somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (২য়- পর্ব)

০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমার জানামতে বর্তমানে পৃথিবীর কোথাও দাসপ্রথা নেই। ইসলামে নুতন কোরে দাসপ্রথা চালু করার কোনই অবকাশ নেই। তবে এ পৃথিবীর কোন প্রান্তে অন্য কোন মানবগোষ্ঠী দ্বারা যদি কখনো পুণরায় দাসপ্রথা চালু করা হয়, তাহলে এর বিরোধীতা করার সাথে সাথে সেসব দেশ থেকে দাস-দাসী ক্রয় কোরে মুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা মুসলমানদের ইমানী দায়িত্ব বলে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু কাম-লালসার অনুসারী কোন ধনকুবের মুসলমান যদি একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে আপন অভিরুচি ও খেয়ালের বশবর্তী হয়ে সেসব দাসী ক্রয় কোরে এনে ভাল খাওয়া ও পড়ার ব্যবস্থা করে এবং তার সাথে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়- তাহলে কি সে ইমানদার থাকতে পারবে? [যারা আগের পর্ব দেখেন নাই তারা ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (১ম- পর্ব)] -দেখে নিলে বুঝতে সুবিধা হবে।
................................................................................................
ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (২য়- পর্ব)
জনৈক পাঠকের মন্তব্য ও প্রশ্ন -
প্রথম প্রশ্নঃ দাসীর ঘরের সন্তানও কেন দাসী হবে?
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ কোন মুসলিম যদি আরেক মুসলিমের দাসী কে বিবাহ করে তাহলে, তার সন্তান ও কি দাস হবে? উক্ত মহিলার সাথে তার অধিকারীর সম্পর্ক কিরূপ হবে?
..............................................................
লেখকের জবাব-
ভাই, আপনার প্রশ্ন একসাথে দুটো এবং ছোট হলেও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে এর উত্তর বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কিত বিধায় একসাথেই উত্তর দেবার চেষ্টা করছি- (অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তির জন্য মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমায় ক্ষমা করেন)

বর্তমানে বা ভবিষ্যতে ক্ষেত্র বিশেষে (প্রকৃত জিহাদ সংঘটিত হলে বা বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে) শুধুমাত্র ডান হাতের অধিকারভুক্তদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইসলামের যুদ্ধবন্দী সংক্রান্ত বিধানটি কার্যকর হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে জাহেলি যুগের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও কুসংষ্কারাচ্ছন্ন প্রথার বেড়াজালে আচ্ছন্ন দাসপ্রথাকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ইসলামের প্রাথমিক যুগে ডান হাতের অধিকারভুক্তদের' সাথে সংশ্লিষ্ট বিধানটিকে যেভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, এখন যে আর সেভাবে বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন নেই। আল-কোরআনের পরবর্তীতে নাজিলকৃত নির্দেশ থেকে সেই দিকনির্দেশনাই পাওয়া যায়। ইসলাম ধীরে ধীরে দাস বানানো নয় বরং দাস-দাসীকে মুক্ত কোরে দেয়াকে ধর্মের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নির্দেশ দয়ার মাধ্যমে উৎসাহিত করেছে। তাই ইসলামের শত্রুরা যুদ্ধে পরাজিত হলে যুদ্ধবন্দীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে এবং ইসলামি রাষ্ট্রে বিদ্যমান রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষে যদি কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তাদেরকে সামর্থবান অভিভাকদের দায়িত্বে ও তত্বাবধানে কিছু শর্ত সাপেক্ষে হস্তান্তর করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাঝে রেখে মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য যথাসম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই ক্রীতদাস বানিয়ে রাখার কোন স্কোপই নেই। কারণ আল-কোরআনের ঘোষণা অনুসারে সকল মানুষ কেবলমাত্র আল্লাহর দাস এবং মুমিন হতে হলে দাস মুক্তির শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছে -

