিকদের বেশিরভাগই অদক্ষ যারা নির্মাণ শিল্প থেকে শুরু“করে কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থানে দিন-রাত পরিশ্রম করে। তাদের এ অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অর্জিত আয় নিজেদের পরিবারের থেকে শুরু করে মূলত প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে সাহায্য করছে। প্রবাসে কর্মরত এসব শ্রমজীবী মানুষের ঘামের ফলে পাওয়া প্রেরিত অর্থকে রেমিটেন্স বলে।

শুরুর ইতিহাস -

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ থেকে ভাউচারের মাধ্যমে অনেকেই যুক্ত রাজ্যে এসে স্হায়ী বসত গড়ে। তবে মূলত ১৯৭০'র দশক থেকেই বাংলাদেশ জনশক্তি রফতানি চালু করে। প্রথমদিক থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো মূলত বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির প্রধান ও অন্যতম বৃহ বাজার। আর ক্রমে সে বাজার বেড়ে ১৯৮০'র দশক থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লিবিয়া, সুদানসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৯০'র দশক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই, মিসর, মারিসা'সসহ কয়েকটি নতুন বাজার সৃষ্টি হয়। নতুন সহস্রাব্দে ব্রিটেন, ইটালী, জাপান,কানাডাসহ ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে জনশক্তির চাহিদা সৃষ্টি হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ আমেরিকা,আফ্রিকা, ইরাক, ইরান আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড,তিউনেসিয়াসহ শতাধিক দেশে বর্তমানে জনশক্তি রফতানি চলছে । এর মধ্যে ২০-২২টিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনশক্তি যাচ্ছে। তবে অধিকাংশ দেশেই রফতানির ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে।

অর্থনীতিতে অবদান -
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে বাংলাদেশে অর্থনীতিতে। বাংলাদেশের জিডিপিতে (Gross Domestic Product) বিগত চার বছরে প্রবাসী আয়ে প্রায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রায় তিন দশক ধরেই জনশক্তি রফতানি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে।

প্রবৃদ্ধির হার -
আশির দশকে ৫০ থেকে ৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসতো। নব্বইয়ের দশকে তা প্রায় ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২০০৬ সালে এ আয় ছিল ৫৪৮ কোটি ডলার। তারপর থেকে রেমিটেন্স আসা দ্রুত বাড়তে থাকে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যদিও আরব বিশ্বের নবজাগরণের কারণে দেশগুলোতে অশান্ত পরিস্থিতি চার বছর ধরেই চলছে। বিশ্বমন্দার কারণে ভোক্তাচাহিদা কমে গেছে। শিল্প উত্পাদন হরাস পেয়েছে। সেবাখাত তার ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে। পূর্বের কিছু অনিয়মের কারণে জনশক্তি আমদানিকারক কয়েকটি দেশের সাথে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব বাধা উপেক্ষা করে জনশক্তি রফতানি খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
নিচের সারণীতে তা-ই স্পষ্ট হয়েছে।
১৯৮০ সালে ৩০.৫০ কোটি ডলার
১৯৯০ সালে ৭৮.১৫ কোটি ডলার
২০০০ সালে ১৯৫.৫০ কোটি ডলার
২০০৬ সালে ৫৪৮.৪০কোটি ডলার
২০০৯ সালে ১,০৭১.৭৭ কোটি ডলার
২০১০ সালে ১,১০০.৪৭ কোটি ডলার
২০১১ সালে ১,২১৬.৮১ কোটি ডলার  
২০১২ সালে ১,৪১৬.৪০ কোটি ডলার
২০১৪-১৫ সালে ১,৫০০.৩১ কোটি ডলার।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১,২০০.৭৭ কোটি ডলার।
২০১৭-১৮ সালে ১,৪০০.৯৮ কোটি ডলার।

দেশ ভিত্তিক শ্রমিক সংখ্যা -

বাংলাদেশ থেকে অনেক নবীন ও অধুনা স্বাধীনতা লাভকারী দেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে। এদের অনেকে আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নেয় যার উদাহরণ হলো, ২০০৭ সালে ২ লাখ ৭৩ হাজার জনশক্তি মালয়েশিয়ায় রফতানি হয়। পরের বছর আরো ১ লাখ ৩২ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যায়। অপরদিকে সিঙ্গাপুরে ৪৫-৫০ হাজার জনশক্তি রফতানি হচ্ছে। ওমানে বিগত ৫ বছর ধরেই দেশটিতে ৪৫-৫০ হাজার জনশক্তি রফতানি হলেও ২০১১ ও ২০১২ সালে মোট ৩ লাখের বেশি জনশক্তি রফতানি হয়েছে।ইটালীতে ৭-৮ হাজার, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ২ হাজার জনশক্তি রফতানি হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ রফতানিকৃত জনসংখ্যার মোট আশি ভাগ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সীমাবদ্ধ আছে।

