নিজের আদরের পশুটিকে কোরবানি দিতে গিয়ে কোন গৃহস্থের কান্না দেখার ইচ্ছা আমার অনেকদিনের। সমস্ত সোয়াব যে ওই চোখের জলের মাঝেই আছে! ঢাকাকেন্দ্রিক ঈদে এমন কান্না দেখতে পাই কই? এখানে সদ্য জবাই হওয়া প্রাণীটার শ্বাসনালী দিয়ে বের হওয়া রক্তের স্রোত দেখে কারো চোখ দিয়ে কান্নার স্রোত নামে না।
.
পশু কোরবানির দৃশ্য দেখিনা অনেক বছর। আমার নার্ভ নিতে পারেনা ব্যাপারটা। কিন্তু অনেক বাচ্চাই দেখি খুব উৎসাহ নিয়ে দেখে। আনন্দ পায় ওই দৃশ্য দেখে। আমার বুঝে আসেনা কিভাবে সম্ভব! অবলা প্রাণীদের প্রতি মায়া তৈরীর ব্যপারটা আমরাই ওদের মাঝে তৈরী করে দেইনা। তাহলে ওরা কি একসময় কোরবানির আসল মর্মটা বুঝতে পারবে? মনের পশুত্বকেও যে কোরবানি দিতে হয়, এটা কি ওরা বুঝবে?
.
আজকাল আমাদের কোরবানির ঈদ বড্ড মাংসনির্ভর হয়ে গেছে। সমান তিনভাগ করি ঠিকই। কিন্তু চর্বি আর হাড়গুলো বেশিরভাগ কিভাবে যেন গরীব আত্মীয় আর মিসকিনদের ভাগে চলে যায়। আমরা ভুলেই যাই "আল্লাহ্র কাছে পশুটির রক্ত-মাংস পৌঁছায় না, পৌঁছায় আমাদের তাকওয়া"। এদিকে আমরা নতুন আরেকটা ডীপ ফ্রীজ কিনে মাংসের হিসাব করে যাই; আর ওদিকে "তাকওয়া" মিসকিনদের সাথে কলাপ্সিবল গেটের বাইরে অবহেলায় পড়ে থাকে!
.
আমার বুঝ হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি কোরবানির ঈদের দিন বিকেলে অথবা পরদিন খুব বৃষ্টি হয়। এবারো হয়তো হবে। আমার মনে হয় আল্লাহ্র নিয়ামত হয়ে এই বৃষ্টি আসেই কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করার নির্দেশনা নিয়ে। তারপরো আমরা না পারি আঙিনা পরিষ্কার করতে, না পারি নিজের মনকে।
.
আমার লন্ডন প্রবাসী ফুপু বলছিলেন, তাদের ওখানে কোরবানির পশুটাকে কেউ চোখেও দেখেন না। অনেক দূরের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় সবার কোরবানি একসাথে হয়ে, মাংস প্রসেসিং হয়ে গাড়িতে করে পৌঁছে দেয়া হয়। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও এমন হবে হয়তো! এছাড়া উপায় কি? কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার না করে ফেলে রাখলে একসময় নগররক্ষকরা লন্ডনের সিস্টেম বেছে নিবেন বাধ্য হয়ে।
.
মনটা খারাপ লাগছে। কত দুঃসংবাদ চারপাশে! ট্যাম্পাকোর ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া লাশের সংখ্যা বাড়ছে। আহত-নিহতদের পরিবারে ঈদ নেই। টিভি নিউজে ওদের কান্না দেখে খারাপ লাগছে। আবার দেখলাম ভারতে গোমাংস খাওয়ার শাস্তিস্বরুপ তরুণীদের গণধর্ষণ করা হয়েছে। পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে দুইজনকে। এত নিষ্টুরতা চারিদিকে! অস্থির লাগে। তবুও এর মাঝেই ঈদ উদযাপন করবো। চেষ্টা চালিয়ে যাবো নিজের মনের পশুটিকে জবাই দিতে।
.
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা!