ঘোরটা কাটছিলোনা, পড়ালেখার ঘোর।কারণ,সামনে সেমিষ্টার ফাইনাল; এসময় কেউ ব্যাস্ত ক্লাসপার্টিতে কেউবা ব্যাস্ত পরিক্ষার পূর্ব প্রস্তুতিতে। আমি এর দুটোর একটাতেও নেই, আমি শুধু চোখে খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে কাঁদছি। কান্নার দোষারোপটা কাউকে দিতে চাই নাই তবে কিছুটা আমার কপালের দোষ।
চারিদিকে বলাবলি হচ্ছে কারাকারা নাকি জমিদারী হাওয়া গায়ে লাগানোর জন্য কোন এক জমিদারের আস্তানায় যাবে। বিষয়টা আমার ঘোরটা ভেদ করে ভেতরে ডুকছিলোনা, তাই আমি আমার কাজে ব্যাস্ত,
--কারণ একটা কথা আমি সবসময় মাথায় রাখি
""যে যাহাই বলুক যত
আমি আামার মত।।""
হঠাৎ, একটা কথা মনে পড়লো, কোন এক কুমারী আমাকে বলেচিল "যেহেতু আপনার কপালের দোষ সেহেতু আপনি কোন একটা পুরনো দিনের রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়িতে গিয়ে কপালটা ঘষেন দেখবেন দোষ কেটে যাবে।"
এই সুযোগ হাতছাড়া করি কিভাবে?
নিজ দায়িত্বে জমিদার বাড়ির গাড়ী ধরলাম। উৎফুল্ল মন; আমার কপালের দোষ কাটবে। এর ইঙ্গিত আমি যাওয়ার সময়ই পেয়েছিলাম,
প্রমান-
যাওয়ার সময় ভাবছিলাম কোন একটা মুঁড়ির টীন বা টমটম দিয়ে যাওয়া লাগবে কিন্তু না গাড়ীটা বেশ ছিল।
এই ক্ষেত্রে উদয়, নাফিস প্রশংসার দাবিদার।
অভাবনীয় একটা জার্নি পথে টি ব্রেক সবমিলিয়ে কিছু ছোট্র ছোট্র খুনসুটিতে অবশেষে জমিদার বাড়ি।
ভেতরে ঢুকতে সবাই কেমন জানি মডেল হয়ে গেছে। আনকোরা সব পোস গুলো ক্যামেরা বন্ধি করছেন জহির।
হঠাৎ, পুরনো বাড়ির ঝরঝরে দেয়াল গুলো কি যেন বলচে একটু মনযোগ দিয়ে শুনচি-
""বোবা হয়ে দাড়িয়ে আছি
হৃদয়ে লালন করে শত বছরের ইতিহাস
এই জামানায় এসে শুধু কুঁড়িয়ে যাচ্ছি
নব জোয়ানের পরিহাস।।""
ঐদিকে, সবাই প্রকৃতিটাকে উপকরন হিসেব ব্যাবহার করে ক্যামেরাবন্ধি হচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে পুকুর ঘাঁটের সন্ধান পেলাম, পশ্চিমের সিঁড়িটায় মিষ্টি রোদ পড়ছে একটু জমিদারী স্টাইলে সিঁড়িটাতে বসলাম, মনে মনে একাট কালো শেওলা জমা দেওয়াল খুঁজতেছিলাম কপালটা ঘষবো, কিন্তু হঠাৎ যেন খুশবুর ঘ্রান পেলাম চোখটা বন্ধ করে নাক দিয়ে টেনে টেনে ঘ্রানটাকে আরো কাছে আনলাম। চোখ খুলতেই পুরনো এক সুন্দরীকে দেখতে পেলাম তার মোঘলীয় কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে বর্তমানটাকে হারিয়ে পেলেছিলাম। তার একটা কথা আমার খুব মনে ধরেছে,
বলবো?
