somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চেনা অচেনা

২৮ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘুম আসছে না নেহার। দম বন্ধ হয়ে আসছে। এভাবে অসুস্থ মানুষ টাকে একা ফেলে বাপের বাড়িতে চলে আসা একদম উচিত হয়নি তার। অপ্সরারও জ্বর আসছে। আজ আসার সময় বৃষ্টিতে ভিজে এমন হয়েছে। মেয়েটা কিছুক্ষণ আগে বাবাই বাবাই বলে চিৎকার করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে। মন চাচ্ছে ফাহিম কে একবার ফোন দিতে। কিন্তু কি যেন আটকাচ্ছে তাকে! এই দিয়ে সাতবার সে ডায়াল প্যাডে ফাহিমের নাম্বার তুলেও কেটে দিল। সে মনে মনে ভাবতে থাকে এভাবে রাগ করে চলে আসাটা ঠিক হয়নি। কিন্তু কি করবে সে! প্রতিদিন এরকম মাতাল হয়ে আসা মানুষটা যে তার অপরিচিত। আর গতকাল ফাহিম যা করেছে তা কোনভাবেই মানতে পারে নি নেহা। প্রতিদিন অফিস থেকে এসেই এসব করে ফাহিম। আর সহ্য করতে না পেরে তাই সে চলে এসেছে আজ। তার মনে নানা প্রশ্ন আসতে থাকে। মনে মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় নেহার ভেতর। সে জানতে চায় কেন ফাহিম এমন হয়ে গেল, কি এমন ঘটেছে যা সে জানে না।
রাত তীব্র হচ্ছে। সেই যে সকালে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তার থামার নাম নেই। আকাশে আবার মেঘ ঢাকা শুরু করেছে। ফাহিম এসেছে তো অফিস থেকে! নাকি আটকে গেল বৃষ্টির ভেতর! কোনো বিপদ হল না তো! নানা রকম ভাবনা এসে জড়ো হচ্ছে নেহার মাথায়। কেন ভাবছে সে এসব! নিশ্চয়ই বাসায় ফিরে আমাকে না পেয়ে খুশি হয়েছে ফাহিম, তাই ফোন দিচ্ছে না। আর সহ্য করতে না পেরে যখন ফোন টা হাতে নিয়ে ফাহিমের নাম্বার টা লোড করছে, অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা ফোন আসল। নেহা ভাবছে কে ফোন দিতে পারে এত রাতে! সে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসল ফাহিমের গলা।
- শোনা, আমার চুরি হয়ে গেছে ফোন আর ল্যাপটপ এর ব্যাগটা। তাই ফোন দিতে পারছিলাম না। আমি রওনা দিয়েছি, গাড়ি ছিল না রাস্তায় কোনো। কেবলই একটা সিএনজি পেলাম। আমি আসছি। সিএনজি ড্রাইভারের নাম্বার থেকে ফোন দিলাম। হ্যালো, শুনতে পাচ্ছ তুমি?
- হ্যাঁ শুনছি বল।
- আচ্ছা, রাতে খাওয়া হইছে? অপ্সরা কি ঘুম?
- রাতে খাইনি আমি। হ্যাঁ,অপ্সরা ঘুম।
- রাতে কেন খাওনি তুমি!
- ইচ্ছা করল না খেতে।
- আচ্ছা আমি আসি আগে তারপর কথা বলছি।
- শোনা, একটা কথা বলার ছিল।
- বল
- আমি বাসাতে নেই। অপ্সরা কে নিয়ে আব্বুর এখানে আসছি।
কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেল ফাহিম। তারপর হঠাৎ বলে উঠল- আচ্ছা, আমি বাসায় যাচ্ছি তাহলে।
- খেয়ে নিও। আর যেয়ে মাথা মুছে ফেল।
- আচ্ছা, রাখি তাহলে।
ফোনটা রেখে দেয় ফাহিম। নেহা কাঁদছে। অজানা এক বেদনা তাকে কাঁদাচ্ছে বারবার। ফোনটার স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে সে৷ আবার ফোন দিবে! নাকি দিবে না!
- আম্মু, বাবাই কোথায়?
