somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব
এম এল গনি, কানাডা থেকে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কানাডায় ইমিগ্রেশন বা অভিবাসনের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। আরো বহুকাল এ ধারা চলতে থাকবে। এ সুযোগের সুবিধা নিতে আপনাকে ইংরেজি বা ফ্রেঞ্চ অথবা দুই ভাষাতেই দক্ষ হতে হবে। এ দুইটি কানাডার রাষ্ট্রীয় ভাষা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কেবল ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব নিয়ে আলোকপাত করতে আমার এ সীমিত প্রয়াস। এ আলোচনা কারো কিছুটা কাজে লাগলে ভালো লাগবে।

কানাডার সমাজ ব্যবস্থার সাথে মিশে যেতে এবং পড়াশোনা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা আপনাকে বড়ো ধরনের সাহায্য করবে। তাছাড়া, ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকলে আপনি কানাডার পিআর (পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট) বা সিটিজেনও হতে পারবেন না। সাধারণভাবে, কানাডায় পিআর হবার পর সেদেশে কয়েক বছর বসবাস করলে সিটিজেন বা নাগরিক হওয়ার আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রেও ইংরেজি জানা বাধ্যতামূলক, যদি না আপনি বয়োবৃদ্ধ কেউ হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশের আবেদনকারীরা ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণে সচরাচর আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। আইইএলটিএস আবার দুধরনের। জেনারেল ট্রেইনিং এবং একাডেমিক। ইমিগ্রেশনের আবেদন করতে জেনারেল ট্রেইনিং পরীক্ষা দিয়ে হয়, একাডেমিক নয়। আর, একাডেমিক লাগে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। একাডেমিক পরীক্ষা জেনারেল ট্রেইনিংয়ের চেয়ে কিছুটা কঠিন। তাই, কেউ কেউ মনে করেন একাডেমিক পরীক্ষা দিলে সম্ভবত ইমিগ্রেশন এবং পড়াশোনা দুই কাজই হবে। আসলে তা নয়। ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (আরসিআইসি) হিসেবে কাজ করতে গিয়ে এমন অনেক ঘটনা আমি দেখেছি। আপনার উদ্দেশ্য যদি ইমিগ্রেশন এবং পড়ালেখা দুটোই হয়, তবে আপনার দুই প্রকারের আইইএলটিএস পরীক্ষাই দেওয়া উচিত।

আইইএলটিএস স্কোরের সামান্য তারতম্য কী করে সিআরএস স্কোরে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তেমন একটি বাস্তব উদাহরণ আপনাদের দিতে চাই। বাস্তব উদাহরণ বলছি এ কারণে, এটি আমারই এক ইমিগ্রেশন ক্লায়েন্টের প্রোফাইল হতে নেওয়া। গোপনীয়তা রক্ষাকল্পে আমি তার নাম পরিচয় দেব না। তবে, তার বিষয়টি সাধারণভাবে আলোচনা করে কানাডা ইমিগ্রেশনে আইইএলটিএস স্কোরের সবিশেষ গুরুত্ব বোঝাতে চেষ্টা করবো।

এ আলোচনার স্বার্থে সিআরএস স্কোর কী জিনিস তা নিয়ে আপনাদের খানিক ধারণা না দিলেই নয়। এক্সপ্রেস এন্ট্রি সিস্টেমে যেসব ইমিগ্রেশন প্রত্যাশীর আবেদন বিবেচনায় আনা হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রথমেই বিবেচনায় নেওয়া হয় এই সিআরএস (কম্প্রিহেন্সিভ র‌্যাংকিং সিস্টেম) স্কোর। আবেদনকারীর বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, ভাষায় দক্ষতা, ইত্যাদির সাথে তিনি বিবাহিত হয়ে থাকলে স্বামী বা স্ত্রীর অনুরূপ দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণ করা হয় এ সিআরএস স্কোর। সিআরএস স্কোর এর হিসাবে আইইএলটিএস স্কোর বড় ভূমিকা পালন করে। কেননা, আইইএলটিএস স্কোর হতে আবেদনকারীকে সরাসরি পয়েন্ট দেয়ার পাশাপাশি আইইএলটিএস স্কোরকে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতার সাথেও যৌথ বিবেচনায় এনে আলাদা পয়েন্ট দেওয়া হয়।

