somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিলেকোঠার প্রেম - ৮

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা ফিরেই ঠিক করেছি এই চিলেকোঠায় আর না। মিরপুরের দিকে কোনো দু'কামরার ফ্লাট খুঁজে নিয়ে উঠে যাবো শিঘ্রী। মিরপুরের দিকে উঠবার পিছে কারণ রয়েছে আমার এক কলিগের বন্ধুর খালি ফ্লাট। ছোট ফ্লাট কিনেছে সে। কানাডা থাকে তাই এই ফ্লাট ভাড়া দিয়ে রাখা। এক ছুটির দিন দেখে বাড়ি দেখতে বের হলাম আমরা। নাখালপাড়া থেকে মিরপুর ১২ নাম্বার। খুব একটা দূরের পথ নয় তবুও ট্রাফিক জ্যামে আটকে গলদঘর্ম হয়ে প্রায় পৌনে ৩ ঘন্টা পার করে সেখানে গিয়ে পৌছলাম।

ছোট্ট ছিমছাম ফ্লাট। দুটি বেশ বড় সড় বেডরুম। একটি ডাইনিং ও লিভিং রুম মিলিয়ে বেশ খোলামেলা। পাঁচতলার উপরে হওয়ায় আর চারিদিকে বাড়িঘর না থাকায় বেশ হাওয়া বাতাসও খেলা করে। দুদিকে দুটি লম্বা বারান্দা। এক দিকের বারান্দার সামনে এক টুকরো ডোবা জমি। আরেকদিকে রাস্তা। রাস্তার ঠিক উলটো পাশেই একটা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় কলেজের মেয়েগুলোর ছুটোছুটি বা গালগল্প হাসি ঠাট্টার মনোরম দৃশ্য। ফ্লাটটা আমাদের অপছন্দ করার কিছু ছিলো না। একে কম দাম তার উপর এত খোলামেলা ঝা চকচকে। কাজেই সেটাই ঠিক করা হল।

অল্প কিছুদিনের মাঝেই আমরা আমাদের সেই স্মরণীয় চিলেকোঠা ছেড়ে এই ফ্লাটে এসে উঠলাম। ঝকঝকে তকতকে ফ্লাট। খুব যত্ন করে বানিয়েছে বুঝাই যায়। তবে সেই তুলনায় ভাড়াটা একেবারেই কম। আমি তো আনন্দে আটখানা। এখন এটাকে কি করে সাজাই কি করে গুছাই ভেবেই আমার দিন কাটেনা। খুব শখ করে নতুন খাট, ড্রেসিং টেবিল আর আলমারী কেনা হলো সাথে রান্নার জিনিসপাতি। আমাদের দু'জনের একটা বড় যুগল ছবি বাঁধিয়ে টাঙ্গিয়ে দিলাম দেওয়ালে। ছোট্ট একটা টোনাটুনির বাড়ি হলো আমাদের। শুভ্রের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। শেষ হলেই নিশ্চিন্তি। দুজনে জব করবো। আনন্দে কাটিয়ে দেবো বাকী জীবনটা।

অফিস থেকে ফেরার পথে ফ্রেশ হাউজে নেমে টুকিটাকি কিনে নেই। তারপর বাসায় ফিরে বারান্দায় বসে চা খাই আমরা দু,জনা। সামনের সরু রাস্তায় টুং টাং রিক্সা যায়। বসে বসে মানুষের চলাচল দেখি। চায়ের টেবিল কেনা হয়নি তাতে কোনোই সমস্যা নেই। এক টুকরো হার্ড বোর্ড মোড়ার উপরে রেখেই আমাদের টি টেবিলের কাজ বেশ চলে যায়। সেটাই তখন আমাদের মহা আনন্দের আসবাব।

বই আছে বেশ কিছু। শুভ্রের সকল সম্পত্তির মাঝে এটাই বেশ খানিক জায়গা দখল করে আছে শুভ্রের জীবনে। শুভ্রের মত বেশ আলসে টাইপমানুষও যে এত এত বই পড়েছে ভাবলে অবাক লাগে। শুভ্র শুধু গল্পের বই পড়েছে তা নয় দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান সব কিছু জানাতেই তার দারুণ আগ্রহ। শুভ্র তার বাবার থেকেই বই পড়ার অভ্যাসটি পেয়েছে। তবে তার বদভ্যাসের চরম দিকটি হলো তার কোনো কিছু নিয়েই সিরিয়াস না হওয়াটা। যেটা আমার একেবারেই পছন্দ নয় নিজের বেলায় কিন্তু ওর সকল কিছু পছন্দের সাথে সাথে ওর সেই সিরিয়াস না হবার ব্যপারটাও মজার লাগে। মনে হয় এমনই তো হবার কথা ছিলো সকল মানুষের। আমি কেনো এত সব কিছুতেই এত এত সিরিয়াস।

