বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বাজে চাকুরী কোনটা ?- এইটা যদি জরিপ করা হয়, তবে আমার ধারণা “সরকারী ব্যাংকে চাকুরী” প্রথম তিনটার মধ্যে থাকবে । আমি কারণগুলি একে একে বলছি-
- আমাদের দেশে বেশির ভাগ লোকের ধারণা সরকারী ব্যাংকে কোনো কাজ নাই, তারা শুধু বসে বসে সারাদিন মাছি মারে । কারণ সরকারী ব্যাংকের customer কম । আপনি বেসরকারী ব্যাংকে গেলে দেখতে পাবেন তাদের প্রত্যেকটি বিভাগে কমপক্ষে দুই থেকে তিনজন কাজ করে । নগদ গ্রহণ/প্রদান বিভাগে কমপক্ষে চারজন কাজ করে । আর সরকারী ব্যাংকে নগদ গ্রহণ/প্রদান বিভাগে বেশির ভাগ শাখায় এক জন কাজ করে এবং অন্যান্য বিভাগে দেখা যায় এক জন দুই-তিন বিভাগের কাজ করছে । গড় হিসাব করলে দেখা যাবে যে, একজন সরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও একজন বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তার দৈনিক কাজের পরিমাণের মাঝে কোনো তফাৎ নেই । কিন্তু বেতনের ক্ষেত্রে সমমর্যাদাসম্পন্ন একজন বেসরকারী কর্মকর্তার অর্ধেক বেতন পায় একজন সরকারী কর্মকর্তা ।
- বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, শিক্ষাক্ষেত্র কিংবা অন্যান্য সরকারী ক্ষেত্রকে যুগোপযোগী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও Banking Sector- এ কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন আনেনি । সরকারী ব্যাংকে কর্মরতদের সামনে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো (Separate Pay-scale) নামে একটি মূলা ঝুলিয়ে রাখলেও বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি । তা নিকট ভবিষ্যৎ-এ বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় নেই বললেই চলে ।
- একজন সরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষ মনে করে যে, সে যেহেতু ইসলামী ব্যাংকিং করে না, তাই সে অবশ্যই সুদ খায় । এই ভ্রান্ত ধারণাটি বেশির ভাগ সময় বিয়ের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে । সরকারী অন্যান্য যে কোনো চাকুরীর মত ব্যাংকে কর্মরতরাও সরকারের কাছ থেকে বেতন নিয়ে থাকে । ব্যাংকে সুদ, কমিশন কিংবা অন্যান্য খাত থেকে বাৎসরিক যে লাভ হয় তা সরকারী কোষাগারে জমা হয় । এই সুদ থেকে প্রাপ্ত লাভ সরকারের বাজেটেরই একটি অংশ । তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, সুদের সাথে সবাই জড়িত । আর বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে সম্পুর্ণ সুদবিহীন ব্যাংকিং অসম্ভব ব্যাপার ।
- আয়কর নেয়া কিংবা অন্যান্য নানাবিধ কারণে অনেক সময় শনিবারে ব্যাংক খোলা রাখতে হয় । বেসরকারী ব্যাংকে ছুটির দিনে অফিস করলে ৬০০-৮০০ টাকা দেয়া হয় । কিন্তু সরকারী ব্যাংকে শুধুমাত্র বিনোদন ও কল্যান ভাতা হিসেবে ২০০ টাকা প্রদান করা হয় ।
- সরকারী ব্যাংকে Staff House Loan হিসেবে যে ঋণ দেয়া হয় তা একবারে না দিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কয়েকবারে দেয়া হয় । একসাথে সম্পূর্ণ টাকা না পাওয়ার কারণে দেখা যায় এই ঋণের সিংহ ভাগ টাকা বাড়ি তৈরীর কাজে ব্যবহৃত না হয়ে অন্যান্য কাজেই ব্যয় হয়ে যায় ।
- অনেক সরকারী ব্যাংকের শাখায় সান্ধ্যকালীন ব্যাংকিং (Evening Banking) চালু থাকে । দৈনিক এই দুই ঘন্টা অতিরিক্ত শ্রম দিলে মাস শেষে পাওয়া যায় ১৫০ টাকা । এইটা মনে হয় বাংলাদেশে সর্বনিম্ন ঘন্টা প্রতি বেতন । ঘন্টা প্রতি বেতন প্রায় ৪ টাকা (এক মাসে ৪০ থেকে ৪৮ ঘন্টার জন্য ১৫০ টাকা)।
- বেসরকারী ব্যাংকে ঝুঁকি ভাতা (Risk Allowance) হিসেবে পদ অনুসারে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা (Cash Department) থেকে সর্বোচ্চ ১০০০০ টাকা (Manager) দেয়া হয় । কিন্তু সরকারী ব্যাংকে কোনো ঝুঁকি ভাতা প্রদান করা হয় না । ভুল করলে নিজের পকেট থেকে গচ্চা দাও !
যাই হোক, সকল সরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি তাদের ধৈর্যশীলতা ও সহ্যশক্তির জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো ।