আমেরিকার যাওয়ার আশায় ভিবোর হয়েছিলাম কয়েকমাস। ভর্তি হয়েছিলাম নর্দান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কিন্তু আশা ভঙ্গ হলো যেদিন আমেরিকার ভিসা রিফিউস হলাম। এরই মধ্যে শুনতে নিউজিল্যান্ডে এখন খুব সহজেই ভিসা দিচ্ছে তাই অনেক ছাত্রদের পছন্দের তালিকায় এখন নিউজিল্যান্ডও যায়গা করে নিয়েছে। সময়টা ছিল গত বছরের জানুয়ারির দিকে। মাথায় কি ভুত উঠলো জানিনা কিন্তু বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য একপ্রকার মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। অনেকের সাথে সাথে আমিও স্বপ্ন পুরনের আশায় এপ্লাই করলাম নিউজিল্যান্ডে। কিন্তু কথা হচ্ছে সেই স্বপ্নের কতটা পূরন হয়েছে???
কিভাবে আসা যায়, এপ্লাই এর নিয়মাবলী কি তা নিয়ে লেখার কোনো মানে হয় না। হয়ত অনেক ব্লগার এর মধ্যেই এই বিষয়ে অনেক পোস্ট দিয়েছেন। তাই আমি এখানে আমার গত এক বছরের জীবন আর কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি এই বিষয়টা নিয়েই আজ এই লেখা। বাসায় সব কিছু বলা যায় না নানান কথা চিন্তা করে তাই ভাবলাম ব্লগের সবার সাথেই শেয়ার করি।
প্রথমেই বলে নেই নিউজিল্যান্ডে আমেরিকার চেয়ে অনেক কম খরচে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব এখানকার কলেজ গুলোর কল্যানে। আর যারা স্কলারশিপ নিয়ে আসেন তাদের বেলায়ত কথাই নেই। অনেকটা পায়ের উপর পা তুলে চলে যাচ্ছে তাদের দিন। আমি যখন এসেছিলাম আমার দুই বছরের একটি কোর্সে টিউশন ফী ছিল ১৯০০০ হাজার ডলার। এরমধ্যে তের হাজার ডলার বাংলাদেশ থেকে দিয়ে ভিসা নিয়ে হাজির হলাম স্বপ্নের দেশ নিউজিল্যান্ডে। যখন এসেছিলাম হাতে করে নিয়ে এসেছিলাম ১১০০ ডলার মাত্র, যা দিয়ে এখানে হয়ত দুই মাস কোনভাবে কাটিয়ে দেয়া সম্ভব। কিন্তু তারপর কি করবো তখন পর্যন্ত আমি কিছুই জানিনা।
এসেই পরিচিত হয়েছি অনেক মানুষের সাথে। তার মধ্যে কলেজের সবধরনের কাজে তুশার ভাইয়ের হেল্প পেয়েছি। এটা ওনার দায়ীত্বও বটে। উনি আমার কলেজের মার্কেটিং এ জব করে, মুলত বাংলাদেশি ছাত্রদের সব অভিযোগ তার কাছেই থাকে এবং সে এগুলোর সমাধান করার চেষ্টাও করে। তবে একটা মানুষের ব্যাপারে সব মানুষের মন্তব্য যেমন এক হয়না তাই তার ব্যপারে অন্য কারও অন্য মন্তব্য থাকতেই পারে। তারপরো স্বীকার করতেই হবে কুইন্স একাডেমি গ্রুপের গত একবছরে ভালোই হেল্প পেয়েছি আমি। ক্লাস ব্রেকে গিয়ে বসে আড্ডা মারি ভাইয়ার সাথে। এটাই বা কম কিসের?
কাজের শুরু:
এখানে আসার পর চোখে কুয়াশা ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছিলামনা। আসার এক মাস পরেও যখন কোন কাজ জোগাড় করতে পারছিলামনা তখন বাধ্য হয়েই ফার্মিং এর কাজ করতে চলে যেতাম সিটির বাইরে। এরই মধ্যে একটি ইন্ডিয়ান দোকানে জব পেলাম, সপ্তাহে ২০ ঘন্টার মত কাজ করতাম ১০০ ডলার দিত। যা আমার বাসা ভাড়ায় চলে যেত তখনো খঅয়ার খরচটা নিজের পকেট থেকেই যাচ্ছিল। তারপরো এই টাকা পেয়েই আমি হ্যাপি ছিলাম কারন অনেকে এটাই জোগাড় করতে পারছিলনা। তাই সপ্তাহে ১০০ডলার বেতনেই শুরু করে দিলাম আমার স্বপ্নের পথের যাত্রা , সেই দোকানের মালিকের ছেলে কৃষ্ণ খুবই ভালো ছেলে ছিল। প্রতিদিন আমায় বাসায় নামিয়ে দিয়ে যেত আমরা ভিবিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতাম। নিউজিল্যান্ডের পরিবেশ, কেন নিউজিল্যান্ডে থাকার জন্য অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো কিংবা তার ফিজিয়ান গার্লফ্রেন্ড নিয়েও কথা হতো আমাদের।
(চলবে)
সকল পর্বের লিংক একসাথেঃ
নিউজিল্যান্ডে এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
নিউজিল্যান্ডে এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:২১