somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপিকা,শেষ চিঠি অধ্যায়

২১ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"আর কেউ না জানুক, অরু জানে যে জীবনে যা হারিয়ে যায় সে আর ফিরে পাওয়া যায় না। হয়তো কেউই চায় না তবু বেদনা জেগে থাকে যাদের হৃদয় থাকে তাদের হৃদয়ে। সমস্ত কিছু পেয়েও একজনকে না-পাওয়ার বেদনা, সমস্ত প্রাপ্তিকে মিথ্যা করে অনুক্ষণ তার সমস্ত হৃদয় আচ্ছন্ন করে থাকে। একজন পুরুষের সব যশ, সব অর্থ, সব সাম্রাজ্য ম্লান করে তার সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরের ওপরের আকাশে একজনের মুখ, একজনের হাসি, একজনের চোখের উজ্জ্বলতা ঝিলিক মেরে যায়। তখন কেন জানি না, মনে হয় সব মিথ্যা, সব ফাঁকি, সব পাওয়া তার বৃথা হয়ে গেল।"... (প্রথমাদের জন্য)
বুদ্ধদেব গুহের লেখার এই কথাগুলো যেন দীপুর কথা! দীর্ঘশ্বাস ফেলে দীপু ! যদি জানতো লীনা! আর জেনেই বা কি হবে এখন!
https://www.facebook.com/share/r/166f6Dc66N/ কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে দীপুর না বলা কথা, নিজের সাথে বোঝা পড়া।

মেইল খুলে চমকে গেল দীপু, কতদিন পর লীনার মেইল ! 'শেষ চিঠি' শিরোনাম দেখে চুপ করে বসে রইল কিছুক্ষণ ; কেন শেষ চিঠি, কি আছে এই লেখায় এইসব ভাবনায় কেমন আনমনা হয়ে গেল। বয়সের সাথে সাথে সাহস এবং শক্তি কমে আসছে, জড়তা কেমন পেয়ে বসছে টের পায় দীপু। পড়তে শুরু করল চিঠি।
দীপু তোমার জন্য
'শেষ চিঠি'
ঝরা পাতা বৈ তো কিছু নই
উজ্জ্বল সবুজ ছিলাম, প্রগাঢ় সবুজ গভীর ভালবাসায়,
কখনো রক্তিম ছিলাম ছুঁয়ে যাওয়া বাসনায়,
ছিলাম না থাকবার ছলনায়,
গভীর বেদনায় দীর্ঘ ঘুম
অপেক্ষার দোর খোলা
বন্ধ চোখের অন্ধকারে অপেক্ষা অনন্ত।


