টকটকে লাল লিপস্টিক যেন আরো রক্তিম হয়ে উঠেছে বর্ণিল নগরীর চোখ ধাঁধানো আলোয়। চোখের স্মোকী সাজ হৃৎকম্পন তুলে দেয়ার অভিযোগে কাঠগড়ায় দাড়ানোর মতন। নতুন চকচকে বুটজোড়াই বলে দেয় তাদের কেনা হয়েছে থার্টি ফার্স্ট উদযাপনের জন্যে। রাতের নিয়ন আলোয় সেজে ওঠা রুপসী ঢাকা শহরের সাথে বেশ মানিয়েছে বাইকের উপর বয়ফ্রেন্ডকে জড়িয়ে থাকা এই আধুনিকাকে। আহ্! লন্ডন-নিউ ইয়র্ক-সিডনীর পথে ভালোই এগোচ্ছি আমরা।
ভাবতে ভাবতেই আমিও একটু এগোই অভিজাত নগরীর জনবহুল রাস্তা ধরে। সম্বিৎ ফিরে আসে একটা অনাকাংখিত ডাকে। সে ডাক সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। সেই নিরাকারকে অবিরত ডেকে চলেছে ষাটোর্ধ্ব এক মানুষ। ওহ্! মানুষ কোথায়? এতো দেখছি ভিখারী... মলিন লুঙ্গী, নানান বর্ণের তালিযুক্ত ময়লা পাঞ্জাবি। পোষাক দেখে বোঝার উপায় নেই শীতকাল নাকি গ্রীষ্ম চলছে। শিরা ওঠা হাতটি পেতে দিচ্ছে সবার সামনে।
নাহ্.. ভালো লাগছেনা বুড়োকে। উৎসবের সাজের মাঝে বড্ড বেমানান! চারিদিকে বিদেশী সঙ্গীতের গুঞ্জনের মাঝে এই খোদার নাম জপাও বড্ড কানে বাজছে। হেডফোনের ভলিউম বাড়িয়ে দিলাম। কোনক্রমে দুটি টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে মানে মানে কেটে পড়লাম। কে জানে বাবা- তার দারিদ্র্যের শীতলতা যদি সোয়েটার ভেদ করে আমার মাঝে ঢুকে পড়ে! বৃদ্ধের অসহায় দৃষ্টি থেকে পালাতে হবে...
কিন্তু, বুড়োর আর্তি যেন মগজটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। অন্তঃকর্ণ ভেদ করে বেজে চলা লিন্কিন পার্কও তা সরাতে পারছে না। যেমনটা পারছেনা সেই অসহায় দৃষ্টিটাকেও সরাতে। সে একই দৃষ্টি যেন ফুটপাতে রুটি কলা বেচা কিশোরটির চোখে? মাথায় ভারী বোঝা নিয়ে ছুটে চলা কালো মানুষটির চোখে? পথের মোড়ে ভাপা পিঠা বেচতে বসা মাঝবয়সী মহিলাটির চোখে?
এই চোখগুলোর সামনে কি করে উদযাপন করবো পুরনো বছরকে ছুঁড়ে ফেলার উৎসব? লজ্জায় অবনত হয়ে আসে দৃষ্টি। চোখের স্মোকী মেকআপও ঢাকতে পারেনা এই লজ্জা...