যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষা কী, কেন এবং কিভাবে?
মাকসুদুল কবীর সোহেল
বিদ্যালয় বর্হিভূত, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া, কর্মজীবী ও ভিন্নভাবে সক্ষম অবস্থার শিশুদের জাতীয় শিক্ষাক্রমের নির্ধারিত প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো অর্জনে সহায়তা করার জন্য এমন একটি শিক্ষাক্রম প্রয়োজন যেখানে শিশুরা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কর্ম তৎপরতার মাধ্যমে যার যার শিখনের মান অনুযায়ী শেখার সুযোগ পাবে এবং যার যার শিখনের গতি অনুযায়ী অগ্রসর হবে। অর্থাৎ যা হবে সম্পূর্ণ ভাবে Ability base, flaxible and activity base. এর ফলে শিশু অপেক্ষাকৃত কম সময়ের মধ্যে তার জন্য নির্ধারিত প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো অর্জন করতে পারবে।
শিক্ষাকে Ability base (যোগ্যতা ভিত্তিক) করার জন্য প্রয়োজন শিশুর যোগ্যতা নির্ধারণ করা, শিশুর যোগ্যতাকে সামনে রেখে তার জন্য শিখন পরিকল্পনা করা, সে অনুযায়ী তাকে শিখতে সহায়তা করা এবং তার শিখন যাচাই করা। Ability base শিখন প্রক্রিয়ায় এমন একটি শিখন পরিবেশ তৈরি করা হয় যেখানে শিক্ষার্থী শিক্ষকের সহায়তায় নিজ শিখনের ধরন, গতি এবং অবস্থান নিজেই চিহ্নিত করতে পারে ও সে অনুযায়ী শিখনের পরিকল্পনা করতে পারে। অর্থাৎ এতে শিখন শিক্ষণের এমন প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয় যাতে শিক্ষার্থী নিজ শিখনের ধরন এবং পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে পারে। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর স্ব-মূল্যায়ন দক্ষতা, বিচারমূলক চিন্তার দক্ষতা এবং বিশ্লেষণী দক্ষতার উম্মেষ ঘটে। আর এর জন্য সম্পূর্ণ শিখন শেখানো প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের কর্ম তৎপরতার সমন্বয় ঘটানোর প্রয়োজন হয়।
একটি শিক্ষা ব্যবস্থা তখনই activity base (কর্ম তৎপরতা ভিত্তিক) হয় যখন শিশু তার শিখনের অবস্থান ও পছন্দ অনুযায়ী খেলা, গান, ছড়া, গল্প বলা, ছবি আঁকা, অভিনয়, বিভিন্ন ধরনের অনুশীলনী এবং আরও নানা ধরনের কাজের মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ পায়। এতে শিশুর জন্য নানা ধরনের উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়। শিশু কখনও এককভাবে, কখনও জুটিতে আবার কখনও দলে এসব কাজ গুলো করে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার বর্তমান কর্মপ্রচেষ্টায় একই শিক্ষাকেন্দ্রে একজন শিক্ষক ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির যোগ্যতা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে একই সাথে কাজ করবেন। শিশুরা তাদের শ্রেণিভিত্তিক দলে বসে যার যার অবস্থান ও পছন্দ অনুযায়ী কাজ করবে এবং ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কর্মতৎপরতার মাধ্যমে শেখার সুযোগ পাবে। কার্যক্রমের শুরুতে একটি বেইস লাইন টেস্টের মাধ্যমে শিশুদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় এবং তার ভিত্তিতে দল তৈরি করা হয়।
এককথায় শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষণ- শিখন হবে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক।
এবিলিটি বেইজ শিখন কী ?
