somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যামোফ্লাজ

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পর্ব-১

15 years ago
US Army Reserve Training Center

সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট, জন কার্টার, তার নিজস্ব তাবুতে বসে ডায়েরি লিখছেন। তিনি প্রতিদিনের ট্রেনিং শেষে ডায়েরি লেখেন। এটা তার প্রতিদিনের অভ্যাস। আর পুরো ট্রেনিং শেষ হলে সেই ট্রেনিং এর ফটোগ্রাফ তিনি লাগিয়ে রাখেন ডায়েরির শেষে। এ পর্যন্ত যতগুলো ট্রেনিং তিনি করেছেন সবগুলোতেই তিনি ডায়েরি বানিয়েছেন। এবারের ট্রেনিংটা স্নাইপার রাইফেলের উপর। আমেরিকান আর্মিতে স্নাইপার স্পেশালিস্টের অভাব। যে কয়েকজন ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন মিশনে মারা গিয়েছেন। কারণ শত্রু পক্ষের মেইন টার্গেটই থাকে স্নাইপার কে কিভাবে সরানো যাবে। তাছাড়াও টেরোরিস্টদের মধ্যে স্নাইপার এর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তাদের সাথে তাল দিয়ে উঠতে হবে এখন।
ত্রিশ জন সেকেন্ড আর ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট ট্রেনিং নিচ্ছেন। তার মধ্যে মাত্র পাঁচজনকে দেওয়া হবে স্নাইপার স্পেশালিস্টের ব্যাচ। আর এর মধ্যে বলা চলে শুরুতেই যার নাম আসে তিনি হচ্ছেন জন কার্টার। বাতাসে শোনা যাচ্ছে ট্রেনিং শেষে নাকি পদোন্নতি হতে পারে। বেশ দক্ষ এবং সৎ একজন আর্মি অফিসার হলেন কার্টার। এ পর্যন্ত কোনো খারাপ রিপোর্ট আসে নি তার নামে। বরং প্রতিটা মিশনে তার দক্ষতা আর সাহস সবাইকে মুগ্ধ করেছে। তাইতো সবাই তাকে ‘Front-fighter Carter’ নামে চিনে। ক্রিমিনালরা প্রথমে হয়ত ভাববে টাইটেলটা শুধুই তাদের ভয় দেখানোর জন্য, কিন্তু যারা তাকে সরাসরি ফেস করেছে তারাই বলতে পারবে কার্টার কতটা দুর্ধর্ষ।
ক্যাপ্টেন লুকাস কিছুটা দৌড়ে আসলেন তার তাবুতে। তিনি হাপাচ্ছেন, এসেই টেবিলে রাখা বোতল থেকে পানি খেলেন তিনি। কার্টার তাকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেলেন।
- তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। রেডি হয়ে নাও তার আগে।
- ইয়েস, ক্যাপ্টেন। কিন্তু কেন?
- আমাদের একটা মিশনে যেতে হবে। Take your uniform, fast….
লুকাস বের হয়ে গেলেন। কার্টার এখনও দাঁড়িয়ে আছে। ক্যাপ্টেন তাকে মিশন সম্পর্কে কিছুই বললেন না। কিছুই আন্দাজ করতে পারছেন না তিনি। তবে যা বুঝলেন মিশনটা অনেক ফাস্ট করতে হবে। তাই ক্যাপ্টেন দৌড়ে এসেছেন।
ডায়েরিটা অসম্পূর্ণ রেখে কার্টার তার ইউনিফর্ম পরে নিলেন। প্রতিবারের মত এবারও গলায় তিনি তার প্রিয় লকেটটা পরলেন। এটা তার স্ত্রীর উপহার, বিয়ের দিনে তার স্ত্রী তাকে এই লকেটটা গিফট করেছিলেন। কাকতালীওভাবে ঠিক একই লকেট তিনিও গিফট করেছিলেন তার স্ত্রী কে। অথচ তারা কেও জানতেন না যে দুজনই একই গিফট পেতে যাচ্ছেন। তাই লকেটটা তার কাছে অনেক বেশি স্পেশাল। নিশ্চয়ই এর মধ্যে ভাল কিছু আছে, না হলে কিভাবে দুইজনের গিফট মিলে যেতে পারে! হঠাৎ তার স্ত্রী আর সন্তানের কথা মনে হওয়াতে তিনি ইমোশনাল হয়ে গেলেন। “এবারের ট্রেনিং শেষ করেই আসছি সোনা, ততদিন একটু অপেক্ষা কর। এবার গিয়েই তোমাদের নিয়ে আসব”- মনে মনে বললেন তিনি।
- Are you ready, young man?