নেহা কিছু বলতে পারে না। মেয়েটাকে তুলে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে সে। অপ্সরা কিছু বুঝতে পারে না। সে বারবার প্রশ্ন করতে থাকে-"কাঁদছ কেন আম্মু, কি হয়েছে তোমার?"




সিএনজি আলাকে টাকা দিয়ে গেট দিয়ে ঢুকছে ফাহিম। ঘড়িতে তখন রাত ৩ টা। এত রাতে কখনো বাড়ি ফেরে না সে। বাসা পাহারা তে থাকা কুকুর তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো যার জন্য ঘুম ভেঙ্গে গেল দারোয়ানের। কিছুটা হকচকিয়ে গিয়ে স্যালুট দিল সে ফাহিম কে।
- স্যার, এত রাতে!
- বৃষ্টি হচ্ছিল, কিছু পাচ্ছিলাম না আসার জন্য। তার মধ্যে আবার ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম অফিসে। জাগা পেয়েছি রাত ১ টায়।
- স্যার আমারে ফোন দিতেন, আমার ভাই তো সিএনজি চালায়। আমি বলে দিতাম।
- আচ্ছা পরেরবার থেকে দিব। লিফট চালু আছে?
- না স্যার, এত রাতে তো চালু নাই। কষ্ট করে উঠতে হবে। সারাদিন কারেন্ট ছিল না, জেনারেটরেরও তেল শেষ।
- আচ্ছা, আমি উঠছি।
সিড়ি দিয়ে উঠতে থাকে ফাহিম। তাকে আটতলা পর্যন্ত হেঁটে উঠতে হবে। মাথা ব্যাথাটা এখনও আছে। ভেবেছিল একটু ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। তাই সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। আজ রাতে ফিরতে ইচ্ছা হচ্ছিল না বাসায়। কিন্তু কাল রাতে এত ঝগড়া করেছে সে নেহার সাথে যে তার নেহাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল। নেহার কাছে মাফ চাইতে সে রওনা দেয় পাগলের মত এত রাতে। আর রাস্তায় বের হয়ে ওভারব্রিজের নিচে যেতেই পেটে চাকু ধরে সব নিয়ে যায় ফাহিমের। চশমাটাও খুলে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে তার। ফাহিম সেই ঘটনার কথা ভাবছে। আটতলা এসে যায়। পকেটে হাত দেয় ফাহিম, কিন্তু চাবি নেই। তার মনে পড়ে চাবিটা সবসময় সে ব্যাগে রাখে। আর ব্যাগ তো চুরি হয়ে গেছে। এখন কি করবে সে! এত রাতে কাউকে ডিস্টার্বও করা যায় না। সে দরজা তে হেলান দিয়ে বসে পড়ে। ব্যাথাটা বাড়ছে। একটূ পানি খেতে পারলে ভাল হত, গা হাপসে গেছে উঠতে। কিন্তু পানি কোথায় পাবে সে! ফোনটাও কাছে নেই যে কাউকে ফোন দিবে, বলবে তার ব্যাথা বাড়ছে, অস্বস্তির কথা জানাবে কাউকে। ফাহিম প্রচণ্ড ঘামছে। করিডোর পুরা অন্ধকার। কারেন্ট নেই হয়ত। এক ঝড়ে সব এলোমেলো হয়ে গেছে। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না ফাহিম। এমনকি সে কার দরজাতে হেলান দিয়ে আছে সেটাও সে জানে না। অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে সে। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। নেহার কথা মনে পড়ছে তার, মনে পড়ছে অপ্সরার কথা। তার কিছু হলে কি হবে তাদের! ভাল লাগছে না কিছু তার। সে শুধু তাদের একবার দেখতে চায়, হয়ত শেষবার। মানুষ যখন প্রচণ্ড কষ্টে থাকে তখন সে বারবার মৃত্যুর কথা ভাবতে থাকে। তার ব্যাথা সারা শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। না, এভাবে বসে থাকলে হবে না। আমাকে বাঁচতে হবে। যেভাবেই হোক। সে ভাবতে থাকে কিছুই তো হয়নি তার, শুধু মাথা ব্যাথা ছিল আর এখন না হয় সারা শরীর ব্যাথা করছে। উঠে দাঁড়াতে নেয় ফাহিম। কিন্তু পারছে না সে। জোর করে উঠে দাঁড়িয়ে অন্ধকারে পা বাড়াতেই সিড়ি দিয়ে পড়ে যায় সে। গড়িয়ে যেয়ে নিচে রাখা ফুলের টব টাতে মাথায় বাড়ি খায় সে। তারপর চিত হয়ে পড়ে থাকে সারারাত।


দুইটা স্লিপিং পিল খাওয়ার পরেও নেহার ঘুম আসছে না। ছটপট করছে সে বিছানায়। অপ্সরা ঘুমিয়ে আছে। তার খুব ইচ্ছা করছে ফাহিম কে ফোন দেওয়ার, কিন্তু ফাহিমের ফোনে ঢুকছেই না। কারণ ফোনটা চুরি হয়ে গেছে। সে ভাবছে, সিএনজি ড্রাইভারের নাম্বারে ফোন দিবে কিনা। কিন্তু দিয়ে তো লাভ হবে না। অযথা এত রাতে একজন মানুষকে কষ্ট দেয়া। নেহার মন টিকছে না এখানে। ওর বারবার মনে হচ্ছে কিছু একটা খারাপ হতে যাচ্ছে। ফোনের স্ক্রিন অন করে ঘড়ির দিকে তাকায় নেহা। এখন বাজে ভোর ৪ টা। একটু পরেই ফজরের আজান দিবে। সে ঠিক করে অপ্সরা কে বাসায় রেখে সে রউনা দিবে। কিন্তু এত ভোরে একা বের হওয়াটাও অনেক রিস্কি। কিন্তু তার আর এটা ছাড়া উপায় নেই। সে বিছানা থেকে উঠে রেডি হয়।
বাইরে ফজরের আজান দিচ্ছে, তবুও যেন সকাল হচ্ছে না। নেহার বাবা অন্ধকারে বের হতে নিষেধ করেছেন। আকাশে মেঘ থাকায় সকাল হতে দেরী হচ্ছে। বারান্দায় বসে আছে নেহা। একটা রিক্সা যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। চিৎকার করে রিক্সা থামিয়ে নেহা রউনা দিল।
ধীরে ধীরে সকাল হচ্ছে। রাস্তায় দু চারটা করে গাড়ি বের হচ্ছে। রিক্সা চলছে তার গতিতে। নেহার এখানে মন নাই। নেহা কাঁদছে, সে জানে না তার কেন মনে হচ্ছে খুব বড় বিপদ হতে যাচ্ছে তার। চোখ মুছে নেহা, তাকে স্ট্রং হতে হবে। ফাহিম সবসময় বলত জীবনে যা কিছু আসুক স্ট্রং থাকতে হবে, তাহলেই নাকি সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু কথা বলা যত সহজ করা এতটা সহজ না।
রিক্সা থেকে নামতেই দারোয়ান দৌঁড়ে আসে নেহার কাছে।
- ম্যাডাম, স্যার এখন কেমন আছেন?
- মানে! বুঝলাম না আমি।
- আপনি জানেন না?
- কি জানব! কি হয়েছে ফাহিমের?
- স্যার তো অন্ধকারে পড়ে গেছেন সিড়ি থেকে। ভোরে সাকিব স্যার ফজরের নামাজ পড়তে বের হয়ে দেখেন উনি পড়ে আছেন। মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। তারপর এ্যাম্বুলেন্স ডাকা হল। স্যার রে তো ল্যাব এইডে নিয়ে গেছে মনে হয়।
নেহা কোনো কথা বলে না। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনছে সব। সে শুধু একটা প্রশ্ন করে -“ফাহিম, ঠিক আছে তো? ওর খুব বেশি কিছু হয়নি তো?”
