চব্বিশ বছর আগের কথা। আমি তখন নেদারল্যান্ডে। সেদেশের সরকারের বৃত্তি নিয়ে নগর পরিকল্পনায় স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছি। সরকারের বিভিন্ন অফিস হতে আরও জনাদশেক কর্মকর্তাও গেছেন বিভিন্ন কোর্সে। নিয়মানুযায়ী, প্রশাসন ক্যাডারের দুই-তিনজন তো ছিলেনই।
সেখানে পরিচয় হলো নোয়াখালীর ভাষার টানে কথা বলা এক ভদ্রলোকের সাথে। জিওলোজিতে পড়াশোনা করে দেশের কোন এক সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতেন তিনি। কথাবার্তা আর চালচলনে সারাক্ষনই রাজনীতি লেগে থাকতো তাঁর। প্রশাসনের যে কজন ছিলেন মূলত তাঁদের সাথেই দল বেঁধে চলতেন।
তাঁর কাছে একদিন জানতে চাই নেদারল্যান্ডের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিভাবে তিনি পছন্দ করলেন? তিনি জানালেন, কানাডা-আমেরিকায় আইইএলটিএস স্কোর লাগে, কিন্তু নেদারল্যান্ডে তা লাগে না। নইলে তিনি উত্তর আমেরিকার কোন দেশে যেতেন। তার মানে, সমস্যা আইইএলটিএস -এ।
ভুল কিছু বলেননি তিনি। আমরা যখন নেদারল্যান্ডে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম সে সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আইইএলটিএস দরকার হতো না। কিন্তু, আমাদের ব্যাচসহ কাছাকাছি আরো কয়েকটি ব্যাচে নেদারল্যান্ড যাওয়া কয়েক শিক্ষার্থী ইংরেজি ভাষার দুর্বলতার কারণে পড়াশোনা শেষ না করেই দেশে ফিরে গেছেন। সেই থেকে নেদারল্যান্ডও বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোর চায়।
সেই সহপাঠীর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তখনকার দিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। তাঁর কথা মাঝে মাঝেই তিনি আলোচনায় আনতেন, আর বলতেন, নেদারল্যান্ডের পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরলেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে পারবেন। তাঁর কথাগুলো শুনে খানিক অবাক হতাম; কারণ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন প্রায় একযুগ আগে। ...
এরপর তাঁর সাথে যোগাযোগ নেই অনেক দিন হলো। তবে, কিছুদিন আগে পত্রপত্রিকায় খুব পরিচিত এক নাম দেখে ইনি আমাদের সেই সহপাঠী কিনা খোঁজ নিলাম। সত্যিই তাই। দেশের নামিদামি এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পদ লাভ করেছেন তিনি। অথচ, এদ্দিন আমার জানাই ছিল না যে নেদারল্যান্ড থেকে ফিরে তিনি ঠিকঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছিলেন। কেবল তাই নয়, আসিফ নজরুল ভাই দেখলাম তাঁর গুনগান গেয়ে একটা পোস্টও দিয়েছেন।
অনুসন্ধিৎসু মন আরো জানতে চাইলো, শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর এমন কোন অবদান হয়তো আছে যা তাঁকে এত দ্রুত এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। গুগল সার্চ দিয়ে দেখি, নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনূসের নোবেল প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন করা শিক্ষকদের নেতা তিনি। এ ছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষককে সাথে নিয়ে একটি বিশেষ সিনেমা দেখতে তিনি সিনেমা হলেও গিয়েছিলেন। কি ব্রিলিয়ান্টসব পদক্ষেপ, তাই না?
আমার অনুমান, তিনি পনেরো-ষোল বছরের বেশি শিক্ষকতা করেননি। এরই মাঝে এ বিশাল উন্নতি। কী সুসংবাদ, তাই না?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