ক্যাপ্টেন লুকাস তাবুর ভিতরে ঢুকলেন। তার হাতে একটা M24 স্নাইপার যার ক্যালিবার 7.62mm. ফায়ারিং রেট 20 rpm. শর্ট রেঞ্জে কাউকে এটা দিয়ে গুলি করা হলে বডি ভেদ করে গুলি বের হয়ে যাবে, দেখা যাবে এপাশ থেকে ওপাশ। আমেরিকার তৈরি একটা সার্থক স্নাইপার এটি। ক্যাপ্টেন স্নাইপারটি কার্টারের হাতে দিয়ে বললেন- এটাকে রেডি করে নাও।
- মিশনটা সম্পর্কে কি কিছু জানতে পারি ক্যাপ্টেন?
- অবশ্যই পারো। Anti- terrorism Mission….. এর বেশি কিছু এখন বলতে গেলে আমাদের দেরি হয়ে যাবে। বাকিটা রাস্তায় বলব তোমাকে।
- রেঞ্জটা বললে ভাল হত, ক্যালিবার চেঞ্জ হয় রেঞ্জ বাড়লে। তাই জিজ্ঞেস করলাম......
- ৫০০মিটারের বেশি হবে না। তুমি কি এটার সাথে পরিচিত?
- ইয়েস, ক্যাপ্টেন।
- তাহলে বের হওয়া যাক ।
কার্টার তার তাবু থেকে বের হয়ে আসল। বাতাসে ডায়েরির পাতা উড়ছে, একদম প্রথম পৃষ্ঠাতে এসে থামল। আকাশে মেঘ ডাকছে, বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির মধ্যে স্নাইপার চালাতে সমস্যা হয়ে যাবে। স্কোপ ঝাপসা হয়ে যায়, তখন দেখতে সমস্যা হয়।
এই প্রথম কোনো মিশনে একটা মাত্র জিপ নিয়ে রউনা হল তারা। জিপে তার পাশে বসে আছেন ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট স্টিফেনস, আর সামনে বসে আছেন ক্যাপ্টেন লুকাস। গাড়িটা চালাচ্ছে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট লিওনার্দো। মিশনে লিওর উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা সন্দেহের সৃষ্টি হল কার্টারের মনে। তার মতে লিও নিজেই একটা টেরোরিস্ট। সারাদিন মাতাল হয়ে থাকে আর ভিতরের খবর বাইরে পাচার করে। লিওর মত মানুষের এই মিশনে থাকাটা একদম বেমানান।
কার্টার ঘড়িতে সময় দেখে নিলেন। এখন বাজে রাত ১০টা। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। অনেক কঠিন কঠিন মিশন পার করে এসেছে সে, মৃত্যু ভয় ছিল ঠিকই কিন্তু এমন লাগেনি তার কখনো। তার কেন জানি মনে হচ্ছে খুব বড় বিপদ তার সামনে অপেক্ষা করছে।
পার্কিং গ্যারেজের চারতলায় গাড়িটা থামল। একে একে সবাই নামল লিও বাদে। সে গাড়ি নিয়ে চলে গেল নিচতলায়। ক্যাপ্টেন লুকাস স্নাইপারটা কার্টারের হাতে দিলেন। সাথে দিলেন পাঁচ রাউন্ডের একটা মাত্র ম্যাগাজিন।
- মাত্র একটা ম্যাগাজিন, ক্যাপ্টেন?
