somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশে 'সন্ত্রাস' বিরোধী অভিযান ও চলমান 'ক্রসফায়ার' প্রসঙ্গ- (শেষ অংশ)

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংসদীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে তাদের মতামত

এবার আমরা অপরাপর আরো কয়েকটি প্রশ্নে এসব দলের মতামতের উপরে নজর বোলাবো। যার একটি হলো পার্লামেন্টারি রাজনীতি। অপরটি হলো দেশের সেনাবাহিনী, তাদের খতম লাইন ও সশস্ত্র যুদ্ধ সম্পর্কে অবস্থান। তবে এই আলোচনার শুরুতেই কিছু কথা বলে নেওয়া দরকার। ’৪৭ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরপর তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু মুসলিম লীগ সরকার জমিদারী প্রথা বহাল রাখা এবং ঔপনিবেশিক সম্পত্তি সম্পর্ক আইন-কানুনকে টিকিয়ে রাখার জোর চেষ্টা চালালে কমিউনিস্ট পার্টি সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেয়। তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম চলে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত। ওই সশস্ত্র সংগ্রামের ধাক্কায় মুসলিম লীগ সরকার অন্তত আইনগতভাবে হলেও জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের ঘোষণা দেয়। একই সময়ে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের পক্ষ থেকে চলমান সশস্ত্র সংগ্রাম সমালোচিত হলে তা পার্টির পক্ষ থেকে উইড্রো করা হয়। এবং কমিউনিস্টরা আইনি পার্টিতে পরিণত হন। তবে ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করলে তারা প্রথমে আওয়ামী লীগ ও পরে ভাসানি ন্যাপসহ নানান গণসংগঠনের মধ্যে কাজ করেছেন। অবশ্য তখনকার বাস্তবতায় তারা মনে করতেন শ্রমিক শ্রেণী শ্রেণীগতভাবে অবিকশিত থাকার কারণে শ্রেণী ভিত্তিক একটি স্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করা নীতিগতভাবে ঠিক হবে না। এবং মাও প্রদর্শীত কৃষি প্রধান দেশে কৃষক সমাজ যে বিপ্লবের প্রধান ভিত্তি, সেটাও অস্কীকার করা হয়। ’৬০-এর দশকে এসে চারুমজুমদারের নকশালবাড়িতে সংগঠিত কৃষকের সশস্ত্র অভ্যুত্থান এবং তার তত্ত্বায়ন গ্রহণ আলোচিত দলগুলোর কর্মপদ্ধতি সম্পূর্ণ বদলে দেয়। আমরা সেই আলাপচারিতা কয়েকটি পয়েন্টে বিভক্ত করে করতে পারি। যেমন :

ক) সশস্ত্র বল প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের তত্ত্ব। ১৯৫১ সালে রণনৈতিক লাইন হিসেবে পাকিস্তান আমলেই পরিত্যাগ করা হয়েছিল।

খ) শ্রেণী ভিত্তিক-স্বতন্ত্র ও স্বাধীন পার্টি গঠন। উপমহাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক-রাজনৈতিক ও মতাদর্শগতভাবে এই নীতিগত অবস্থানকে বরাবরই উপেক্ষা করে আসা হয়েছিল।

গ) ১৯৭০ সালের প্রেক্ষাপটে ও তৎকালীন পূর্ব বাংলার বাস্তবতায় চারুমজুমদার নির্দেশিত ‘কৃষি বিপ্লবের’ লাইনকে রণনৈতিক লাইন হিসেবে গ্রহণ করা ছিলো তাদের কাছে একটি মৌলিক পরিবর্তন। অর্থাৎ ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত রণনৈতিকভাবে বিপ্লবের স্তর জনগণতান্ত্রিকের কথা বলা হলেও সেটা বাস্তবায়নের পথ হিসেবে বুর্জোয়া সংবিধান ও পার্লামেন্টারি পদ্ধতিকে নীতিগত ভাবে আকড়ে ধরা হয়েছিল। বিপরীতে ১৯৭০ সালে ‘কৃষি বিপ্লবের’ তত্ত্বকে আকড়ে ধরে যে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের রণনীতির কথা তারা বলে সেটা তাদের দৃষ্টিতে মৌলিক অর্থে বুর্জোয়া শ্রেণী গণতন্ত্র এবং পার্লামেন্টারি প্রথাকে অতিক্রম করে মাও প্রবর্তিত গণকমিউন প্রতিষ্ঠার লড়াই। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসেবে বুর্জোয়া গণতন্ত্র এবং মাও প্রবর্তিত গণকমিউনের মধ্যে মৌলিকভাবে যে একটা পার্থক্য রয়েছে এটা ইতিহাসের কোনো ছাত্ররই অজানা বিষয় নয়। এবং একই সঙ্গে মাওয়ের গণকমিউন ছিলো মার্ক্সের যুগে প্যারি কমিউন ও লেনিনের যুগে সোভিয়েত ব্যবস্থার আরো বিকাশমান একটি রূপ। এভাবে ‘কৃষি বিপ্লবের’ তত্ত্বকে লাইন হিসেবে গ্রহণ করে ’৭০ পূর্ব রাজনীতি থেকে ’৭০ পরবর্তী রাজনীতির মধ্যে একটা মৌলিক ব্যবচ্ছেদ ঘটায় তারা। অবশ্য এই লাইন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দুইটি গুরত্বপূর্ণ প্রশ্ন কাজ করেছিল।

