দুহাজার চৌদ্দ তে প্রথম যখন ক্লাস শুরু হয় তখন অনেকটা একা একা হেঁটে হেঁটে আশেপাশের জায়গা চেনা শুরু করি। এক বড় ভাই প্রথম চাংখারপুলে খেতে নিয়ে যান। কালাভুনা নাকি এখানে বেশ বিখ্যাত। খেতে বেশ সুস্বাদু। তবে আমরা যারা চিটাগাং এ বড় হয়েছি, কালাভুনার একটা ভার্সন আমরা কুরবানির ইদের সময় খেয়ে অভ্যস্ত । আস্তে আস্তে চাংখারপুলের আফতাব এর বিফ খিচুড়ি আমাদের বেশ পছন্দের একটা খাবার হয়ে উঠল। রাতবিরেতে খেতে চাইলে দাম- স্বাদ এর সমন্বয়ে এর চেয়ে ভাল আর কিছু আশেপাশে ছিল না। একটু হাঁটলে অবশ্য নীরব হোটেল ছিল। ভর্তা-ভাজির জন্য বিখ্যাত' নীরব'। চাংখারপুলের রাজধানী আর মিতালীতে বেশ যাওয়া হত। তবে সবচেয়ে বেশি যাওয়া হত ' সোহাগি' তে। সোহাগি নাকি আনওফিশিয়ালি ডি এম সি র চতুর্থ ক্যান্টিন ছিল। প্রথম বছর রোজার পুরো সময়টায় হলের অপজিটের গলিটা দিয়ে ভোর রাতে চোখ কচলাতে কচলাতে রুমমেটরা মিলে সোহাগিতে যাওয়ার স্মৃতি এখনো অমলিন। আফতাব হোটেল উপরে ক্যান্ডেল লাইট বলে একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। ওইখানে বিফ খিচুরির সঙ্গে একটা বেগুন ভাজি দিত। আমার জন্য ঘরের বাইরে খাওয়া ওইটাই বেস্ট বেগুনভাজি। একটু হেঁটে জেলখানা রোড দিয়ে গেলে সাতরওজার অইদিকে ছিল কলকাতা কাচ্চি। এদের বাসমতির কাচ্চি তখন বেস্ট ছিল। তারা মসজিদের পাশেই ছিল ছোট্ট একটা দোতালা দোকানে আসল নান্নার বিরিয়ানি। আমার এক রুমমেটের বার্থডে তে প্রথম গিয়েছিল আসল নান্নায়। হাজির বিরিয়ানি সাথে প্রথম পরিচয় পেডিয়াট্রিক সার্জারি ওয়ার্ডের সময় টাবলু স্যার কল্যানে। নাজিরাবাজার মোড়ে বিসমিল্লাহ কাবাব আর বিউটি লাচ্ছির সাথে পরিচয় একটু দেরিতেই হয়েছে। তবে একবার পরিচয় হবার পরে বিসমিল্লাহর কাবাবের সাথে বিউটির স্পেশাল ফালুদের কম্বো একটা অনেক চমৎকার জিনিস। প্রথম দিকে জুনিয়র , ফ্রেন্ড বা রিলেটিভ দের নিয়ে গেলে এই কম্বো টাই ছিল আমার প্রথম চয়েজ। ফাইনাল প্রফের রিটেনের সময় আবিষ্কার করলাম জমিদারি ভোজ। জমিদারি ভোজে খাওয়া বোরহানি আমার খাওয়া বেস্ট বোরহানি। মসলা, টক আর মিস্টির একদম পারফেক্ট কম্বো। খাওয়া শেষে ডেজারটের জন্য যেতে হবে মদিনা মিষ্টান্ন ভান্ডার। কাশ্মিরি হালুয়ার সন্ধানে। ফাস্ট ফুডের জন্য আমার শুরুর দিকে ফার্স্ট চয়েজ ছিল লালবাগের ভূতের বাড়ি। পাস্তা বাস্তা -আমি গেলে এটাই অর্ডার করি। এরাবিয়া বিফ কাবসা নামের একটা আইটেম আছে। এটাও খারাপ না। একটু ডীফ্রেন্ট কিছু চাইলে লালবাগ মোড়ে নিউ বিসমিল্লাহ্য় যাওয়া যায়। অনেকে খিরি কাবার কখনো খাননি। নিউ বিসমিল্লাহয় পেটপুজা শেষে রাস্তার অন্য পাড়ের রয়েল এর পেস্তা বাদামের শরবত ট্রাই করা সবচেয়ে ভাল বুদ্ধি। আরেকটু হেঁটে গেলেই শাহি জুস কর্নার। পিপাসা এখনো যদি না মেটে তবে শাহি জুস কর্নার এ ঢু মারা যায়। ইন্টার্ন শিপের সময় এসে নারিন্দা ভূতের গলিতে আবিষ্কার করলাম ' মাধবাস কিচেন'। নিরামিষ সবজি, লুচি, আলু পরোটা এরকম হরেক পদের মুখরোচক খাবার এর জন্য পারফেক্ট জায়গা। খেয়ে দেয়ে হেঁটে চলে যাই স্বামীবাগ মন্দিরে। মন্দিরের পেছনে একটা মিস্টির দোকান আছে। আশেপাশের অনারেবল মেনশন হিসেবে আরো অনেক দোকানের কথা বলা যায়। মাদরাশা শিক্ষা বোর্ডের পেছনে দুলাল স্যূপ কর্নার ছিল আমাদের বিকেলের প্রিয় জায়গা। ধানমন্ডী তো পুরোটা পড়েই আছে। তবে বিগত কয়েক বছরে এই এই জায়গাগুলোই পুরান ঢাকায় আমার গো টু প্লেস।
এই বৃষ্টিভেজা রাতে পেটে ক্ষুধা নিয়ে এইসব খাবারের স্মৃতিরোমন্থন করতে বেশ ভালই লাগছে। অনেকটা গরুর মত জাবর কাটার ফিলিং হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:৫৮