- মাত্র তিনজনকে মারতে হবে। দুইটা এক্সট্রা দেওয়া হয়েছে। আশা করি সেগুলো লাগবে না।
- ইয়েস, ক্যাপ্টেন। আমি চেষ্টা করব।
- এখন মিশনের শর্ট ব্রিফিং দেই। এই মিশনে শুটার থাকবে শুধু তুমি একা। তাই তোমাকে পূর্ণ সতর্ক থাকতে হবে। তিনজন টেরোরিস্টকে মারতে হবে। তাদের পরিচয় দিব না, কারণ টেরোরিস্টের পরিচয় একটাই। সেটা হচ্ছে সে টেরোরিস্ট। তোমার সামনের রেস্টুরেন্টটার ১১ নাম্বার টেবিল তারা বুক করে রেখেছে। আর দশ মিনিটের মধ্যেই দেখবে টেবিলে তিনজন এসে বসবে। তারা বম্ব ব্লাস্টের একটা সুইসাইডাল মিশন নিয়ে আলোচনা করবে বলে ইনফরমেশন আছে আমাদের কাছে। তুমি কি প্রস্তুত?
- স্নাইপার দিয়ে একসাথে তিনজন কে!
- স্নাইপার ছাড়া আমাদের আর কোনো রাস্তা নেই। সামনে থেকে এটাক করলে বম্ব ব্লাস্টের ঘটনা ঘটতে পারে যার কারণে অনেক প্রাণহানি হতে পারে।
- ইয়েস, ক্যাপ্টেন।
- তুমি না আমাদের ট্রেনিং এর বেস্ট স্নাইপার শুটার? তুমি যদি বলো পারবে না তাহলে আর কে পারবে! মনে সাহস আনতে হবে। দেশের জন্য কাজ করছ তুমি। হাতে আর মাত্র কয়েক মিনিট। তোমার জন্য ফায়ারিং স্পট ঠিক করা আছে। ওইপাশের উঁচু অংশটা। আমি জানি তুমি পারবে। Congratulations! You are going to be a First Lieutenant…….
কার্টার স্নাইপার লোড করে বসে আছে। আর মাত্র এক মিনিট, তারপরই টেবিলে এসে বসবেন তিনজন। সে মাথায় নকশা করে নিচ্ছে কিভাবে শুট করবে। প্রথম দুইজন কে মারতে সমস্যা হবে না। কিন্তু তৃতীয় জন! একবার যদি বুদ্ধি করে সে পালানো শুরু করে খুব কষ্ট হয়ে যাবে তাকে মারতে। খুব বেশি দূরে না রেস্টুরেন্টটা। এদিক থেকে একটা প্লাস পয়েন্ট পাবে সে। এক শটে একটা কনফার্ম কিল। তার মাথায় নেপোলিয়ানের সেই বিখ্যাত উক্তিটা ঘুরপাক খাচ্ছে-
“In war you see your own troubles;
Those of the enemy you can not see.
You must show confidence…..”