ক) প্রথম প্রশ্নটা ছিলো বুর্জোয়া শ্রেণী গণতন্ত্রের অন্যতম রক্ষাকবজ সংবিধান ও পার্লামেন্টারি প্রথা নিয়ে। এ প্রশ্নে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু প্রয়োজনীয় বার্তা তুলে ধরা যেতে পারে। যা আমাদের মত দেশের জন্য আজো বাস্তব।

আমরা মানবজাতির ইতিহাসে বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পূর্বে রাজতন্ত্র ও স্বৈরাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অনেক রকমফের দেখেছি। ইউরোপ রাজতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদের শৈশব ও কৈশোরে পুঁজির ব্যক্তিগত ভোগ-দখলের ও অবাধ প্রতিযোগিতাকে ন্যায্যতা দিতে গিয়ে মূলত সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের দাবিতে জনগণের প্রধানাংশ স্বোচ্ছার হয়ে ওঠে। তারই ফলশ্র“তিতে সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্ম। ব্যবস্থা হিসেবে সংসদীয় গণতন্ত্র মোটামুটিভাবে পাঁচটি স্তম্ভের উপরে দাঁড়িয়ে আছে।

ক. প্রশাসনিক বিভাগ খ. বিচার বিভাগ গ. আইন বিভাগ ঘ. পুলিশ বাহিনী ঙ. সামরিক বিভাগ।

ক. আমরা প্রশাসনিক বিভাগকে মূলত নির্বাহী বিভাগ বা আমলাতন্ত্র হিসেবে চিনি। বিচার বিভাগের অপর নাম সুপ্রিম কোর্ট, উচ্চ ও নিম্ন আদালত। যা আবার দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিভাগ হিসেবে পরিচিত। আইন বিভাগকে আমরা সংসদ হিসেবে জানি। পুলিশ বাহিনীকে আভ্যন্তরিণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী হিসেবে জানি। এবং সামরিক বাহিনীকে প্রতিরক্ষা বা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারি বাহিনী হিসেবে গণ্য করি।

উপরে উল্লেখিত এই পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে আইন সভার সদস্যরাই সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। যাদেরকে আমরা সংসদ সদস্য হিসেবে মান্য করি। অর্থাৎ শুধুমাত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার মত একটি ক্ষেত্রে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সংবিধান প্রণেতারা সাংবিধানিকভাবে দিয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে কোনো বহুপাক্ষিক, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা উত্থাপিত বিলে ভোট প্রদান করে বিলকে আইনে পরিণত করে। তার পর পরই তাদের দায়-দায়িত্বও সাংবিধানিকতা শেষ হয়ে যায়। ওই বিল বাস্তবায়নের কোনোরূপ অধিকার আর সংসদ সদস্যদের থাকে না। এমনকি কোন ধরনের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সমাজের সামাজিক শক্তি সমূহের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলশ্র“তিতে বিলটি উত্থাপন করা হয়েছিল। এবং বিলকে আইনে পরিণত করা হলো। এসব কোনো কিছুর ব্যাখ্যা করার অধিকার আর সাংসদের নেই। বিল আইনে রূপান্তরিত হওয়ার পরে উক্ত আইন ব্যাখ্যা করার অধিকার সাংবিধানিকভাবে আদালত বা বিচারকের। এবং আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের নির্বাহী বিভাগ ও পুলিশবাহিনীর বা আমলাতন্ত্রের। অথচ এরা কেউই জনগণের নির্বাচিত বা মনোনীত প্রতিনিধি নন। অর্থাৎ যে আমলাতন্ত্র আইনের ব্যাখ্যা করছে; আইন বাস্তবায়ন করছে; মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনাচারে, অফিস, আদালত ও থানায় যেসব কর্মকর্তার বা আমলাতন্ত্রের মুখোমুখি হচ্ছেন, তারা কেউই জনপ্রতিনিধি নন। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি নন। তাদেরকে নির্বাচিত করার কোনো অধিকার সাংবিধানিকভাবে জনগণের নেই। সাংবিধানিকভাবে আমলাতন্ত্রকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র আমলাতন্ত্রের হাতেই। এবং আধুনিক সব ধরনের গণতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত রয়েছে এই আমলাতন্ত্রের হাতে। এই অন্যতম কারণে সংসদীয় গণতন্ত্রে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জনগণের জীবন্ত ও দৈনন্দিন যোগাযোগের মাঝখানে আমলাতন্ত্র একটা অপ্রতিরোধ্য দেওয়াল তৈরি করে রেখেছে। ফলে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের বহু জনহিতকর আইন প্রায়োগীকভাবেই আমলাতন্ত্র অকেজো করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে।