সূরা আল বালাদ (মক্কায় অবতীর্ণ )
(৯০:১০) অর্থ- আর আমরা কি তাকে দুটি পথই প্রদর্শন করিনি।
(৯০:১১) অর্থ- কিন্তু সে ঊর্ধ্বগামী/উচ্চমার্গের/উৎকৃষ্ট পথটি ধরতে চায়নি (ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি)।
(৯০:১২) অর্থ- তুমি কি জান, সে ঊর্ধ্বগামী/উচ্চমার্গের/উৎকৃষ্ট পথটি (ঘাঁটি) কি?
(৯০:১৩) অর্থ- তা হচ্ছে দাসমুক্তি,
(৯০:১৪) অর্থ- অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান-
(৯০:১৫) অর্থ- নিকট সম্পর্কের এতীমকে
(৯০:১৬) অর্থ- অথবা ধুলি-ধুসরিত নিঃস্বকে,
(৯০:১৭) অর্থ- অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া- যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে অধ্যবসায় অবলম্বনের উপদেশ দেয় ও একে অন্যের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্যের প্রয়াস নেয়।

সূরা আন-নূর (মদীনায় অবতীর্ণ- ক্রম ১০২)
(২৪:৩০) অর্থ- মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
(২৪:৩২) অর্থ- তোমাদের মধ্যে যারা একাকী (অবিবাহিত), তাদের বিয়ে দাও এবং তোমাদের পরিচারকদের ও পরিচারিকাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম পরায়ণ তাদেরও, যদিও তারা মুখাপেক্ষী/ গরীব হয়; আল্লাহ তাদেরকে লাভবান/ ধনী/ সমৃদ্ধ/ মানোন্নয়ন/ উর্বর/ সচ্ছল করে দেবেন তাঁর মাহাত্ম্য/ উদারতা/ অকৃপণ দান দ্বারা। আল্লাহ উদার/সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।
(২৪:৩৩) অর্থ- তারা যেন পবিত্র থাকে/পরহেজ করে- যারা বিয়ে করতে পারছে না/ বিয়ের ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ হতে পারছেনা/ ইচ্ছা করতে পারছে না (বিবাহে সামর্থ নয়?), যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাদেরকে লাভবান/ ধনী/ সমৃদ্ধ/ মানোন্নয়ন/ উর্বর/ সচ্ছল করে দেবেন তাঁর মাহাত্ম্য/ উদারতা/ অকৃপণ দান দ্বারা। তোমাদের ডান হাতের অধিকারভুক্তদের (مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ) (ইসলাম পূর্ব দাসী/যুদ্ধ-বন্দিনীদের) মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায়, তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর যদি জানতে পার যে, তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন, তা থেকে তাদেরকে দান কর। তোমরা পার্থিব জীবনের নশ্বর বস্তুর লোভ-লালসায় তোমাদের অধীনস্ত দাসী /গৃহপরিচারিকাদের বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য কোরনা- যদি তারা (বিয়ে কোরে) সচ্চরিত্র থাকার আকাঙ্খা করে। যদি কেউ তাদেরকে বাধ্য করে, সেক্ষেত্রে তাদের উপর জোর-জবরদস্তির পরে আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(২:১৭৭) অর্থ- সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।
(২:২২১) অর্থ- আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য (وَلأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ) বিশ্বাসী ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন বিশ্বাসী ক্রীতদাসও একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(৪:৩৬) অর্থ- আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং ডান হাতের অধিকারভুক্তদের (দাস-দাসীর) প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।
(৪:৯২) অর্থ- মুসলমানের কাজ নয় যে, মুসলমানকে হত্যা করে; কিন্তু ভুলক্রমে। যে ব্যক্তি মুসলমানকে ভূলক্রমে হত্যা করে, সে একজন বিশ্বাসী ক্রীতদাস কিংবা দাসী (مُّؤْمِنَةٍ رَقَبَةٍ) মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় সমর্পন করবে তার স্বজনদেরকে; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে বিশ্বাসী ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং যদি সে তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে এবং একজন বিশ্বাসী ক্রীতদাস মুক্ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি না পায়, সে আল্লাহর কাছ থেকে গোনাহ মাফ করানোর জন্যে উপর্যুপুরি দুই মাস রোযা রাখবে। আল্লাহ, মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

সূরা আল মায়েদাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(৫:৮৯) অর্থ- আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্ত্র প্রদান করবে অথবা, একজন ( رَقَبَةٍ) ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।

সূরা আল-আনফাল (মদীনায় অবতীর্ণ)
(৮:৭০) অর্থ- হে নবী, যারা তোমার হাতে বন্দী হয়ে আছে তাদেরকে বলে দাও যে, আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তরে কোন রকম মঙ্গলচিন্তা রয়েছে বলে জানেন, তবে তোমাদেরকে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী দান করবেন যা তোমাদের কাছ থেকে বিনিময়ে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া তোমাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
(৮:৭১) অর্থ- আর যদি তারা তোমার সাথে প্রতারণা করতে চায়- বস্তুতঃ তারা আল্লাহর সাথেও ইতিপূর্বে প্রতারণা করেছে, অতঃপর তিনি তাদেরকে ধরিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত, সুকৌশলী।

Hadiths- Sahih Al-Bukhari
720 : Narrated Abu Musa: Allah's Apostle said, "He who has a slave-girl and educates and treats her nicely and then manumits and marries her, will get a double reward."