- ম্যাডাম, যাওয়ার সময় স্যারের জ্ঞান ছিল না। তবে অন্য কোথাও লাগে নি। শুধু মাথাতেই মনে হয় লাগছে।
নেহা আর অপেক্ষা করে না। যে রিক্সায় চড়ে এসেছিল সে আবার সেই রিক্সায় চড়ে হাসপাতালে যায়। ল্যাব এইড পাশেই। বাসা থেকে দশ মিনিটের পথ। নেহা কাঁদছে এখন, খুব বেশি পরিমাণে কাঁদছে। সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না। এখন তার কেন মনে হচ্ছে যে ফাহিম নেই আর! সে বারবার নিজেকে বুঝাতে থাকে- “ফাহিম আছে, কিছুই হয়নি ফাহিমের। ফাহিম সত্যিই আছে।“


ফাহিম চুখ খুলে দেখে সে হাসপাতালের বেডে। মাথায় ব্যান্ডেজ। মাথা তুলতে যেয়েও সে পারল না তুলতে। প্রচন্ড ব্যাথা তার মাথায়। আশেপাশে কেও নেই। দূরে গেটের বাইরে সাকিব আঙ্কেল দাঁড়িয়ে আছেন। ডাকতে যেয়েও যেন কথা বের হচ্ছে না ফাহিমের মুখ দিয়ে। "নেহা জানে তার এই অবস্থা! কেও কি জানিয়েছে নেহাকে!"- ভাবতে থাকে সে। গেট দিয়ে নার্স আসলেন। তারপর বিশাল একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে চলে গেলেন। ফাহিম তাকিয়ে আছে গেটের বাইরে। কখন নেহা আসবে! তার ঘুম ধরছে, চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু সে জোর করে চোখ খোলা রাখছে। তার দেখতে ইচ্ছা করছে নেহাকে, অপ্সরা কে। অপ্সরা ফাহিমের মেয়ে না। অপ্সরার বয়স যখন ছয় মাস তখন নেহার সাথে বিয়ে হয় ফাহিমের। তবুও ফাহিম তাকে অনেক বেশি ভালবাসে।
কিছুটা দৌঁড়ে গেট দিয়ে ঢুকল নেহা। ফাহিম বেডে শুয়ে আছে। নেহাকে দেখে সে হাসছে। দৌঁড়ে যেয়ে ফাহিম কে জড়িয়ে ধরল নেহা। সে এখনও কাঁদছে।
- অপ্সরা কোথায়?
- বাবার কাছে রেখে এসেছি। কিভাবে হল এসব!
- আর বলিও না। অন্ধকার ছিল চারপাশ, আবার মাথার ব্যাথাটা উঠেছিল। পানি খেতে পা বাড়াতেই পড়ে যাই সিড়ি দিয়ে।
- কতদিন বলেছি ডাক্তার দেখানোর কথা?
- এই যে দেখালাম ডাক্তার এখন।
- চুপ কর। আমাকে মাফ করে দিও।
- কেন?
- আমি তোমার উপর রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আজ বাসায় থাকলে এমন হত না।
- ধুর পাগল। আমার কিছুই হয়নি। শুধু মাথায় লেগেছে একটু, ঠিক হয়ে যাবে।
ডাক্তার এসে নেহাকে বের করে নিয়ে যান। রোগীর বেড রেস্ট লাগবে। এখন তার সাথে কথা বলা যাবে না।
- দেখুন আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করার ছিল।
- জ্বী, বলুন।
- উনি কি একটুতেই রেগে যেতেন? বা উনার মধ্যে কি অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করতেন?
- জ্বী, কদিন হল খুব রেগে যেত। একটুতেই রেগে যেয়ে জিনিস ভেঙ্গে ফেলত। অফিস থেকেও আমার কাছে ফোন এসেছিল যে সে সবসময় সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করত।
- উনার কি মাথা ব্যাথা করত?
- জ্বী, রাগারাগি করে মাথায় হাত দিয়ে বেডে শুয়ে পড়ত কোনোদিন। আবার কোনোদিন অফিস থেকে এসেই বেডে শুয়ে পড়ত। পেইনকিলার খেতো মাথা ব্যাথা হলেই। অনেক নিষেধ করেছি। বলত যে ব্যাথায় টিকতে পাচ্ছে না। কেন? কোনো জটিল সমস্যা হয়েছে ফাহিমের?