খ. জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হওয়ার পর পর তাদের কার্যকলাপের জন্য সাংবিধানিকভাবেই আর জনগণের কাছে কৈফিয়ৎ দিতে বাধ্য নন। নির্বাচিত সাংসদরা তাদের কার্যকলাপের জন্য তখন দায়ী সংসদের কাছে। অর্থাৎ বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মূল আধার ব্যক্তি সার্বভৌমত্বের বিপরীতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সার্বভৌম সংসদের তত্ত্বকে। ফলে নির্বাচিত সাংসদরা যদি কালোবাজারি, অসৎ ব্যবসায়ী, নারী পাচারকারী, বিদেশী কর্পোরেট হাউজ বা জনস্বার্থে বিরোধী কোনো সংস্থার কাছে পাঁচ বছরের জন্য ব্যক্তিগত অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের পূর্বে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী হিসেবে জনগণ ওই সাংসদ সদস্যের কাছে কোনো ধরনের কৈফিয়ৎ তলব করার ক্ষমতা আর রাখে না। অর্থাৎ সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যদি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে জনস্বার্থ বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী, দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী কোনো ধরনের বহুপাক্ষিক, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে বা কোনো বিশেষ সংস্থাকে বিশেষ সুযোগ দেয়, তাহলে, জনগণের দিক থেকে ওই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে অনাস্থা জ্ঞাপন করাসহ নির্বাচিত সাংসদকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কোনো অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নয়। যাকে রাইট টু রিকল বলা হয়।

গ. সংবিধানে যতই মানবাধিকারের ঘোষণা থাকুক না কেন। অথবা ব্যক্তি অধিকার সংরক্ষণের কথা লিপিবদ্ধ থাকুক না কেন। নির্বাচিত সাংসদরা দুই -তৃতীয়াংশ সমর্থনের ভিত্তিতে জনগণের সমস্ত অধিকার নাকচ করে দিতে পারে। কারণ সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষমতা তাদের হাতেই রেখেছে তারা। অর্থাৎ এই অধিকার সাংবিধানিকভাবেই সাংসদদের হাতে। জনগণের দিক থেকে তা প্রতিহত করার কোনো অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নয়।

ঘ. গোটা সংসদীয় ব্যবস্থা আবার মন্ত্রী পরিষদের অধীন। একইভাবে সংসদীয় ধারার রাজনীতিতে জীবন্ত স্বত্তা হিসেবে ফ্লোর ক্রসিংও বেআইনি। ফলে এলাকার উন্নয়নে তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সংসদ সদস্যদেরকে মন্ত্রীদের জুতার শুকতলা চেটেচুটে পরিষ্কার করার প্রতিযোগিতায় নামতে হয়।

অন্যদিকে মন্ত্রীবর্গ আমলাতন্ত্রের সহযোগিতায় যেসব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। সংসদে তার উপরে বিস্তারিত আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো সংসদ সদস্য দলীয় মন্ত্রীর উত্থাপিত বিলের ক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণ করে। বিলের স্বপক্ষে ভোট প্রদান না করে, তাহলে তার সংসদীয় সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। তার আসন শূন্য হয়ে যাবে। ফলে সংসদ সদস্যদের অন্যতম দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় মন্ত্রী পরিষদের উত্থাপিত বিলকে অনুমোদন দেওয়া। এবং সে বিল যতই রাষ্ট্র বিরোধী ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী হোক না কেন। এই ব্যবস্থাটা শক্তিশালী বা পাকাপোক্ত করতেই ফ্লোর ক্রসিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই অন্যতম কারণে আমাদের মত দেশগুলোতে যেমন সংসদীয় ব্যবস্থা মারফৎ হরেক পদের রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তিগুলো হয়ে থাকে, তেমনি সংসদে উক্ত চুক্তির উপর আলোচনা ও ফ্লোর ক্রসিং নিষিদ্ধ থাকায় বিষয়গুলো বরাবরই আমাদের অগোচরে থেকে যায়।

ঙ. বুর্জোয়া সংবিধানে যে সব মানবাধিকারের ঘোষণা দেওয়া হয়ে থাকে, সেটাও সম্পূর্ণতই স্ববিরোধী। যেমন সংবিধানে সম্পত্তিবান ও সম্পত্তিহীনদের সমানাধীকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া। অর্থাৎ দাস ও প্রভুর সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে এই ব্যবস্থায়। যা বাস্তবে কোনো অর্থেই কার্যকর নয়। একইভাবে শোষণের বিরুদ্ধে লড়ার অধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। অন্যদিকে মালিকের ব্যক্তি সম্পত্তি বা শোষণ, যা মুনাফা অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার সেটাও রক্ষা করা সংবিধানের দায়িত্ব। একইভাবে কাজ পাবার অধিকার যেমন প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার বলে স্বীকৃত, তেমনি ক্রমবর্ধমানহারে দেশে রুগ্ন শিল্প বাড়িয়ে চলা; লাভজনক শিল্পকে মৃতশিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়ে লুটেরাদের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের আছে।

