somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবীর রঙা বিকেল

১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি জানতাম এমনটাই হবে এবং আপনি ই সেটা করবেন!
উড়ে আসা এই মন্তব্যে ফিরে তাকালাম! কথাটার মাঝে আশাভঙ্গের যে বেদনা ছেলেটার চোখে তার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া নেই। বরং সেখানে ভয়ঙ্কর ভাবে ফুটে উঠেছে না পাওয়ার তীব্রতা। এই দৃষ্টি আমার খুব চেনা।

ফাইনাল ইয়ার চলছে, দুরন্তবেগে ছুটে আসা পরীক্ষার চোখ রাঙানী উপেক্ষা করে পুরোদমে নাককানে ধোঁয়া ছুটিয়ে সামাজিক কাজকর্ম করে যাচ্ছি। হলের ধামাকা বিদায় অনুষ্ঠানের (র‍্যাগ ডে ) জন্য সকাল থেকে দুই যায়গায় চান্দাবাজি করে এসে মন মেজাজ ফুরফুরা বেশ। বেশ বুঝলাম কর্পোরেট স্পন্সর যোগার করতে খালি মাঞ্জা আর চাপা মারলেই চলে। হল গেটে আসতেই বাঁধন( স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন) ত্রাণ সংগ্রহকারী দলের সবার সাথে দেখা, ওদের সাথে যেতে হবে। শাহানুর জিজ্ঞেস করল এত পট্টি মাইরা তুমি ত্রান সংগ্রহে নামছ? দিবে কেউ কিছু ? নিদেনপক্ষে মুখটা তে একটা অসহায় ভাব আনো চেহারায় তো সূর্যের আলো আছাড় খায়। কইলাম আরেয়ে ধুর মাঞ্জা তো মারছি চান্দা বাজীর লিগা সাধু ইংরেজি তে যারে কয় স্পন্সর আনা।

মতিঝিল এ জি বি কলোনিতে নেমে সবার গ্রুপ আলাদা করছিলাম অল্প সময়ে সবগুলো বাসায় থেকে ত্রাণ করার জন্য, এর মাঝেই এই বিড়ম্বনা। পরিচয়ের প্রথম দিন কি এমন করলাম তোমার সাথে আমি! বলে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি ছুড়ে দিলাম। উত্তর এলো, আমি প্রানপন চাইছি আপনার গ্রুপ এ থাকতে আপনি ঠিক আমাকেই অন্যদের সাথে দিলেন! অবাক হতে গিয়ে হেসে ফেললাম। শুরুতেই ঘোষণা দিলাম যে বাসায় রেফ্রিজেরেটর আছে সবার আগে সেখানে সাহায্য চাইতে যাব- ঠান্ডা পানি চাই। পাশের এক পিচ্চি পালটা আমাকে প্রশ্ন করল, আপনি কেন আগেই ভেবে নিয়েছেন এখানে সবার বাসায় ফ্রিজ নেই ? আচ্ছা চলো অন্য ভাবে বলি "যে বাসায় আমি চাহিবা মাত্র ঠাণ্ডা পানি দিতে বাধ্য থাকিবে এমন বাসায় যাই " আর বলে মনে মনে চিন্তা করছি, ইয়া আল্লাহ ইউনির শেষ পর্যায়ে এসে কার দোয়া কবুল হইল একের পর এক বেইজ্জতি।

এই নিয়ে আজ তৃতীয় দিন এলাকার সিনিয়র ভাই এর রুম থেকে ঘুরে যাচ্ছি একা কথা বলার কোন সুজোগ’ ই পেলাম না। ধরেই নিলাম আগামী কালকের ইন-কোর্স টা খরচের খাতায় গেল। এই মুহূর্তে সিগেরেট ও তিতা লাগছে ! আজকেও দেখলাম ওরা হাত ধরাধরি করে রাস্তা পার হচ্ছে আর তটিনীর ঢেউ হয়ে আছড়ে পরছে তার হাসি সমস্ত ক্যাম্পাস জুড়ে। দেখেতে তো মনে হয় এক্কেবারে চামার শ্রেণীর তার কথায় এত হাসি! কি এত কথা ! কী ই বা এমন গল্প! এতসব ভাবতেই মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। আধা খাওয়া সিগারেট টা মাটিতে না ফেলে নিজের ডান পায়ের পাতায় ফেলে বা পা দিয়ে ডলতে লাগলাম।নিশ্চিত সারারাত আজ ক্যাম্পাসের পথের ধুলায় আল্পনা আঁকবো। ফেব্রুয়ারির ক্যাম্পাস কখনো ঘুমায় না! দেখলাম রাতজাগা ঝরা ফুলগুলো আমার যন্ত্রণার সঙ্গী হয়ে সুবাস ছাড়াচ্ছে তুমুল।


