somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপিকা, ২২শ অধ্যায়

২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২১ অধ্যায়: Click This Link

তোমাকে বলেছিলাম
----নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
"তোমাকে বলেছিলাম, যত দেরীই হোক,
আবার আমি ফিরে আসব।
ফিরে আসব তল-আঁধারি অশথগাছটাকে বাঁয়ে রেখে,
ঝালোডাঙার বিল-পেরিয়ে
হলুদ-ফুলের মাঠের উপর দিয়ে
আবার আমি ফিরে আসব।
আমি তোমাকে বলেছিলাম।
আমি তোমাকে বলেছিলাম, এই যাওয়াটা কিছু নয়।
আবার আমি ফিরে আসব।
ডগডগে লালের নেশায় আকাশটাকে মাতিয়ে দিয়ে
সূর্য যখন ডুবে যাবে,
নৌকার গলুইয়ে মাথা রেখে
নদীর ছল্-ছল্ জলের শব্দ শুনতে-শুনতে
আবার আমি ফিরে আসব।
আমি তোমাকে বলেছিলাম।
আজও আমার ফেরা হয়নি।
রক্তের সেই আবেগ এখন স্তিমিত হয়ে এসেছে।
তবু যেন আবছা- আবছা মনে পড়ে,
আমি তোমাকে বলেছিলাম"।

দীপু ল্যাপটপের পর্দায় ভেসে ওঠা এ কবিতা তন্ময় হয়ে পড়ে! কবিরা কেমন করে লেখে এমন!
আজ এত বছর পরে লীনাকে মেইল করতে বসেছে সে। ছেলেকে ভর্তি করিয়ে আগেই তো সংগ্রহ করেছে দিলরুবা ম্যাডাম মানে লীনার ইমেইল ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বার। লীনার সাথে মোবাইলে কথা বলা কঠিন লাগছে! এই পৃথিবীতে লীনার মত কাছের আর কে আছে তার! অথচ সেই সবচেয়ে দূরের, ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সবই নিয়তি!
আজ এই মেইল লিখে এখুনি পাঠিয়ে দেবে দীপু, আর দেরী নয়!
আবার কবিতার ঐ লাইনটা মনে আসছে দীপুর " আজও আমার ফেরা হয়নি "!
আসলেই ফেরা হয়নি, ফেরা যায় না; সব পথ রুদ্ধ। আমারও তো আর ফেরা হোল না তোমার কাছে লীনা! জীবনের মোড়গুলো এমনি করে আঁকা যে বার বার ঘুরে ঘুরে তোমার থেকে সরে যায় কেবলই। কবির যেমন আবছা আবছা মনে পড়ে কি বলেছিল আমারও তাই। তাছাড়া চোখের জ্যোতিও গিয়েছে কমে, ঝাপসা চোখে একমাত্র তোমাকেই দেখি পরিষ্কার, এই দূরদেশ থেকেও তোমাকে দেখি সেই আগের মত একইরূপে! হয়তো ভালবাসাহীন জীবন নাটকে তোমাকে কল্পনায় দেখে ছন্দ মেলানোর চেষ্টা, মানুষকে কিছু একটা নিয়ে তো সুখী থাকবার ভান করতে হয়, বেঁচে থাকবার উপকরণ।
তোমার জীবনে সুখ এলো কি এলো না কোনদিন জানতে চাই নি, চাইবো না। কি প্রয়োজন! আমি যে তোমার কাছে হালকা এক টুকরো চন্দন কাঠ। তোমার দুঃখ তাকে জ্বালিয়ে নি:শেষ করুক সেটা চাওনা তাই দুঃখ তাড়িয়ে বেড়াও । এটাও শুনেছি সুখে থাকবার অভিনয় তুমি খুব ভাল করছো। যাই কর না কেন আমি সব টের পাই, নিভৃতে যতনে যে আমি তোমাকে পড়তে পারি।