চ. আমাদের দেশের সংবিধানে নারী-পুরুষ-ধর্ম-বর্ণ ভেদ এর বিপরীতে সবার সমানাধিকারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ সাংবিধানিকভাবে বিয়ে ও সম্পত্তি বন্টনের নীতির ক্ষেত্রে পারিবারিক আইনকে কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ নারীকে সম্পত্তিহীন করা এবং রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা পারিবারিক আইনের স্বীকৃতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সম্পত্তি সম্পর্ক আইনের ক্ষেত্রে অন্য ধর্মের অনুসারিদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, আইনগতভাবে কেড়ে নেওয়ার অধিকার রাষ্ট্রের আছে। যেমন শত্রু সম্পত্তি আইন বা ভেস্টট প্রোপার্টি আইন তৈরি ও প্রয়োগ করে হিন্দু ও বিহারীদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। পাশাপাশি সাংবিধানিকভাবে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে স্বীকৃতি দেওয়াই নৃতাত্ত্বিকভাবে অসংখ্য জনগোষ্ঠীর সমষ্টিগত সম্পত্তির অধিকার ভোগকে বাতিল করা হয়েছে। কমিউনিটি প্রোপাটি হিসেবে হাওড়, বাওড়, খাল, নদী-সমুদ্র-বনভূমি থেকে জনগণের কর্তাস্বত্ব বিলোপ করে লুটেরা পুঁজির মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এবং সেটা সাংবিধানিকভাবে।

ছ. পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে নির্বাচিত সরকারের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থনকে গণতন্ত্রের সমার্থক ধরে প্রচার চালান হয়। অথচ মর্মগতভাবেই পার্লামেন্ট ও গণতন্ত্র দুটো পৃথক বিষয়। তাকে সমার্থক ধরে প্রচার চালানোটাই হলো হলো বুর্জোয়া রাজনীতির ধাপ্পাবাজী। যেমন জর্জ বুশের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ ওই দেশের ৮০ শতাংশ জনগণ সমর্থন জানিয়েছিল। একইভাবে অ্যারিয়েল শ্যারন প্যালেস্টাইনে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও দখলদারী অভিযানের সমর্থনে ৮৫ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিল। ফলে প্রশ্ন দাঁড়ায় পার্লামেন্টারি প্রথায় নির্বাচিত সরকার ও তার কর্মকাণ্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পেলেই কী ওই সরকার পরিচালিত ভয়ঙ্কর পাশবিকতা ও গণহত্যার মত অপরাধগুলো বৈধতা পেয়ে যায়? সেটা কি গণতন্ত্রের সমার্থক বিষয়ে পরিণত হয়? অথচ পার্লামেন্টারি রাজনীতি তাকেই গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখে। তার স্বপক্ষে বিল অনুমোদন করে। গণহত্যা চালাবার জন্য জনগণের উপরে আরো অধিক হারে কর আরোপ করে। এটা আমেরিকা ও ইসরাইলের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, বাংলাদেশের জন্য বাস্তব। যা আমরা রক্ষিবাহিনীর আমল এবং জোট সরকারের আমলেও ঘটতে দেখছি।

জ. সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে দলীয় রাজনীতি। দলের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য লড়াই চলে। ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত হয়। অন্যদিকে আমাদের দেশে আজ এমন একটা সংসদীয় ধারার বুর্জোয় রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে, যার নেতা বা নেতৃবৃন্দের প্রতি সেই দলের প্রতিটি সদস্যের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। একইভাবে এসব দলের আজ এমন একজন নেতা-নেত্রীকে পাওয়া মুশকিলের বিষয়, যার নিজের প্রতি নিজের অন্তত এতটুকু আস্থা রয়েছে, তিনি যদি নির্বাচিত হন তাহলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি-লুট ও দুর্নীতি করবেন না বলে দাবি করতে পারেন। আর এটাই যদি প্রকৃত বাস্তবতা হয়ে থাকে তাহলে এসব দলের আদতেই কি কোনো জীবন দর্শন, দায়বদ্ধতা, কোনো মহৎ লক্ষ্য এবং পথ চলবার সুনির্দিষ্ট ঠিকানা আছে? স্বার্থপরতা, ক্ষমতার লোভ এবং সুবিধাবাদিতার পায়ে নির্লজ আত্মসমর্পণের পথে এবং সংসদীয় ব্যবস্থা মারফৎ তার নায্যতা দিয়ে কি গণতন্ত্র অর্জিত হয়? এসব কারণে আমাদের দেশে সংসদীয় ধারার লুম্পেন বুর্জোয়া দলগুলো তাদের ঘোষিত দলীয় কর্মসূচির ভিত্তি দল ও রাষ্ট্র পরিচালনা করার বিপরীতে একদল তাবেদার দিয়ে দল ও সরকার পরিচালনা করে থাকে। তারা তাদের শ্রেণী স্বার্থেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহকে ধ্বংস করে দেয়। দলের অভ্যন্তরে নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। আমলাতন্ত্রকে জনগণের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। জনগণের ন্যূনতম দাবি দাওয়ার আন্দোলনকে দমন ও উৎখাত করতে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে ধ্বংস করে দেয়। এটা হলো সংসদীয় ধারার দলবাজির অবস্থা।