721 : Narrated Al-Ma'rur bin Suwaid: I saw Abu Dhar Al-Ghifari wearing a cloak, and his slave, too, was wearing a cloak. We asked him about that (i.e. how both were wearing similar cloaks). He replied, "Once I abused a man and he complained of me to the Prophet . The Prophet asked me, 'Did you abuse him by slighting his mother?' He added, 'Your slaves are your brethren upon whom Allah has given you authority. So, if one has one's brethren under one's control, one should feed them with the like of what one eats and clothe them with the like of what one wears. You should not overburden them with what they cannot bear, and if you do so, help them (in their hard job)."

728 : Narrated Abu Huraira: The Prophet said, "You should not say, 'Feed your lord (Rabbaka), help your lord in performing ablution, or give water to your lord, but should say, 'my master (e.g. Feed your master instead of lord etc.) (Saiyidi), or my guardian (Maulai), and one should not say, my slave (Abdi), or my girl-slave (Amati), but should say, my lad (Fatai), my lass (Fatati), and 'my boy (Ghulami)."

উপরে উল্লেখিত আল-কোরআনের আয়াত ও রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুসারে: যাদেরকে (مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ/ ma- malakat aymanukum/ মা- মালাকাত আইমানুকুম) ‘ডান হাতের অধিকারভূক্ত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদেরকে মহান আল্লাহতায়ালার কিতাবে কখনই দাস-দাসী বলে সম্বোধন করার শিক্ষা দেয়া হয় নাই। আর এই শিক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে রাসূলের (সাঃ) আদর্শে। তিনি তো তাদেরকে (আ'ব্দ) দাস ও (আমাতি) দাসী না বলে বরং (728) আমার (ফাতা) ছেলে ও (ফাতাত) মেয়ে বলে সম্বোধন করতে বলেছেন। শুধু তাই নয়, (১৬:৭১) দাস-দাসীকে মুক্ত করার সময় নিঃস্ব হাতে বিদায় না দিয়ে বরং তাদের হাতে কিছু সম্পদ দান করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং এরপর থেকে যে কোন কালেই দাসপ্রথার প্রচলন করার তো প্রশ্নই আসেনা, বরং কোন দাস বা দাসীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব (720) শিক্ষা-দিক্ষা ও বিয়ে-সাদি দিয়ে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত কোরে দেয়া ছাড়া আর কোন অপশন নেই।

সূরা রূম (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩০:২৮) অর্থ- তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের [অভিজ্ঞতা] মধ্য থেকে দৃষ্টান্ত, বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করছেন। তোমাদের আমি যে ধন-সম্পদ দিয়েছি, তোমাদের ডান-হাতের-অধিকারভুক্তগণের (যুদ্ধবন্দী/দাস-দাসীগণের) কেউ কি তাতে সমান অংশীদার? তোমরা কি তাদের সেরূপ ভয় কর যেরূপ তোমরা পরস্পর পরস্পরকে কর? যারা বুঝতে পারে তাদের জন্য আমি এভাবেই নিদর্শন সমূহ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে থাকি।

সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ মহান আল্লাহ্‌। যার অসীম জ্ঞান ও ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে নির্ণয় করা আমাদের সাধ্যাতীত। তাঁর অবস্থান যে আমাদের অবস্থানের বহু উর্ধ্বে- (৩০:২৮) নং আয়াতে প্রথমত ও মূলত সেই বিষয়টিই প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সাথে সদা বিরাজমান সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে উপমা হিসেবে তুলে ধরে আমাদের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি প্রভু/পালনকর্তা এবং আমরা তাঁর দাস। এখানে যে উপমার সাহায্যে তাঁর অবস্থানকে তুলে ধরা হয়েছে তা হচ্ছে- একজন মালিক/অভিভাবক কি কখনও নিজেকে তার অধিকারভুক্ত ক্রীতদাস দাসীদের সমকক্ষ মনে করে? যে যতই সমতার বাণী শোনাক বা ভাব দেখাক না কেন, কিছুটা পার্থক্য তো থেকেই যায়। তার ধন-সম্পদ ও ক্ষমতার সামান্যতম অংশীদরিত্বের অধিকারও কি তাদেরকে দান করে? যদিও তার সকল ধন-সম্পদ ও ক্ষমতা তার নিজস্ব নয়, সবই আল্লাহ্‌ তাকে দান করেছেন। কেউ ধনী কেউ গরীব, আবার কেউ ডান-হাতের-অধিকারভুক্ত (যুদ্ধবন্দী/দাস-দাসী)। এগুলো সম্পূর্ণরূপে মানুষের ইচ্ছাধীন নয়, বরং বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে এসবের উদ্ভব ঘটে। তাই এসব নিয়ে মানব সম্প্রদায়ের নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা ঠিক নয়। আল্লাহতায়ালা কাউকে মনিব/অভিভাবক, আবার কাউকে ডান-হাতের-অধিকারভুক্ত (যুদ্ধবন্দী/দাস-দাসী) বানিয়েও এভাবে পরীক্ষা করেন যেন একজন ডান-হাতের-অধিকারভুক্তকে সম্পদের অংশিদার না বানালেও অন্তত মানুষ হিসেবে তার মৌলিক চাহিদা ও সম্মানটুকু যেন নিশ্চিত করা হয়। মনিব হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে তার অধীনস্তদের প্রতি সে কোনরূপ অবিচার বা জুলুম করছে কিনা- সেটাও স্রষ্টা পরখ করেন। আবার অধীনস্ত/অধিকারভুক্তরা তাদের অভিভাবক/মনিবকে স্রষ্টা মহান আল্লাহর আসনে বসাচ্ছে কিনা সেটাও পরখ করা হয়। যেহেতু মানব ও জ্বীন সহ সমগ্র সৃষ্ট জগত আল্লাহ্‌র সৃজিত ও তাঁরই দাস বা গোলাম। সুতারাং আল্লাহ্‌র সৃজিত কোন কিছুকে আল্লাহ্‌র সমকক্ষ অথবা তাঁর শরীক রূপে বিশ্বাস করা যে মোটেই যুক্তিসঙ্গত হতে পারেনা- সেটাই এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

মানুষ সমাজ বদ্ধ জীব। কিন্তু দেখা যায় যে, এই সমাজে সবলেরা সর্বদা দুর্বলের উপরে অত্যাচার করতে উদ্যত হয়। যদি সমাজে এদের দমনের কোনও বন্দোবস্ত না থাকতো তবে সমাজ মনুষ্য বাসের অনুপযোগী হয়ে যেত। সমাজের শৃঙ্খলা ও শান্তিকে সঠিক রাখার জন্য মানুষ সামাজিক কাঠামোকে এভাবে বিন্যস্ত করেছে যে, রাজা বা প্রজাতন্ত্র-প্রধান সমাজে অত্যাচারী ও অন্যায়কারীকে প্রতিরোধ করবে এবং সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারীকে শ্রদ্ধা করবে, মেনে চলবে, এবং শান্তি ও শৃঙ্খলা বিধানের জন্য তাঁর কর্তৃত্বের উপরে নির্ভরশীল হবে এবং তাঁরই নির্দেশ অনুসারে ফয়সালা করবে। সমাজে মানুষ শুধু যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারীকে ভয় পায় তাই নয়, সে তার সমকক্ষকেও সম্মান করে, তাদের সমালোচনা ও বদনামের ভয় করে। কিন্তু তারা তাদের ক্রীতদাস-দাসীদের বা নির্ভরশীলদের মতামতকে গ্রাহ্য করে না বা ভয়ও পায় না। এই উপমার সাহায্যে এই সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে যে, মানুষ তো সর্বোতভাবে সেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র উপরে নির্ভরশীল। এই বিশাল বিশ্ব ভূবনের মালিক একমাত্র আল্লাহ্‌ তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তিনি কারও উপরে নির্ভরশীল নন। সুতারাং কিভাবে মানুষ মহান আল্লাহ্‌র সঙ্গে তাঁর কোনও সৃষ্টির কোন ব্যাপারে শরীকানা করতে পারে? যেখানে সৃষ্টির প্রতিটি বস্তুই আল্লাহ্‌র সৃষ্টি এবং তাঁর অধীনস্ত/দাস ও একমাত্র তাঁরই উপরে নির্ভরশীল। আমাদের উচিত আল্লাহ্‌র বিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা ও তা মেনে চলা। কারণ আল্লাহ্‌ ভীতিই হচ্ছে সকল জ্ঞানের প্রারম্ভ বা উৎস। সুতরাং (৩০:২৮- "যারা বুঝতে চায় তাদের জন্যই এসব নিদর্শনাবলী বিবৃত করা হয়।"

