somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা মুভি রান আউট এর রিভিউ

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা ছবি: রানআউটের ১০০% স্টোরি, ফুল স্পয়লার (অনেক বড় পোস্ট)
=========================================================

আমি গ্রামের ছেলে,
চট্রগ্রাম শহরে একটা অফিসের এ্যাকাউন্টসে কাজ করি।
আবার বাড়ীওয়ালার মেয়ের সাথে পার্ট টাইম প্রেমও করি ;)

একদিন সন্ধ্যায় আমার সামনেই একজন মানুষকে খুন হয়ে যেতে দেখি।
পরে জানতে পারি মানুষটার নাম সন্ত্রাসী মিজান।
লোকটাকে বাঁচানোর জন্যে আমি মানুষজন ডাকতে থাকি।
একসময় পুলিশ আসে, আর কি আজব কান্ড!
আমাকেই খুনী সন্দেহ করে ধরে নিয়ে যায়।

পরেরদিন সকালেই আমি সমস্ত মিডিয়ায় খুনী হিসেবে হাইলাইটেড হই।
সবাই জানে আমি শীর্ষ সন্ত্রাসী কিশোর (সজল)।
২৪ ঘন্টা আমার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়, তথ্য আদায় করার জন্যে।

কিন্তু কি আশ্চর্য! পরেরদিনই কে বা কারা আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
থানা থেকে বের হয়েই দেখি আমাকে নেওয়ার জন্যে এলিয়ন গাড়ীতে বসে আছে সুন্দরী মৌসুমী নাগ!
অদ্ভুত সুন্দর ফিগারের মৌসুমীকে দেখে আমার চোখ ট্যারা হয়ে গেলেও প্রচন্ড মার খাবার পর আমার আর কোন কথা বলার মত অবস্থা ছিলনা।

আমাকে বাসার কাছেই নামিয়ে দেওয়া হয়।
আমাকে দেখেই ছুটে আসে প্রেমিকা নীলা, ও বুঝতে পারে খুন আমি করিনি,
ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে...

পরেরদিন সকালেই আমি বুঝতে পারি, আমার সামাজিক অবস্থান আর আগের মতন নেই!
অফিসে সবাই আমাকে ভয় পাচ্ছে, পরে এমডি'র অনুরোধে আমি চাকরিটা ছেড়ে দেই।
সেদিনই বাড়ীওয়ালার কাকুতি-মিনতিতে আমি বাসাও ছেড়ে দেই।
আমার যায়গা হয় রাস্তায়!

ঠিক তখনি সেই এলিয়ন গাড়ী আমাকে আবারও নিতে আসে, সংকোচ থাকা সত্ত্বেও আমি নিরুপায় হয়ে গাড়ীতে উঠে পড়ি এবং মৌসুমী নাগের বাসায় যাই।
সেখানে মৌসুমী তার মেয়ে সহ একা থাকে।

পরে আমি জানতে পারি আমাকে নিয়ে এক ভীষন পলিটিক্স হচ্ছে...
চিটাগাং এর এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, ঘেটুপুত্র কমলার জমিদার আরেক মোটকু ব্যবসায়ীর ৩০০ একর জমি চায় সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর জন্যে। ভোটকু তাতে রাজী নয়। এখন আমাকে এক নামে শহরের সবাই চেনে, সবাই আমার চেহারা জানে। আমি সামনে গেলেই সবার হাঁটু কাপা শুরু করে। কেবলমাত্র আমিই পারি ভোটকুর ব্যবসায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে!

আমাকে নতুন জীবনের সাথে অভ্যস্ত করাতে তারেক আনাম আমাকে এক নাইট ক্লাবে নিয়ে যায়। সেখানে নায়লা লাইমের নাচ দেখে আমিও হতাশায় পড়ে বোতলে চুমুক দেই। তারপর আমাকেও নেশায় পেয়ে বসলে আমিও চান্সে নায়লার সাথে দুই রাউন্ড নেচে নেই ;)
এই সিনেমায় নায়লার ভূমিকা এই তিন মিনিটেই, আর কিছু নেই।

এদিকে এ্যালকোহলিক মৌসুমী নাগ আমাকে নিয়ে বেশ ভালো বিপদে পড়েছে। প্যারালাইজড মা এর চিকিৎসার জন্যে সে চাকরী নিয়েছিল। এক সময় লুইচ্চা চেয়ারম্যান তারেক আনাম খানের সাথে তার সবকিছু হয়। আবার কোম্পানির এমডি তারেকের ছেলে, সেও মৌসুমিকে বিছানায় নেয়। একসময় মৌসুমী প্রেগনেন্ট হলে তার সন্তানের বাবা কে তা সে নিশ্চিৎ হতে পারে না!

মৌসুমী মেয়েটা চালাক আছে! ও সবার সাথেই ভালো লিন্ক আপ করে চলতে পারে। ভোটকু ব্যবসায়ীর সাথেও সম্পর্ক ভালো রাখার চেষ্টা করে আবার চিটাগাং পুলিশের কমিশনার ওমর সানীকেও হাতে রাখে।

আমি পড়েছি বিপদে, আমাকে যে করেই হোক পালাতেই হবে! একদিন আমি ময়লার লোকের ছদ্মবেশে মৌসুমীর এপার্টমেন্ট থেকে পালাই। ওদিকে আমার মা আমাকে খুজে না পেয়ে কানতেছে, আরেকদিকে আমার প্রেমিকাকে মিস করছি, অন্যদিকে মৌসুমীও আমার প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে। মৌসুমীর মেয়ের প্রতিও আমার বেশ মায়া পড়ে গেছে!

