somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জঙ্গি বা বিপ্লবী কে এবং কেন হয়?

২৭ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা সমাজতন্ত্রের ছত্র-ছায়ায় সন্ত্রাস করে তারা হয় বিপ্লবী আর যারা ইসলামের ছত্র-ছায়ায় সন্ত্রাস করে তারা হয় জঙ্গি। কিন্তু এই দুই ধরণের সন্ত্রাসের উদ্দেশ্যই এক। শাসকশ্রেণীকে উচ্ছেদ করে তাদের অনুসারীদের মতাদর্শের সমাজ এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কেন এই বিপ্লববাদ কেন এই জঙ্গিবাদ? কারা এই বিপ্লবী কারা এই জঙ্গি? শুধু ঘটনার চারপাশে ঘুরঘুর করলে চলবেনা। ঘটনার মূলে যেতে হবে।

ঈদ/পুঁজা হউক আর অন্য কোন উৎসব হউক, খুশি সবার ঘরে সমান নয়। যার টাকা যত বেশি তার উৎসব তত দামী। যার টাকা কম তার ইচ্ছে থাকলেও উপায় থাকে না দামী উৎসব করার। আর যারা গরিব যারা দিন আনে দিন খায়। আজ কাজ করছে তো পেট ভরছে। কাল যদি কাজ না পায় তো খেতে পাবে না। তার কাছে ঈদ/পুঁজা বা অন্য কোন উৎসব কি আনন্দ না বিষাদ! তার সন্তানরা কত খানি উৎসব উপভোগ করতে পারে! সমাজে সবার জীবন যাত্রা এক নয়। কেউ সারা দিন খেটে খুটে মৌলিক চাহিদা গুলি মেটাতে পারে না, আবার কেউ বসে বসে আয়েশি জীবন কাটিয়েও সুখ পায় না!

এই ধরনের ভারসাম্যহীন সমাজ কারও কারও মন জগতকে উস্কে দেয়, কেউ কেউ এই সব ভারসাম্যহীনতা মেনে নিতে পারে না। আমরা স্কুল কলেজে যে পাঠ্য বইগুলি পড়ি। সেই পাঠ্য বইগুলিতে প্রাপ্ত শিক্ষা আর বাস্তবতার মিল কত খানি থাকে? যখন মিল পায়না তখনই অনেকে হীনমন্যতায় ভোগে। যারা আবেগই তারায় কষ্ট-পায়। তারা পরিবার, তারা সমাজ, তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দ্বারায়। কেউ কলম হাতে, কেউ মাদক হাতে, কেউ অস্ত্র হাতে প্রতিবাদী হয়। ছন্নছাড়া জীবন যাপন শুরু করে। তারা পরিবর্তনের স্বপ্ন লালন করে, সমাজকে পরিবর্তনের রাষ্ট্রকে পরিবর্তনের।

সারা জীবন ঘুষ-দুর্নীতি করল, সেই ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় এতিমখানা-মাদ্রাসা-আশ্রম-মসজিদ-মন্দিরে দান! শেষ কালে হজ্জ করে হাজী! শেষ কালে তীর্থযাত্রা করে পরম ধার্মিক!! জোব্বা টুপি! টিকি! ওফ্! কি শিক্ষা পেল তার কাছে তার সন্তানরা, তার প্রতিবেশীরা, তার সমাজ? ধর্মকে, ধর্মের আদর্শকে আর কত খানি তামাশা বানিয়ে ফেললে সমাজের চোখে ঘুঁত লাগবে!

