এক মুরুব্বির ফেইসবুক পোস্টে চোখ আটকে গেলো। তাঁকে আমি অনেকদিন ধরে জানি।
দ্বিতীয় জন্মদিনে নাতিকে দুহাতে উঁচিয়ে ধরে চাচা বলেছেন, 'ইয়া আল্লাহ, তোমার কাছে আর কিছু চাই না, আমার নাতি যেন মানুষের মতো মানুষ হয়।'
বাহ্, কি সুন্দর প্রার্থনা! নাতির জন্য টাকাকড়ি বা গাড়ি-বাড়ি চাইছেন না; চাইছেন সে যেন মানুষের মতো মানুষ হয়; এটুকুই।
মুরুব্বির ছবি দেখে বহু বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে গেলাম। ...
এই মুরুব্বির তিন কন্যার ছোটটির বিবাহের কথা চলছিল। অনেকের মতো আমাকেও চাচা অনুরোধ জানালেন ভালো ছেলের খবর পেলে তাঁকে জানাতে।
আমার খানিক জুনিয়র এক ছেলে সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলো ও সময়টায়। প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার; খুবই ভালো ছেলে। দীর্ঘদিন ধরেই তাকে জানতাম। তার জন্য পাত্রীর খোঁজ করা হচ্ছিল। এই ছেলের খবর চাচার কানে দিলাম।
আমার প্রস্তাব শুনে চাচির সাথে কথা বলে আমাকে জানাবেন এমন মন্তব্য করে চাচা আর যোগাযোগ করেননি।
অবশেষে, মাস কয়েক পর চাচা একদিন শুভ বিবাহের দাওয়াতপত্র নিয়ে হাসিমুখে আমার অফিসে হাজির।
সেই কন্যার বিবাহের দিন ধার্য্য হয়েছে; আমাকে নাকি যেতেই হবে। বর পুলিশের এএসআই, সম্ভবত তখনকার দিনের তৃতীয় শ্রেণীর পদ সেটি।
চাচার চোখে মুখে আনন্দ।
সংকোচবোধ করবেন বলে চাচাকে আমার প্রস্তাব করা প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার পাত্রটির কথা আর মনে করিয়ে দিলাম না।
কেননা, তাঁদের পছন্দের মুলে ঠিক কি চিন্তা লুকিয়ে ছিল তা আমার অজানা নয়: বেতনের সাথে টেতন, ফকফকা ভবিষ্যৎ, কতো কী! ...
আজ এতো বছর পর সেই মুরুব্বি যখন রাব্বুল আলামিনের কাছে হাত তুলে তাঁর নাতির জন্য "মানুষের মতো মানুষ" হবার দোয়া চান তখন আমি মনে মনে ভাবি, চাচার প্রার্থনার সেই মানুষটি বেতনের সাথে মোটাদাগের টেতনওয়ালা কেউ হবেন হয়তোবা। কারন, চাচার বিবেচনায় মানুষের মতো মানুষ তো আসলে তারাই।
https://www.facebook.com/moh.l.gani
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ ভোর ৫:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




