এই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামের লোকটাকে আমি বরাবরই অপছন্দ করি। কারণটা সহজ, যখনই আমি হাজার খুঁজে হৃদয় খুলে তোকে কোন কথা বলতে যাই তখনই আবিষ্কার করি এই লোকটা হুবহু সেই কথাটাই ১০০ বছর আগের কোন রচনায় লিখে বসে আছে!! আজব!!!
অবশ্য তাতে মাঝে মাঝে সুবিধাই হয়, তাঁর কথাগুলো কপি পেস্ট করে তোকে আমি জোরে জোরে শুনিয়েই যাই... আর তুই ভাবিস আমি আবৃত্তি করছি। কথাগুলো যে আমি তোকেই বলছি এটা তুই আর টের পাস না। ভাগ্যিস এই লোকটা ছিল...... নইলে আমার কথাগুলো তোকে ওভাবে না শোনাতে পারলে পেট ফেটে মারাই যেতাম।
হুমম.... এবার আসল কথাটা শোন, আমি জানি তুই আকাশ ছুঁতে চাইছিস। কেন চাইছিস সেটাও জানি। গতানুগতিক উত্তর..."সবাই আকাশ ছুঁতে চায়" এর বাইরেও একটা উত্তর তোর আছে। উত্তরটা হল আমার মাটিতে থাকা। ক্ষুদ্র আমি মাটির সাথে মিশে থাকতে চাই আর তুই আমাকে এড়াতেই আকাশপানে রওনা দিয়েছিস। দিন-রাত বইয়ে মুখ গুঁজে গুনগুন করে পড়ে, তুই তোর রকেটের জন্য জ্বালানি আর গতি দুটোই সঞ্চয় করছিস, চেষ্টা করছিস দ্রুততম সময়ে কিভাবে আমার ছোঁয়াক্লিষ্ট মাটি ছেড়ে যেতে। তুই চেষ্টা করতে থাক- কিন্তু আমার হাত থেকে নিস্তার পাবি এমনটা ভুলেও ভাবিসনা। আকাশ-পাতাল-মাটি যেখানে খুশি যা, আমি রাহুর মত তোর পিছে লেগে থাকব....
সে কথাটা জানাতেই আজ তোর জন্য রবি ঠাকুরের ঝুলি থেকে আরেকটা কপি-পেস্ট.....
রাহুর প্রেম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শুনেছি আমারে ভালই লাগে না, নাই বা লাগিল তোর।
কঠিন বাঁধনে চরণ বেড়িয়া
চিরকাল তোরে রব আঁকড়িয়া
লোহার শিকল ডোর।
তুই তো আমার বন্দী অভাগী, বাঁধিয়াছি কারাগারে,
প্রাণের বাঁধণ দিয়েছি প্রাণেতে, দেখি কে খুলিতে পারে।
জগৎ মাঝারে যেথায় বেড়াবি,
যেথায় বসিবি, যেথায় দাঁড়াবি,
বসন্তে শীতে দিবসে নিশীথে
সাথে সাথে তোর থাকিবে বাজিতে
এ পাষাণপ্রাণ চিরশৃঙ্খল চরণ জড়ায়ে ধরে-
একবার তোরে দেখেছি যখন কেমনে এড়াবি মোরে?
