somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধুমপান বজর্নের উপায়

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এরপূর্বে (গত ১৮/১২/২০০৮ ইং তারিখে) আমরা ধুমপানের মারাত্মক ক্ষতিগুলো জেনেছি। এতকিছু জেনে ও বুঝেও কি বিবেক এরূপ সর্বনাশা কাজে সায় দিতে পারে? না, তা কখনই পারে না। আমাদের বিবেকে নিশ্চয় এখনও এতটা মরিচা পড়েনি। এই বিষের দংশন থেকে ও এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমরা কি নিজেকে, পরিবার- পরিজনকে ও আশেপাশের সবাইকে মুক্তি দিতে পারিনা? অবশ্যই পারি। এর জন্য শুধু প্রয়োজন জাগ্রত বিবেকে জোরাল শপথ নেয়া ও তামাক ছুঁড়ে ফেলা। অন্তত ভবিষ্যৎ বংশধরদের কথা ভেবে আর 'একটি টানও নয়'। পুরনো যে কোন অভ্যাস ছাড়তে হলে কিছু না কিছু কষ্ট করতেই হয়। ধুমপান ছাড়ার এই কষ্টের মাত্রা যেহেতু এর ক্ষতির মাত্রা অপেক্ষা অতি অল্প, তাই এ কষ্ট স্বীকার করা কোন ব্যপারই নয়।

আমরা মোটামুটি সবাই জানি যে, নেশা যত পুরনো ও বেশী হয় তা ছাড়তে হলে সে বিষয়ে তত বেশী মনোযোগী হতে হয় ও কিছুটা শ্রম দিতে হয়। যে কোন নেশা ছাড়ার পর থেকে কি কি অসুবিধা হতে পারে সেগুলো জানা থাকলে তার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া সহজ হয়। ধুমপানও যেহেতু একটি নেশা, তাই এ নেশা ছাড়তে হলে আমাদেরকে কিছু পদক্ষেপ নিতেই হবে।

ধুমপান ছাড়া কি খুবই কঠিন কাজ? না, মোটেই না। সর্বনাশা ধুমপানের কবল থেকে মুক্তি পেতে হলে কিছু বিষয় জেনে রাখা ভাল। ধুমপান ছাড়লে কি কি উপসর্গ হতে পারে তা জানা থাকলে মনকে সেভাবে প্রস্তুত রাখা যায়। ফলে আস্তে আস্তে সব নিজের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। তাই আসুন প্রথমে এ উপসর্গগুলো জেনে নেই-

• কাশি : ধুমপান ছেড়ে দেয়ার পর প্রথম অবস্থায় ঘন ঘন কাশি হতে পারে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই। বুঝতে হবে ফুসফুস অনেক দিনের জমে থাকা শ্লেষ্মা বের করে দিতে চাইছে। প্রয়োজন বোধ করলে মাঝে মাঝে বিশেষ করে প্রতিদিন সকালে কিছু শ্লেষ্মা আস্তে আস্তে কেশে বের করে ফেলুন। এতে আরাম বোধ করবেন।

• মাথা-ব্যথা : মাঝে মাঝে অল্প মাথা-ব্যথা বা মাথা ঝিম ঝিম ভাব হতে পারে। মাথা-ব্যথা উপশম না হয়ে ক্রমাগত বাড়তে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

• ক্লান্তিভাব : প্রয়োজন বোধে ঘুমানোর সময়টা এক থেকে দেড় ঘন্টা বাড়িয়ে দিন। দিনে পর্যাপ্ত ব্যায়াম করুন। এতে ঘুম ভাল হবে ও ক্লান্তিভাব অনেকটা কেটে যাবে।

• মনোযোগের অভাব : পরিমিত ও সময়মত আহার, ব্যয়াম ও বিশ্রাম করুন। আস্তে আস্তে এ উপসর্গটি দূর হয়ে যাবে।

• স্নায়বিক দুর্বলতা : প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এতে শরীরে জমে থাকা নিকোটিন বেরিয়ে যাবে। ক্যাফেইন অর্থাৎ চা ও কফি পানের মাত্রাও কমিয়ে ফেলুন। ধীরে ধীরে ্লায়ুকোষগুলো নিকোটিনের প্রভাব থেকে মুক্ত হবে। ফলে সন্ত্রস্তভাব কেটে গিয়ে সতেজভাব ফিরে আসবে।

• গলায় ব্যথা বা জ্বলাভাব : সরবত, ফলের রস ও অন্যান্য তরল খাবার খেলে ভাল লাগবে। হালকা গরম পানি দিয়ে গরগরা করতে পারেন।

• কোষ্ঠ-কাঠিন্য : প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার. সবজি ও তাজা ফল সংযুক্ত করুন। ইষপ্‌গুলের ভুষি খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং সেইসাথে ব্যায়াম করুন।

• নিদ্রাহীনতা : ভাল ঘুমের জন্য ভাল উপায় হল অল্পতে অহেতুক দুশ্চিন্তা না করা, মনকে সদা প্রফুল্ল রাখা ও নিয়মিত শরীর-চর্চা ও খেলাধুলা করা। দু-এক দিন ঘুম না হলে সামান্য কিছু অস্বস্তিভাব হতে পারে। এ নিয়ে বেশী চিন্তা করবেন না। এমনও অনেক মানুষ আছে, ঘুম কেন হচ্ছে না? এ ভাবনাটাই তাদের ঘুম না হওয়ার বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে মন-মরা ভাব ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। প্রতিদিন মনের মত ভাল বই পড়ুন, মন খুলে কথা বলুন ও প্রাণ খুলে হাসুন। এতে অনেক ভাল বোধ করবেন।