আন-ডকুমেন্টেড শ্রমিক সংখ্যা -

বিশ্বের প্রায় সবদেশে আন ডকুমেন্টেড বা অবৈধ বাংলাদেশী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে এ সংখ্যা কত তার সঠিক কোন হিসাব নেই। ধারণা করা হয় এ সংখা দশ লাখের চেয়েও বেশি। শ্রম ঘন দেশ থেকে শুরু করে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন কারণে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷ হিসাব মতে স্পেন - দশ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী, মালয়েশিয়ায় - তিন লাখ, আরব আমিরাতে - পাঁচ লাখ, কাতারে - প্রায় তিন লাখ ভিসার চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। এ বছর সমস্ত ইউরোপ থেকে ৯৩ হাজার অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরত নিতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

শ্রমিক ও আয়ের অনুপাত -

আমাদের দেশ থেকে মূলত পুরুষ শ্রমিক বিদেশে রফতানি করা হতো কিন্তু সে চিত্র সহসাই বদলাতে লাগলো। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় পঞ্চাশ হাজার নারী শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু দূর্ভাগ্য হলে সত্য আমাদের জনবলের বেশিরভাগই অদক্ষ ও অশিক্ষিত ফলে তুলনামূলক ভালো কাজ পায় না। এক্ষেত্রে ভারত, ও শ্রীলংকা ফিলিপাইনসহ অন্যান্য দেশ আমাদের চেয়ে কম জনবল পাঠিয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছে। একটা জরিপে দেখা গেছে, ফিলিপাইন আমাদের তুলনায় অর্ধেক জনবল বিদেশ পাঠিয়ে আয় করছে দুইগুনের রেমিট্যান্স।

প্রতিকূলতা -

আমাদের শ্রমিকদের প্রায়ই নানান বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বলা যায় ঘর থেকে পা বাড়ানো থেকে কাজের জায়গা সব জায়গাতেই সমস্যায় পড়ে শ্রমিকশ্রেণী। অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দিতে অনেকেই সলিল সমাধি হয়ে হাঙরের খাবার বা আমাজন জঙ্গলে বন্য প্রাণীর শিকার হচ্ছেন। এসবের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কিছু উল্লেখ করছি।


এক, দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সির অসহনীয় দৌরাত্ম। দেখা যায় কোন না কোনভাবে দালাল শ্রেনী তাদের মুনাফা আদায় করে নিচ্ছে। একটা ভিসার সরকারি দাম দুই লক্ষ হলে তা শেষ পযর্ন্ত সাত থেকে আট লাখ টাকায় গিয়ে পৌঁছে এই দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সির কৃত্বিতের ফলে।

দুই, সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ ও সমন্বয়হীনতার অভাব দেখা যায় নিয়োগ ও ভিসার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেএে।
তিন, যথাযথ তথ্য উপাত্তের অভাবে অনেক দক্ষ শ্রমিক ভিসার আবেদন করতে পারে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া বরং সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
চার, ফ্রিস, পাসপোর্ট নবায়নে জটিলতা দেখা যায় প্রবাসের বিভিন্ন দূতাবাসে এবং দেশের ভেতর।
পাঁচ, দূর্ঘটনার শিকার হয়ে অভিবাসীদের বিভিন্ন অভিযোগ দেখার ও ব্যবস্হা নেওয়ার কোন সুষ্ঠু উপায় নেই।
ছয়, নানাবিধ কারণে কোন অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু ও বিভিন্ন দৃূরারোগ্য ব্যাধি হলে দেখা ভাল করার কেউ নেই।
সাত, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) আজ থেকে পয়ত্রিশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের সহযোগিতা এবং কল্যাণে কার্যক্ষম যৎসামান্য বলা যায়।
আট, প্রবাসীদের জন্য কোন বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নেই। প্রায়ই দেখা যায় প্রবাসীরা বিভিন্ন হয়রানি, আত্মসাৎ ও মানহানিতে ভুগছেন।
নয়, দেশের সমসাময়িক বিষয়ে প্রবাসীদের মতামত প্রয়োগের কোন সুযোগ সুবিধা নেই।
দশ, বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাসের কর্মচারী ও কর্মকতারা সাহায্য না করে উল্টো আতংকের কারণ হয়ে দাড়ান।

দায়টা কার-

শত প্রতিকূলতায় জর্জরিত শ্রমিক রফতানি সেক্টরের এসব ঝুঁকি ও সমস্যার জন্য দায়ী কি সরকারের একার নাকি সংশ্লিষ্ট জনবলেরও কিছুটা দায় আছে। বলা যায় উভয়ের সমান সমান দায় আছে।


রাষ্ট্রকে যেমন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে তেমনি রাষ্ট্রের জনগণকে সচেতন হতে হবে। এসব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য নিম্নোক্ত সুপারিশ করা যায়।