হ্যা বলেই পেলি-
ঘষিলে যদি পরিবর্তন হতো
কপালের ভাগ্য
তাহলে এই জামানার মানুষ গুলার
আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার হতো যোগ্য।।
একটু হেসে দিলাম, কথায় কথায় একটু আমরা দু'জন বন্ধু সুলভ হয়ে গেলাম। হঠাৎ আমার কান ঘেষে একটা শব্দ আসতে লাগলো তবে ততোটা স্পষ্ট না.
-এ্যাই তোমায় কেন যেন ডাকছে।
-কোই কে? ও, নাদিম? এই তো আসতেছি দোস্ত।
আচ্ছা এতো কথা বললাম আমরা দুজন কিন্তু তোমার নামটাই আমার জানা হলো না। তোমার নাম কি?
-আমার নাম "অন্নপূর্ণা "
-বাহ্, নামটা আমার খুব পরিচিত লাগছে।
-আচ্ছা তোমার সঙ্গীদয় ডাকছে তাদের কথায় সাড়া দাও।
-তুমিও চল আমার সাথে?
- এখন না পরে যাব।
-তাহলে তোমার সাথে আমার দেখা হবে না?
-হবে।
-কিভাবে?
-নাম ধরে ডেকো আমায়। ঠিক তোমার পাশে হাজির হবো।
-বলচো তো?
-হ্যা,বলচি বলচি বলচি।
-তুমি না আসলেও তোমার ঘ্রাণ শুকে শুকে তোমায় আমি ঠিক খুঁজে নিব।
অবশেষে বন্ধু মহলে হাজির হলাম, ছোট্র একটা খুনসুটি চলছে তাদের মধ্যে ভালোই উপভোগ করছি তাদের হাসি ঠাট্রা। কিন্তু মনটা আমার পড়ে আছে সেই পুকুর ঘাঁটে।
মনে মনে তারে খুঁজছি।
এদিকে সবাই ছবি তুলছে আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি।
হঠাৎ একটা হাসির শব্দ পেলাম মাথাটা নাড়িয়ে বাম দিকের দালানের চার নাম্বার বেলকুনিটায় দাড়িয়ে সে হাসছে।
-ও তুমি? হাসছো কেন?
-ওরা এমন করছে কেন?
-কোই কি করছে ওরা তো ছবি তুলচে।
-আমি তো ওদের মাঝে আমাদের নাট্য মঞ্চের মনু জোয়ারদার, সেফালী খানম, রনজন সরকার, সুনীল, মনি রায় দের দেখতে পাচ্ছি।
-কি বলচো এসব? আমি হাসতে লাগলাম।
-সত্যি বলচি ওরা যখন মঞ্চে উঠতো তাদের অঙ্গবঙ্গীমা দেখেই সবাই হাসতো।
-ভাবছিলাম আমিও একটি ছবি তুলবো, কিন্তু তোমার হাসির ভয়ে আর হবে না দেখছি।
-কি? তুমিও এমন করবো? দাড়াও দাড়াও আমি আসতেছি।
এদিকে উদয় বলচে দোস্ত ছবি তুলবি না আয়।
-যাও যাও দেখি তোমাকেও নাট্য মঞ্চের কার মত লাগে।
অবশেষে উদয় জোর করা শর্তেও ছবি তুলি নাই...
অন্নপূর্ণার পাশে এসে দাড়ালাম। এবার দুজন মিলে একসাথে হাসছি। তার হাসাহাসির মাঝে একটু ব্যাগাত দিলাম একটা আবদার করে।
সে আমার আবদারে সাড়া দিল, সে আমায় আশপাশটা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে, আর মাঝে মাঝে বলচে সূর্য ডুবতে আর কতক্ষন বাকি?
বুঝতে পারলাম না কেন এটা বলচে, আমি এই কথাটা কানে না নিয়ে শুধু ঘুরছি।
হঠাৎ তাকে আর আমার পাশে পেলাম না, তখন দেখলাম সূর্যটাও লালচে হয়ে গেছে।
আমারো বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২২