- দেখুন, উনার ব্রেইন টিউমার। এজন্য স্ট্রেস নিতে পারছিলেন না বেশি। তাই তিনি রাগারাগি করতেন সবসময়। ব্রেন টিউমারের রোগীর কিছুই ভাল লাগে না। তাই তিনি সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছিলেন না।
এই কথাগুলো নেহার পরিচিত। রাকিবেরও ব্রেইন টিউমার ছিল। রাকিব মারাও যায়। ফাইনাল স্টেজে ধরা পড়ে তার ব্রেইন টিউমার। রাকিব নেহার প্রথম হাসবেন্ড। সবকিছু যেন এক ভাঙ্গা দর্পণে প্রতিফলিত হয়ে আবার ঘটতে যাচ্ছে। কেন এসব হচ্ছে আবার!
নেহা বসে থেকে কাঁদতে থাকে। তার আগের কথা মনে পড়তে থাকে। এবারও এমন হবে না তো! রাকিবের মত ফাহিম তাকে ফেলে রেখে চলে যাবে না তো!
- দেখুন ভেঙ্গে যাবেন না। প্রাইমারী স্টেজ, চিকিৎসা করলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।
ডাক্তার চলে যান। নেহা উঠে দাঁড়ায়, গ্লাসের দরজা দিয়ে তাকিয়ে থাকে ফাহিমের দিকে। ফাহিম হাসছে নেহার দিকে তাকিয়ে। হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকে ফাহিম। নেহা চোখ মুছে ভেতরে যায়। নেহাকে কাঁদতে দেখলে হয়ত ফাহিম ঘাবড়ে যাবে, তাই সে হাসতে হাসতে ভেতরে ঢুকে।
- তুমি বাইরে কাঁদছিলে কেন?
- কোথায় কাঁদিনি তো
- আমি দেখেছি তুমি কাঁদছিলে।
- আসলে হঠাৎ বাসায় এসে শুনি তো সব। তারপর দৌড়ে এখানে চলে আসি। জানতাম না তোমার কি অবস্থা। তাই কাঁদছিলাম।
- আচ্ছা, আমি রাকিবের মত মরে গেলে তোমার কি হবে?
প্রশ্নটা নিতে পারে না নেহা। জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে ফাহিমকে। ফাহিম জানে তার কি হয়েছে। সে জানত আগে থেকেই তার ব্রেইন টিউমার। কিন্তু কখনো জানায় নি নেহাকে। ভেবেছিল টাকা জমিয়ে নিজেই চিকিৎসা করবে বাইরে যেয়ে। কিন্তু তা আর হল না। শেষ পর্যন্ত নেহা জেনেই গেল।
- যাই হয়ে যাক ফাহিম, আমি তোমাকে হারাতে চাই না। আমি আজই ডাক্তারের সাথে কথা বলব। তিনি তোমার ট্রিটমেন্ট শুরু করুক
- নেহা, আগের মাসের বেতনটা এখনও হাতে আসেনি। জমানো টাকাও বেশি নেই। আবার ফোন ল্যাপটপ সব হারালাম। এসব কিনে দিতে হবে অফিসে। এখন ট্রিটমেন্ট না শুরু করি?
- এখন মানে এখনই। এই মুহূর্তে ট্রিটমেন্ট শুরু হবে। আমার জমানো যা আছে তাই দিয়েই শুরু হবে।
ফাহিম তাকিয়ে থাকে নেহার দিকে। নেহাকে আজ অন্যরকম লাগছে। সে ভাবত নেহা এখনো রাকিব কেই ভালবাসে। কখনো আবার ভাবত মৃত মানুষ কে কেও কিভাবে ভালবাসবে! কিন্তু আজ যেন নেহার মধ্যে ফাহিমের জন্য সব ভালবাসা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ফাহিম ঘুমিয়ে যায়। স্লিপিং পিলের বিপরীতে সে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। তার ঘুম ভাঙ্গে একটা ছোট্ট মেয়ের কান্নার শব্দ শুনে-
"আমি বাবাই এর কাছে যাব, আমি বাবাই কে দেখব।"

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:২৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×