আমার বাইশ বছরের কানাডা জীবনে এখানকার সরকারি অফিসে কতো কাজেই না যেতে হয়েছে। কোন কাজ করে দেবার জন্য কেউ এক কাপ চা-ও খেতে চায়নি আজতক। উৎকোচ দাবির তো প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশি সরকারি চাকুরেরাও এখানে ভীষণ সৎ।
সবার পক্ষে তো আর কানাডা ভিজিট বা কানাডায় চাকুরী করে খুঁটিনাটি দেখা সম্ভব না। তাই, কানাডার কর্মস্থল ও কর্মপরিবেশ নিয়ে কিছু তথ্য দেই। নিজের দেশকে ভালোভাবে বুঝতে হলে অন্য দেশের খোঁজখবরও রাখতে হয়।
১- চাকুরীতে ক্যাডার-নন ক্যাডার বা বিসিএস-নন বিসিএস অফিসার, এ জাতীয় কিছু নেই; তারপরও অফিস আদালতে শৃঙ্খলা নজরকাড়া।
২- সিনিয়র কর্মকর্তাদের 'স্যার' সম্বোধন কানাডায় নেই; কর্মস্থলে সবাই সবাইকে নাম ধরেই ডাকে। আমাদের মতো সাউথ এশিয়ান নতুন ইমিগ্রেন্টদের কেউকেউ না বুঝে 'স্যার' ডাকলে সিনিয়ররা তা সংশোধন করে দেন।
৩- সরকারি চাকুরীতে গাফিলতি বা সামান্য অনিয়ম করলেও চাকুরী চলে যেতে পারে। এভাবে চাকুরী হারিয়েছেন অনেকেই। সরকারি চাকুরী পেয়েছেন তো বাপ-দাদার জমিদারি পেয়েছেন মনে করার সুযোগ নেই।
৪- সরকারি চাকুরীর মতো প্রাইভেট চাকুরিতেও পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। ফলে, কানাডায় সরকারি চাকুরী খুব লোভনীয় কিছু নয়।
৫- চাকুরীতে প্রবেশ বা অবসর গ্রহণের কোন বয়স বেঁধে দেয়া থাকে না।
৬- চাকুরীতে কর্মঘন্টা হিসেবে বেতন দেয়া হয়।
৭- যথাযথ ওভারটাইম না দিয়ে কেউ আপনাকে এক মিনিটও বেশি খাটাতে পারে না। প্রাইভেট চাকুরী হলেও না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনিয়মের রিপোর্ট/অভিযোগ করলে নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
৮- অফিসের শীর্ষ কর্তা স্যুটেড-বুটেড হয়ে পিয়ন আর্দালি পরিবেষ্টিত এসি কক্ষে আরাম কেদারায় বসে থাকেন না। তাঁরা খানিক পরপর ঘুরে ঘুরে দেখেন তাঁর অধীনস্থ কোন কর্মচারীর কাজে সহায়তা দরকার আছে কিনা। দরকার থাকলে তাঁরা নিজেরাই পাশে বসে কাজ করেন।
৯- সিনিয়র কর্মকর্তা পিয়ন দিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাকে ডেকে আনেন না বা সালাম দেননা। এখানকার অফিসে পিয়ন বলতে কিছু নেই।
১০- সিনিয়র কর্মকর্তা এসেছেন বলে জুনিয়র কেউ এক লাফে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান না, বা অপরাধীর মতো চেহারা করে কৃত্রিম ভক্তিও প্রদর্শন করেন না।
১১- সিনিয়র কর্মকর্তারা জুনিয়রদের দেখলে মুখ গম্ভীর করে সিরিয়াস ভাব বা মুড দেখান না। সাধারণভাবে বুঝার উপায় থাকে না কে সিনিয়র কে জুনিয়র।
১২- অফিসে কোন ভিজিটর আসলে রিসেপশনে রক্ষিত রেজিস্ট্রি খাতায় নাম, ঠিকানা, সাক্ষাতের কারণ, সময়, ইত্যাদি নোট করে যেতে হয়। মেয়েলোক পাঠিয়ে বা অন্যভাবে তদবিরের তো প্রশ্নই আসেনা।
১৩- অফিসে সিনিয়র কেউ জুনিয়রকে বকাঝকা করেন না। প্রয়োজনে কাউকে চাকুরিচ্যুত করা হয় কোনপ্রকার আওয়াজ ছাড়াই।
১৪- এখানে সবাই একে অন্যের চোখে চোখ রেখে কথা বলে। মাটির দিকে বা অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বললে এরা ধরে নেয় আপনি মিথ্যা বলছেন।
১৫- মহিলা কর্মচারী/কর্মকর্তাদের সাথে অফিসের দরজা ভেজিয়ে কথা বলা বা খোশগল্প করার নিয়ম নেই।
১৬- শীতের দেশ হলেও কোট-টাই পরা লোক সহজে চোখে পড়ে না।
১৭- সরকার পরিবর্তন হলে সিনিয়র লেভেলে ছাঁটাই বা কর্মকর্তা পরিবর্তন খুবই সাধারণ ঘটনা।
১৮- ছুটির দিনে কাজ করতে কাউকে বাধ্য করা যায় না। প্রাইভেট কোম্পানিতেও এই এক নিয়ম।
১৯- যত বড় কর্মকর্তাই হন না কেন, নিজের গাড়ি নিজেকেই চালাতে হয়।
২০- কখন অফিসে প্রবেশ করলেন বা বেরিয়ে পড়লেন তা যে স্মার্ট কার্ড (কী কার্ড) ব্যবহার করে অফিসে প্রবেশ বা বহির্গমন করেন তা অটোমেটিক রেকর্ড করে এইচআর ও সিকিউরিটি বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। ফলে, টপ বসেরও হাজিরা ফাঁকি দেবার বা খেয়ালখুশিমতো অফিসে আসা যাওয়ার সুযোগ নেই।
https://www.facebook.com/moh.l.gani/
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