আজ সমাজটাকে নিয়ে ভাবলে যে কোন বিবেকবান মানুষের মতি ভ্রষ্ট হবে। বাসে, ট্রাকে, অফিসে, আদালতে, মাঠে, ঘাটে, ব্যবসা, বাণিজ্যে সর্বত্র; চান্স পেলেই উপরি ইনকামের ধান্দা! যা পুরপুরি অনৈতিক। এই সকল অনেকে মেনে নিতে পারে না। অনেক কিশোর মনে, তরুণ মনে এগুলির প্রভাব ফেলে। যখন দেখে বাস্তবতায় পাঠ্য বইপুস্তকের বা ধর্মগ্রন্থগুলির নীতিকথার কোন মূল্য নাই। মূল্য শুধু পরীক্ষার উত্তর পত্রে বেশি নাম্বার পেতে। তখন অনেকে সমাজ পরিবর্তনের চেতনা লালন করে। এক সময় তারা পরিবর্তনের পথ খোঁজে। কেউ তুলে নেয় কলম, কেউ অস্ত্র, কেউ মাদক। হয়ে যায় মাদকাসক্ত। হয়ে যায় ছন্নছাড়া। হয়ে যায় বিপ্লবী বা জঙ্গি।

বাবা মা দুজনেই ব্যস্ত। সময় দিতে পারে না তাদের সন্তান কে। তার খেলার সাথী সেই পরিবারের কাজের ছেলে বা মেয়েটি তার মত পরিবেশ পায় না। এটা কোন কোন সন্তানের মনে আবেগের সঞ্চার ঘটায়। সমাজ এমন কেন? মা তাকে মেঝেতে ঘুমাতে দেয় কেন? তাকে উচ্ছিষ্ট খাবার দেয় কেন? তার সাথে ভালো ব্যবহার কেন সবায় করে না! এই বিষয় গুলাও অনেকের ভাবনায় প্রভাব ফেলে। যে সংসারে বাবা মা এই দুজনের মতের মিল নাই। তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে, সেই পরিবার যেমন সুস্থ না ঠিক সেই পরিবারের সন্তানরা সুস্থ-স্বাভাবিক না। তারা পরিবারের প্রতি বিরূপ হয়ে থাকে। হীনমন্যতায় ভোগে। তারা মাদকাসক্ত হয়। তারা বেপরোয়া হয়। তারা না অপরোধের সাথে জড়িয়ে পড়ে।

এই রকমের অনেক উদাহরণের ভিতরে একটা কথা সত্য যে, অনিয়ম সবায় মেনে নিতে পারে না। যারা পারে না তারা হয় প্রতিবাদী তারা বিদ্রোহী। তারা হয় জঙ্গি তারা বিপ্লবী। তারা পরিবর্তনের স্বপ্ন লালন করে, সমাজকে পরিবর্তনের রাষ্ট্রকে পরিবর্তনের।

শুধু জঙ্গি জঙ্গি করলে হবে না। জঙ্গি ধর, জঙ্গি মার; এই হিসাব নিয়ে থাকলে শুধু চলবে না। আমাদের সবার যার যার স্থান থেকে মানবিক হতে হবে। প্রতিটা মানুষের, প্রতিটা ক্ষেত্রে, প্রতিটা কর্মে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতে হবে। সমাজের প্রতি প্রতিটা মানুষের যে সামগ্রিক দায়িত্ব কর্তব্য আছে তা পালন করতে হবে। শুধু ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তা ও নিজের আখের গোছানোর চেষ্টা করলে চলবেনা। সমাজে শ্রেণী শোষণ, শ্রেণী ব্যবধান কমাতে হবে। বাংলাদেশ অনিয়মের যে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে তা থেকে উদ্ধার করতে হবে। এই দায়িত্ব সবার। শুধু নিজের গা বাঁচিয়ে চলার ধান্দা করার পরিণতি এই জঙ্গি আতংক। মায়ের পেট থেকে কেউ জঙ্গি হয়ে আসে না। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা ঘাত প্রতিঘাতে একজন বিপ্লবী বা জঙ্গির জন্ম হয়। তাই জঙ্গি নির্মূল করার সাথে সাথে নতুন কোন জঙ্গির তৈরি যেন না হয় তার জন্য সুস্থ পরিবার সুস্থ সমাজ সুস্থ রাষ্ট্র আমাদের কাম্য, যার রচনা হবে সবার দ্বারা। আসুন বেশি বেশি করে মানবিক হই।

--মশিউর রহমান (কবি ও ব্লগার)

(বানানের রীতি ও মত লেখকের নিজস্ব )
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×