somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু স্মৃতি ও কিছু ভাললাগা।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসার পর আমার বাবা ও ওনার কিছু বন্ধুরা মিলে মিরপুর ১ নম্বরে সরকারী বাস ভবনে বেশ কিছু বছর ছিলেন । আমরা বড় হয়েছি খেলা ধুলা করে বিশাল এক খেলার মাঠে ।

স্কুলও পেয়েছিলাম বিশাল জায়গা জুড়ে। “মিরপুর বেঙ্গলী মিডিয়াম হাই স্কুল” এখন যার নামকরন হয়েছে “মিরপুর সরকারী উচ্চবিদ্যালয়”। আমি আমার জীবনে প্রথম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়ি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাছাড়া সারাটা জীবন যতটুকু পড়াশোনা করেছি, সরকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভেবে অবাক হয়ে যাই এখন আমার বাচ্চাদের “এক বছরের বেতন” আমার “সারা জীবনের পড়াশোনার” পেছনে যা খরচ হয়েছে তার সমান বা কিছু বেশি। আমরা কোনো দিনও কোচিং করিনি। কিংবা বাসায় মাসের পড় মাস শিক্ষক রাখিনি পড়ার জন্য। পড়াশোনায় ভাল ছিলাম তা বলছি না । আমার বাবা সরকারী চাকুরীজীবী ছিল বিধায় গৃহ শিক্ষক রাখা কিংবা কোচিং করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

বাবা আমাদের পড়াতেন। বাসায় ফিরে যখনই কোনো কিছু বুঝতাম না বুঝিয়ে দিতেন। এমন অনেকদিন হয়েছে যে পড়া মুখস্ত হচ্ছে না বলে বাবা আগে মুখস্ত করে নিয়ে পড়ে বিশেষ কায়দায় নড়তে চড়তে জিজ্ঞেস করে করে মুখস্ত করিয়ে ছাড়তেন। কিছু পড়া ছিল যা মুখস্ত করতেই হতো। এখনকার মতন এত সৃজনশীল চিন্তা ছাত্র ও শিক্ষক কারোরই ছিল না। মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে কাদের পড়াশোনার পদ্ধতি ভাল ছিল। আমদের সময়েরটা না এখনকারটা ! এখনকার বাচ্চারা অপশন না দিলে প্রশ্নের উত্তর একবারে সঠিক দিতে পারে না।

মাঝে মাঝে মনে হয় এখনকার এই পদ্ধতিতে পড়া বাচ্চারা কি খেতে চায় জিজ্ঞেস করলে, অপশন দিতে হবে, কি কি আছে । একবারে ভেবে বলতে পারবে না। আমার বাবা একটি অপশন সিষ্টেম এর লেখাপড়া নিয়ে কৌতুক বলেছিল সেটা হলো এরকম যে, কোন এক বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তার নাম কি, উত্তরে সে বলেছিল স্যার কয়েকটা অপশন দেন।

আমার স্কুল, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সক্রিপ্ট ইংরেজীতে লাগবে বিশেষ কিছু কারনে আর সেই জন্যই অনেক অনেক বছর পড়ে আমার যেতে হয়েছিল আমার পুরোনো সেই সব জায়গায়। এত ভাললাগা লুকিয়ে ছিল বুঝতে পারিনি।

আমার স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আমার পরিচয় পেয়ে অনেক খুশি হলেন । আমি আইনজীবি শুনে অনেক দুঃখ করে বললেন স্কুলের বেশ কিছু জায়গা কিছু ভুমিদস্যু দখল করে নিয়ে মার্কেট বানিয়েছে। বিশাল তার স্থাপনা। কার ক্ষমতা সেই স্থাপনা ভেংগে আবার স্কুলকে ফেরত দেয় । আমারও সেই ক্ষমতা নেই যে আইনের আশ্রয় নিয়ে স্কুলকে সেই জমি ফেরত দিব। কিন্তু মনের ভেতর খচখচ করছে কিভাবে কি করা যায় । কিন্তু দিনতো এক এক করে পার হয়ে যাচ্ছে।

আমার আরো ক্ষমতা থাকলে বিশাল এক কমপেনশেসন এর ব্যবস্থা করে দিতে পারতাম যা স্কুলের কাজে লাগত তা হলে কিছূটা শান্তি পেতাম। বিশাল জায়গা। এত বড় স্কুল আরো উপযুক্ত ব্যাবহারের কথা সরকার ভাবতে পারে।