এ কারনেই আমি উল্লেখ করেছি যে, জাহেলি যুগে দাসপ্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল। ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে হঠাৎ কোরে তা রহিত করা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে যুক্তিযুক্ত ছিলনা। তাই দাসপ্রথাকে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে তখনকার দাসপ্রথায় অভ্যস্ত সমাজ থেকে ধীরে ধীরে তা বিলুপ্ত করার প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ বলেই আমি বিশ্বাস করি। ইসলাম পূর্ব জাহেলি যুগে দাস-দাসীদের সাথে যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করা হত। এমনকি তাদেরকে যে মানুষ হিসেবেও গন্য করা হত না তা ইতিহাসই সাক্ষী দেয়। তখন এক দাসীর সাথে শুধু তার মালিকই নয়, বাধাহীনভাবে অনেকেই যৌণ সম্পর্ক করতে পারত এবং মালিক তার দাসীকে দিয়ে বেশ্যাবৃত্তির মাধমে অর্থ কামাত। কিন্তু ইসলাম প্রথমত সেই দুটো পথই বন্ধ কোরে দিল। যেহেতু ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় দাস প্রথায় অভ্যস্ত সমাজব্যবস্থা থেকে অসংখ্য দাস-দাসীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্ত করা এবং তাদের দেখভালের সুবন্দোবস্ত করা সম্ভব ছিলনা। তাই হঠাৎ কোরে মুক্তির কথা বলে তাদেরকে পথে না নামিয়ে দাসীদের সাথে সম্পর্কটা শুধুমাত্র তাদের মালিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কোরে দেয়া হলো। শুধু তাই নয়, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ছাড়াও তাদের সাথে পরিবারের অন্য সবার মত সমান ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হল এবং মালিকের মৃত্যুর সাথে সাথে দাসী এবং তার সন্তানরা আপনা থেকেই স্বাধীন হয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেয়া হলো। আবার মালিকের সন্তান প্রসবের পর আপনা থেকেই দাসীদের স্বাধীন হয়ে যাওয়ার বিধান ছিল। শুধু তাই নয়, ইসলাম পূর্ব দাস-দাসীরা ব্যভিচার করলে শাসন করার এবং বুঝানোর পরও বার বার ব্যভিচারে লিপ্ত হলে সেক্ষেত্রে তাদেরকে মেরে না ফেলে অগত্যা বিক্রি করে দেয়ারও প্রচলন ছিল। এগুলো সবই ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সময়ের জন্য ইসলাম পূর্ব দাস-দাসী/যুদ্ধবন্দীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। এভাবে প্রকৃত অর্থে পরোক্ষভাবে দাসপ্রথাকে নিরুৎসাহিত করে বিলুপ্তির পক্ষেই দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই আলোকে বলা যায় যে, ইসলামের আগমনের বহু আগে থেকেই সমাজে দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। তাই ইসলাম পূর্ব সামাজিক প্রথা ও পারিপার্শিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু সময় পর্যন্ত দাসীর সন্তানকে সাময়িকভাবে হয়ত দাস/দাসী হিসেবে গণ্য করার প্রচলন থাকলেও ইসলাম অনেক আগেই সেই প্রথাকে বর্জন করেছে এবং এখন আর সেই অবকাশ নেই।

সুতরাং আল-কোরআনের বাণী ও হাদিছের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ডান হাতের অধিকারভূক্তদের সাথে তাদের অভিভাবকদের সম্পর্কটাকে অনেক আগেই জাহেলি যুগের দাসত্ব ও প্রভুত্বের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে বন্ধুসুলভ অভিভাবকত্বের পর্যায়ে উন্নিত করার পথনির্দেশনা দয়া হয়েছে এবং তা যে কোন বিবেকবান মানুষ মাত্রই বুঝতে পারার কথা।
................................................................................................
কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য মুছে ফেলা হবে। প্রয়োজনে ব্লক করতে বাধ্য হব-

৩/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (৩য়- পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×