কথাটা যদিও ইংরেজিতে কিন্তু এর থেকে ভালো নাম আর মাথায় এলো না এই লেখার জন্যে। আজকের লেখাটা নারীদের জন্যে লেখা। আপাত দৃষ্টিতে যাই মনে হোক কেন, তবে যা ঘটে সাধারণত তা চিন্তা করেই লেখা। একটি বাস্তব অভিজ্ঞতাও তুলে ধরব কিন্তু সংগত কারনে ছদ্মনাম আমি ব্যবহার করছি। পাঠক চাইলে আপনার চেনা কারও সাথে তুলনা করে নিতে পারেন; হয়তোবা আপনি নিজেই এর একজন অথবা আপনি অন্যের সাথে এমন আচরণই করছেন।
#এখানে ক্লিক করে পড়ুন "জার্মান প্রবাসে" – নারী দিবস বিশেষ সংখ্যা – মার্চ, ২০১৪!
#ফেসবুকে আমরা - জার্মান প্রবাসে
ইউরোপে থাকার সুবাদে অনেক সময়ই আমি ইউরোপের প্রসংগ না তুলে পারি না। মনে মনে তুলনা করি এইখানে কি ঘটে আর আমাদের ওখানে তা কেমন। নারী স্বাধীনতা নাকি ইউরোপে বেশ, কথাটা সত্যিই বলা যায় এক অর্থে। সব থেকে বড় কথা এখানে ৯৫% ভাগ নারী নিজের জীবনের ভার নিজেই নেন। যদি নারিদের উপার্জন নিয়ে এখানের কাউকে প্রশ্ন করা হয় তাহলে তারা বলবেন হ্যা আমার জীবন আমি নিজের চালাই। এই কথাটা কিন্তু এখানকার গৃহিণীরা পর্যন্ত এভাবেই বলবেন (যদিও গৃহিণী এখানে নেই বললেই চলে)। এই কথাটা পড়ার সাথে সাথে অনেকেই বলে উঠবেন, আরে বাংলাদেশেও সেই দিন নাই মেয়েরাও চাকরি করে। ঐ তর্কটা তোলার জন্যেই কিন্তু এই কথাটা লেখা! বাংলাদেশেও নারীরা চাকরি করছেন ক্যারিয়ারে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কয়জন নিজের জীবন নিজে সম্পূর্ণভাবে পরিচালনা করেন? আপনার চেনা কতজন নারীর কথা আপনি বলতে পারবেন যে কিনা চাকরি ছেড়ে দেয়নি পরিবারের কারণে, বিয়ে করেননি বাবা-মায়ের কথা শুনে, বিদেশে পড়তে বা চাকরি করতে এসেছেন পরিবারের অমতে-কিংবা পরিবারের মত নিতে হয়নি? এখন নারীরাই বলে উঠবেন বাহ রে! বাসায় না জানিয়ে আসব নাকি?
কথাগুলো তোলার কারণ হলো পার্থক্যটা বোঝানো। এখানে নারীরা পুরুষের সমান। তারা নিজের জীবনে কি করবেন কখন করবেন নিজে ঠিক করেন এবং তাদের পরিবারদের জানান। আমাদের মতন কিন্তু বাবা-মা, পরিবার, স্বামী-শ্বশুরবাড়ি কি বলবে এই নিয়ে সাতকাহন রচনা করতে হয়না।
আমার দেখা নারীদের কথা আমি বলবো তিনি দেশি না বিদেশী বড় ব্যাপার না। তার জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া বড় ব্যাপার। আমাদের দেশীয় নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন কথাটা মানি-তারা এগিয়ে যাচ্ছেন তবে পায়ে শিকল পরে। তিনি চান আর নাই চান পরে নিচ্ছেন যেটা কিনা ইউরোপে খুব কম ঘটে। এখানে কাউকে যদি বলা হয় চাকরি ছেড়ে দিচ্ছি, পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছি কারণ পরিবার, স্বামী বা ভবিষ্যৎ স্বামী চান না (প্রেমিক শব্দটা ব্যবহার করতে চাচ্ছিনা কারন এর সংজ্ঞা নিয়ে ইদানিং দেশীয় সংস্কৃতিতে বেশ ভেজাল দেখা যাচ্ছে!)। চাকরি ছেড়ে দিচ্ছি কারণ নতুন কেউ আসছেন (বেবি হচ্ছেতো!)। ভিনদেশীদের জীবনেও নতুন কেউ আসে তবে সংখ্যা কম কেন বোঝাই যাচ্ছে। এরা চাকরি ছেড়ে দেননাতো তাই বোধহয় জনসংখ্যা এতো কম (দুঃখিত,যদিও কালচারাল এনথ্রোপোলোজি নিয়ে কাজ করার সুবাদে এর মূল কারণ না জানি কিন্তু ব্যঙ্গ না করে পারলাম না)। তবে কথাগুলো বলার কারন হলো চাকরি এবং অনেক কিছুতেই নারীরা আমাদের দেশে এগিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু মনের মাঝে পরনির্ভর মানসিকতা যাচ্ছে না বা যেতে দেয়া হচ্ছেনা। শেখানোই হয় এই ভাবে। তবে ব্যতিক্রমও আছেন এবং আশা করছি তাদের সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
“ক”