এবিলিটি বেইজ শিখন হচ্ছে এমন এক ধরনের শিক্ষাক্রম, শিখন কৌশল ও মূল্যায়ন পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীর শিখনের ধরন, গতি, পছন্দ ও মানের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা করা হয়। এবিলিটি বেইজ শিখনে শিক্ষার্থী শিক্ষকের সহায়তায় নিজ শিখনের ধরন এবং অবস্থান নিজেই চিহ্নিত করতে পারে ও সে অনুযায়ী শিখনের পরিকল্পনা করতে পারে । এতে এমন কৌশল অবলম্বন করা হয় যার ফলে শিক্ষার্থী তার নিজ শিখনের মান অনুযায়ী শেখার সুযোগ পায় এবং তার শিখনের গতি অনুযায়ী অগ্রসর হতে পারে। এবিলিটি বেইজ শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর স্ব-মূল্যায়ন দক্ষতা, বিচারমূলক চিন্তার দক্ষতা এবং বিশ্লেষণী দক্ষতার উম্মেষ ঘটে।
এবিলিটি বেইজ শিখনের শিখন শেখানো প্রক্রিয়া :
একই শিক্ষাকেন্দ্রে বিভিন্ন শ্রেণির মানের শিক্ষার্থীদের এক সাথে শিখন-শিক্ষণ চলবে (Multi-graded Teaching- Learning Approach):
বেইস লাইন যাচাইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করতে হবে।
শিক্ষার্থীর কী যোগ্যতা আছে এবং কী অর্জন করলে সে একটি করে ধাাপ অতিক্রম করতে পারবে তা তার কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে।
শিক্ষার্থী তার শ্রেণি ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ করবে।
শিক্ষার্থীদের অবস্থান অনুযায়ী শ্রেণিভিত্তিক পৃথক পৃথক দল হবে।
বেশিরভাগ কাজই শ্রেণিভিত্তিক দলে হবে।
এবিলিটি বেইজ শিখনের মূলকথা:-
শিক্ষার্থী তার অবস্থান ও চাহিদা অনুযায়ী কাজ করবে।
শিক্ষক তার কাজে প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করবেন।
শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ও একটিভিটি/কর্ম তৎপরতার মাধ্যমে একটি যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করবে।
এতে শিক্ষার্থীর ভূমিকা থাকবে মূখ্য।
শিক্ষকের ভূমিকা হবে গৌণ।
শিক্ষার্থীর শিখনের পরিকল্পনা শিক্ষার্থী নিজেই করবে।
মনে রাখা প্রয়োজন যে সব শিক্ষার্থী একসাথে একই সময়ে কোনো একটি বিশেষ যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না বা কোনো একটি কাজ শেষ করতে পারে না। তাই কোনো একটি যোগ্যতা অর্জন করতে বা কোনো একটি কাজ শেষ করতে একজন শিক্ষার্থীর যতক্ষণ সময় প্রয়োজন হবে ততক্ষণ সময় তাকে দিতে হয়। কারণ, সব শিক্ষার্থীর শিখনের চাহিদা, আকাঙ্খা বা গতি সমান থাকে না।
যেকোনো প্রচলিত শ্রেণিকক্ষ থেকে এবিলিটি বেইজ শিখন কার্যক্রম ভিন্ন, কারণ:
এতে একই শ্রেণিকক্ষে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির মানের শিক্ষার্থী থাকে
শিক্ষার্থীর যোগ্যতা, পছন্দ ও শিখনের গতি অনুযায়ী শিখন পরিকল্পনা করা হয়
শিক্ষার্থীরা শ্রেণিভিত্তিক দলে কাজ করে
শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থী তার নিজের শিখনের ধরন ও অবস্থান বুঝতে পারে।
শিক্ষার্থী তার অবস্থান ও চাহিদা অনুযায়ী কাজ করবে।
শিক্ষক তার কাজে প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করবেন।
শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ও একটিভিটি/কর্ম তৎপরতার মাধ্যমে একটি যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করবে।
এতে শিক্ষার্থীর ভূমিকা থাকবে মূখ্য।
শিক্ষকের ভূমিকা হবে গৌণ।
শিক্ষার্থীর শিখনের পরিকল্পনা শিক্ষার্থী নিজেই করবে।
তথ্যসূত্র:
ট্রেইনার হ্যান্ডবুক, মায়মুনা আকতার (ইউনিসেফ)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:১৫