ঝ. সংসদীয় রাজনীতিতে আজ যারাই ক্ষমতাসীন হতে চান, তারা সবাই নির্বাচনের পূর্বে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় প্রতিশ্র“তি দেন। কিন্তু ওয়াদা রক্ষা করেন কদাচিৎ। প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর ফলাফল হিসেবে জনগণ একদিকে যেমন তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন, তেমনি আস্থাও হারান নিজেদের প্রতি। এতে করে সমাজের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতা, মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদি গুণাবলি সমাজের অধিকাংশ মানুষ হারিয়ে ফেলেন। জনগণ নিজেও যে পরিস্থিতির বদল ঘটাতে সক্ষম সেই আস্থা তারা হারিয়ে ফেলেন। তাদের কাছে রাজনীতি ও গণতন্ত্র আর কোনো কাজের ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য হয় না। এবং সংসদীয় ব্যবস্থা একদল স্মাগলার, লুটেরা ধনী, লুটেরা আমলা, নারী-শিশু পাচারকারী, ধর্ষক, লুটেরা ব্যাংকার, জোতদার-ভূস্বামী ও সাম্রাজ্যবাদের এজেন্টদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। এবং এসব লুটেরাদের একনায়কত্বই রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব নানাবিধ কারণে পৃথিবীর অনেক দেশেই আজ এক একটা সংসদ নির্বাচনের পর, পরবর্তী নির্বাচন এলে সরকার পরিবর্তনের খেলায় ভোটারদের ভোট প্রদানের হার ক্রমশই কমে যাচ্ছে। সংসদীয় রাজনীতি এবং ওই ধারার রাজনৈতিক নেতৃত্বদের প্রতি সাধারণ মানুষের সম্মানবোধ ও সহমর্মিতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ব্যবস্থাটির সঙ্গে ব্যাপক গণমানুষের ব্যবচ্ছেদ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এতে করে অনেক দেশেই সংসদীয় ব্যবস্থা জাদুঘরের বস্তুতে পরিণত হতে চলেছে। কোথাও বা সেটা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আবার অনেক দেশে তার অন্তীম সময় উপস্থিত। যেমন আমাদের দেশেই ৯০ সালের পর থেকে যে কয়টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে একটি দল সরকার গঠন করলে, বিরোধী দল আর সংসদে উপস্থিত হন না। সময় উত্তীর্ণ হওয়ার বহুপূর্বেই সংসদীয় ধারার রাজনৈতিকরাই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করে। কোনো বিশেষ কারণ বা পরিস্থিতিতে যদি উভয় দল সংসদে উপস্থিত হয়ও তাহলে পরস্পর পরস্পরকে ন্যাক্কারজনকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে থাকে। খিস্তি খেউড় হয়ে ওঠে রাজনীতির ভাষা। যা সংসদীয় রাজনীতিরই আজ স্থায়ী সংস্কৃতি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ সংসদ অধিবেশন চলাকালে প্রতিমিনিটে কয়েক লাখ টাকা খরচের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় নেতারা তাদের খিস্তি খেউড় শুনতে দেশবাসীকে বাধ্য করে। একই সঙ্গে কোনো দল ক্ষমতায় গেলে তারা আর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। অথবা কোনো দলকে জনগণ একবার নির্বাচিত করলে দ্বিতীয়বার তাদের আর নির্বাচিত করতে চায় না। যেহেতু সাংবিধানিকভাবে আমাদের দেশে সরকার বদলের পন্থা হিসেবে বা আইনগত পথ হিসেবে সংসদীয় রাজনীতিটায় স্বীকৃত। তার বাইরে অপর যে কোনো ধারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এবং জনগণের দিক থেকে পরিস্থিতিটা মেনে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে গোটা বিষয় এবং দুই দলীয় শাসন ব্যবস্থা জনগণের ঘাড়ের উপরে সিন্দাবাদের ভুতের মত চেপে বসেছে। এটাই হলো সংসদীয় রাজনীতির পরিণতি। আমরা উপরে বর্ণীত পরিস্থিতিকে আবার ভিন্ন ভাষায় পাঠ করতে পারি। সেটা হলো এমন, যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা শোষণ ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে সংসদীয় রাজনীতি, যা আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা বা বুর্জোয়া ব্যবস্থার পক্ষে মতাদর্শ নির্মাণ, সম্মত্তি আদায় ও শ্রেণী শাসনকে স্থায়ীত্ব দিতে যেভাবে হাতিয়ার হিসেবে ক্রিয়া করত তার সীমাবদ্ধতার কারণে শেষ নাগাৎ সেটা জীর্ন হয়ে পড়েছে।

পাশাপাশি পৃথিবীর অনেক দেশেই আজ সংসদীয় রাজনীতি এবং তার অনুসঙ্গ হিসেবে দুই দলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটতে চলছে, জনগণকে আর প্রচলিত কায়দায় শ্রেণী শাসন মানানো যাচ্ছে না। শাসক শ্রেণী তাদের পুরনো পার্টি দিয়ে আর তাদের শ্রেণী শাসন চালাতে পারছে না। স্থায়ী সরকারের ধারণা এবং তার ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। অস্থিতিশীলতায় এক একটা দেশের প্রধান রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য এবং একমাত্র লক্ষণ হয়ে উঠছে। লুম্পেন বুর্জোয়াদের রাজনৈতিক দল এবং তাদের ‘মহান সংসদ’ ‘মহান সংসদীয় গণতন্ত্র’ এর সব কিছুই আজ শেষ পরিণতি হিসেবে দল ভাঙাভাঙির ন্যাক্কারজনক খেলায় পরিণত হয়েছে। কোনো দেশে পরিস্থিতি সামাল দিতে খোদ জাতিসংঘকে তার বাহিনী নামাতে হচ্ছে। কোনো দেশে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা হাতে নিতে হচ্ছে। আবার কোনো কোনো দেশে শাসকরা জোটের রাজনীতি, সংস্কারের রাজনীতি চালু করে পরিস্থিতি সামাল দিতে মরিয়া হয়ে উঠছে। আমাদের দেশও এই পরিস্থিতির বাইরে নয়। দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ, সুশিল সমাজ ও নীতি নির্ধারকদের বয়ানে আবার এটাই হলো মূল ধারার রাজনীতি। ফলে সরকার বদলের বা ব্যবস্থা বদলের অন্যকোনো ধারা বিকশিত হতে দেখলেই তারা সংকিত হয়ে ওঠে। এবং মূল ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসতে ওয়াজ নসিহত করেন। অতি সংক্ষেপে বর্ণীত বিষয়বস্তুই হলো আলোচিত কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর সমালোচনা। ১৯৬৭ সাল থেকে উপমহাদেশ জুড়ে চিহ্নিত নকশাল ধারার রাজনীতির ধারকবাহকরা ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রচার পত্রে এসব সীমাবদ্ধতা ও সমালোচনা করে আসছেন।