এত পারতাম পারতাম এই জন্য বলছি আমি নিজেই আমার সাত সমস্যা নিয়ে দিন যাপন করছি। এগুলোতে হাত দিলে সংসার উচ্ছনে যাবে। লেগে থাকতে হবে । যা আমার পক্ষে এই মুহুর্তে সম্ভব নয়। তাই মিশ্রিত এই ভাললাগা, দঃখ-কষ্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। জানি “একতাই বল”। কাউকে হয়ত বা পাওয়া যাবে, যে এই স্কুলে পড়েছেন এবং এই স্কুলের উন্নতির জন্য এগিয়ে আসবেন।

আমি আসলে অনেক ক্ষমতা লালন করি না। যেটুকু ক্ষমতা আছে তা শুধু ব্যবহার করি নিজের জন্য। নিজের কাজে লাগিয়ে যাচ্ছি আর শুধু আমার পরিবারের কাজে মাঝে মাঝে ব্যবহার করছি। কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে হয় আমি যদি কিছু করতে পারতাম। এখনো এই পারতাম পর্যন্তই।

বন্ধুরা তোমরা সব কোথায় আমি তোমাদের খুঁজছি। চল আমরা সবাই মিলে কিছু একটা ভাল কাজ করি এই স্কুলটির জন্য। বল্লভ স্যার আমাদের অংক শিখিয়েছিলেন বলে আজকে আমরা অঙ্কে এত ভাল। তাহের স্যার বাংলা শিখিয়েছিলেন বলে আমরা বাংলা সহজ করে বলতে ও লিখতে পারছি। হাসিনা আপা অর্থনীতি পড়িয়েছিলেন বলে আমাদেরকে যে কেউ যা তা বোঝাতে পারেন না। ফাতেমা আপা, বেলী আপা, মুন্নি আপা , বরাত আলী স্যার, মনিরুজ্জামান স্যার আরো অনেক স্যার ও আপা যাদের নাম মনে করতে পারছি না (অনেক দুঃখিত সেই জন্য) আপনাদের সবাইকে অনেক মনে পড়ে।

রইসুল আমাদের ব্যাচ থেকে স্ট্যান্ড করেছিল। শুনেছি ও আর্মিতে গিয়েছে। অনেকের কথা মনে পড়ছে কিন্তু নাম ভুলে গিয়েছি ।বিঊটি আমার ব্যাচে প্রথম হতো সবসময়। অসাধারন তার হাতের লেখা। কৌতুক করায় জুড়ি ছিল না। পুরো পরিবার ছিল অনেক গুনিন। ওরা এখন কোথায় আমি জানি না। আমি দেশের বাহিরে বেশ কিছু বছর থাকায় এদের সাথে যোগাযোগ নাই। আমার সবসময় শিল্পী, ইভা আপা, সুকলা, তুষ্টি, এদের কথা মনে পড়ে।

অনেক ভাল লাগত যদি জানতে পারতাম এরা কোথায় আছে, কেমন আছে?
লিপি , ফারজানা, নাসিমা এদের সাথে মাঝে মাঝে (কয়েক বছরে একবার) দেখা হয়, কথা হয় অনেক ভাল লাগে, সময় গুলো সুন্দর কাটে।

কলেজের বান্ধবি, সুইটি, রুনা, ইপা, জেরিন, দঃখিত অনেক অনেক প্রিয় মানুষের নাম মনে করতে পারছি না। আমাকে ক্ষমা করে দিও (আমার একটা ব্রেন টিউমার অপারেশন হয়েছিল ২০০৬ এ ) এই অপারেশনের ফলে আমি অনেক কিছুই মনে করতে পারি না।

তোমরা সবাই যে যেখানে আছ সবাইকে সংগে নিয়ে ভাল থে্কো , সুস্থ থেকো , সুন্দর থেকো।


এই সেই মার্কেট ভবনের পেছনের দিকটা যা স্কুলের জমিতে করা হয়েছে ।









এখন গেটটি কলেজের প্রবেশ দ্বার হিসাবে ব্যাবহার হচ্ছে




আমাদের সময় এই গেটটি কলেজের প্রবেশদ্বার হিসাবে ব্যাবহার হতো।


পেছনের যেই সাদা বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে তা কলেজের ছাত্রীহোষ্টেলের জন্য বানানো হয়েছে। আমাদের সময় এই হোষ্টেল ছিল না।






নোটঃ ছবিগুলো সব আমার নিজের তোলা , সেপ্টেম্বর, ২০১২।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:১৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×