শীত বেশী পড়েছে মাফলার জড়িয়ে নিও ঠিক করে আর পিঠের ব্যাথা কি আগের মত আছে ? শান্ত জীবনে শান্তিতে কি থাকতে পারছো?
কি সব কথা বলছি যেন প্রশ্ন করে উত্তরের আশায় আছি ! একেবারে নয়, কোন উত্তর চাইছি না। বলতে চাইছি যে, তোমার সাথে আমার অনেক কথা ছিল, জমে আছে। এখন বলব বলে ভাবছি, শোন।
তোমার সাথে আর কখনো দেখা হবে কিনা জানিনা, হলেও তো আর কিছু পরিবর্তন হবে না আমাদের; যেমন করে চলছে চলুক। কত কি মনে আসে এই অবেলায় ! তোমার মনের বন্ধ দরজার ভেতরে যে আছে থাক্, তুমি যেমন যত্ন করে রেখেছো তাকে সে ঠিক বুঝতে পারে;সে কারনেই তার যন্ত্রণা আরো বেশী ! আর কিছু কি দিতে পেরেছো তুমি আমাকে যন্ত্রণা ছাড়া? তোমার এই যন্ত্রণা আমাকে জাগিয়ে রাখে; আগলে রাখে ভীষন দূর্বিপাকে। দূরে থেকেও কতো কাছের করে রাখে !
আবার মনে হয় তুমিই বেশী কষ্ট পেলে আমার কারনে সারা জীবন। থাক্ এসব হিসেব নিকেষের কালো মলাটে চাপা অন্ধকার খাতা।
ভাবছি আমার ইচ্ছের কথা সব বলে রাখি, যদি সময় না পাওয়া যায়! সুযোগ যদি না মেলে আর কখনও !
তোমার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ অনেক, সব অভিযোগ, রাগ, দুঃখ সব জানাবো তোমাকে, বলবো এতদিনের জমে থাকা সব কথা! হয় তো সারাদিন লেগে যাবে, হয়তো একদিনে ফুরোবে না বলা; যত সময় লাগে আমি সব বলে দিতে চাই! এ আমার অনেক দিনের ইচ্ছে। আমার ইচ্ছে তোমার সামনে বসে অনেক ঝগড়া করবো; সাধ মিটিয়ে করবো। অবশ্য ঝগড়া কি আর এক পাক্ষিক হয়? নাকি করা যায়? তুমি তো চুপ করে থাকবে, জানি সে তোমার চিরকালের অভ্যাস !
আমি রাগ,দুঃখ,অভিমান সব নিয়ে যা যা মনে আসবে সব বলব যত সময় লাগে, যেভাবে পারি ইচ্ছেমত ! তারপর কষ্ট কমে যাবে আমার। ভেবেও হালকা লাগছে !
ধুর ছাই! এতকাল এত কিছু সয়ে এসে জীবনের শেষ সময়ে কি হবে এমন সব দুঃখ জাগানিয়া কথায়? থাক্ এমন এলোমেলো সাধ ! বুড়ো বয়সের আহ্লাদ।
আমাদের সবই কি দুঃখময়? ভাবনার প্রান্তে জমাট বাঁধা আছে মধুময় কত কি সুখের ধারায় ! থাক্ সযত্নে সে সব । ফল্গুধারার কি বা আসে যায় জাগতিক হিসেবের লাভ কিংবা ক্ষতির বৃষ্টিতে !
তার চেয়ে বরং এমনি করে সাজিয়ে নেই ভাবনাগুলো। জীবনের শেষ সময়ে তুমি আমার পাশে বসে থাকবে, শক্ত করে আমার হাত ধরে থাকবে; কোথাও যাবে না মূহুর্তের জন্য! দুজন নীরব থাকবো অথচ আমাদের সব বলা হয়ে যাবে সেদিন; নিঃশব্দের গভীরতা অনেক অব্যক্ত কথা বলে দিতে পারে। পৃথিবী ছেড়ে যাবার ক্ষনে মনে হবে তুমি আছো, ছিলে সবদিন! সে এক অন্য পাওয়ার স্বাদ!!
পরক্ষণেই মনে হয় এমনটি কি করে হবে? এমন সব অবান্তর চিন্তা মাথায় না আনাই ভাল, কি বলবে লোকে! আমার কাছের সকলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাক্ চাই না আমি, জানি তুমিও চাইবে না। এর চেয়ে কত সহজতর কাজ তুমি বা আমি করতে পারিনি পারিপার্শ্বিকতা ভেবে, অন্যে কি ভাববে সেই কথা মনে করে; সেসব দিনে যখন স্বপ্ন সত্যি করবার আলো ছিল, বাতাসে ভালবাসার আবীর ছড়ানো ছিল, প্রাণ ভরা প্রাচুর্য ছিল!
আজকাল কত কি যে সাধ জাগে মনে, এড়িয়ে যেতে চাই; তবু বারবার কড়া নাড়ে মনের দরজায়।
ভেবে দেখেছি সম্ভব নয় এসব কিছুই, তুমি কষ্ট পাবে আর আমারও তোমার হাত ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করবে না শেষ সময়ে। মাঝখান থেকে মুখরোচক গল্প তৈরী হবে আমাদের দুজনকে নিয়ে।
তার চেয়ে বরং তুমি আমার শেষ সময়ে পাশে থেকো, মাথায় হাত বুলিয়ে দিও।
এক গভীর ভাবনা স্রোত মনে আসছে, বেদনার রেখায় আঁকা, চোখের সামনে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি যেন! আমার মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসবে তুমি আমার পাশে বসে আছো। সময় ফুরিয়ে গেলে পরে কপালে একটু আদর করে দিও, এ জীবনে যে কপালে লেখা ছিল না এমন অনুভব! কোনদিন স্পর্শ করনি আমায় জীবদ্দশায় যখন অনুভূতি ছিল। মরনে তোমার আলতো ঠোঁটের ছোঁয়ায় আমার এক জীবনের না পাওয়া সাধ জড়িয়ে যাবে, খুব বেশী কি চাওয়া হয়ে গেল! খুব কি কঠিন এ অনুগ্রহ!
সম্বিৎ ফিরে আসে! ধর্ম, সমাজ, কত কিছুর পাহাড় সমান বাঁধা ! অবাস্তব, অবান্তরও বটে। ধর্মীয় দিক্ দিয়ে সামাজিকতা বিবেচনার এ একেবারেই অসম্ভব। তুমি তো আমার মৃত্যর পর মুখটাও দেখতে পাবে না, তুমি যে তখন আমার জন্য নিষিদ্ধ পরপুরুষ।
এ সব ভাবনা দূরে সরিয়ে রাখি, সেই ভাল। তার চেয়ে আমার মৃত্যুর পর তুমি আমার কবরের মাথার দিকে বেলী ফুলের গাছ লাগিয়ে দিও। আমার প্রিয় শুভ্র ফুল, মিষ্টি ঘ্রাণ!
চোখ ভিজে আসছে আমার, বেলী ফুলের সুঘ্রাণ কি কষ্ট বয়ে আনতে পারে!
এই বেঁচে থাকা জীবনে মরনের ওপার থেকে ভেসে আসা সুরভীতে কি ভালবাসার আঘাত জড়িয়ে থাকে!
হালকা মিষ্টি অনাবিল সুরভী যেন তোমার ভালবাসার মত পবিত্র !
শেষ ইচ্ছে আশা করছি অপূর্ণ রাখবে না আমার। সারা জীবন আমার কারনে কত কষ্ট মেনে নিয়েছো, সে তুলনায় এ তেমন কঠিন কিছু নয়।
তোমার গোপন ব্যাথা, সব কষ্ট সেই বেলী ফুল গাছের নীচে মাটিতে ছড়িয়ে দিও, আমি জড়িয়ে রাখবো।
ভাল থেকো, ভাল রেখো এই আমাকে।



***শততম লেখা এটি আমার
বেলী ফুলের ছবি আমার তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৯
২৪টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×