মূলত ব্রিটিশ শাসিত ঔপনিবেশিক আমল থেকে ভারত উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ক্ষেত্রে দুটো ধারা দীর্ঘ সময় ধরে আধিপত্য আকারে বজায় ছিলো। প্রথমত এর মধ্যে একটি মতামত হলো, যতদিন দেশে সংসদীয় নির্বাচনের অবাধ সুযোগ রয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্রের অস্তিত্ব রয়েছে, ততদিন পার্টি বিপ্লবী বল প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথে যাবে না। ফলে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে ধারাবাহিকভাবে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, পৌর নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন, ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচন ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করে আসছিল। সেটাই ছিলো পার্টি কাজের প্রধান ধারা। আর প্রচলিত রাষ্ট্র, তারা আইন, সংবিধান, মতাদর্শ ও সংস্কৃতিতে তাদের রাজনীতি যতটা অনুমোদন করে, তাকেই ভিত্তি করে প্রচলিত ব্যবস্থার রক্ষাকর্তা হিসেবে শাসক দলের প্রতিনিধি ওই লুটেরা ইন্টেন্ডার, ব্যবসায়ী, ডাকাত, লুটেরা ব্যাংকার, জমিদার-ভূস্বামী-জোতদার ও চোরাকারবারীদের কাছে দাবি ভিত্তিক নিবেদনের মধ্যেই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটেছে। তরাইয়ের কৃষি বিপ্লবের পথ প্রথম এই দৃষ্টিভঙ্গি চ্যালেঞ্জ করে ঘুরে দাঁড়ায়।

দ্বিতীয়ত, ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে চীনের স্বাধীনতা অর্জন ও উত্তর কোরিয়ার স্বাধীনতা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে বিপদগ্রস্ত করে তোলে। পাশাপাশি চীনের পথ ধরে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ভিয়েতনামে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কৃষি বিপ্লবের লাইনের প্রতি সাধারণ মানুষ আগ্রহী হয়ে ওঠে। ওই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার কমিউনিজম বিরোধী প্রকল্প মার্শাল প্লানের অধীনে লাল বিপ্লবের বিপরীতে সবুজ বিপ্লবের এক তরিকা হাজির করে। ভারত সরকার পি এল ৪৮০ অধীনে খাদ্য চুক্তি করার পরপর, ওই চুক্তির শর্ত মোতাবেক সবুজ বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণে বাধ্য ছিলো। কিন্তু কংগ্রেসীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে কিছুটা গড়িমসি করলে আমেরিকা খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ আরো অনেক প্রদেশে তীব্র খাদ্য সংকটের মুখে পড়ে। এবং ওই সংকটে ভিত্তি করে রাজনৈতিক প্রশ্ন হিসেবে ভূমি সংস্কারের প্রশ্নটি আবারো সামনে চলে আসে। ১৯৬৬ সালে সিপিআই (এম)- এর খাদ্য ও জমি দখলের আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। ভারত সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯৬৭ সালে চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করে বসে। দল হিসেবে সিপিআই (এম) ওই নির্বাচনে অংশ নেয়।

নির্বাচনে কংগ্রেসের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে অপরাপর শাসক পার্টিগুলো অকংগ্রেসীয় সরকার নামে একটা জোটের রাজনীতি সামনে আনে। আর সিপিআই (এম) নির্বাচনকে গ্রহণ করে কৌশল হিসেবে। চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল হিসেবে কংগ্রেসের পতন ঘটে। এবং কংগ্রেস জোটের ভিত্তিতে সরকার গঠনে অসম্মত হয়। এই প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গের অপরাপর শাসক দল, ধনিক শ্রেণী এবং তাদের সমর্থিত বুদ্ধিজীবী মহল রাজ্যের সরকার গঠনের প্রশ্নে ওই অকংগ্রেসীয় মতবাদের জোর প্রচারণা চালায়। সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরোর কয়েকজন নেতার সিদ্ধান্তে সরকারে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এবং গোটা পার্টিকে ঐক্যবদ্ধভাবে টেনে আনার চেষ্টা করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নটি কৌশল হিসেবে আর থাকে না। মন্ত্রিত্ব রদবদলের রাজনীতিটা তাদের কাছে নীতিগত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে পার্টির নিচের স্তরের কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এবং গোটা পার্টিতে বিষয়টি ঘিরে আন্তপার্টি সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে।

আন্তপার্টি সংগ্রামের ক্ষেত্রে সিপিআই (এম) ধারাতে থেকে যাওয়া অংশ সরকারের অংশীদারিত্বের প্রশ্নে যে সব যুক্তি তুলে ধরেছিলেন সেদিন তার মধ্যে মূল কথাগুলো হলো এই, পশ্চিমবঙ্গের সাংবিধানিক সংকটের এই দুর্যোগপূর্ণ মুহুূর্তে আমরা যদি সরকার গঠনে এগিয়ে না আসি, যদি মন্ত্রিত্ব গ্রহণ না করি, তাহলে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। ব্যাপক গনমানুষ থেকে পার্টি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বরং কমিউনিস্ট পার্টি, সোসালিস্ট পার্টি ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো একজোট হয়ে অকংগ্রেসীয় সরকার গঠন করে, মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করে, তাহলে দেশের শাসন ক্ষমতা হাতে পাওয়া যাবে। এভাবে রাজ্যে রাজ্যে ভোটে জিতে একসময় দিল্লির মসনদ দখল করে নিতে হবে। তারপর নতুন সংবিধান রচনা করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এটাই ভারতের বিশেষ পরিস্থিতি। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কমিউনিস্টদেরও সরকার গঠনে অংশ নেওয়া দরকার। তা না হলে প্রতিক্রিয়াশীলরা ক্ষমতায় চলে আসবে। রাষ্ট্রকে আরো প্রতিক্রিয়াশীল করে তুলবে। দেশের শাসন ব্যবস্থা, তার সংবিধান আরো প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে জনগণের ঘাড়ে চাপাবে। তাছাড়া, প্রচলিত রাষ্ট্রের মধ্যেই গণতান্ত্রিক অধিকার সমূহকে শাসক শ্রেণীর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। ওই গণতান্ত্রিক আইন বাঁচলে দেশে বাঁচবে। আর দেশ বাঁচলে বাঁচবে জনগণ। সংসদীয় গণতন্ত্র হলো জনগণের অগ্রগতি ও কল্যাণের স্বাক্ষর। ফলে সংসদকে আরো অর্থবহ করার দায়-দায়িত্ব কমিউনিস্টদেরই নিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়িত্বশীল বিরোধীতা করতে হবে। তাছাড়া তাদের দিক থেকে আরো যুক্তি ছিলো লেনিন কি নির্বাচনে অংশ নেননি? মূলত এগুলোই ছিলো সিপিআই(এম) -এর নির্বাচন পন্থী অংশদের মতামত।

বিপরীতে সিপিআই (এম)-এর যে অংশটি নকশাল নামে পরিচিতি পায় তারা নীতিগতভাবে সংসদীয় ধারার গণতন্ত্রকে বিরোধীতা করে। তবে তাদের সম্পর্কে কথা বলতে গেলে প্রথমেই চারু মজুমদারের নামটি স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে। আমার জানা মতে উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ক্ষেত্রে চারু মজুমদারই প্রথম নেতৃত্ব যিনি নেহেরু-ইন্দিরা অথবা কংগ্রেস, অকংগ্রেসীয় রাজনীতির বিপরীতে শ্রেণীগতভাবে শাসক শ্রেণীকে চিহ্নিত করার উপরে গুরুত্বারোপ করেন। একইভাবে কেন্দ্র-রাজ্যের দ্বন্দ্বের রাজনীতির বিপরীতে সকল জাতির আত্মনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠার উপরে গুরুত্বারোপ করেন। সরকারের দায়িত্বশীল বিরোধীতা এবং সংসদ সর্বস্ব রাজনীতির বিপরীতে বল প্রয়োগে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল এবং সমাজের উৎপাদন সম্পর্ক বা সম্পত্তি সম্পর্কের বৈপ্লবিক রূপান্তরের উপরে গুরুত্বারোপ করেন। জমি বন্টন বা জমি দখলের আন্দোলনকে অর্থনীতিবাদী ও সংস্কারবাদী কাজের ধারা হিসেবে চিহ্নিত করে কৃষি বিপ্লবকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের অক্ষশক্তি রূপে আঁকড়ে ধরার উপরে গুরুত্বারোপ করেন। মূলত তরাই- এর কৃষক আন্দোলন বা নকশালবাড়ির অন্যতম তাত্ত্বিক রূপকার ছিলেন তিনি। একটা কৃষি প্রধান দেশে কৃষি বিপ্লবই যে গণতান্ত্রিক বিপ্লব, কৃষকরা যে বিপ্লবের প্রধানশক্তি মাওয়ের এই নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের তত্ত্বকে তিনি আন্তরিকভাবেই ভারতের উপযোগী করে প্রয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। যাই হোক আমরা আবার পূর্বের আলোচনায় ফিরে যেতে পারি। অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে ভারতের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে সিপিআই (এম)- এর অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীতে সরকার গঠনের প্রশ্ন ধরে ওই পার্টির মধ্যে যে আন্তসংগ্রাম শুরু হয়েছিল। তার মধ্যে জোতি বসুদের যুক্তিতর্ক আমরা দেখেছি। এবার আমরা নকশালপন্থীদের যুক্তি-তর্কের উপরে নজর বোলাবো কেন তারা সংসদীয় রাজনীতিকে গণতন্ত্রের সমার্থক হিসেবে গণ্য করে না উপরে উল্লিখিত তথ্যগুলোর সঙ্গে পরবর্তী অংশটুকু পাঠ করাও জরুরি।