সুপারিশ -
১) বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ ও অধিকার নিশ্চিত করা -
জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ নেয়া জরুরি। এর ফলে প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে আয় বৃদ্ধিতে
সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবে।
২)ওয়ান স্টপ সলিউশন সার্ভিস চালু করা-
প্রায়ই শুনা যায় প্রবাসে কারো মৃত্যু হলে লাশটি দেশে ফেরত পাঠাতে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়, যেহেতু লাশ ফিরে নিয়ে আসা ব্যায়বহুল ফলে চাঁদা তুলে ও অনেক ঝক্কি ঝামেলায় পোহাতে হয়। তাই সমস্যা ও প্রতারণার শিকার প্রবাসীদের সহযোগিতার জন্য অত্যন্ত একটি ওয়ান স্টপ সলিউশন সার্ভিস খোলা জরুরি যাতে এইসব রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কিছুটা হলে সেবা পেতে পারেন।

৩)কুটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি -
আমাদের অনেক কুটনৈতিক সভা, সেমিনার, ফিতাকাটায় নিজেদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ মনে করেন যদি রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং দেশের সকল অঞ্চল হতে কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সকল অভিবাসী কর্মীর কল্যাণ নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট কুটনৈতিকদের দায়িত্ব। কূটনীতিকরা তৎপর হলে জনসংখ্যা রফতানির সুফল ও রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির ইতিবাচক ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

৪) বিকল্প জনশক্তির চাহিদা মেটাতে মনযোগী হওয়া -
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে । বৃটেনে স্বাস্থ্য খাতে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানের চাহিদা ব্যাপক।
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত দেশ যেমন শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ২৬ মিলিয়ন দক্ষ শ্রমশক্তির প্রয়োজন হবে। পশ্চিম ইউরোপে ৪৬ মিলিয়ন দক্ষ জনশক্তির আবশ্যকতা দেখা দেবে। বর্তমান বিশ্বে মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ গ্রাজুয়েট আন্তর্জাতিকমানের চাকরি করার যোগ্যতা রাখে। ফলে আগামীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষিত জনশক্তির প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে আমাদের দূরদর্শিতা দেখাতে হবে।

৫) হুন্ডি প্রতিরোধ - ব্যাংকি চ্যানেলে টাকা না আসলে সরকার রেমিট্যান্স সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এখনো প্রায় ২৩. ৩০ শতাংশ এখনো আসে হুন্ডির মাধ্যমে তাই করার উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। 

৬) ভকেশনাল ট্রেনিং- বৃটেনে ও কানাডায় হাইটেক ভিসা ও কন্সট্রাকশন ভিসায় ভারতীয় ও চীনাদের আধিপত্য লক্ষনীয়। আমাদের তরুন প্রজন্মকে যথাযথ ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ শ্রমিক হিসাবে গড়ে তুলতে পারলে তারা সহজেই এই সুযোগ নিতে পারবে।

৭) নারী শ্রমিকদের মূল্যায়ন - আমাদের দেশের নারীরা পিছিয়ে নেই । এখন বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তবে তাদেরকে অনেক জটিল পরিস্থিতিত স্বীকার হতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।

৮) বিদেশে কর্মরত জনশক্তির নায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা -
রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জনসংখ্যা রফতানির যেমন প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে, তেমনি বিদেশে কর্মরত জনশক্তির পারিশ্রমিক যাতে কাজ ও দক্ষতা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়, সেজন্যেও সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে।

৯) যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, মেকানিক,ও কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তিকে তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশি হারে রফতানি করা যায়, সেভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

১০) নতুন শ্রম বাজার তৈরি করতে হবে-
অনেক যুগ থেজে আমাদের দেশের জনশক্তি রফতানি সামান্য কয়েকটি দেশকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বেশি সংখ্যক জনশক্তি রফতানি করা হয়। ইউরোপ-আমেরিকা,কানাডা,দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ উন্নত দেশগুলোতে জনশক্তি রফতানি বাড়ানো গেলে এ খাতের আয় অনেকগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, শুধু বিদেশে জনসংখ্যা রফতানি বৃদ্ধি করলে হবে না। তাদেরকে দক্ষ ও সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে, আর শ্রমিকদের যথাযথ ট্রেনিং দিয়ে বিদেশ প্রেরণ করলে জনসংখ্যা সমস্যার বিরূপ প্রভাব নয় বরং কল্যানমুখী ও ইতিবাচক প্রভাব আসবে গ্রামীন অর্থনীতিসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

(লেখাটি সুলেখক ও প্রাবন্ধিক কাওসার চৌধুরীকে উৎসর্গ করছি,যিনি একসময় রেমিটেন্স যোদ্ধা ছিলেন এখন কর্মক্ষেএ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে চলছেন)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৪
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×