কয়েদী!
লেখক..এম.এ মোমেন খান।
(M.a. Momen Khan)
বেশ কিছুদিন পর পর জেলার সাহেব খোঁজ খবর নিতে আসেন কয়েদীদের।
কার কি সমস্যা, সেটা দেখার জন্য। কয়েদীরা কিভাবে দিনাতিপাত করছে সেটা পরিদর্শনের জন্য আসেন।
আমার কয়েদী নম্বরটা এখনো লাগা হয়নি!
নতুন এসেছি এই বন্দীশালায়।
সাজার বিভিন্ন ভাগের মধ্যে আমারটা কোন ধরণের সেটাও জানা হয়নি,কারণ আমি এই বিষয়ে অজ্ঞ!!
জেলার সাহেব সমস্যা দেখতে আসেন জেল খানার ভিতরে!
কি আজব!
জেল খানাটাই তো একটা সমস্যা আমার কাছে!
অভিজ্ঞতা নেই বলে আমার এখানে থাকতে এক বিন্দুও ভালো লাগছেনা।
আমি অপরাধী!
মামলার চার্জশীট হয়েছে কবে সেটাও জানিনা, ওয়ারেন্ট অর্ডারের বিষয়ও ছিলোনা কোন পূর্ব সংবাদ!
আমি অপরাধী আইনের চোখে, কিন্তু আইনের কোন ধারায় আমি আসামি সেটাও জানিনা।
সবকিছু ধেয়ে আমি সবার চোখে কয়েদী!!
জেলখানার মানুষ গুলো বড়ই অদ্ভুত!
কতরকম মানুষের আনাগোনা এখানে!!
জেলার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,,তুমি কি অপরাধ করেছো বাবা?
চুপচাপ আছি, মুখ দিয়ে কোন উত্তর বের হচ্ছেনা, চোখের কোণে জল এসে গেল!
জেলার সাহেব আবারও বললেন, কিভাবে এখানে এলে?
এবার সত্যিই অপরাধী গলায় বললাম,
স্যার অপরাধের হিতে বিপরীতে এখানে এসেছি !
জেলার সাহেব মনে হয় বুঝতে পারেন নাই!
আবার বললো, মানে??
তোমার অপরাধ কি??
আবার বললাম, গণতন্ত্রের রাস্তায় একা পথে হাটতেছিলাম, আইনের লোক এসে হাত কড়া পড়ায়!
জেলার সাহেব এবার বিচলিত হয়ে গেলেন!
কি সব বলো ?
একটু খুলে বলোতো??
বুঝতে পারছি,জেলার সাহেবের মূল্যবান সময় আমার সাথে নষ্ট হচ্ছে!
স্যারকে বললাম,
আমি অপরাধী!
আরে বাবা কি অপরাধ করেছো সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি?
এবার জেলার সাহেবকে বললাম,,
যেই অপরাধ সম্পর্কে আমি নিজেই জানিনা সেই অপরাধের জন্যই আমি আজ কয়েদী!
আর আপনাকে কিভাবে বলবো,
আমার অপরাধ কি!!
তবে হ্যাঁ,
আমার অনেক অপরাধ আছে স্যার!
জ্ঞাণী মানুষদের কথা বুঝতে এবং বুঝাইতে খুব একটা সমস্যা হয়না।
জেলার সাহেবকে বললাম,
আমার অপরাধ জানতে চান?
তাহলে শুনেন....
আমার অপরাধ সমাজ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলা, আমার অপরাধ দুর্নীতির খবর প্রকাশ করা, আমার অপরাধ বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাড়া,
আমার অপরাধ তরুণদের নিয়ে চিন্তা করা!
আমার অপরাধ পরকালের চিন্তা করা,
আমার অপরাধ চাটুকারিতা না করা!
জেলার সাহেবকে আরো বললাম,
আমার অপরাধ অসামাজিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলা!!
এখন আপনিই বলেন স্যার,
এত্ত এত্ত অপরাধের কয়েদী নম্বরটা কত হবে???
নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে জেলার সাহেব অন্য একটা রুমে চলে গেলেন!
আমি চার দেওয়ালে বন্দীশালায় হুহু করে কেঁদে উঠলাম!
ঘর গুলো খুব সংকীর্ণ!
আলো বাতাসের তেমন একটা গন্ধ আসেনা!
পরিবার,পরিজনের কথা সেখানে ভীষণ মনে পড়ে।
পাঁচ হাতের ঘর গুলোতে আলো বাতাসের বড়ই অভাব!
মশার আমদানিটা সেখানে অনেক বেশি!
রক্তচোষারা পাহাড়া বসিয়েছে চৌকি দিয়ে!
সুযোগ পেলেই চামড়ার মধ্যে হুল ফুটাচ্ছে অনায়াসে!
আযান পড়ে গেল ততোখনে,
নামাজে বসে পড়লাম বেশ কিছু কয়েদী!
এখানে সবাই শুধু দো'আ মাঙ্গে পরিবারের জন্য!
নামাজ শেষে ডাক পড়লো আমার!
জেলার সাহেব ডেকেছেন,
একজন জেল পুলিশ জোর গলায় চিৎকার করে বলতে লাগলো...
৫০৫০ রুমে কার কয়েদী নম্বর নেই??
হাত তুলে ইশারা দিলাম!
জেলার সাহেব আপনাকে ডেকেছেন,
চলেন আমার সাথে!
তখনো আমার গাঁয়ে সাদা ক্ষোপ করা কাপড়টা নেই!
ভাবতেছি, জেলার সাহেব এবার মনে হয় কয়েদী নম্বরটা দিবেন!
জেলার সাহেব আমাকে দেখে বললেন,
জেলখানা তোমার কেমন লাগে?
এটা কেমন প্রশ্ন?
উত্তর করলাম,,
আপনারাও তো জেলখানার লোক!
আমার থেকে ভালোই বুঝতে পারবেন স্যার!
আমার কথা শুনে বরাবরই জেলার সাহেব জেলাস হয়ে যাচ্ছেন!!
অতঃপর কথা না বাড়িয়ে,
তিনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার জন্য জেলখানা নয়!
তোমার বাসস্থান মানুষের হৃদয়ে!
তোমার জন্য সুপারিশ করবো!
এসব শুনে ভাবতে লাগলাম,,
জেলখানাতেও মহত্ত্ব আছে!!
তাতে আরেকবার উপলদ্ধি করতে পারলাম...
সত্য সর্বদাই মৃত্যু অপেক্ষা সহজ এবং জীবিত!!!
(বিঃদ্রঃ গল্পটা কল্পনা করে লেখা,
কারও সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নহে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৪