এবং কার্টার এখন তার কনফিডেন্স লেভেলটাই বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

****
সময় পার হয়ে গেছে। এখন দশটা বেজে দশ মিনিট। অপেক্ষা করছে কার্টার। হঠাৎ ১১ নাম্বার টেবিলে একজন এসে বসলেন। তার মাথায় একটা কালো হ্যাট আর পড়নে কালো স্যুট। মুখ বুঝা যাচ্ছে না। তবুও তাকে চেনার চেষ্টা করলেন কার্টার, কিন্তু চিনলেন না। তিনি কিছু একটা অর্ডার করে অপেক্ষা করতে থাকলেন।
তার দুই মিনিট পর আসলেন আরেকজন। এই লোকটাকে তার চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছেন সেটা মনে করার চেষ্টা করছেন কার্টার। বারবার মনে হচ্ছে টিভিতে কোনো এক টকশো তে দেখেছেন তাকে। কিন্তু নাম মনে করতে পারছেন না।
এক মিনিটের মধ্যে হাজির হলেন আরেকজন, ক্যাপ্টেন শেল্ডন। তাকে চিনতে একদমই কষ্ট হল না কার্টারের। কিন্তু শেল্ডন কেন এখানে! শেল্ডন টেরোরিস্ট! না এটা কখনোই হতে পারে না। পুরা ফোর্সে যদি একজন সৎ, দায়িত্ববান অফিসার থাকে তাহলে সেটা ক্যাপ্টেন শেল্ডন। কতদিন গেছে সব আশা হারিয়ে বসে থেকেছে কার্টার। তখন এই লোকটিই এসে তাকে সাহস দিয়েছে। কার্টারের খুব কাছের একজন সিনিয়র হলেন শেল্ডন। একসাথে দাবা খেলা, টিভিতে খেলা দেখা, একসাথে ঘুরতে যাওয়া, এসব ভাসছে কার্টারের চোখের সামনে। শেল্ডন কে সবসময় বন্ধুর মতই কাছে পেয়েছে সে। স্কোপ থেকে চোখটা সড়িয়ে সে বলে উঠল-“সরি, ক্যাপ্টেন। আমি পারব না।”
- আমি জানি, ক্যাপ্টেন শেল্ডন কে দেখে তুমি এমন করছ। সে তোমার কাছের বড় ভাই হতে পারে, তোমার বন্ধু হতে পারে। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে একজন টেরোরিস্ট।
- ক্যাপ্টেল শেল্ডন টেরোরিস্ট হতে পারে না।
- তুমি ভিতরের খবর জানো না কার্টার। শেল্ডন টাকার লোভে প্রতিদিন ভিতরের খবর বাইরে দিত। আমরা কি প্ল্যান করছি, কোনদিক দিয়ে এটাক দিব, আমরা কি কি অস্ত্র নিয়ে আসছি, কতজন আসছি, এসব কিছু পাচার করেছে শেল্ডন। তুমি নিজেও তো তার একটা খেলনার মত। সে তোমার সাথে এমন গভীর সম্পর্ক কেন তৈরি করেছে জানো? তোমাকে সময়মত ব্যবহার করবে বলে। তুমি এখনো অনেক কাঁচা। আরো কয়েকটা মিশনে যাও, কয়েকটা মিশনে লিড দাও তখন তুমি আসল মানুষদের চিনতে পারবে। তুমি কি প্রস্তুত?
কার্টার চুপ…
- Get ready for the mission. Take it as your order not advice. I’m moving at the entrance of the floor. Best of luck, my boy…….
- ইয়েস, ক্যাপ্টেন।
ক্যাপ্টেন লুকাস চলে গেলেন। কার্টার আবার স্কোপে চোখ দিল। তার হাত কাঁপছে। ফোর্সের সবচেয়ে কাছের মানুষকে খুন করতে যাচ্ছে সে। তার সেই প্রথম দিনের কথা মনে পড়ছে। সবাইকে ছেড়ে যেদিন তিনি আসলেন ক্যাম্পে, তার চোখ ভেজা ছিল। এই ক্যাপ্টেন শেল্ডনই সেদিন এসে ঘাড়ে হাত দিয়ে বলেছিলেন-“সবার আগে দেশ, তুমি দেশের জন্য এখানে এসেছ। দেশের জন্যই তোমাকে লড়তে হবে যতদিন না তুমি দেশকে তোমার শরীর উপহার দিতে পারো” মনে মনে কার্টার বলে নিল-“I’m sorry, brother…..”