ঘেটুপুত্র জমিদার তারেক আনাম ঐদিকে মৌসুমী আর আমার প্রেম আঁচ করতে পেরে পাগল হয়ে গেছে। ও এখন ১ সপ্তাহের মধ্যে ভোটকুর জমির রেজিস্ট্রেশন চায়। মৌসুমীর একমাত্র দূর্বলতা ওর মেয়ে। সাইকো তারেক আনাম মৌসুমীর মেয়ের প্রান নাশের হুমকি দেয়। ওদিকে আমি বাড়ীওয়ালার মেয়ের সাথে বাটালি হিলের এক কনস্ট্রাকশন সাইটে বসবাস করতে থাকি।

একদিন নীলাকে মৌসুমীর লোকেরা ধরে নীয়ে যায়। আর তারেকের লোকেরা আমার মাকে অপহরণের চেষ্টা চালায়। কিন্তু চালাক চতুর মৌসুমী কমিশনার ওমর সানীকে আগেই খবর দিয়ে আমার মাকে সরিয়ে নেয়।

তারেক এনাম হেগ এর গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে মৌসুমীর সাথে ওর বিশ্বস্থতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। কারণ সে কমিশনারের সাথে মৌসুমীর ভালো যোগাযোগের বিষয়টা আঁচ করতে পেরেছে। মৌসুমীরও আছে শরীর! সেও ভোটকুর সাথে কম্প্রমািজ করার চেস্টা চালায়। কিন্তু শালায় জাত ব্যবসায়ী। মৌসুমীর যৌবনের আগুনে যে ঝাপ দেয় না... -_-

ওদিকে আমি প্রেমিকা নীলার শোকে অস্থির হয়ে মৌসুমীর কাছে ফেরত আসি। মৌসুমীর কথায় নীলাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেই। আর তখন থেকেই শুরু হয় আমার গ্যাংস্টার হওয়ার ট্রেইনিং। সাইট ইন্জিনিয়ারকে গুলি করে খুন করি। বাসায় এসে অপরাধবোধে শাওয়ার নিতে নিতে কাঁদি। আর মাঝে মধ্যে মৌসুমীর মেয়ের সাথে খেলা করি। ওর সাথে আমার সম্পর্কটা বাবা-মেয়ের মতই।

আর ওদিকে ভোটকু ব্যবসায়ী মোর সিগারেট টানতে টানতে আমাদেরকে গালিগালাজ করে। কিন্তু কোন কাজ হয়না। একদিন ও মৌসুমীর সাথে আপোষে আসতে চায়। কিছু জমির রেজিস্ট্রেশন আমাদের নামে করে দিতে চায়। মৌসুমী এই সুযোগে তারেকের হাত থেকে বাঁচার জন্যে কিছু জমি আমাদের নিজেদের কোম্পানীর নামে রেজিস্ট্রেশন করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু তারেক ধরে ফেলাও ও আমাদের মেয়েকে পুরান গোডাউনে আটকে রাখে আর মৌসুমীর সাথে সাইকোর মতন আচরন করে... :/

ছবির শেষ দৃশ্যে আমি ঘটনাস্থলে চলে আসি। আমি বুঝতে পেরে গেছি এখন আর সাধারণ সমাজে আমার ফেরত যাওয়ার কোন অবস্থা নেই। পুরান প্রেমিকার কাছেও যাবার উপায় নেই। মৌসুমীই আমার শেষ ভরসা। তাই আমি মৌসুমীর পক্ষ হয়ে লুইচ্চা তারেকের সাথে মারামারি করি। ওকে আমি ছাদ থেকে ফেলেই দিতাম কিন্তু আমি ডিসট্র্যাক্ট হওয়ায় তারেকই আমাকে ফেলে দেয়। মরে গেছি মনে করে আমাকে ফেলে ফেরে চলে যায় সে। আর মৌসুমী কানতে থাকে।

হঠাৎ করেই মৌসুমীর মেয়ে আমাকে বাবা বলে ডাকে! বাবা ডাকের কি শক্তি! মৌসুমী এর আগে ওর মেয়েকে আমাকে আংকেল ডাকতে বলেছিল, বাট শী রিফিউজড। হয়ত বাবা ডাক শুনেই আমি আবার জেগে উঠি! তারেক আনাম আমাকে তিনবার গুলি করে, আর আমি ওকে ছুরিকাঘাত করি। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।

আমরা এখন ছবির শেষ অংশে চলে এসেছি। শেষ পর্যন্ত মরে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোন গতি ছিলোনা। সামাজিকভাবে বাড়ীওয়ালার মেয়ে আমাকে আর নেবেনা। সমাজও আর আমাকে নেবে না। মৌসুমী ছাড়া আর কেউ ছিল না, যার স্বভাবই হল যার তার সাথে শুয়ে পড়া। আর তাই, মৌসুমীর সাথে পুরোপুরি ভার্জিন থাকা সত্ত্বেও আমি বাবা ডাক শুনেই মারা গেলাম.......

============== (লেখকের কথা)===============

আমি এই ছবিটাকে একটা সস্তা দরের বাংলা ছবি মনে করেছিলাম, তাই ৩৫ টাকার হলে গিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি! দেখার পর মনে হয় ভুল করেছিলাম। আমার ২৫০ টাকা লস যায়নাই। সজলের অভিনয় যথেস্ট ম্যাচিউরড। আপনারাও হলে গিয়ে দেখতে পারেন, আপনার ২০০ টাকা মাইর যাবেনা...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৫
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×