এক্সাম হল থেকে বেরুতেই হুড়মুড় করে দুপুর নেমে এলো, আর আমার প্রহর শুরু হল ওর জন্য প্রতীক্ষার। যতক্ষণ কাছে পাই ততক্ষন বসন্ত! যতক্ষণ ছুঁয়ে থাকি শরত স্নিগ্ধ শিউলি সৌরভে মাখা ক্ষন। ঠিক যতটা মুহূর্ত ওর সান্নিধ্যে ততটুকুই ফাল্গুধারায় অবগাহনের সুখ! ওর কাছে থাকা মানে ওড়নার আঁচলে সমস্ত তারা গুলি কে কুড়িয়ে নেয়া।


আজকাল গন্তব্যে পৌঁছাতে ক্লান্ত লাগে পথটা আরো অল্প দীর্ঘ হলেও পারত, আমার একাকীত্বের সাথে মানিয়ে যেত বেশ। মনে হচ্ছে দীঘল সূর্যের ওই পাশ থেকে কেউ ডেকে যাচ্ছে আমাকে আর আমি আজন্ম খুঁজে ফিরছি তোমার কাছে যাবার পথ। কি রে এতক্ষন থেকে তোকে ডাকছি সবাই মিলে শুনতে পাস না নাকি? আরেয়ে কি হইছে তোর এক্ষন দেকতাছি ফিট খাবি।
না কিছু হয় নাই ভাই এমনি হাঁটছিলাম টি এস সির দিকে। ভাল কথা টি এস সি যাবি , কিন্তু এই খোমা কার লিগা বানাইছস ? আমার কাছে গেছিলি শুনলাম ক্যান গেছিলি সেই খবর ও রাখি। ঐসব চিন্তা বাদ দে, এমনিতে সিনিয়র তোর, তার উপর পছন্দ আছে। চাইলেই ওর প্রেমিক কে টাইট দেওন যায়, কিন্তু সেও তো আমাদের সিনিয়র ভাই ই। আমি শুধু শুকনো একটা হাসি দিলাম। ভাই বললেন আচ্ছা চল আমিও যাচ্ছি টি এস সি।


রুমে ফিরেই চিরকুট পেয়েছি “ এসেছিলাম তোমাকে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি, সোনার মেয়ে! আজ আর দেখা হচ্ছে না, তবে ততক্ষণ আমার হৃদয়ের যত্নের ভার কিন্তু তোমার উপর”। চমৎকার একটা রোদ ঝলমলে দিন বিষণ্ণতার আলোতে ছেয়ে গেল, কি আর করা নিজেকে কাজে ডোবালাম রুমমেট পিচ্চি কে শাড়ি তে সাজালাম। প্রজাপতি মেয়েটা মনে হচ্ছে উড়ে যাবে! বলল আমার সাথে একটু টি এস সি আসো আপু আজ আমি প্রথম কবিতা পড়বো। একটু গুছিয়ে নিয়ে নিজেকে বের হলাম।