প্রথম শট, বিকট শব্দ। বুলেট গিয়ে লাগল ক্যাপ্টেন শেল্ডনের গলায়। কেও কিছু বুঝে উঠার আগেই আরেকটা শট। এবার নেতিয়ে পড়লেন শেল্ডনের পাশের জন। তার চোখে অলরেডি পানি চলে এসেছে। এই প্রথম তিনি গুলি করছেন আর কাঁদছেন।
তৃতীয় জনকে মারতে একটু কষ্টই হল তার। তিনি ভেবেছিলেন তৃতীয় জন কিছু না দেখে দৌড় দিবে। কিন্তু সেটা হল না। টেবিলটাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সেটা দিয়ে এক প্রতিরক্ষার দেয়াল বানাল তৃতীয় জন। কিন্তু লাভ হল না। কার্টার রেস্টুরেন্ট থেকে উঁচুতে থাকায় তার অবস্থানটা বেশ সহজেই পেয়ে গেলেন। গুলি করলেন টেবিলের মাঝ বরারবর। টেবিল ভেদ করে সেটা গিয়ে লাগল ডান পাশের কাঁধে। নিজেকে বাঁচাতে তখন শুয়ে থেকে যেতে শুরু করল সে। কিন্তু লাভ হল না। আরেকটা শটে নেতিয়ে গেল তৃতীয় জনের বডি। এক থেকে দেড় মিনিটের মাথায় তিনটা নিখুঁত খুন। চারটা বুলেটে তিনটা খুন, রেশিও অনেক ভাল।
গুলির খোশাগুলো পকেটে নিলেন কার্টার। তারপর স্নাইপার টা গুছিয়ে বেশ দ্রুতই উঠে আসলেন নিজ জায়গা থেকে। দরজা দিয়ে বের হতেই তার মাথায় কেও আঘাত করল। স্নাইপার টা হাত থেকে পড়ে গেল। মাথা চেপে ধরে তিনি নিজেও পড়ে গেলেন। তারপর জ্ঞান হারালেন।
জ্ঞান ফিরে তিনি নিজেকে পেলেন এক বদ্ধ রুমে, ঝুলন্ত অবস্থায়। অনেকক্ষণ পর বুঝলেন এটা একটা টর্চার সেল। তার মাথা থেকে তখনো ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরছিল।
হঠাৎ দরজা দিয়ে একে একে প্রবেশ করলো লুকাস, লিও আর স্টিফেনস। লিও এসে কোমরে লাঠি দিয়ে একটা আঘাত করে বললেন-“কি অবস্থা ফ্রন্ট-ফাইটার? তিনজন কে নিমিষেই শেষ করে দিলে! তুমি জানো তারা কারা?”
কার্টার চুপ.........
- প্রথম গুলি করেছ তোমার প্রিয় ক্যাপ্টেন শেল্ডন কে, দ্বিতীয়টা করেছ ডিটেক্টিভ ও জার্নালিস্ট গ্যাব্রিয়েল আর তৃতীয়টা করেছ পুলিশের একজন বেস্ট অফিসার স্টিভকে। কি মনে করছ, তিনজন বিখ্যাত মানুষকে খুন করে তুমি রক্ষা পাবে?
লুকাস বলে উঠল-“ভাগ্যিস প্রথম শট টা শেল্ডন কে করেছিল। নয়ত শেষে ওকে মারতেই পারত না, ঠিক নিজেকে বাঁচিয়ে নিত শালা শেল্ডন।”
তারপর লিও আরো দুইবার আঘাত করে বলল-“তোকে কেও রক্ষা করবে না, শুনে রাখ এটা।”
- দাঁড়াও লিও, আর মেরো না। ও মারা গেলে সব প্ল্যানই নষ্ট হয়ে যাবে। কার্টারকে বাঁচাতে হবে সবার আগে। ওর মাথা থেকে এখনো রক্ত ঝরছে। আমার মনে হয় হাসপাতালে নেওয়া উচিত এখন।
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে কার্টারের। চারপাশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। সে আস্তে করে বলে উঠল- “আমাকে একটু পানি দিতে পারবে?” তারপর সে আবার চুপ হয়ে গেল।
কার্টার এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ হল তার জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু সে কাউকে চিনছে না, এমনকি নিজেকেও। ধীরে ধীরে দুই একটা করে কথা বলছে সে। ডাক্তার জানিয়েছে তার মেমোরি লস হয়ে গিয়েছে, আগের কিছুই তার মনে পড়ছে না। লং টার্ম ব্রেন ড্যামেজও হতে পারে। কিন্তু সে সম্পর্কে সিউর হয়ে তারা কিছু বলতে পারছে না।
এদিকে কেসটা নিয়ে সারা শহর মাতামাতি হয়ে আছে। মিডিয়া উঠেপড়ে লেগেছে কেসটাকে নিয়ে। প্রতিটা টিভি চ্যানেলে একটা ভিডিওই দেখানো হচ্ছে। সেটা হল সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট জন কার্টারের সেই ১ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের স্নাইপার কিল। কেও কেও আবার প্রশ্ন তুলছে আমেরিকান ফোর্সে এত দক্ষ একজন স্নাইপার শুটার থাকা স্বত্বেও কেন প্রতিটা মিশনে এত প্রাণ হারাতে হচ্ছে! কি আছে এর পিছনে লুকিয়ে!