নিকোটিনের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম সময় লাগতে পারে। তবে সাধারনত ২ - ৪ সপ্তাহ সময় লাগে। নেশা ছেড়ে দেবার পর (উপরে বর্ণীত) বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়াগুলো যখন শুরু হবে, তখন সেগুলোকে নেশা থেকে মুক্তি পাওয়ার ও সুস্থতা অর্জনের পূর্বলক্ষণ হিসেবে ভাবতে চেষ্টা করুন। মনে করুন আপনার শরীর নিজে থেকেই নিজেকে পরিষ্কার করে নিচ্ছে। ২ - ৪ সপ্তাহ পর শারীরিক প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে মুক্তি পেলেও তারপরও ধুমপানের প্রতি যে ব্যগ্রকামনাটুকু বাকী থাকে তার প্রায় পুরোটাই মানসিক ব্যপার। তাই এ সময় মনটাকে শক্ত রেখে ধুমপানের সর্বনাশা ক্ষতির কথা ভেবে নিজেকে সংযত রাখুন। ভেবে দেখুন তো- আপনার এ বদভ্যাসের কারণে আপন বংশধরেরা অর্থাৎ সন্তান ও নাতি-পুতিরা যদি ‘জিন-মিউটেশন’ জনিত বংশানুগতি সম্বন্ধীয় রোগের বাহক হিসেবে জন্ম নেয়, তাহলে কি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন?

ধুমপান ছাড়ার পর কি কি অসুবিধা হতে পারে সে বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছ। এবার মনকে সেভাবে প্রস্তুত করে নির্দিষ্ট একটি দিনে ধুমপানের সকল উপকরণ যেমন সিগারেট, দেশলাই, সিগারেট-লাইটার ও ছাইদানি ছুঁড়ে ফেলে দিন। ধুমপান ছাড়তে ইচ্ছুক এমন আরও কয়েকজনকে সাথে নিতে পারলে ভাল হয়। খেলাধুলা, ব্যায়াম ও আনন্দ-ফুর্তীর মধ্য দিয়ে সময় কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের লোকজন বিশেষ করে স্ত্রী ও সন্তানেরা এ ব্যপারে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এ সময় ধুমপান বিরোধী বিভিন্ন অনুষ্টানের সঙ্গে নিজেকে স্বক্রীয়ভাবে সম্পৃক্ত রাখলে অনেক ভাল ফল পাওয়া যাবে।

আমার মতে যত তাড়াতাড়ি ধুমপান ছাড়া যায় ততই উত্তম। যদি কেউ ধীরে ধীরে ধুমপানের মাত্রা কমিয়ে আনতে চান, তবে পছন্দনীয় ব্র্যান্ডের সিগারেট ছেড়ে সবচেয়ে অপছন্দের ব্র্যান্ডটি বাছাই করুন। অর্ধেকটা সিগারেট খাওয়া হলেই তা ফেলে দিন। ধোঁয়া মুখে নিয়ে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে না টেনে ছেড়ে দিন। একসাথে এক কার্টুন বা এক প্যাকেট না কিনে একটা একটা করে সিগারেট কিনুন। ধুমপানের সময় কয়টি সিগারেট খেলেন তার হিসাব রাখুন। সেইসাথে আর্থিক লাভ বা ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে ভাবুন। ধুমপান মুক্ত স্থানে দিনের বেশীরভাগ সময় কাটান। অবসর সময়ে এমন কাজে ব্যস্ত থাকুন যেন মন চাইলেও আপনার হাত সিগারেট ধরাবার সুযোগ না পায়। ধুমপানের বদলে গাজর, সবজির সালাদ, ফলের রস, চিনি-মুক্ত চুইংগাম ও চকলেট খাওয়ার অভ্যাস করুন। এভাবে সংখ্যা কমাতে কমাতে শেষ সিগারেটে সর্বশেষ টানটি দিন এবং ধুমপানকে পদাঘাত করে চিরতরে বর্জন করুন।

আমাদের এ সমাজে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করে। যারা যে ধর্ম পালন করেন তারা একটু ভেবে দেখুন তো- ধুমপানের পর মন্দির, মসজিদ, গির্জা ইত্যাদি উপাসনালয়ে গিয়ে তামাকের বিটকেল গন্ধ বিলিয়ে উপস্থিত সবার অস্বস্তির কারণ হয়ে ও একাগ্রতার ব্যাঘাত ঘটিয়ে সত্যিকার পূণ্য অর্জন সম্ভব কি? যে মহান স্রষ্টাকে এত ভালবাসেন, ভয় ও ভক্তি করেন, মুখে বাজে গন্ধ নিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়াতে তো দ্বিধা হওয়ার ও লজ্জা পবারই কথা। একাগ্রচিত্তে স্রষ্টার ইবাদত ও সৃষ্টিকুলের কল্যাণ সাধনই একজন প্রকৃত ধার্মীকের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। প্রতিটি ধর্মের মূল শিক্ষা তো তাই। অন্যদিকে যারা শুধু মানবতার কথা বলেন আবার ধুমপানও করেন, তাদের পক্ষে কি নিজের ও অন্যের মাঝে ধুমপানের সর্বনাশা বিষ ছড়িয়ে মানবতার মত মহৎ-কর্মটি সুচারুরূপে সমাধা করা আদৌ সম্ভব? তাই আসুন, আর দেরি না করে সবাই মিলে ধুমপান-মুক্ত ও দূষণমুক্ত নুতন পৃথিবী গড়ে তুলি। Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৫:১৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×