somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উচ্ছিষ্ট

০২ রা আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন আমি সূর্যসেনের পাঁচতলা'র বাসিন্দা। তা সে হবে ২০১৭/১৮ সালের দিককার কথা।
নেক্সাস তখনও সাড়ে দশটায় বন্ধ হয়। এর আগেই খেতে হয়, পরেও যে পাওয়া যায় না, তা নয়। তবে তা একটু বেশি মাত্রায় খাবার অনুপযোগী; তবে খায়।

যাইহোক, এমনি কোনো এক শেষ-আষাঢ়ের রাতে ছাত্রী পড়িয়ে ফিরতে ফিরতে একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিল। ঠিক মনে নেই, তবে সাড়ে দশের মিনিট দশেক হয়তো বেশিই হবে।
দু/তিনটে বাটি খাবার বাকি ছিল। আমি একটা নিয়ে বসেছি। খাওয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে__ এগারোটার কাছাকাছি হবে; তখন আরো দু'জন ভাই এলেন। কিন্তু খাবার তো তখন শেষ! একজন দেখে-টেখে চলে গেলেন। আর অন‍্যজন খাবারের খোঁজেই হোক বা জসিম ভাই (নেক্সাস ম‍্যানেজার) অথবা অন‍্য কারো খোঁজেই হোক হেঁশেলের ভেতরে গেলেন। ততক্ষণে আমার খাওয়া শেষ; কৌতূহলে অভ‍্যসবশত পিছু নিলাম।

____"এরা সব গেল কোই?" আমার সাড়া পেয়েই বোধহয় ভাই আপন মনে বললেন। "আজ এত তাড়াতাড়ি বন্ধ করে গেল!" এমন দেরিতে এসে আমিও আগে খেয়েছি, মানে এগারোটার কাছাকাছি। কিছু-মিছু থাকে। সেদিন বোধহয় মেসের ছেলেদের হাজিরা ছিল; "উপরওয়ালা"বাহারী বাসায়। তাই সব ফাঁকা। তা না হলে এক দু' জন অন্তত যেত দেখা।

একটা মাঝারি গোছের হাঁড়িতে প্রায় এক হাঁড়ি ভাত দেখলাম পাতিল ধোঁয়ার স্থানে রাখা। সেটাও সমস‍্যা ছিল না, ক্ষুধা থাকলে খাওয়া যায়, সমস‍্যা হল, হাঁড়ি ভরে ভাতে পানি দেয়া। আর নোংরা বাসন-কোশনের মাঝেই সেটা রাখা। (দুপুরের ভাতও হতে পারে।)

____"এত গুলো ভাত নষ্ট করল!"___হাঁড়ির পানি-দেয়া-ভাতকে ইঙ্গিত করে বললেন।
____"পানি না দিলে কেউ তো অন্তত ডাল দিয়েও খেতে পারে!"___এর মধ‍্যে আরেকজন এসেছিলেন। বলতে বলতে চলে গেলেন।
কিন্তু আমি ভাবছি অন‍্য কথা___ "খেত কী দিয়ে? সবজি তো নেই। ডালও শেষ! আমি নিজেই পাইনি।" অথচ আমার মাথায় তখন আসেনি খাবারের জন‍্যে এসবের চেয়ে অন‍্য কিছুরই বেশি প্রয়োজন হয়। এলো আরো খানিকটা বাদে।

দেখলাম বারেক ইতস্তত করে __"নাহ্! এখনো ভালো আছে, খাওয়া যাবে" ___বলে সেই নোংরা পরিবেশের হাঁড়ি থেকে থালায় মুটো তিন/চার ভাত তুলে নিলেন। তারপর গিয়ে বসে গেলেন টেবিলে। দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে দেখলাম, __এক নাগাড়ে মাথা নিচু করে সেই পানির ভাত ক্ষুধার তরকারি মিশিয়ে কত সুন্দর করে খেয়ে যাচ্ছেন।

আর আমি ফিরলাম একমাথা চিন্তা নিয়ে।
পেটে-মানিব‍্যাগে কতটা নিরুপায় হলে এমনটা হয়? (তখন হলে বিশ টাকায় খিচুড়ি পাওয়া যেত। সাত টাকার রুটিতেও রাত পার করা যায় __দেখেছি।) মানুষের দুঃখ-কষ্ট আছে, আছে যুদ্ধ। সবাই আলাদা আলাদাভাবে লড়াই করছে। কঠিন-সহজের কথা আসতেই পারে। তবে আমরা আমাদেরটা দিয়ে অন‍্যের বিচার করতে গেলে, আমার মনে হয়, ঠিক হবে না। ভুল হবে।