চাও নাহি চাও, ডাকো নাই ডাকো,
কাছেতে আমার থাকো নাই থাকো,
যাব সাথে সাথে, রব পায় পায়, রব গায় গায় মিশি-
এ বিষাদ ঘোর, এ আঁধার মুখ, এ অশ্রুজল এই ভাঙা বুক
ভাঙা বাদ্যের মতন বাজিবে সাথে সাথে দিবানিশি।।
নিত্যকালের সঙ্গী আমি যে- আমি যে রে তোর ছায়া-
কিবা সে রোদনে কিবা সে হাসিতে
দেখিতে পাইবি কখনো পাশেতে
কভু সম্মুখে কভু পশ্চাতে আমার আঁধার কায়া।
গভীর নিশীথে একাকী যখন বসিয়া মলিন প্রাণে
চমকি উঠিয়া দেখিবি তরাসে
আমিও রয়েছি বসে তোর পাশে
চেয়ে তোর মুখপানে।
যে দিকেই তুই ফিরাবি বয়ান
সেই দিকে আমি ফিরাব নয়ান,
যে দিকে চাহিবি আকাশে আমার আঁধার মুরতি আঁকা-
সকলি পড়িবে আমার আড়ালে জগৎ পড়িবে ঢাকা।
দুঃস্বপনের মত চিরকাল তোমারে রহিব ঘিরে,
দিবসরজনী এ মুখ দেখিব তোমার নয়ননীরে।
চিরভিক্ষার মতন দাঁড়ায়ে রব সম্মুখে তোর।
'দাও দাও' বলি কেবলি ডাকিব ফেলিব নয়নলোর।
কেবলি সাধিব, কেবলি কাঁদিব কেবলি ফেলিব শ্বাস,
কানের কাছেতে প্রাণের কাছেতে করিবরে হাহুতাশ।
মোর এক নাম কেবলি বসিয়া জপিব কানেতে তব,
কাঁটার মত দিবসরজনী পায়েতে বিঁধিয়ে রব।
গত জনমের অভিশাপ-সম রব আমি কাছে কাছে,
ভাবী জনমের অভিশাপ হেন বেড়াইব পাছে পাছে।।
যেন রে আকুল সাগর মাঝারে ডুবেছে জগৎ-তরী,
তারি মাঝে শুধু মোরা দুটি প্রাণী-
রয়েছি জড়ায়ে তোর বাহুখানি,
যুঝিস ছাড়াতে ছাড়িবনা তবু মহাসমুদ্র-'পরি
পলে পলে তোর দেহ হয় ক্ষীণ,
পলে পলে তোর বাহু বলহীন-
দোঁহে অনন্ত ডুবি নিশিদিন তবু আছি তোরে ধরি।।
রোগের মতন বাঁধিব তোমারে দারুণ আলিঙ্গনে-
মোর যাতনায় হইবি অধীর,
আমারি অনলে ধিবে শরীর,
অবিরাম শুধু আমি ছাড়া আর কিছু না রহিবে মনে।।
ঘুমাবি যখন স্বপন দেখিবি, কেবল দেখিবি মোরে-
এই অনিমেষ তৃষাতুর আঁখি চাহিয়া দেখিছে তোরে।নিশীথে বসিয়ে থেকে থেকে তুই শুনিবি আঁধার ঘোরে
কোথা হতে এক ঘোর উন্মাদ ডাকে তোর নাম ধ'রে।
নিরজন পথে চলিতে চলিতে সহসা সভয় গণি
সাঁঝের আঁধারে শুনিতে পাইবি আমার হাসির ধ্বনি।।
হেরো তমোঘন মরুময়ী নিশা_
আমার পরান হারায়েছে দিশা,
অনন্ত ক্ষুধা অনন্ত তৃষা করিতেছে হাহাকার।
আজিকে যখন পেয়েছি রে তোরে
এ চিরযামিনী ছাড়িব কি করে,
এ ঘোর পিপাসা যুগ-যুগান্তে মিটিবে কি কভু আর!
বুকের ভিতরে ছুরির মতন,
মনের মাঝারে বিষের মতন,
রোগের মতন, শোকের মতন রব আমি অনিবার।।
জীবনের পিছে মরণ দাঁড়ায়ে, আশার পিছনে ভয়-
ডাকিনীর মত রজনী ভ্রমিছে
চিরদিন ধরে দিবসের পিছে
সমস্ত ধরাময়।
যেথায় আলোক সেথায় ছায়া এই তো নিয়ম ভবে-
ও রূপের কাছে চিরদিন তাই এ ক্ষুধা জাগিয়া রবে।