ফোর্স থেকে প্রেস ব্রিফিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কেসটা তারা নিজেরা তদন্ত চালাবেন। দায়িত্ব দেওয়া হল ক্যাপ্টেন লুকাস কে। আসলে সে নিজেই কিছুটা জোরপূর্বক আর সিনিয়র অফিসারদের পটিয়ে কেসটা নিজের নামে নিয়ে নিয়েছে। কারণ এই কেসের পর প্রমোশন নিশ্চিত।
লুকাসের কাছে সবকিছুই গুছানো। সারা বিশ্বকে সে দেখিয়েও দিয়েছে আসল খুনিটা কার্টার। এখন শুধু গল্পটা সুন্দর করে গুছিয়ে নিবে। কে না দায়িত্ব এড়াতে চায়। তাই তার তদন্ত দলকে সে বলেছে তার কাছে সব ইনফরমেশন গুছানো আছে, তাদের কিছুই করতে হবে না। তাই তারাও খুশি, লুকাসও খুশি।
আদালতে দাঁড়িয়ে তাই সুন্দর করে তার গল্পটা বলে গেল লুকাস। সাক্ষ্য প্রমাণ দিল লিও আর স্টিফেনস। সবাই মুগ্ধ হয়ে গল্পটা শুনল আর মনের মধ্যে ঘৃণা জমাতে লাগল কার্টারের উপর। এই পুরো সময়টা যে মানুষটা নির্বাক হয়ে থাকল সে হচ্ছে হুইল চেয়ারে বসা কার্টার। ছিল না তার পক্ষের কোনো উকিল। কে চায় এভাবে গুছানো একটা কেসের বিপক্ষে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করতে, যেখানে কোনো আর্থিক লেনদেনও নেই! প্রজেক্টরে দেখানো হল কার্টারের সেই ভিডিওটি। বলা হল সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিল এটি। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে চারবার মাজল ফ্ল্যাশ, অর্থাৎ চারটা গুলি।
সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট কার্টারের শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে আদালত তাকে যাবজ্জীন কারাদণ্ড দিল, সাথে একটা প্রেস ব্রিফিং করে জানিয়ে দেওয়া হল সেনাবাহিনী থেকে কার্টারের অব্যাহতির নির্দেশ।
হুইল চেয়ারে বসেই কাঁদতে কাঁদতে নিজের গর্বের ইউনিফর্ম খুলে ফেললেন জন কার্টার। তাকিয়ে থাকলেন সেগুলার দিকে। ব্যাচগুলো টেবিলে রাখা। এই জিনিসগুলো হয়ত আর কখনোই পড়া হবে না তার। পড়ে নিলেন খুব সাধারণ কয়েদিদের পোশাক।
তাকে নিয়ে যাওয়া হল কারাগারের একটা রুমে। সেখানে শুধু আছে লোহার একটা খাট, আর পানির একটা গ্লাস। তারপর দরজায় তালা দিয়ে দেওয়া হল। কার্টার বাইরে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে। লুকাস, লিও আর স্টিফেনস দরজার বাইরে থেকে হাসতে হাসতে একটা স্যালুট দিয়ে চলে গেল।
এক্স সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট কার্টার তখনো চুপ...........

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×