যাই হোক্ যেটা লিখতে বসেছি এবং পাঠিয়ে দেব, তোমাকে মনোযোগ দিয়ে পড়বে।
চারপাশ সামলে অনেক ভেবে বড় ছেলেকে তোমার ওখানে পড়তে পাঠিয়েছিলাম, আমার পালিয়ে যাওয়া যেন শেষ কথা না হয় তোমার আমার জীবনে সে কথা ভেবে। আমার ছেলে লেখা পড়ার বিষয়ে সচেতন, তারপর তুমি আছো ওখানে এ আমার কেমন স্বস্তি বল!
তুমি ওর মা নও, কিন্তু তুমি ওর আকাশ ভরা আলো, তুমি ওর পাশে থাকা ছায়া, ওর মমতাময়ী মায়ের এক রূপ তুমি ।ওর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময়ে তোমার সাথে দেখা করিনি আমি, চাইলে করতে পারতাম, কি লাভ? কতগুলো নীরব প্রশ্ন দু'জনের চোখে স্তব্ধ হয়ে থাকত, জবাব গুলো বুকের ভেতর আছড়ে পড়েত! ইচ্ছে করে এড়িয়ে গিয়েছি। বয়স হয়ে গিয়েছে যদি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি! দেখা হলেই কি কিছু বদলায়? ছেলেটা লেখাপড়া শেষ করে এদেশে ফিরেছে, ভালো ফলাফল নিয়ে ফিরেছে। আরো মূল্যবান কিছু নিয়ে ফিরেছে সাথে; তোমার প্রতি একরাশ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং তোমার মাতৃরূপে ওর মুগ্ধতা আমার কাছে অনেক দামী, সে তুমি বুঝবে না।
যাই হোক্ তোমার ইমেইল ঠিকানা আগেই সংগ্রহ করেছিলাম, আজ মনে হোল জানিয়ে দেই যা মনে জমা, কত বিষয়ে দেরী করে কত না ভুল করেছি।
আমি সত্যিই তোমাকে ভালবেসেছিলাম। অনেকে ভালবেসে কত কি করে, হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যায়; আমি পারিনি। ভালবেসেছিলাম বলে তোমার সুখে থাকবার কথা ভেবেছি আগে; তোমাকে পাবার চেয়ে। সেই সময়ে আমার ছাত্র জীবনে আমি তোমার কিইবা যত্ন নিতে পারতাম! জীবনে তোমাকে পাইনি পরিচয়ের পাতায়, সে দৈন্য আমার ঘুচে গেছে। আমি তোমাকে ভালবেসে এতটাই অন্ধ যে পৃথিবীর কোন নারী আমার চোখে পড়ে না। সংসার করছি বটে সংসারের নিয়মে, আমি তো যন্ত্র ! তোমার বিষয়ে কিছু কথা বলেছিলাম বিয়ের পর পরই আমার স্ত্রীকে, তার ঝড় প্রায়ই আঘাত হানছে এত বছর ধরে আর তখন তোমার অদৃশ্য অস্তিত্ব আরো প্রবল হয়, আমাকে শান্ত রাখে। ভাগ্য ভালো আমার অসাড়তা কিছু ওলট পালট হতে দেয় না। তোমাকে ভালবেসে আমি যে শক্তি অর্জন করি সেটা আমার ভারসাম্য ঠিক রাখে,আমাকে চলমান রাখে আর এই সাত সমুদ্র পার থেকে হলেও সে শক্তি তোমাকেও ভাঙ্গতে দেয় না, কেমন উজ্জ্বল করে তোমার ব্যক্তিত্ব! কতজনের কাছে তোমার প্রশংসা শুনি, মন ভরে যায় আমার। লীনা তুমি আমার আনন্দ, পথ চলবার অদৃশ্য সঙ্গী।
ভালো থেকো সবদিন, ভাল রেখো এই আমাকে।
তুমি আমার
গোপন প্রিয়া
"পাইনি ব’লে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রানী,
মধ্যে সাগর, এ-পার ও-পার করছি কানাকানি!
আমি এ-পার, তুমি ও-পার,
মধ্যে কাঁদে বাঁধার পাথার
ও-পার হ’তে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি,
আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি".......
.............,............... ..................................দীপু

চলবে.......
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭
১৪টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×