যাইহোক বলছিলাম যে কথাটা। শুভ্রের বইগুলো রাখার তখনও কোনো বুকসেল্ফ কেনা হয়নি তাই সেগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে এক ছুটির দিনে আমি তিনটা স্যুটকেট তাক তাক করে সাজিয়ে বেডসিট দিয়ে ঢেকে বইগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দিলাম। সেই স্যুটকেস কাম বুককেস দেখে আমি নিজেই হেসে গড়িয়ে পড়ছিলাম তবুও বইগুলো এলোমেলো যা তা অবস্থা থেকে তো মুক্তি পেলো। এইভাবেই তুচ্ছ কথায়, তুচ্ছ আনন্দে কেটে যাচ্ছিলো দিন। রাত করে আমরা বের হতাম ফুচকা বা আইস্ক্রিম খেতে। তারপর রাত করে ফিরতাম।

হঠাৎ একদিন চির সুস্থ্য দেহের অধিকারী এই আমি ভীষন অসুস্থ্য হয়ে পড়লাম। সেদিন ছিলো আমার ছুটির দিন কিন্তু শুভ্রের কোনো এক পরীক্ষা থাকায় সে বাসায় ছিলো না। আমি দুপুরের জন্য আমার প্রিয় চিতলমাছের ঝোল আর করলা চিংড়ি রান্না করে কেবল বেডরুমের দিকে পা বাড়িয়েছি। অমনি আমার মাথাটা কেমন টলে উঠলো। আমি ভীষন ভয় পেয়ে দেওয়ালটা ধরে বসে পড়লাম সেখানেই। আমার খুব ভয় হচ্ছিলো। পুরো বাসায় আমি ছাড়া কেউ নেই। অজ্ঞান হয়ে পড়লে কেউ জানবে না। শুভ্র ফিরে এলেও কেউ তাকে দরজা খুলে দেবেনা।

মাকে মনে পড়লো। বাবাকেও। কোনোমতে টলতে টলতে দরজা খুলে পাশের বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিলাম। সেই বাসার আন্টি বেরিয়ে এলেন। বললেন কি হলো তোমার? বসো বসো। উনি আমাকে বসালেন। আমি বললাম হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠেছে। কয়েকদিন ধরে যা খাচ্ছি কিছুই পেটে তলাচ্ছে না। বমি হয়ে যায়। আজ মাথাটা টলে উঠতে ভয় পেয়ে আপনার কাছে এসেছি। অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকলে তো শুভ্র আসলে কেউ ওকে দরজা খুলে দিতে পারবেনা। উনি হেসে বললেন, এইখানে চুপ করে বসো। এত অস্থির হবার কিছু নেই। শুভ্রকে ফোন করতে হবে না। তাকে তার সময়মতই ফিরতে দাও। তুমি আমার কাছে থাকো ততক্ষন।

দরকার হলে আমার বাসাতেই শুয়ে থাকো। রেস্ট নাও। আমার বাসায় এখন কেউ নেই। আমার বড় ছেলেটা তোমার বয়সীই হবে। ওর নাম ভাস্কর। আমার আরও এক ছেলে আছে ওর নাম নির্ঝর। ওরা ইউনিভারসিটিতে গেছে। পুরা বাসায় খালি এখন। নির্ঝর বাহ কি সুন্দর নাম।
আমার মাথায় সাথে সাথে কবিতার নামটাই এলো- নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ
আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান!
না জানি কেন রে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।

উনি বললেন, তোমার মনে হয় বেবি হবে। তাই মাথা ঘুরে উঠেছে। ভয় পেয়োনা। রেস্ট নাও। তোমার হাসব্যান্ডকে ফিরতে দাও।
আমার মুখ উনার কথায় রক্তিম হয়ে উঠলো। কি বলছেন আণ্টি! আমার বেবি হবে!
আমার বেবি!
কার মত হবে?
আমার মত নাকি শুভ্রের মত?
ছেলে নাকি মেয়ে?
সাত সমুদ্র ভাবনায় ডুবে গেলাম আমি। উনি কি সব বলে চলছিলেন। এত সহজে ভয় পেতে নেই মেয়েদেরকে। মনে সাহস রাখতে হয় বুঝেছো? এখন থেকে নিজের খেয়াল রাখবে। হুট হাট যা ইচ্ছা তাই করা যাবেনা। আমি একেবারেই শিওর তোমার বেবি হবে আর তাই এই সব সিম্পটম হচ্ছে। উনার কথায় আমার কানই যাচ্ছিলো না।

আমি শুধু নিজেকেই প্রশ্ন করে যাচ্ছিলাম।
কেমন হবে বেবিটা? কি হবে? কি নাম হয়ে তার? আমার সারা শরীর থরথর কাঁপতে লাগলো। সত্যিই আন্টি ঠিক বলছেন? বেবি হবে আমার? আমি মা হবো? ছোট্ট একটা মানুষ! ছোট্ট একটা মুখ। আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো অজানা কোনো শিশুর মুখচ্ছবি।

জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
ওরে উথলি উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি।

আমার সেই অনুভূতিটা আমি কখনই ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। সেটা সম্ভবও নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪৪
৫২টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×