মীর কাশেম আলির ফাঁসিতে দেখছি অনেকে মানবতার দোহাই দিয়ে মায়াকান্না করছে। তো দেখে নেয়া যাক, ১৯৭১ এ পাকিস্তানী জন্তুদের সাথে মিলে আলবদর বাহিনী কি কি মানবতা দেখিয়েছিল?
’৭১ সালে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সে সময়কার ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী হান্নানা বেগমের ভাই মুক্তিযোদ্ধা জসীম উদ্দিনকে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছিল আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা নেতা মীর কাশেম। প্রায় একই সময়ে নন্দনকানন এলাকার রাহার পুকুর পাড়ের টাইপ মেশিন দোকানের মালিক জীবনকৃষ্ণ শীলকে একইভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলে তারা। তাঁর অপরাধ তিনি বাসায় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।
এ বন্দী শিবিরে যাদের আটক রাখা হতো তাদের প্রথম তিনদিন কিছুই খেতে দেওয়া হতো না। এ সময় যারা পানি চাইতো তাদের মুখে প্রস্রাব করে দিতো আল বদররা। অনেক সময় নারকেলের খোলে প্রস্রাব করে করে তা খেতে বাধ্য করা হতো। বন্দীদের সবাইকে কিছু কিছু স্থায়ী নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে আসতে হয়েছে। যেমন কারো শরীরের হাড়ভাঙ্গা, কারো আঙুল কাটা অথবা কারো এক চোখ, এক কান, এক হাত বিনষ্ট ইত্যাদি।
রাজাকারদের সহায়তায় সাড়ে চার লক্ষ বাঙালী নারীকে ধর্ষণ, হত্যা এবং শারীরিক ভাবে নির্যাতন করা হয়। এদের ধর্ষণ আর নির্যাতনের বর্ণনা এতই নিষ্ঠুর যে সেটা লেখার যোগ্য নয়। বালিকা, কিশোরী, যুবতী, বিবাহিত-অবিবাহিত, বৃদ্ধা এমনকি প্রেগনেন্টদেরকেও ছাড় দেওয়া হয়নি! দেশ স্বাধীণ হওয়ার পর নির্যাতিত নারীদের যখন বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয় তখন তাদের উপর নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ দেখে পুরা বিশ্ব কেঁপে উঠেছিলো।
তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ এমনকি দুধের শিশুকে তারা আছাড় মেরে অথবা পা ধরে দুই ভাগ করে মেরে ফেলতো। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা, পিটিয়ে হত্যা, পেট চিরে দেওয়া, জবাই করা ইত্যাদি ছিলো রাজাকারদের প্রিয় কৌশল!
এ তো কিছু উদাহরণ মাত্র। আল-বদর বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ছিল সীমাহীন। রাজাকার বাহিনী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে। আর আল-বদর বাহিনীর মূল কাজ ছিল সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক গণহত্যার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।
আর মীর কাশেম আলি ছিলেন একাত্তরের আলবদর বাহিনীর তৃতীয় নেতা। আলবদরের নৃশংসতার বিবরণ স্বাধীনতার পর পর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, যা হিটলারের গোস্টাপো, ভিয়েতনামের মাইলাই কিংবা লেবাননে প্যালেস্টাইনিদের সাবরা শাতিল শিবিরের হত্যাযজ্ঞের চেয়েও হাজার গুণ ভয়াবহ।
কাশেম রাজাকারের চৌদ্দ পুরুষের সৌভাগ্য, তাকে ৭১ এর সেইসব নির্যাতনের ছিটেফোঁটাও সইতে হয়নি। পঁয়তাল্লিশটা বছর অনেক সুখে শান্তিতে কাটিয়ে সে বিচারের আওতায় এসে শাস্তি পেয়েছে। একে বলে আল্লাহ্র বিচার। দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েও এ বিচার ঠেকানো যায়নি। এর চেয়ে বেশী মানবতা কিভাবে তাকে দেখানো যেতে পারে?
ওহে জামায়াত-শিবির গং! তোমরা আসলে কার জন্য কাঁদছো? মানবতার জন্য? নাকি তোমাদের এতদিন ধরে চালিয়ে নেওয়া এই অর্থযোগানদাতাটির জন্য?