somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাব ধরা 'ধর্মান্ধ'

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"অল্প বিদ্যা ভয়ংকর" প্রবাদটা এমনিতেই সত্য, তার উপর যদি তা ধর্মের ব্যাপারে হয় তাহলে তো আর কথাই নেই।

এই ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি খেয়াল করা যায় সেই সব মানুষের ভিতরে যারা সবে মাত্র ধর্মের পথে এসেছে এবং ভাব নিতে চাইতেছে তারা ধর্ম খুব জানেন এবং মানেন। আসলে তারা ধর্মের খুব ক্ষুদ্র একটা অংশই জানেন এবং মানুষের মুখ থেকে শোনা সামান্য কিছু হাদিস আর কুর'আনের আয়াত মনে রেখে যেখানে সেগুলো আওড়াতে থাকেন। ভাবখানা এমন যেন তারা ধর্মের ব্যাপারে খুবই এক্সপার্ট। ব্যাপারটা একমাত্র তখনই ধরতে পারবেন যদি আপনি একটা জিনিস আগে থেকে জানেন এবং সেটা নিয়ে ওইসব ‘ভাব ধরা ধর্মান্ধ’-দের আলোচনা করেন।

ধর্ম এমনিতেই খুবই সেনসেটিভ একটা ব্যাপার, মানুষের মনের উপর তার প্রভাব সব সময়ই বেশি হয়। তাই যখনই ধর্ম সম্পর্কিত কিছুর প্রচার বা প্রসার করার পদক্ষেপ নেয়া হবে, ভাল ভাবে জেনে তারপর অন্যকে জানানোর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। নিজের মন গড়া কোন কিছু প্রচার করা উচিৎ নয় কারন এতে করে মানুষ ভূল পথে পা বাড়াতে পারে। যদি আপনার কারণে ভূল পথে পা বাড়ায় তবে তার গুনাহর ভার আপনার কাঁধেও বর্তাবে। তাই জেনে বুঝে তারপরই ধর্মের প্রচার করা উচিৎ।

এবার আসল ঘটনায় আসি। কিছুদিন আগের কথা, আমি আমার দুই বন্ধুর সাথে সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন আমার এক বন্ধু আমাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসল, এখন যে বিভিন্ন ধর্মীও দলগুলো দেশের মাইনরিটিদের (হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য) হত্যা করছে, আমি কি এই হত্যা করা সাপোর্ট করি কি না!

আমি অবাক হয়ে গেলাম! নির্দোষ নিরপরাধ কিছু মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, এতে সাপোর্ট করার কি আছে? কিন্তু তাদের মানসিকতা দেখি অন্য! তারা খুব ভালভাবেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে অমানবিক এসব হত্যাকাণ্ডকে। তারা বলছে আমাদের ধর্মেই নাকি বলা হয়েছে বিধর্মীদেরকে হত্যা করতে, এটা নাকি জিহাদের একটা অংশ। আমাদের কোন এক নবী নাকি বলেছেন ইহুদীদের হত্যা করতে। আমার ওইসব বন্ধুরা আরও বেশ কিছু কথা বলেছে, তার মধ্যে আরেকটা হল অন্যান্য দেশগুলোতে যেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বেশি সেখানে নাকি মুসলমানদের খুবই খারাপ ভাবে ট্রিট করা হয়, তাই আমাদেরও উচিৎ আমাদের দেশে ওইসব ধর্মাবলম্বীদের একই ভাবে ট্রিট করা। তাদের কথা হল কুকুর আমাকে কামড় দিলে আমাকেও কুকুর হয়ে যেতে হবে, তাকে বুঝতে দেয়ার দরকার নাই যে আমি মানুষ। আজব কথা বার্তা! আমার কথা হল তারা যদি একটা খারাপ কাজ করে তাহলে কি তার প্রতিদানে আমাকেও আরেকটা খারাপ কাজ করতে হবে? তাকে বুঝাতে হবে যে তার আর আমার মাঝে কোন ফারাক নেই!

আমি ইসলামের কোন স্কলার না, ইসলাম সম্পর্কে জানিও না খুব একটা বেশি। তারপরও আমি যতটুকু জানি ইসলামে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে সদাচরণ ও সুসম্পর্ক বজায় রাখা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর শিক্ষা ও আদর্শ। তিনি বিধর্মীদের সাথে খুবই ভাল ব্যাবহার করতেন, যোগাযোগ রাখতেন। এমনকি সেসব বিধর্মীদের সাথেও যারা উনাকে আঘাত করেছে, উনার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছে, ক্ষতি করেছে, এমন কি উনাকে মেরেও ফেলার চেষ্টা করেছে! তারপরও তিনি তাদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেন নি। শুধুই তাদের মঙ্গল কামনা করে গেছেন। অনেকেই তার এই ব্যাবহারে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকর্ষিত হয়েছে; অনেকে ইসলাম গ্রহণও করেছে। বিনা কারণে বিধর্মী মারা যদি জিহাদের অংশই হয়ে থাকে তাহলে আমাদের নবী করিম (সঃ) কেন তাদের মেরে ফেলেনি?

আর বিনা কারণে বিধর্মীদের মেরে ফেলা যদি আমাদের ধর্মের জিহাদের অংশই হয়ে থাকে, তাহলে তো বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমান ব্যাতিত আর কোন জাতিই থাকত না। কারন যখন ইসলামের স্বর্ণযুগ চলছিল তখন মুসলমানেরাই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী জাতি। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকটাই ছিল মুসলমানদের দখলে। মুসমানেরা তো চাইলে তখনই পৃথিবীকে বিধর্মী শুন্য করে ফেলতে পারত। কিন্তু করেনি কেন? কারন বিনা কারণে মানুষ হত্যা করা ইসলামের শিক্ষা নয়। যারা বলে এটা ইসলামের শিক্ষা, তারা না জেনে বলে অথবা নিজের মনগড়া ফতোয়া দেয়। বিধর্মীদের কাছে ইসলাম প্রচার করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। আর যদি কোন পৃথিবীতে বিধর্মীই না থাকে তাহলে আমাদের ধর্মে যে বলা হয়েছে ইসলাম প্রচার করতে তাহলে কাদের কাছে ইসলাম প্রচার করবো? নিজেদের কাছেই?!

তাহলে আমরা কেন আমাদের নবী রাসুলদের দেখান পথ অনুসরণ করছি না? কেন তাদের দেখান পথে না চলে নিজেদের মন গড়া নিয়মে চলছি, আর তার দায়ভার ইসলামের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছি? প্রশ্ন রইল...
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×