বিষয়টা একটা উদাহরণ দিয়ে খোলাসা করি। ধরুন, দুইজন আবেদনকারীর একজন কেবল উচ্চ মাধ্যমিক পাশ, অপরজন এমএ পাশ। দুজনেরই আইইএলটিএস স্কোর বেশ উঁচুমানের। কিন্তু, কর্মক্ষেত্রে দেখা যাবে, যার উঁচু আইইএলটিএস স্কোরের সাথে উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতাও আছে, তিনি কর্মক্ষেত্রে অন্যজনের তুলনায় অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবেন। এর অর্থ, উচ্চ শিক্ষিত আবেদনকারীর ভাষায় দক্ষতাও উঁচু হলে সিআরএস হিসেবে তিনি অনেক বেশি পয়েন্ট পেয়ে যাবেন। একই যুক্তি খাটে কাজের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেও। এবার বুঝুন, কানাডা ইমিগ্রেশনে আইইএলটিএস স্কোর, বা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা কতটা গুরুত্ব বহন করে।

আমার উপরে বর্ণিত ক্লায়েন্টের সিআরএস স্কোরে আইইএলটিএস-এর ফলাফল কতটা প্রভাব ফেলছে দেখুন এবার।

মূল আবেদনকারীর বয়স উনচল্লিশ। কানাডার মাস্টার্স ডিগ্রি আছে। কাজের অভিজ্ঞতা কানাডার বাইরে, প্রায় দশ বছর। আইইএলটিএস স্কোর লিসেনিং-এ সাত, এবং রিডিং, রাইটিং, ও স্পিকিংয়ে সাত এর উপর। তার স্ত্রীর বাংলাদেশের মাস্টার্স ডিগ্রি আছে, তবে, কাজের অভিজ্ঞতা নেই। আইইএলটিএস স্কোর তার স্বামীর কাছাকাছি।

উপরের প্রোফাইলে সিআরএস স্কোর হিসেব করলে ৪০০-ও হয় না। এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে আইটিএ (ইনভাইটেশন টু অ্যাপ্লাই) পেতে এ স্কোর তুলনামূলকভাবে কম সম্ভাবনাময়। যারা জানেন না, আইটিএ না পেলে কানাডায় পিআর বা ইমিগ্রেশনের আবেদন দাখিল করা যায় না। আর, আইটিএ পেতে হলে প্রতিযোগিতামূলক সিআরএস স্কোর পেতে হয়।

শুনে অবাক হবেন, আমার উপরের ক্লায়েন্টের আইইএলটিএস স্কোর লিসেনিং-এ কেবল এক পয়েন্ট বাড়ালেই তার সিআরএস স্কোর বেড়ে সাড়ে চারশ ছাড়িয়ে যায়। সে সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে তার আইটিএ পাবার সম্ভাবনা। এবার বুঝুন ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়ানো কানাডা ইমিগ্রেশনের জন্য কতটা জরুরি।

কানাডা ইমিগ্রেশন বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে ভবিষ্যৎ লেখায় আপনাদের প্রশ্নের প্রতিফলন দেখতে পাবেন। এছাড়া, কানাডা ইমিগ্রেশনের টুকিটাকি জানতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এও নিয়মিত চোখ রাখুন। আপনাদের সাথে আরো অনেক মূল্যবান তথ্য সহভাগের আগ্রহ নিয়ে আজ এখানেই শেষ করি।

লেখক: কানাডীয় ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট, আরসিআইসি।
মেইল: [email protected]

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:২৫
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×