somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আমিই সাইফুল
একজন ইউরোপ প্রবাসী, জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পার করে আজকের এই আমি। ব্লগে আবেগ অনুভূতি শেয়ার করি যেগুলো হয়ত সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়না। আমি একজন অনুভূতির ফেরিওয়ালা......

নিউজিল্যান্ডে এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি নিউজিল্যান্ড এসে পৌঁছাই গত বছরের মার্চে। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দেশকে ছেড়ে আসতে কি যে কষ্ট হয়েছিলো তা বলে বোঝাতে পারবো না। আর এসেই একটা বড়সড় ধাক্কা খেলাম কারণ আমার কোনো পরিচিত মানুষ ছিলো না এই দেশে। এক বড়ভাই (এজেন্সির লোক) একটা বাসায় উঠিয়ে দিয়ে চলে যায়; দুইদিন তার কোনো খোঁজখবর নেই। আমাকে কলেজও চিনিয়ে দেয়া হয়নি। বিদেশে আমার প্রথম রুমমেট শুভ্র দা। তিনি দেখলেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, কি করবো। তাই একপ্রকার দয়া করেই আমাকে কলেজ চিনিয়ে দিলেন তিনি। কলেজে গিয়ে সব ফর্মালিটিস শেষ করে রুমে ফিরলাম। ফিরে এসে কি খাবো সেটাই বুঝতে পারছিলামনা। এক ভাইয়ার কাছ থেকে পেয়াজ নিয়ে ডিম ভাজলাম। সেটা খেয়েই শুরু হলো আমার নিউজিল্যান্ডের সংগ্রাম



এখানে না আসলে আমি বুঝতামইনা মানুষ কতো ক্রিটিকাল চিন্তাভাবনা করতে পারে। দেশে থাকতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, হইহুল্লোড়, খুনসুটিতে মেতে থাকতাম; আর তাতেই অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এখানে এসে কারো সাথে কোনো কথাই বলতে পারছিনা। একটু মজা করলেই যেন মনে হচ্ছে কারো তীর্যক চোখ গায়ে এসে লাগছে। সেই সময় কি যে একটা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম বলে বোঝানো যাবে না। পরে অবশ্য আমার সমমনা কয়েকজন পেয়ে যাই। একসঙ্গে আড্ডা, হইহুল্লোড়, রাগ দেখানো সব আগের মত করে ফেললাম।



প্রথম দিকে চাকরি নিয়ে সংগ্রাম, পড়ালেখার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। সেই সময়েই নিজেকে একটু ভারমুক্ত করার জন্য, নিজের চোখের জল লুকানোর জন্য একটা জায়গায় গিয়ে প্রায়ই বসে থাকতাম। সমুদ্রের ধারে বসে সমুদ্রের সাথে কথা বলে নিজেকে হালকা করতাম। এখানে গেলেই সমুদ্রটাকেও আমার মতোন একা একা মনে হতো। মাঝে মাঝে জাহাজের হুইসেলে মনোযোগ নষ্ট হলেও, নিজের দুঃখ লুকানোর জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা অকল্যান্ডে আর পাইনি আমি।



ব্রিটোমার্ট জায়গাটা আমার অনেক দুঃখের সঙ্গী। এর কাছে লুকায়িত আছে আমার অনেক দুঃখের কথা। সুখ-দুঃখের অনেক কথাই নিঃস্বার্থভাবে গচ্ছিত রেখেছে সে। প্রেমিকারা যেমন তাদের প্রেমিকদের কথা আর তাদের মধ্যকার সম্পর্কের কথা গোপন রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, ঠিক তেমনি ব্রিটোমার্টের এই সমুদ্রতীরটি আমার সব কথাই গোপন রেখেছে। এর সঙ্গে আমার লুকোচুরি-লুকোচুরি প্রেমের সম্পর্ক।

যখনি আমার মন খারাপ হয় বা কান্না করার দরকার হয় তখনই আমি আমার প্রেমিকার কাছে চলে যাই আমার অশ্রু বিসর্জন দিতে। সে আমার অশ্রুগুলো নীরবে সহ্য করে আর আমাকে দেয় আগামীর সান্ত্বনা, দেখায় আগামীর স্বপ্ন। প্রেমিকার কাছ থেকে যখন রাত তিনটা বা চারটায় এসে ঘুমিয়ে পড়ি তখন মনে হয় যে, বুকের উপর থেকে যেন একটি পাথর সরে গেছে। আমার নিউজিল্যান্ড জীবনে আমার পার্মানেন্ট প্রেমিকা হয়ে বেচে রইবে ব্রিটোমার্টের এই সমুদ্র তীরটি। গতানুগতিক প্রেমিক-প্রেমিকাদের মতো আমাদের একজনকে আরেকজনের ছেড়ে যাবার সুযোগই নেই আমাদের।

যাই হোক টপিকের বাইরে একটু কথা বলেই শেষ করছি আজ। এখানে যারা নতুন পড়তে আসে তাদের অনেকেই প্রথম প্রথম চরম হতাশায় ভুগতে থাকে। আমার ক্লাসে একটা বাঙালি ছেলে ছিলো, আমার ১০/১২ দিন আগে এসেছিরো। কিন্তু সে এ দেশে এসে এতোই হতাশ হয়, এক মাসের মধ্যেই সে দেশে চলে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিলো। ও আসলে অনেক হোমসিক ছিলো; ওর ফ্যামিলি অনেক চেষ্টা করেছিলো এখানে অন্তত পড়াটা শেষ করানোর জন্য। কিন্তু ও রাজি ছিলো না; দেশের হাজার টাকা এখানে এলে বিশ ডলার হয়ে যায় আর বিশ ডলার এখানে ভালো মানের রুটির জন্যই দরকার! সেও মোটামুটি প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে কোনো কাজ করবে না। ছেলেটা প্রথম সেমিস্টার শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফিরে গিয়েছিলো।

তাই যারা অভিভাবক আছেন তাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা অবশ্যই আপনাদের সন্তানদের চেনেন। তার দ্বারা কি সম্ভব আর কি সম্ভব নয় সবই জানেন। তাই লাখ লাখ টাকা খরচ করার আগে ভেবে দেখবেন বিষয়গুলো।আর নতুন ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ বিদেশে আসার আগে এজেন্সির কথায় নয়, রিয়েল সিচুয়েশনগুলো দেখে নেবেন ইন্টারনেট থেকে। যেমন ফেসবুকে কাউকে নক করতে পারেন। এখানে এসে হতাশায় না ভুগে হতাশাটা দেশেই রেখে আসুন।

চলবে......

সকল পর্বের লিংক একসাথেঃ
সকল পর্বের লিংক একসাথেঃ
নিউজিল্যান্ডে এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)

নিউজিল্যান্ডে এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:২০
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×