তোমার পাশের জঞ্জাল টাকে উড়িয়ে দেয়ার তীব্র বাসনা যখন তখন বুকে পাখা ঝাঁপটায়। শুধু তোমাকে দেখলেই সেই ইচ্ছেটাকে গলা চেপে খুন করি, ঠিক এভাবেই একদিন আমার সমস্ত দ্বিধা কে নির্বাসনে পাঠিয়ে। তোমাকে বলে দেবো আমার একাকীত্বের সাতকাহন! একদিন অবশ্যই বলবো, বলতেই হবে। এই যে মিঃরাস পুটিন! সমস্ত সত্ত্বায় বেহাগের করুন সুরের অস্তিত্ব জাহির করে কোথায় চললেন? এই কথা শুনে পিছনে ফিরে যখন ওকে দেখি! অসহ্য সুখ শব্দ টার মর্ম অনুভব করি শিরায় শিরায়। আমি পালটা প্রশ্ন করলাম, বিষণ্ণ হৃদয়ের তরুণ কি এই প্রথম দেখলেন ? হাসিতে আলোর ঝরনা ছড়িয়ে বলল- জানতো পৃথিবীর সমস্ত বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধ ঘোষণা করা আছে। বইমেলা তক পায়েপায়ে সপ্তসুরের বীন বাজলো, আনন্দ উচ্ছলতায়। মাঝ রাস্তায় থেমে তাকে জানালাম - তোমাকে চাই ! ঠিক সেই মুহূর্ত টা পৃথিবী তে ইতিহাস হয়ে থাকল আমার হৃদয়ে, ক্ষণিকের নিস্তব্ধতা শেষে ওর হাসির কালবৈশাখী, ফাল্গুনের মিষ্টি রোদ কে লণ্ডভণ্ড ফেললো। কিছুই বলল না, পাশের স্টল থেকে আনিসুল হক এর গাধা বই টা কিনে তাতে লিখলো “ গাধা আবীর! আমার কাছে একটাই মাত্র সফল ভালোবাসার গল্প আছে। আর ভালোবাসার গল্প একটার বেশি থাকা ঠিক না।


সবচাইতে বিচ্ছিরি পরিক্ষাটা ১৫ ফেব্রুয়ারী আর সবচাইতে কঠিন হৃদয়ের ছেলেটাকে আমি ভালোবাসি! ঠিকঠিক সাফ জানিয়ে দিলো পরীক্ষার শেষে অপেক্ষা করবে লেকচার থিয়েটারের সামনে। এই দুদিন দেখ হচ্ছে না।
ভালোবাসা দিবসের দুপুরে লাল খামে চিঠি পেলাম, আনন্দম আনন্দম !
যাক কালকের পরীক্ষা তাহলে উৎরে গেল, মনে মনে ভাবলাম কঠিন হৃদয় তাহলে সুরে ভিজেছে! ওর চিঠি ভেবে অস্থির হয়ে পড়া শুরু করলাম। লাল রঙের হৃদয় শেপের কার্ড পাঠিয়েছে পিচকা, হায় রে।


কোনদিন জানবে না ঠিক কখন তোমাকে ভালবেসেছিলাম
কোনদিন বলব না কতবার লুকিয়ে তোমার হাসি চুরি করেছিলাম
কাউকে বলিনি হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের গল্প-
ছোট্ট জল কন্যার কষ্টেরা যেমন সমুদ্রের সৌন্দর্য্য কে মহিমা দিয়েছে
আমার কষ্ট গুলো ও দেখবে ঠিক
তোমার জীবনের আকাশে খুশীর তারা হয়ে জ্বলবে।

জোছনার ঢেউ দেখবো যখন তোমাকে ভাববো
চঞ্চল বৃষ্টির খুশী ঝর্না ছড়ালে তোমাকে ভেবে নিবো
বুক ভরে এই অসহ্য সুন্দর পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নেবো
শুধু তোমায় ভেবে নিয়ে।
ঐ যে হলদে হয়েআসা শিমুল গাছকে যখন কার্বন ডাই অক্সাইড বিলাবো
তুমি শুধু তুমি থাকবে আমার ভাবনা জুড়ে।

নিজের জন্মের সময় নির্ধারণ কারী নই আমি, কেমন করে যে ঠিক ১৮২৫ টি দিন পরে জন্ম নেয়া আমাকে তোমাকে পাবার আবেদনে পিছিয়ে দিলো। পাঁচবছর! মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধান কি অতোটাই বড় প্রাচীর! একটুও পারলেনা আমার জন্য অপেক্ষা করতে তুমি।
শুধু মনে রেখো গাধা হয়েছি বলেই তোমার ভার আমি সারাটি জনম বয়ে বেড়াতে পারবো।

আবীর!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০৪
৫৮টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×