সেদিন তাদের দিক থেকে বলা হয়েছিল, শ্রেণী শাসনের পক্ষে মতাদর্শ নির্মাণ, সম্মতি আদায় ও শ্রেণী শাসন চাপিয়ে দেওয়ার যে সংসদীয় ব্যবস্থা, ওই ব্যবস্থার ‘পবিত্র সংসদ’, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং আমলাতন্ত্র নির্ভর রাষ্ট্রযন্ত্র যখন ফুটো বেলুনের মত চুপসে যাচ্ছে। জনগণ নিজ থেকে যখন ওইসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি মোহগ্রস্ততা কাটিয়ে তুলছে। ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা বহির্ভূত লুটেরা শাসক এবং তাদের রাজনৈতিক দল যখন আর কোনোভাবেই প্রচলিত শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো টিকিয়ে রাখতে পারছে না, প্রচলিত ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য যুক্তি তর্ক দাঁড় করাতে পারছে না, তখন ওই ব্যবস্থা রক্ষা করা, মেরামত করা ও তার স্বপক্ষে যুক্তি দাঁড় করানোর দায়ভার কি কমিউনিস্ট পার্টির? তাছাড়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের হামলা যখন আরো নগ্নভাবে প্রকাশ হচ্ছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ ও অধিনস্ততা যখন আরো নগ্নভাবে বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে, গোটা বিশ্বব্যাপী জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলনও আরো তীব্র হয়ে উঠছে, প্রতিরোধের কবলে পড়ে সাম্রজ্যবাদের নাবিশ্বাস যখন আরো বাড়ছে, সেই যুগে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রকৃত অর্থে কতটা অর্থবহ? ঘুরে ফিরে জনগণের ঘাড়ের উপরে সংসদীয় রাজনীতির জোয়ালটাকে জুড়ে দেওয়া কেন?

একইসঙ্গে শাসক শ্রেণী যখন গভীর সংকটে পড়েছে, রাজনৈতিক সংকটে যখন তারা তলিয়ে যাচ্ছে, রাষ্ট্র যখন মূমূর্ষু অবস্থায়, ওই রাষ্ট্রের শোষণ নিপীড়ন যখন জনগণে উপর পাহাড় পরিমাণে দূর্গতি চাপিয়ে দিচ্ছে, ইতিহাসের রায়ে যখন এধরনের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাচ্ছে, যা অনিবার্য ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন অকংগ্রেসীয় যুক্ত ফন্ট্রের সরকার ও তার হবু মন্ত্রীরা ঠিক কোন লক্ষ্য থেকে প্রচলিত ব্যবস্থাকে রক্ষার দায়ভার নিজেদের কাঁধে নিচ্ছে? এটা কি পুরাতন ব্যবস্থাকেই নতুন মোড়কে পুরে তাকে আরো সুস্থিতি দেওয়া নয়? এটা কি জনগণের উপরে শ্রেণী শোষণকে আরো দীর্ঘস্থায়ী করার প্রক্রিয়া নয়? শ্রেণী দ্বন্দ্বকে অপ্রধান করে, সাম্রাজ্যবাদী যুগে, সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে নিপীড়িতের দ্বন্দ্বকে অপ্রধান করে, কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব, কংগ্রেস-অকংগ্রেসের দ্বন্দ্বকে প্রধান করাই বা কেন? এটা কি লগ্নীপুঁজির শোষণ, সামরিক ও আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণকে আড়াল করা নয়, রাষ্ট্র যদি শ্রেণী শোষণের হাতিয়ার হয়ে থাকে, তাহলে ওই রাষ্ট্রের রূপান্তর না ঘটিয়ে প্রচলিত রাষ্ট্রের মন্ত্রী হয়ে কমিউনিস্ট পার্টি হিসেবে কাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাওয়া হচ্ছে? প্রচলিত শোষণ ব্যবস্থা ও সম্পত্তি সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রেখে ওই রাষ্ট্রের মন্ত্রী হলেই কি রাষ্ট্র শ্রমজীবী জনগণের হাতিয়ার বনে যাবে? ঐতিহাসিকভাবেই যে ব্যবস্থার পতন ঘটতে চলেছে তাকে রক্ষা করাই কি কমিউনিস্টদের প্রধান কাজ? হ্যাঁ লেনিনও নির্বাচন করেছেন। লেনিনের কাছে ডুমা তো ছিলো সহায়ক কাজ। কিসের সহায়ক কাজ সেটা? আর নির্বাচন করা এবং সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর একটা নয়া উপনিবেশিক সম্প্রসারণবাদী রাষ্ট্রের মন্ত্রী হওয়া কি একই বিষয়? কবে কোথায় মার্ক্স-এঙ্গেলস ও লেনিন সেটা বলেছেন? তাছাড়া, একটি স্বাধীন দেশের সংসদীয় ব্যবস্থা ও একটি নয়া উপনিবেশিক দেশের সংসদীয় ব্যবস্থা কি সমার্থক বিষয়? মূলত এগুলো হলো সেদিনের আন্তপার্টি সংগ্রামের ক্ষে
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×