আজকের পর্ব “ক” কে নিয়ে লেখা। তিনি একজন কৃষি-গবেষক। কত বছর আগে ঠিক শেষবারের মতন কথা হয়েছিল ঠিক মনেও নেই। দেখা হয়েছিল ঢাকা শহরের নিম্ন মধ্যবিত্ত এক এলাকায় নতুন পাতা টোনাটুনির ছোট সংসার সেখানে তার। কম করে হলেও ১০ বছর আগের কথা। “ক” এবং তার স্বামী দুইজনেই কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চাকরিতে ঢুকছেন। এর থেকে বেশি তো সামর্থ নেই। তারপর আর বোধহয় সামনা সামনি দেখা হয়নি। খালি দূর থেকে তার কথা শুনে গেছি।
এইখানে বলে রাখা ভালো যে, গল্পগুলো এরপর থেকে তার স্বামীর মুখে শোনা। সেই ভাইয়াকে খোঁজ-খবর নেয়ার জন্যে ফোন করলে “ক” আপুর জীবনে কি ঘটছে তাও জানা যেত। চাকরি পেলেন, দুইজনের দুই ধাঁচের চাকরি হলো দেশের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। চলে গেলেন সেই মতে দুইজন দুই প্রান্তে। কখনো সপ্তাহে একবার আবার কখনো মাসে একবার হয় দেখা। এমন করে দিন কেটে গেল। দেখতে দেখতে দুই সন্তানের জননী হলেন “ক”। একাই দেখাশোনা করলেন রিসার্চ-এর কাজ এবং এগিয়ে গেলেন। সাথে কত ভালো-মন্দ সময়। থেমে গিয়েছেন কখনো তা আমার মনে হয়নি। হয়তোবা মনে মনে থমকে গিয়েছেন বহুবার কিন্তু আটকে থাকেননি। এক ধাপ এক ধাপ করে এগিয়ে এক সময় শুনলাম পিএইচডি করতে যাচ্ছেন। তাহলে বাচ্চারা? তারা কোথায় থাকবে? প্রশ্নটা স্বভাবতই মুখ ফসকে বের হয়ে গেল। বাচ্চারা সাথে যাবে ভালো, “ক” চলেও গেলেন। দেখতে দেখতে এক সময় সেই ভাইয়াও বলা শুরু করলেন বিদেশে কই যাওয়া যায় বলতো পড়াশোনার জন্যে। আমি ততদিনে ইউরোপের বাসিন্দা। তো আলাপ চলছে এই সেই দেশ নিয়ে। একদিন বললেন নাহ তোমার আপুর ঐখানেই যাচ্ছি পিএইচডি হয়েছে আমারও। এতোদিনে এখন মাঝেমধ্যে ফেইসবুকে ওনাদের ছবি দেখি। সেই টোনাটুনির এতো বছর পরে একসাথে সংসার করার আবার শুরু হলো। সাথে ২ সন্তান যোগ হয়েছে আর গুটিকয়েক শিক্ষাগত যোগ্যতা যা এখনো হাতে গোনা কয়েকজনেরই আছে বাংলাদেশে।
“ক” কে দিয়ে কেন শুরু করলাম ঠিক জানিনা কিন্তু মনে হলো তার কথা বলা যায়। জীবন যুদ্ধে সবাইকে কোনোভাবে এগোতেই হয় কিন্তু এমনভাবে খুব হাতেগোনা কয়েকজনই আগায়। আমাদের কিন্তু জীবনে দীর্ঘশ্বাস ফেলার থেকে ঠেকে শেখা অনেক ভালো। মনে রাখবেন আপনি কার মেয়ে,ভগ্নী, স্ত্রী, মা, পুত্রবধু, ভাগ্নী-ভাতিজি। ইত্যাদি ইত্যাদির থেকে বড় প্রশ্ন হল আপনি কে? আর কোনো পরিচয় কি আপনার আছে? “ক” এর কিন্তু আছে!
------------ ------------ ------------ ------------
সকল নারীর প্রতি সম্মানার্থে আমরা এবারের ম্যাগাজিন জার্মান প্রবাসে সাজিয়েছি শুধুমাত্র নারীদের লেখা দিয়ে। জার্মানিতে অবস্থানরত নারীদের মধ্যে অনেকেই বহু বছর যাবৎ জার্মানিতে অবস্থান করছেন, নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছেন আবার কেউ বা সদ্য পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু বিসাগের প্ল্যাটফর্মে তাঁদের পদচারণা তুলনামুলকভাবে অনেক ক্ষীণ। তাই আমাদের চেষ্টা তাঁদের চোখ দিয়ে আরেকবার জার্মানিকে আপনার কাছে তুলে ধরা। জার্মান প্রবাসে – নারী দিবস বিশেষ সংখ্যা – মার্চ, ২০১৪
#এখানে ক্লিক করে পড়ুন "জার্মান প্রবাসে" – নারী দিবস বিশেষ সংখ্যা – মার্চ, ২০১৪!
#ফেসবুকে আমরা - জার্মান প্রবাসে
একটু পড়ে যদি রিভিউ দেন তাহলে অশেষ উপকার হয়। আর কি কি যোগ করা যায় তাও জানাতে পারেন আমাদের। আপনার একটা চাওয়া, একটা মন্তব্য অথবা আপনার কোন অভিজ্ঞতা ভাগ করুন না আমাদের সাথে! চটজলদি লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়ঃ [email protected]
অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সবাই!
-------- -------- -------- -------- -------- --------
**বিসাগ - বাংলাদেশি স্টুডেন্ট এন্ড এলাম্নাই এসোসিয়েশন ইন জার্মানি
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:২২