[চেয়েছিলাম এ রাজ সাথে করে কবরে নিয়ে যাব। পারলাম না। এ লেখা যদি নজরে পড়ে ভাই, ছোট ভেবে মাফ করে দিয়েন।]



খ.
৪১ দিয়ে বেরিয়েছি সবে। মাথার 'পরে রৌদ্দুর দারুণ যেন রাস্তার পিচ্ গলে যাবে। অসহনীয় গরমে সেইদিন শুক্রবার। পথের ধারেই গল্প জুড়েছি আমি, মন্টে আর যুবরাজ____বন্ধুর সাক্ষাতে যা করে লোকে, অনেকদিনের পর।

গরমের খেয়ালেই হঠাৎ খেয়াল হল পথের ধারে__ তরমুজ। যেই ভাবনা সেই কাজ, ঠিক হল, কেজি তিনেক তরমুজ তিনজনে মিলে করব সাবাড়। পেছনের ফুটপাতে "গায়ের জোরের উৎপাতে" সবটা দখল করে নোংরা এক টি-স্টল মস্ত একটা আম গাছের নিচে দাঁড়ায়ে। আর তারে ঘিরে এই তরমুজওয়ালা আর ওই গোটা চারেক রিক্সাওয়ালা; দুপুরের ভ‍্যাপসা গরমে দু'দণ্ড শান্তির আশায় যেন প্রকৃতির এই আশ্রমে!

একটু আগে স‍্যান্ড উইচ আরো কত হাবিজাবি গিলেছি তাই খাওয়ায় খানিক পড়েছে ভাটি। আমাদেরি কয়েকটা ফালি তরমুজ তরমুজওয়ালার গাড়িতেই রেখেছি। খাওয়া প্রায় শেষের দিকে, এক রিক্সাওয়ালা এলে এগিয়ে। জিজ্ঞেস করলে দোকানিকে কেটে কেটে পিস দরে বেচবে কি-না। এক একটা তরমুজ সাইজে মোটের ওপর কেজি তিনেকের নিচে না। দেড়শ টাকার কেস___! কতদূর প‍্যাডেল মেরে নিয়ে গেলে দেড়শ টাকা ভাড়া হয়; বলা শক্ত বেশ।

যাকগে সে কথা, বিক্রেতার না-সূচক জবাবে সে ফিরে গিয়ে পূর্বের মতোই রিক্সায় বসে পড়লে। একমনে ভাবলাম, "দেই ডেকে এই এক ফালি! আছেই তো সবে একটা, তাহলে অন‍্য রিক্সাওয়ালাদের তাহলে কী বলি?"
আবার হাব-ভাবেও মনে হল না "দিতে গেলে নেবে।" এখনো দেশের খুঁটি হয়ে আছে দেখবেন কিছু মানুষ; মরবে, কিন্তু কারো করুণার দান নাহি নেবে! চলনে-বলনে আত্মমর্যাদাবোধের জ‍্যোতি; সাহসের পারদ গেলে নেমে।

তবে সেদিনের সেই শেষ ফালি তরমুজ যেন আজও যেন আমার ঠিক হজম হয়ে উঠেনি। আর হবেও বলে মনে হয় না। যেমন হয়নি মেসের সেদিনের সেই ভাত।

পৃথিবীর অনেক উন্নত-অনুন্নত দেশে, এমনকি পাশের বাংলা কলকাতাতেও একজনের মতো ফল/খাবার কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু এদেশে ফল-খাবার একজনের মতো বেচার কম চল। বরং তেমন উদ‍্যোগেও শুরু হয় "হাসি-ঠাট্টার বৃষ্টি, ট্রল।"

প্রাণের ডেইলি শপের "কাঁঠালের কোয়ার" মতো যদি সব খাবার, মাছ-মাংস-ফল একজনের মতো করে বিক্রি করা হতো তাহলেই বোধহয় সব গরীবে সব খাবার মন মতো খেতে পেত। কাঁঠালের দাম করেছি এ বছর, হয়তো দামে পছন্দ হয়নি, নয়তো সাইজে বড়। যা বেকার-ব‍্যাচেলরের পক্ষে কোনোদিক দিয়েই সুবিধের হয় না।

তবে একটা জিনিস ঠিকই বুঝেছি। আসলেই ____ "...তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শোনে না, তারা জন্তু-জানোয়ারের মত, বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারা একেবারে বে-খবর।" (সুরা আরফ; ১৭৯)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:২৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×